হতদরিদ্রদের চাল কালোবাজারে, আ.লীগ নেতার বিরদ্ধে অভিযোগ


শামসুল ইসলাম সহিদ, মির্জাপুর প্রতিনিধি: প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৮, ২০১৯, ০৭:৩৯ পিএম
হতদরিদ্রদের চাল কালোবাজারে, আ.লীগ নেতার বিরদ্ধে অভিযোগ

খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজির চাল রাতের আধারে কালো বাজারে বিক্রির দায়ে  ডিলার টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার উয়ার্শী ইউনিয়নের সজীব ট্রেডার্সের মালিক উয়ার্শী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মা. আওলাদ হোসেনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।  

রোববার দুপুরে হতদরিদ্র কার্ডধারী ছয়জন তাদের প্রাপ্য চাল না পাওয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল মালেকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।

জানা গেছে, সরকার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় হতদরিদ্র কার্ডধারীদের মধ্যে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির জন্য মির্জাপুর উপজেলার ১৪ ইউনিয়নে ২৮ জন ডিলার নিয়োগ দেন। উপজেলার উয়ার্শী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আওলাদ হোসেন ওই ইউনিয়নের একজন ডিলার। তিনি ইউনিয়নের ৫৩৯ জন হতদরিদ্র কার্ডধারীর জন্য নভেম্বর মাসে মির্জাপুর খাদ্য গুদাম থেকে ১৬ হাজার ১৭০ কেজি চাল উত্তোলন করে ভাতগ্রাম বাজারের দোকানে মজুত করেন।

ওই চাল ইউনিয়নের ৪,৫,৬,৯ ও ২ নং ওয়ার্ডের আংশিক ৫৩৯ জন হতদরিদ্রদের মধ্যে ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার কথা। চাল বিক্রির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যরা এলাকার কার্ডধারীদের জানানোর কথা থাকলেও অনেক সদস্য তা জানাননি। এজন্য অনেক কার্ডধারীও সময় মতো চাল কিনতে পারেননি। চাল না পাওয়া কার্ডধারীরা লোকমুখে চাল বিক্রির বিষয়টি জানতে পেরে ডিলারের দোকানে যান। সেখানে তাদের জানানো হয় চাল বিক্রি শেষ হয়েছে।

বন্দ্যে কাওয়ালজানি গ্রামের ব্রজ বাশী মন্ডলের স্ত্রী বলেন, দুই মাস চাল কিনতে পারলেও গত মাসে চাল কিনতে পারিনি। ওই দুই মাস তাকে ২৮ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

একই গ্রামের শহিদুর রহমান, বিভাস মন্ডল, চন্দনা রানী, বেলু রানী মন্ডল বলেন, বাজারে ৩০/৩৫ টাকা কেজি চাল কিনতে হয়। সরকার হতদরিদ্রদের কথা চিন্তা করে কার্ড দিয়েছেন। ওই কার্ড দিয়ে আমরা বছরে পাঁচ মাস ১০ টাকা কেজি দরে চাল কিনতে পারি। কিন্তু গত মাসের চাল বিক্রির বিষয়টি আমাদের জানানো হয়নি। এলাকার লোকদের কাছে খবর শুনে চাল কিনতে গেলে আমাদের জানায় চাল বিক্রি শেষ।

দিনমজুর আলতাব হোসেন বলেন, পিকআপে চালের বস্তা উঠানো বাবদ প্রতি বস্তায় তাদের ৩ টাকা হিসেবে ২শ টাকা দেয়া হয়েছে। তিনি ১০ বস্তা উঠিয়ে ৩০ টাকা পেয়েছেন বলে জানান।

নগর ভাতগ্রাম বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক লাবু মিয়া, সহসাধারণ সম্পাদক মো. কবির হোসেন, উয়ার্শী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান সুমন জানান, সম্প্রতি বাজারের একটি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটেছে। গত সোমবার ভোরে ডিলার আওলাদ হোসেন চালের বস্তা পিকআপযোগে অন্যত্র নিয়েছেন এ বিষয়টি পাহারাদার সুলতান ও চা বিক্রেতা সেকান্দার তাদের জানিয়েছেন।

গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত অর্ধশতাধিক কার্ডধারী ডিলারের দোকানে গিয়েও চাল কিনতে না পেরে ফিরে যান। এ ছাড়া ডিলার কার্ডধারীদের কাছে চাল বিক্রি না করে ওই চাল ২ ডিসেম্বর ভোর রাতে পিকআপযোগে অন্যত্র বিক্রি করে দেন। গভীর রাতে অন্যত্র চাল বিক্রির ঘটনাটি বাজারের পাহারাদার সুলতান মিয়া ও চা বিক্রেতা সেকান্দার দেখেন এবং সকালে বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেন। ঘটনাটি জানাজানি হলে কার্ডধারী ও স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। 

এদিকে রোববার দুপুরে ১০ টাকা কেজি চাল কিনতে না পেরে কার্ডধারী বেলাল হোসেন (৯৭৬), শহিদুর রহমান (৯৮৯), ভাষাণ মন্ডল (১০০২), ব্রজবাসী মন্ডল (১০০৫), বিভাষ মন্ডল (১০০১), টুষ্টু মন্ডল (১০০৪) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল মালেকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল মালেকের সঙ্গে কথা হলে তিনি লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মঈনুল হককে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

গো নিউজ২৪/আই 

দেশজুড়ে বিভাগের আরো খবর