কী কারণে তিন পুলিশের মা ভিখারি?


স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বরিশাল প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৭, ০৭:৪১ পিএম
কী কারণে তিন পুলিশের মা ভিখারি?

বরিশাল: ছয় সন্তানের জনক আইয়ুব আলী মৃত্যু আগে ১৭ শতাংশ জমি রেখে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ১৩ শতাংশ জমি সড়ক ও জনপদে চলে যায় সড়ক প্রশস্থকরণের কারণে।

বাকি চার শতাংশ জমি ভাগভাটোয়ার নিয়ে পাঁচ ছেলের মধ্যে দেখা দেয় চরম বিরোধ। এমনকি সেই বিরোধে বরিশালের বাবুগঞ্জের স্টিল ব্রিজ এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ মা মনোয়ারা বেগমকেও বিগত সময়ে রক্তাক্ত হতে হয়েছিল।

২০১৫ সালের শেষ দিকে এমন প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিলে ভাইদের মধ্যে সংঘাতের কারণে। কিন্তু সেই রক্তপাতেই রোহিত হননি বৃদ্ধ মনোয়ারার সন্তানরা, থামেনি দ্বন্দ্ব আর সংঘাত।  ফলে মায়া-মমতা, আদর-যত্ন আর ভালোবাসা বঞ্চিত ছিলেন মনোয়ার বেগম।

শেষতক সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ মাকে দু’মুঠো ভাতের জন্য হাতে তুলে নিতে হয়েছিল ভিক্ষার থালা (!) অথচ এই নারী পাঁচ সন্তানের তিনজনই পুলিশ। তাদের মধ্যে বড় ছেলে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য ফারুখ আহম্মেদ, মেজ ছেলে পুলিশ কনস্টেবল জসিম উদ্দিন এবং চতুর্থ ছেলে ঢাকার মালিবাগে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চে কর্মরত মো. নেছারউদ্দিন।

এছাড়া একমাত্র মেয়ে বাবুগঞ্জ উপজেলার ভূতেরদিয়া নবারুণ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মরিয়ম সুলতানা। বাকি সেজো ছেলে খুলনার খালিসপুরের চায়ের দোকানি মো. শাহাবুদ্দিন ও ছোট ভাই গিয়াস উদ্দিন অটোরিকশা চালক।

সমাজে প্রতিষ্ঠিত ছয় সন্তানের জননী ভিক্ষা করেন এমন সংবাদ পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হলে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে এই প্রচারণার জন্য পুলিশ প্রশাসনের শীর্ষমহলকেও জাগ্রত করে তোলে।

যে কারণে আর নিশ্চুপ না থাকতে পেরে ওই বৃদ্ধ মায়ের তিন পুলিশ, মেয়ে শিক্ষিকাসহ সকলকে বৃহস্পতিবার সকালে তলব করেছেন বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি শফিকুল ইসলাম। অবশ্য ডিআইজির ডাকে সারা দিয়ে স্কুলশিক্ষিকা মেয়ে ব্যতীত ৫ ছেলে সন্তানই এসেছিলেন।

কেন বৃদ্ধ মায়ের প্রতি তাদের এমন অনাদর ও অবহেলার বিষয়ে বিষয়টি খুঁজতে দিনভর ওই সন্তানদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন বরিশাল রেঞ্জের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

পরিশেষে ডিআইজি নিশ্চিত হয়েছেন মাত্র ৪ শতাংশ জমিজমা নিয়ে পারিবারিক বিরোধের জের ধরেই বৃদ্ধা মায়ের আজ এমন অনাদর অবহেলা।

পুলিশ সূত্রের খবরে একটা পর্যায়ে বৃদ্ধা মাকে দেখাশোনা করতেন মেজ সন্তান কনস্টেবল জসিম উদ্দিন। পরবর্তীতে ছোট ছেলে গিয়াসউদ্দিন মায়ের কিছুদিন ভরণ পোষন করেছিল। কিন্তু জমি নিয়ে ছোট ভাই গিয়াসের সাথে কোন্দল ছিল অপর চার ভাইয়ের।

ওই সময়ের পরে চার ভাই টাকা পাঠাতে চাইলেও ছোট ভাই গিয়াস টাকা দিতে বারণ করতেন। তবে চার ভাই ও বোন স্কুলশিক্ষিকা মরিয়ম সুলতানা মায়ের জন্য কোনো টাকা পাঠাতেন না বলে দাবি করেছেন।

অপরাপরের অভিযোগ শুনে বুঝতে আর অপেক্ষ রইলো না বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি শফিকুল ইসলামের। এ কারণে তিনি ডিআইজি অফিসের পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান প্রামাণিককে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা আজাদ এবং মোফিজুল ইসলামকে রাখা হয়েছে।

বিষয়টি তদন্ত তরে আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলেছেন ডিআইজি। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর যদি দেখা যায় ছেলেরা দোষী তাহলে বৃদ্ধা মা ইচ্ছা করলে মামলা করতে পারবেন।

এর আগে বৃদ্ধ মাকে দেখভালের জন্য পাঁচ ছেলেকে অঙ্গীকার করিয়েছেন ডিআইজি। অবশ্য এই ঘটনায় সন্তানরাও অনুতপ্ত হয়ে মায়ের দায়িত্ব গ্রহণে সম্মতির কথা জানিয়েছেন।

এছাড়া মাকে অবহেলার কারণে মেয়ে স্কুলশিক্ষিকাকেও কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার।

এর আগে গত সোমবার বিনা চিকিৎসায় একটি ঝুপড়ি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন বৃদ্ধ নারী মনোয়ারা বেগম। বিষয়টি পত্রিকায় প্রকাশ হলে স্থানীয় সংসদ সদস্য (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) অ্যাডভোকেট টিপু সুলতান তাকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করান।

পরবর্তীতে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি, এসপি ও জেলা প্রশাসক তাকে দেখতে সেখানে গিয়ে আর্থিক সহযোগিতা করেন। এছাড়াও পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা ও রাজনীতিক ওই বৃদ্ধ মায়ের দায়িত্ব নেয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন।”

গোনিউজ২৪/পিআর

দেশজুড়ে বিভাগের আরো খবর