আইন-শৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা করছে গোয়েন্দারা


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০১৬, ০৮:৪৫ এএম
আইন-শৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা করছে গোয়েন্দারা

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং রাখাইন বৌদ্ধদের হামলা ও নির্যাতনে পালিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ক্যাম্পগুলোতে সাহায্যকাজে নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থা যাতে কোনো নেতিবাচক উদ্যোগ ও মন্তব্য-প্রতিবেদন প্রচার না করে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলকে।

কক্সবাজারের সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে আসা এসব মুসলমান রোহিঙ্গাকে নানা অজুহাতে ক্যাম্পগুলোতে `মানবিক সাহায্য কার্যক্রমে` নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থা জঙ্গি কর্মকাণ্ডে উস্কে দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে বলে গোয়েন্দা সংস্থা জানতে পেরেছে। এতে আইন-শৃঙ্খলা ও সামাজিক পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে রোহিঙ্গা ইস্যু পর্যবেক্ষণ-পরিবীক্ষণকারী একটি গোয়েন্দা সংস্থা এ ব্যাপারে ১২টি সুপারিশ সংবলিত একটি প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা ইস্যুর স্থায়ী সমাধানে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তা নেওয়া প্রয়োজন। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সমন্বিত জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, `অন্য দেশের সমস্যার দায় বাংলাদেশ নিতে পারে না। রোহিঙ্গাদের আপাতত থাকতে দেওয়া হচ্ছে মানবিক কারণে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাদের দেশে ফেরত যেতে হবে। এ ইস্যুকে সামনে নিয়ে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সতর্ক। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধে পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড সক্রিয় রয়েছে। কক্সবাজার জেলার সীমান্ত এলাকায়ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান ও টহল জোরদার করা হয়েছে।` বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া প্রতিবেদন মন্ত্রণালয় বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধে উল্লেখিত সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। সে জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাকে নিবিড়ভাবে কাজ করতে হবে। স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পর্যায়ে একাধিক বৈঠকও আবশ্যক। বান্দরবান, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলায় অবস্থিত মাদ্রাসাগুলোর ওপর গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত এনজিও কর্মীদের গতিবিধিও পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। মসজিদে খুতবায়, ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিলে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাতে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়া না হয়, সে ব্যাপারে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, বিভিন্ন ব্লগ ও ইউটিউবে মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে নানা অপপ্রচার ও গুজব ছড়ানো হচ্ছে। তাই বিটিআরসির মাধ্যমে অগ্রিম তথ্য সংগ্রহের লক্ষ্যে এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কঠোর ও তীক্ষষ্টভাবে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। যেসব আইডি থেকে ফেসবুক, টুইটার ও ইউটিউবে এ ধরনের স্ট্যাটাস পোস্ট বা ছবি ও লিঙ্ক আপলোড করা হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তি ও গণমাধ্যম কর্মীদের সম্পৃক্ত করে রোহিঙ্গা, আরএসও ও দুষ্কৃতকারী অনুপ্রবেশরোধে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শও দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। ২০১২ সালে রামুর বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার মতো কোনো ঘটনা যাতে ঘটতে না পারে, সে জন্য কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত এলাকায় জেলা পুলিশসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তাড়াতাড়ি সীমান্ত এলাকায় অতিরিক্ত বিজিবির সদস্য সংখ্যা ও টহল বাড়ানোর; নাফ নদী ও টেকনাফ-উখিয়া উপকূলীয় অঞ্চলে কোস্টগার্ডের সংখ্যা ও টহল বাড়ানোর। বাংলাদেশে অবস্থিত নিবন্ধনকৃত ও অনিবন্ধনকৃত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ওপরও বিশেষ নজর রাখা প্রয়োজন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। সূত্র: সমকাল 

 

গো নিউজ২৪/জা আ 

অপরাধ চিত্র বিভাগের আরো খবর