সেই রাতে পার্টিতে ছিল ছয় তরুণী-তারা কারা ?


নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: মে ২১, ২০১৭, ০৮:৪৬ এএম
সেই রাতে পার্টিতে ছিল ছয় তরুণী-তারা কারা ?

বনানীর ‘রেইনট্রি’ হোটেলে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ধর্ষণকা-ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছে রিমান্ডে থাকা আসামি নাঈম আশরাফ ওরফে আবদুল হালিম।  গতকাল পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তার মুখ থেকে মিলেছে নতুন তথ্য।  সে জানায়, ঘটনার রাতে হোটেল ‘রেইনট্রি’তে ছয় তরুণীকে আনা হয়েছিল।  তাদের সবাইকে জন্মদিনের পার্টির কথা বলে ডেকে আনেন নাঈম আশরাফ ও সাফাত আহমেদ।  একই তথ্য দিয়েছেন গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী রহমত। 

পুলিশের তদন্তকারীদের তথ্য অনুযায়ী, জন্মদিনের পার্টিতে আসা সেই ছয় তরুণীর মধ্যে মামলার বাদিনীসহ দুইজনকে ধর্ষণ করে নাঈম আশরাফ ও সাফাত আহমেদ।  এদের মধ্যে এক তরুণী অবশ্য জন্মদিনের পার্টিতে নাচতে আসেন।  দুই তরুণী আসেন নাঈম আশরাফ ও সাফাত আহমেদের দাওয়াতে।  আর অপর একজন ছিলেন মামলার বাদী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর বান্ধবী।  তারা অবশ্য কয়েক ঘণ্টা থেকে চলে যান।  কিন্তু ধর্ষিতা দুই তরুণী আর বেরোতে পারেননি।  নানা কৌশলে তাদের হোটেল কক্ষে আটকে ধর্ষণ করেন সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ।  পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তারা এখন বাকি চার তরুণীকেও খুঁজছেন।  ঘটনার ব্যাপারে তাদেরও বক্তব্য নেওয়া হবে। 

আবার কোনো কোনো সূত্র বলছে, ঘটনার রাতে হোটেল কক্ষে নাঈম আশরাফ ও সাফাত আহমেদ মোট চার তরুণীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন।  তাই এ বিষয়ে জানতে নাঈম আশরাফকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।  তিনি পুলিশকে বলেছেন, ঢাকায় ভারতের বিখ্যাত গায়ক অরিজিৎ সিংয়ের কনসার্ট আয়োজন করার পরই মূলত সাফাত আহমেদের সঙ্গে আমার পরিচয়।  এ সময় শোবিজ জগতের অনেকের সঙ্গেই সম্পর্ক গড়ে ওঠে।  নাঈম আশরাফ বলেন, আমাকে এখন মিডিয়ায় খারাপ বলা হচ্ছে, কিন্তু মিডিয়া জগতে আমাদের চেয়েও খারাপ মানুষ রয়েছে। 

এদিকে ধর্ষণ মামলার পাঁচ আসামির ছয়টি মোবাইল ফোন সেট ফরেনসিক পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা।  তা সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানোর জন্য এরই মধ্যে আদালতের অনুমতি চাওয়া হয়েছে।  এ ছাড়াও আসামি নাঈম আশরাফের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য কিছু আলামত সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। 

তবে প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে সাফাতের মোবাইল ফোন থেকে যে ভিডিও ক্লিপ পাওয়া গেছে, তাতে ধর্ষণের কোনো চিত্র মেলেনি বলে জানিয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা।  সাফাতের গাড়িচালক বিল্লালের মোবাইল ফোন থেকে এসব চিত্র শেয়ারইটের মাধ্যমে নিজের মোবাইলে নিয়েছিলেন সাফাত।  যদিও ওই ভিডিওতে হোটেল রেইনট্রিতে গত ২৮ মার্চ ভুক্তভোগী দুই তরুণী ও তাদের বন্ধুদের সঙ্গে মারধর এবং ইয়াবা দিয়ে ব্ল্যাকমেলিংয়ের চেষ্টার চিত্র পাওয়া গেছে, যা ইতোমধ্যে আদালতে স্বীকারও করেন সাফাত ও সাকিফ।  এর আগে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরাও জানিয়েছিলেন, ভিডিও করা চিত্রগুলো মুছে ফেলার জন্য সৌরভ ও পাপ্পু নামে দুই তরুণীর বন্ধুকে সাফাত, সাদমান ও নাঈমের কাছে পাঠানো হয়েছিল। 

ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ শাখার উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান আমাদের সময়কে জানান, গতকাল পর্যন্ত তারা বনানীর দুই তরুণী ধর্ষণের কোনো ভিডিও ফুটেজ পাননি। 

বনানীতে পাশবিক নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী এক তরুণী জানান, ধর্ষকদের লোকজন নানাভাবে হুমকি দিয়েও সুবিধা করতে না পেরে তাদেরই একটি চক্র তা বিকৃত করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছে।  কারণ ধর্ষক সাফাতের বাবা আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিম যেদিন গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, তারা সে রাতে এবং এর আগে ও পরে কী কী করেছেন, তার আরও ছবি পাওয়া যাবে।  তারপর থেকেই এসব ছবি ছড়িয়ে পড়ছে।  ছবি বিকৃত করে ফেসবুকে তা ছড়িয়ে দেওয়ার পেছনে চক্রটির উদ্দেশ্য হলো, সামাজিকভাবে তাদের হেয়প্রতিপন্ন ও সম্মানহানির চেষ্টার পাশাপাশি মানসিকভাবে দুর্বল করে দেওয়া।  এ ব্যাপারেও তরুণীরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন। 

পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগের এডিসি আসমা সিদ্দিকা মিলি জানান, যারা দুই তরুণীর ছবি ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে, তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।  অচিরেই তাদের খুঁজে বের করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এদিকে সাফাত আহমেদের দেহরক্ষী রহমত আলীকে পুলিশ রিমান্ড শেষে গতকাল আদালতে পাঠানো হয়।  আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোরে আদেশ দেন। ওদিকে পুুলিশের তদন্তকারীরা ‘রেইনট্রি’ হোটেলের মালিকপক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকবে বলে জানা গেছে। 

অপরাধ চিত্র বিভাগের আরো খবর