সিএইচসিপিদের আন্দোলন: চিকিৎসাসেবা বন্ধ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে


শামসুল ইসলাম সহিদ, মির্জাপুর প্রতিনিধি: প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৮, ০৬:১২ পিএম
সিএইচসিপিদের আন্দোলন: চিকিৎসাসেবা বন্ধ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে

দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলনে গত এক মাস ধরে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিগুলোতে চিকিৎসাসেবা বন্ধ রয়েছে। এতে সাধারণ রোগীরা পড়েছেন বিপাকে।

চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি) আন্দোলনের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মির্জাপুর উপজেলায় ৫৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এর মধ্যে ৪৯টিতে সিএইচসিপি কর্মরত আছেন। উপজেলার দেওড়া ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচসিপি আশরাফুল ইসলাম মারা গেছেন। আর তরফপুর, বাঁশতৈল, আজগানা ও বরদাম এই চারটি ক্লিনিকে কর্মরতরা অন্যত্র চাকুরী নিয়েছেন বলে জানা গেছেন। 

সিএইচসিপিদের দেয়া তথ্য মতে, ক্লিনিকগুলোতে তাঁরা গর্ভবতীদের চেকআপ করতেন। যক্ষা, পুষ্টিহীনতা, ঠান্ডা, জ্বর, কাঁশি, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, গ্যাষ্টিক, আমাশায়সহ নানা ধরণের অসুখের জন্য চিকিৎসা সেবা প্রদান ও প্রয়োজন মতো প্রায় সরকারি ৩০ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে বিতরণ করতেন। ক্লিনিকগুলোতে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার ৫০০ রোগী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতেন। 
আন্দোলনের কারণে স্থানীয়রা এখন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাদের আন্দোলনের কারণে স্বাস্থ্য সহকারিদের ইপিআই কার্যক্রম ও পরিবার কল্যান পরিদর্শকদের স্যাটেলাইট কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানা গেছে। 

সিএইচসিপিরা জানান, চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে তারা গত ২০ থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে, ২৩ থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সামনে এবং ২৭ জানুয়ারি থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। তাঁরা গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশন শুরু করেন। খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে গত ৮ ও ৯ ফেব্রুয়ারি দুই দিন বিরতির পর ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকার মহাখালীতে অবস্থিত বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষনা কেন্দ্র (বিএমআরসি) ভবনের সামনে পুনরায় আমরণ অনশন কর্মসূচী শুরু করেন। যা এখনো অব্যাহত থাকায় প্রায় এক মাস ধরে মির্জাপুরবাসী সরকারের তৃণমুল চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। 

মঙ্গলবার উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের চাকলেশ্বর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় কমিউনিটি ক্লিনিকটি বন্ধ। ওই গ্রামের ওয়াজেদ মৃধা ও ফরিদ মিয়া জানান, ক্লিনিকটি বন্ধ থাকায় স্থানীয়রা সেবা নিতে পারছেন না। এক মাস ধরে ক্লিনিকে তালা ঝুলছে। উপজেলা সদরের কাণ্ঠালিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি ফারহানা আশা জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর কারণে তাঁরা কাজ বন্ধ রেখেছেন। ওই ক্লিনিকের পাশের মুদি দোকানী হাকিম মিয়া জানান, বন্ধ থাকার পরও প্রতিদিন স্থানীয়রা চিকিৎসা সেবা নিতে গিয়ে ক্লিনিকে তালা ঝুলতে দেখে ফিরে যান। 

উপজেলার মহেড়া ইউনিয়নের ভাতকুড়া ক্লিনিকের পাশের বাসিন্দা বুদ্দু মিয়া জানান, ক্লিনিকটিতে আগে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৭০জন রোগী যেতো। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে এখন আর তেমন রোগী যায়না। ওই ক্লিনিকের সিএইচসিপি লাজলী আক্তারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। 

উপজেলার উয়ার্শী ইউনিয়নের চৌরঙ্গী বাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি আফরোজা ইসলাম বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে।

মঙ্গলবার দুপুর দুইটায় চাকলেশ্বর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি ও টাঙ্গাইল জেলা সিএইচসিপি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুদ রানা মুঠোফোনে জানান, দাবি আদায়ে তারা ঢাকায় আমরণ অনশন কর্মসূচীতে রয়েছেন।
 
আন্দোলনের জন্য মির্জাপুরের ৫৪টিসহ টাঙ্গাইলের ৪২৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ রয়েছে। তবে ইপিআই ও স্যাটেলাইট কার্যক্রম চালু থাকলেও তা ক্লিনিকের বারান্দায় সংশ্লিষ্টরা চালাচ্ছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। 
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, ক্লিনিকগুলোতে কোন প্রকার সেবা বন্ধ নেই। স্বাস্থ্য সহকারি ও পরিবার কল্যাণ পরিদর্শকেরা তাঁদের সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। সিএইচসিপিরা না থাকায় এলাকাবাসীর সেবায় গতি কিছুটা কমে এসেছে। 

 

গো নিউজ২৪/আই
 

দেশজুড়ে বিভাগের আরো খবর