আমনের পর বিনাচাষে রসুনের আবাদ


জেলা প্রতিনিধি প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০১৭, ০৩:৪৬ পিএম
আমনের পর বিনাচাষে রসুনের আবাদ

নাটোর: নাটোর শহর থেকে লালপুর, বাগাতিপাড়া, গুরদাসপুর, নলডাঙ্গাসহ অদূর পাড়া গাঁয়ের কৃষকরা এখন রসুন চাষ করে ব্যস্ত সময় পার করছে। আমন ধান কেটে জমিতেই মাড়াই করে বিনা চাষে রসুন লাগাচ্ছে তারা।

বসে নেই পাড়ার অলস যুবক থেকে শুরু করে স্কুল কলেজের ছাত্র, গৃহিণী কিংবা বৃদ্ধরাও। কেউ বাড়িতে রসুন থেকে কোয়া আলাদা করছে, কেউবা মাঠে গিয়ে তা লাগাচ্ছে।

গোপালপুর ডিগ্রি কলেজের ছাত্র তুহিন ইসলাম জানান, রসুন লাগানোর কাজ অনেক সহজ। এখন মজুরিও বেশি। তাই তিনি নিজের পড়াশোনার খরচ যোগাতে রসুনের ক্ষেতে দিনমজুরির কাজ করছেন। 

লালপুর উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের নারী দিনমজুর মিনারা খাতুন বলেন, ‘সারা বছর খুব একটা কাজ পাওয়া যায়না। কার্তিক অগ্রহায়ণ মাসে বিনা চাষে রসুন লাগানোর ধুম পড়ে। পুরুষ শ্রমিক পাওয়া মুশকিল হয়। তাই আমরা রসুন লাগানো ও তোলার সময় ভালো আয় করতে পারি। তবে আমরা যদি পুরুষ শ্রমিকদের সমান পারিশ্রমিক পেতাম তাহলে সংসারটা ভালোই চলত। ’

একই গ্রামের কৃষক ও সার কীটনাশক ব্যবসায়ী রানা আহম্মেদ জানান, অল্প খরচে বিনাচাষে রসুন চাষে লাভ ভালোই হয়। রসুন লাগানোর এক মাস ও দুই মাস পর মাত্র দুই কিস্তিতে সার প্রয়োগ করতে হয়। এক সিজনে হেক্টর প্রতি ২০০ কেজি ইউরিয়া ও ১০০ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করা লাগে। এছাড়া গোবর সার ১০টন, জিপসাম ১০০ কেজি, বোরাক্স ১০ কেজি ও জিংক সার ২০ কেজি প্রয়োগ করতে হয়।  

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর নাটোর জেলায় মোট ২৫ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমিতে রসুন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বড়াইগ্রামের কৃষি অফিসার ইকবাল আহম্মেদ জানান, ১৯৯৫ সালের দিকে সর্ব প্রথম বড়াইগ্রামে বিনাচাষে রসুনের চাষ শুরু হয়। এই অঞ্চলের অধিকাংশ ডোবায় বোনা আমন ধান পাকতে পাকতে পানি নেমে নরম মাটিতে পরিণত হয়। তাই কার্তিকের আমন আউশ ধান কাটার পরই নরম জমিতে রসুনের কোয়া লাগানো হয়। এক্ষেত্রে জমি চাষের কোনো প্রয়োজন হয়না। নরম মাটিতে রসুনের কোয়ার মাথা অর্ধেকটা উপরে রেখে পুতে রাখলেই হয়। আগাছাও কম জন্মে। প্রতি বিঘা জমিতে ২৫-৩০ মণ রসুনের চাষ হয়।  

তিনি জানান, কম খরচে অধিক লাভবান হওয়া যায় বলে অন্যান্য উপজেলার কৃষকদের মাঝেও এই পদ্ধতিতে রসুন চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। উৎপাদন ও দাম ভালো পাওয়ায় প্রতি বছর রসুন চাষে কৃষকরা বেশি উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। তবে অনেক বর্গাচাষি বেশি লাভের আশায় অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করে থাকেন। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয় ও জমির উর্বরতা হ্রাস পায়। এ জন্য উপজেলা কৃষি অফিস মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগের কুফল সম্পর্কে সচেতন করছে। 

লালপুর উপজেলার কৃষি অফিসার হাবিবুর ইসলাম খান জানান, দোআঁশ ও এটেল মাটিতে রসুনের চাষ ভালো হয়। লালপুরে পূর্বে বিনাচাষে রসুন চাষ তেমন একটা ছিল না। পার্শ্ববর্তী বড়াইগ্রাম উপজেলায় এই পদ্ধতিতে রসুনের চাষ হত। পুরোনো পদ্ধতির চেয়ে এই পদ্ধতি সহজ বলে কয়েক বছর ধরে ব্যাপক হারে রসুনের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বছর রসুন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৭৪৫ হেক্টর ধরা হলেও চাষের মাত্রা দ্বিগুণ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। 

গোনিউজ/এমবি

দেশজুড়ে বিভাগের আরো খবর