অন্ধকারে অন্তরঙ্গ কয়েক ডজন তরুণ-তরুণী


প্রকাশিত: মার্চ ৩০, ২০১৭, ০৮:৩২ এএম
অন্ধকারে অন্তরঙ্গ কয়েক ডজন তরুণ-তরুণী

অনলাইন ডেস্ক: সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়েছে। আস্তে আস্তে আঁধারে তলিয়ে যাচ্ছে রাতের আকাশ। গাছের আড়ালে অপেক্ষায় বিনোদন কর্মীরা। পাশাপাশি চলছে মাদক বিক্রেতা-ছিনতাইকারীদের ছোটাছুটি। রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানের চিত্র একই। জাতীয় সংসদ ভবনের জন্য এই স্থানটি বেশ পরিচিত। শুধু নগরীর নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা। দিন-রাত দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত থাকে জায়গাটি। আর এই দর্শনার্থীদের পুঁজি করে চলে প্রতারক, ছিনতাইকারী, পকেটমার, ভাসমান পতিতা, বিনোদনকর্মী ও ছোটখাটো সন্ত্রাসীদের তৎপরতা। এখানে দিনদুপুরেই দাপিয়ে বেড়ায় অপরাধীরা। আর সন্ধ্যার পর উদ্যানটি অনেকটা তাদের দখলেই চলে যায়। প্রতিনিয়ত অপরাধীদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন উদ্যানে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা।

বুধবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, প্রতারণা আর অপকর্মের এক ভয়ানক চিত্র। লম্বা লেকের দুই পাড়ে অন্ধকারে অন্তরঙ্গ সময় পার করছে অন্তত কয়েক ডজন তরুণ-তরুণী। পাশে কে আছে, রাস্তা দিয়ে কে যাচ্ছে, সেদিকে কারো খেয়াল নেই। লেকের পাড় দিয়ে হেঁটে পার্কের দিকে যাওয়ার সময় চোখে পড়লো অন্ধকারের মধ্যে পুলিশের দায়িত্বরত কয়েকজন সদস্য বসে আছেন। এতো বড় পার্কে গোটাকয়েক বাতি জ্বলছে। বলতে গেলে পুরো পার্ক ও লেকটি অন্ধকারে ডুবে আছে। ভিতরে গিয়ে দেখা যায়, কিছু মানুষ ব্যায়াম করার উদ্দেশ্য হাঁটাচলা করছে। তবে এদের সংখ্যা খুবই কম। এছাড়া অন্ধকারে বিভিন্ন গাছের আড়ালে কালো বোরখা আর মুখ বন্ধ করা কিছু মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। পাশ দিয়ে কেউ আসা-যাওয়া করলেই বলছেন, কি বসবেন নাকি। অনেকেই তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে দরদাম ঠিক করে লেকের পাড়ে বসে পড়ছেন। আবার কেউ অন্ধকার পথ দিয়ে আরো ভিতরে চলে যাচ্ছেন। 

কিছুক্ষণ পর আবার বের হয়ে এসে নিজেদের মতো করে আলাদা হয়ে যাচ্ছেন। একটু সামনে গিয়ে দেখা যায় কিছু মানুষের জটলা। একটু খেয়াল করে দেখা যায় একটি ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে কয়েকজন ছেলে তর্কাতর্কি করছে। কিছুক্ষণ পর ওই ছেলেরা চলে গেলে ভোক্তভোগী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাইফুল ইসলাম ও তানিয়া রহমান বলেন, আমরা দুজন মিরপুর থেকে এখানে  ঘুরতে এসেছি। কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করার পর আমরা একটি গাছের নিচে বসি। এর পরই একটি ছেলে এসে হাজির। কি লাগবে ভাইয়া। আমি বলি কিছু লাগবে না। তখন ওই ছেলেটি বলেন, আরে ভাইয়া নেন, নেন। খেয়ে খেয়ে গল্প করেন। এই বলে দু’টি কোমল পানীয় ও এক প্যাকেট চানাচুর চিপস দিয়ে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর এসে টাকা চাইলে আমি ১০০ টাকার নোট দেই। তখন সেই ছেলেটি বলে কি দেন ভাই আরো ৪০০ টাকা দেন। আপনার বিল হইছে ৫০০ টাকা। তখন আমি বললাম, দু’টি কোমল পানীয়, এক প্যাকেট চিপস আর চানাচুরের দাম ৮৫ টাকা। কিভাবে ৫০০ টাকা হলো। তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে আরো কয়েকজন ছেলে এসে হাজির। তারা এসে বলে এতো কথা বলেন কেন ভাই, যা চাইছে দিয়ে দেন। এইটা আমাদের এলাকা। এখানে বসলে একটু বেশি টাকা দিতে হবে। তবে ভালো ভাবে ফুর্তি করেন। কেউ কিছু বলবে না। আশপাশের সবাই আমাদের লোক। এক পর্যায়ে মানসম্মানের ভয়ে ৫০০ টাকা দিতে বাধ্য হই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুস্থ বিনোদন প্রেমীরা এখন আর এখান আসেন না। তবে দূরদূরান্ত থেকে কোনো দর্শনার্থী আসলে তারা কোনো না কোনো খপ্পরের পাল্লায় পড়ছেন। হয় ছিনতাইকারীদের খপ্পরে না হয় বিনোদনকর্মীদের। আর না হয় খাবার বিক্রেতাদের। এখানে দায়িত্বরত কিছু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের যোগসাজশে তারা এই কাজ করে। পরিকল্পিতভাবে সব কিছু আগে থেকে সাজানো থাকে। কে কি করবে। কাজ শেষে যা আদায় হয় সবাই ভাগভাটোরা করে নেয়। দিনের পর দিন এভাবেই চলে আসছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, এখানে সব ধরনের মাদকদ্রব্য পাওয়া যায়। তাই সকাল থেকেই এখানে মাদকসেবীরা আসা যাওয়া করে। আনসার সদস্যদের মদতে হিজড়ারা দর্শনার্থীদের কাছে থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করে। কেউ দিতে না চাইলে নানাভাবে হেনস্তা করে। 

আরেকটি চক্র আছে, এরা চন্দ্রিমা উদ্যানে সুন্দরী যুবতীদের দিয়ে ফাঁদ পাতে। এসব যুবতীকে বলা হয় বিনোদনকর্মী। কালো বোরখা পরা বিনোদনকর্মীরা বিকেল থেকে উদ্যানের সামনের রাস্তা, ক্রিসেন্ট লেকের পাড়সহ আশপাশ এলাকায় ঘোরাঘুরি করে। ১০০-১৫০ টাকা চুক্তিতে এরা উদ্যানে আগত বিভিন্ন যুবককে নিয়ে বসেন অন্ধকারে বিভিন্ন গাছের নিচে। আর তাদের পেছনে পেছনে ফলো করতে থাকে ওই চক্রের সদস্যরা। চক্রের সদস্যরা এসে তাদের ঘিরে ধরে। পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ওই যুবককে নাজেহাল করে। চলে নানা ধরনের হেনস্থা। একপর্যায়ে তারা সব কিছু রেখে ছেড়ে দেয়।

মুফিদুল নামক এক আনসার সদস্য বলেন, এখানে সব সময়ই এরকম অন্ধকার থাকে। বিনোদনকর্মীদের সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। তিনি বলেন এখানে অনেক মহিলারা আসে। কিন্তু কে কি উদ্দেশ্য আসে তিনি সেটা খেয়াল করেন না।-মানবজমিন

অপরাধ চিত্র বিভাগের আরো খবর