কয়েকটি ‘হিংস্রপশুর’ নারকীয়তা!


স্টাফ করেসপন্ডেন্ট প্রকাশিত: আগস্ট ৬, ২০১৭, ০৬:০৫ পিএম
কয়েকটি ‘হিংস্রপশুর’ নারকীয়তা!

ঢাকা: দিনটি ছিল ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর। চলছিল ১৮ দলীয় জোটের সরকারবিরোধী অবরোধ কর্মসূচি। সেই কর্মসূচির সমর্থনে সকাল ৯টার দিকে পুরোনো ঢাকা জজ কোর্ট থেকে সরকারবিরোধী আইনজীবীরা মিছিল বের করে। মিছিলটি ভিক্টোরিয়া পার্কের কাছে গেলে একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে।

বোমা বিস্ফোরণের পরপরই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও কবি কাজী নজরুল ইসলাম কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আইনজীবীদের ওপর হামলা চালায়। আক্রান্ত আইনজীবীরা দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। ধাওয়ার মধ্যে পড়ে পথচারী বিশ্বজিৎ দৌড় দেয়। কাছেই একটি ভবনের দোতলায় অবস্থিত ডেন্টাল ক্লিনিকে আশ্রয় নেয়।

ছাত্রলীগের সশস্ত্র কর্মীরা ওই ক্লিনিকে গিয়ে বিশ্বজিতের ওপর হামলা চালায়। নির্বিচার কিল-ঘুষি-লাথি চালানো হয়। তার গায়ে লৌহ শলাকা দিয়ে সজোরে আঘাত করা হয়। 

আহত বিশ্বজিৎ প্রাণ বাঁচাতে পাশের আরেকটি ভবনে ঢুকে পড়ে। পেছন পেছন ধাওয়া করে সেখানে গিয়েও বিশ্বজিতের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগকর্মীরা। তারা সংখ্যায় ছিল ৮-১২ জন। পাশবিক উন্মত্ততা দেখা দেয় তাদের মধ্যে।

সবল লৌহ শলাকা আর চাপাতি দিয়ে নির্মমভাবে আঘাত করা হয়। এক পর্যায়ে বিশ্বজিতের পরনের কাপড় ছিঁড়ে যায়। গোটা শরীরে রক্তের বন্যা বয়ে যায়। সে আবার পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু আঘাত অব্যাহত থাকে। এক পর্যায়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

পথচারীদের কয়েকজন বিশ্বজিতকে পাশের ন্যাশনাল হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করলে ছাত্রলীগের কর্মীরা বাধা দেয়। প্রাণ বাঁচানোর শেষ চেষ্টায় উঠে দৌড় দেয় সে। কিন্তু শাঁখারীবাজারের একটি গলিতে গিয়ে ঢলে পড়ে। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় এক রিকশাওয়ালা তাকে নিকটেই মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যায়। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই সকল আক্রমণের ঊর্ধ্বে চলে যায় বিশ্বজিৎ।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আটক ঘাতকরা জানিয়েছিল, হত্যাকাণ্ডের আগের দিন রাতে তারা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন নেতা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাকের সঙ্গে গোপন বৈঠক করে। ওই গোপন বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, অবরোধের পক্ষে কেউ মিছিল বের করলে তাদের ওপর হামলা চালাতে হবে। এ ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা সহযোগিতা করবে।

নারকীয় হত্যাকাণ্ডের সময় কয়েকজন ক্যামেরাবন্দি করে দৃশ্যকে। তা নিয়েও ব্যাপক সমালোচনা হয়। এ ঘটনা গণমাধ্যমে প্রচারের পর দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। গোটা জাতি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

গোনিউজ/এন

অপরাধ চিত্র বিভাগের আরো খবর