ভোলা প্রতিনিধি: ভোলার প্রাণ নামে খ্যাত প্রায় দুইশ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী ভোলা খালটি অবশেষে দখলমুক্ত করা হচ্ছে। খালের দু’পাড়ে দখলকৃত প্রায় অর্ধশতাধিক অবৈধ স্থাপনা ভেঙে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) সকালে জেলা প্রশাসন ও পৌরসভার যৌথ উদ্যোগে অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযানে অন্যান্যের মধ্যে আরো অংশ নেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাহমুদুর রহমান, ভোলা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন আরজু, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল মান্নান, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুহুল আমিন ও সদর মডেল থানার ওসি মীর খায়রুল কবির।
এ সময় জেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ, কোস্টগার্ড সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
অভিযানের নেতৃত্বদানকারী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘‘ভোলা খাল রক্ষা কর, অবৈধ দখল মুক্ত কর” এ স্লোগান নিয়ে ভোলার প্রাণ নামে খ্যাত ভোলা দখল মুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। খালের দুই পারে বহু দখলদার দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তৈরি করে অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে। খালটি দখলমুক্ত করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও রয়েছে। তাই জেলা প্রশাসন খালের দু’পাড়ে অবৈধ স্থাপনা অপসারণের মাধ্যমে দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে।”
তিনি বলেন, “গত দুই মাস ধরেই প্রস্তুতি হিসেবে সার্ভে করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে খালের দু’পাড়ে ১৫২ জন দখলদারকে চিহ্ণিত করে তাদের ২২ মার্চের মধ্যে নিজ নিজ উদ্যোগে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অন্যথায় প্রশাসন সব অবৈধ দখলদারকে উচ্ছেদ করে খাল দখলমুক্ত করবে। এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে খালের দু’পাড়ের অবৈধ স্থাপনা অপসারণের কাজ শুরু করা হয়েছে। বিকেল পর্যন্ত প্রায় অর্ধশতাধিক স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে খালের দু’পাড়ের সব অবৈধ দখলদারকে উচ্ছেদ করে ভোলা খাল দখলমুক্ত করা হবে।”
এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।
ভোলা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন আরজু বলেন, “পৌরসভা থেকে ভোলা খালকে উন্নয়ন ও এর সৌন্দর্য বর্ধনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। খালের নাব্যতা ফিরিয়ে আনার লক্ষে ভোলা খাল খনন ছাড়াও খালপাড়ে ৪ মিটার চওড়া সড়ক নির্মাণ, সড়কে বাতি স্থাপন, দুই মিটার গভীরে গাইড ওয়াল নির্মাণ, ড্রেন নির্মাণ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর জন্য ইতোমধ্যে জলবায়ু ট্রাস্টের আওতায় ৫ কোটি টাকা বরাদ্দও এসেছে।”
নির্বাহী প্রকৌশলী আরো জানান, ভোলা পৌরসভা কর্তৃক নির্মিত বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা অপসারণের কাজও শুরু করেছে।
উল্লেখ্য, এক সময়ে উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলায় বেতুয়া নদী হিসেবে পরিচিত ভোলা খালের ভেতর দিয়ে বড় বড় পাল তোলা নৌকা ও জাহাজ চলত। ভোলার ব্যবসায়ীরা ওই সব নৌকা ও জাহাজে করে তাদের ব্যবসায়ী মালামাল আনা-নেয়া করত। জেলেরাও মনের আনন্দে মাছ ধরত সেই নদীতে। আজ আর পাল তোলা নৌকা নেই। ব্যবসায়ীরাও এখন আর নৌকায় করে মালামাল আনা নেয়া করতে পারছেন না। নেই জেলেদের মাছ ধরার মহোৎসবও। দখলদারদের কারণে নদী থেকে খালের পর এখন যেন ড্রেনে পরিণত হয়েছে প্রায় দুই শতাধিক বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী ভোলা খাল।
এদিকে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর বেলা উচ্চ আদালতে মামলা করলে আদালত ভোলা খালকে দখলমুক্ত ও দূষণমুক্ত রাখার জন্য জেলা প্রশাসকে নির্দেশ দেন।
ভোলা সদর আসনের এমপি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদও ভোলা খালকে দখলমুক্ত রাখতে জেলা প্রশাসকে নির্দেশ দেন। আদালত ও মন্ত্রীর নির্দেশে অবশেষে জেলা প্রশাসন দীর্ঘদিন পর বৃহস্পতিবার থেকে খাল দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়ে খালের দু’পাড়ের অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দেয়া হয়।
গোনিউজ২৪/এম