জমি লিখে না দেওয়ায় কৃষককে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা


জেলা প্রতিনিধি প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৪, ২০১৭, ১২:৪৮ পিএম
জমি লিখে না দেওয়ায় কৃষককে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা

সাতক্ষীরা: বন্ধকী জমি ফিরিয়ে না পাওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ করায় এক কৃষককে পেট্রোলের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। তাকে রক্ষা করতে গিয়ে আগুনে পুড়ে আহত হয়েছেন তার স্ত্রী।

বুধবার ভোরে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার জয়নগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মারাত্মক জখম আব্দুল হামিদকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত আব্দুল হামিদ (৫২) সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার জয়নগর গ্রামের সাজ্জাদ আলী মোল্লার ছেলে।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কৃষক আব্দুল হামিদ জানান, প্রায় ১৫ বছর আগে কুয়েতে যাওয়ার সময় একই গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান রিয়াজউদ্দিনের ছেলে শামীমের কাছে ১০ কাঠা জমি ২৩ হাজার টাকায় বন্ধক রাখেন। সুবিধা মতো সময়ে ওই জমি ছাড়িয়ে নেওয়ার কথা ছিল। দু’ সপ্তাহ আগে তিনি তার বোন মাহমুদা বেগমকে নিয়ে ২৩ হাজার টাকা দিয়ে জমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য শামিমকে বলেন। শামিম ওই জমি ছেড়ে দেবেন না বলে উল্টো তাকে ওই জমি রেজিস্ট্রি দলিল করে দিতে বলেন। না হলে জমির পরিবর্তে তিন লাখ টাকা দাবি করেন। বাধ্য হয়ে তিনি এক সপ্তাহ আগে ন্যায় বিচার চেয়ে জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ দায়ের করেন। ইউপি চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন আল মাসুদ বাবু উভয়পক্ষকে ডেকে বন্ধক নেওয়া জমি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য শামীমকে এক সপ্তাহ সময় দেন।

আব্দুল হামিদ অভিযোগ করে জানান, জমি ফিরে না পাওয়ায় পরিষদে অভিযোগ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হন শামীম, তার ভাই সেলিম ও একই গ্রামের কাশেম সরদারের ছেলে ইউপি সদস্য চারটি নাশকতা মামলার আসামি বজলুর রহমান। তারা তাকে (হামিদ) জমি লিখে না দিলে খুন করার হুমকি দেন।

আব্দুল হামিদ জানান, বুধবার ভোর আনুমানিক ৩টার দিকে মশারির উপর দিয়ে পেট্রোল ছড়িয়ে দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। আগুন তার শরীরে লাগার সাথে সাথে তিনি টর্চের আলো মেরে শামীম, সেলিম ও বজলু মেম্বারসহ কয়েকজনকে দৌড়ে পালিয়ে যেতে দেখেন। তার চিৎকারে স্ত্রী জাহানারা তাকে রক্ষা করতে গেলে সেও দগ্ধ হয়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। 

আব্দুল হামিদের স্ত্রী জাহানারা খাতুনের অভিযোগ, বুধবার তার স্বামীকে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টার ঘটনায় শামীম হোসেন, সেলিম হোসেন ও বজলুর রহমানের বিরুদ্ধে কলারোয়া থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। উপরন্তু সরসকাটি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এফএম তারেক ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফরহাদ জামিল জানান, আব্দুল হামিদের দু’ হাত, কপাল ও মাথার কিছু অংশ পুড়ে গেছে।

সরসকাটি পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক এফএম তারেক হোসেন জানান, জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষ বা তৃতীয় কোনো পক্ষ এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে। ঘটনাস্থল থেকে সহকারী উপপরিদর্শক আমিনুল ইসলাম একটি পেট্রোল রাখার ছোট পাত্র ও কাপড় জড়ানো পেট্রোল ভেজানো একটি ছোট লাঠি উদ্ধার করেছেন। প্রথমে চিকিৎসা ও পরে মামলা করার জন্য আব্দুল হামিদকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেরিনা আক্তার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিপ্লব কুমার নাথ জানান, এ ঘটনায় থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

গোনিউজ/এমবি

দেশজুড়ে বিভাগের আরো খবর