রাজশাহীর সরকারি অফিসগুলোতে দালালদের দৌরাত্ম্যে নানাভাবে সেবা ব্যাহত হচ্ছে। সরকারি সেবা পেতে গিয়ে এখানের নাগরিকরা পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকা, দক্ষ ও যথার্থ জনবলের অভাব, সেবা প্রদানকারীর অবহেলা, দালালের দৌরাত্ম্য ও বিভিন্ন অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ের সেবা কেন্দ্র পর্যন্ত এসব হয়রানির ঘটনা ঘটছে।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের অনেকেই বলছেন, বর্তমান সরকারের আমলে সরকারি সেবায় অভূতপূর্ব পরিবর্তন এসেছে। তবে এখনো নিশ্চিত হয়নি দুর্ভোগমুক্ত সেবা।
উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল। বিভাগীয় শহরে একমাত্র উন্নত সেবা প্রদানকারী সরকারি হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসেন ৮ জেলার রোগী। সামর্থের দ্বিগুণেরও বেশি রোগী সেবা নিতে আসেন। এতে হিমশিম খেতে হয় কর্তৃপক্ষকে। এরপর রয়েছে দালালের দৌরাত্ম্য। ২০-২৫টি দলে বিভক্ত হয়ে হাসপাতাল জিম্মি করে রেখেছে হাজারো দালাল। তাদের দাপটে হাসপাতালে সেবা পাচ্ছেন না সাধারণ রোগী।
রামেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, রামেক হাসপাতালের বর্হিবিভাগে প্রতিদিন প্রায় ২৬-২৭শ রোগীকে সেবা দেওয়া হয়। জরুরি বিভাগে ১৬শ থেকে ১৭শ রোগী প্রতিদিন ভর্তি হয়। যা সামর্থেরও দ্বিগুণ। কর্তৃপক্ষ অভিযান চালিয়েও হাসপাতালটিকে দালালমুক্ত করতে পারেননি।
এদিকে রাজশাহী মহানগরীতে সুপেয় পানি সরবরাহ করে রাজশাহী ওয়াসা। এই পানির মান ও ওয়াসার সেবা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন গ্রাহক। মহানগরীর মালোপাড়া এলাকায় রাস্তার উন্নয়ন কাজে পাইপ ফেটে রাস্তা চলাচল অনুপযোগী হওয়ায় বিরুপ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করছেন সাধারণ মানুষ।
মহানগরীর মালোপাড়া এলাকার বাসিন্দা জিয়াউর রহমান জানান, ওয়াসার পানি কতটা বিশুদ্ধ তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন আছে। কারণ প্রায়ই পানি দিয়ে ময়লা বের হয়। মাঝে মাঝে এতোটা নোংরা পানি আসে যে এই পানিতে গোসলও করা যায় না। আর এলাকায় রাস্তার কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই ভোগান্তি বেড়েছে। প্রায় সময়েই পাইপ ফাটছে, আর রাস্তা দিয়ে স্রোত চলছে।
এ ব্যাপারে রাজশাহী ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী পারভেজ মামুদ জানান, রাজশাহীতে একটি শোধনাগারের মাধ্যমে গ্রাহকদের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে আয়রনের কিছু সমস্য আছে। সেটা জমা হয়ে মাঝে মাঝে কিছু দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। তবে ট্যাঙ্কি পরিষ্কার করা হয়।
অন্যদিকে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডেও রয়েছে দালালদের দৌরাত্ম্য। দালালের ফাঁদে পড়ছেন সেবাপ্রার্থীরা। বুধবার (১৩ জানুয়ারি) রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বোর্ড চত্বরে ঘোরাঘুরি করছেন দালাল। হাতে কাগজ নিয়ে অজ্ঞাত লোক দেখলেই পিছু নিচ্ছেন। কৌশলে দ্রুত সময়ে কাজ করে দেওয়ার আশ্বাসও দিচ্ছেন তারা।
বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বোর্ডের কিছু কর্মচারীর সঙ্গে দালালদের ভালো সর্ম্পক রয়েছে। এখানে দালালরা সেবাপ্রার্থীদের ধরে না, বরং দ্রুত কাজ করিয়ে নেওয়ার জন্য সেবাপ্রার্থীরাই দালাল ধরে এবং মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে দ্রুত কাজ করে দেয়।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড রাজশাহীর সচিব ড. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, শিক্ষা বোর্ডে এখন দালালের তেমন কোন দৌরাত্ম্য নেই। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ সচেতন আছে। তবে কেউ যদি এ রকম কোন অভিযোগ করে তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ইলিয়াস হোসেন বলেন, সরকারি অফিসগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে সেইভাবে সেবার মনোভাব তৈরি হচ্ছে না। আর এক্ষেত্রে বেশকিছু কারণও রয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারকে নতুন পলিসি নির্ধারণ করতে হবে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে নিজের কাজের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে।