ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মৃত্যু নিয়ে এরশাদের কবিতা


গো নিউজ২৪ | নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০১৯, ০৫:২৯ পিএম আপডেট: জুলাই ১৪, ২০১৯, ০৫:৩৩ পিএম
মৃত্যু নিয়ে এরশাদের কবিতা

ঢাকা সিএমএইচে ১৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর রোববার সকাল পৌনে আটটার দিকে না ফেরার দেশে চলে গেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। 

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত-সামালোচিত নাম ছিলেন এরশাদ।  সেনাপ্রধান থেকে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে নয় বছর দেশ শাসনের পর ১৯৯০ সালে গণআন্দোলনের ক্ষমতা হারানোর পরও বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্ব নিয়ে ছিলেন এরশাদ। সর্বশেষ জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন তিনি। 

নানা পরিচয়ে পরিচিত ছিলেন তিনি। রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিবিদ, কবি, ক্রীড়াপ্রেমী।

ব্যক্তিগত জীবনে এরশাদ ছিলেন স্বল্পভাষী ও ভাবের মানুষ। তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে- কনক প্রদীপ জ্বালো, এক পৃথিবী আগামী কালের জন্য, নির্বাচিত কবিতা, নবান্নে সুখের ঘ্রাণ, যুদ্ধ এবং অন্যান্য কবিতা, এরশাদের কবিতা সমগ্র, ইতিহাসে মাটির চেনা চিত্র, যেখানে বর্ণমালা জ্বলে, কারাগারে নিঃসঙ্গ দিনগুলো।

২০১৭ সালে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু নিয়ে একটি কবিতা লিখেছিলেন এরশাদ। কবিতায় লিখেছেন- জীবনে মৃত্যুর সঙ্গে অনেকবার লড়লেও হার মানেননি তিনি।

‘‘জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে’’

মৃত্যুকে আর আমার কোনো ভয় নেই-

যাকে আমি দেখেছি- একবার নয়,

একাধিকবার খুব কাছে থেকে

একেবারে একান্তভাবে- আলিঙ্গনরত

প্রিয়তমার মতো। সৈনিক ছিলাম

মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে শিখেছি তখন।

বন্দিজীবনে পাণ্ডু–রোগকে আজরাইল

রূপে দেখেছি- আল্লাহতা’লার

ভর্ৎসনায় ফিরে গেছে আমাকে না নিয়েই-

তারপর ভেবেছিলাম- স্রষ্টার কিছু কাজ

হয়তো এখনো বাকি রয়ে গেছে- সেটুকু

করার দায়িত্ব নিতে হবে আমাকেই- আমার

দেশের জন্য- আমার অসহায় মানুষের জন্য।

শুরু করলাম নতুন যাত্রা- দুর্গম পথে

যে পথে চলতে গিয়ে কখনো বা হয়ে যাই

ক্লান্ত-শ্রান্ত-অবসন্ন। তখন ভাবনাগুলো

চারপাশে ভিড় জমায়। জীবন সায়াহ্নে

আর কত কি কাজ আছে বাকি?

সেই চিন্তার মাঝে মৃত্যু নামের

অবধারিত সত্যের নোটিশ আসে-

যেতে হয় অপারেশন থিয়েটারে।

সেখানে ভুলতে হয়- পৃথিবীর সব

মায়া-মমতা-প্রেম-ভালোবাসা,

আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, প্রিয়জন,

জীবন প্রবাহ, ইতিহাস, অতীত-বর্তমান,

কর্মের তাগিদ সব হিসাব-নিকাশ-

জীবন আর মৃত্যুর এই সংযোগ স্থলে।

চিন্তার কোনো অবকাশ নেই সেখানে-

ঠিক যেনো মৃত্যুর মতো- এখানে এসে

আমিও ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

সেখানেও বিধাতা আমাকে জাগিয়ে দিলেন-

আবার জেগে দেখি সেই আলো-

সেই বাতাস- সেই প্রিয় আপনজনেরা-

যারা আমার জন্য প্রার্থনায় বসে ছিলো-

মসজিদে-দেবালয়ে দু’হাত বাড়িয়ে।

তাদের প্রার্থনার হাত খালি হয়ে

ফিরে আসেনি করুণাময়ের দরবার থেকে।

মৃত্যু আমাকে আবার জানিয়ে দিয়ে গেলো-

‘আমি নিতে চাইলে কি হবে- তোমার

ভালোবাসার মানুষেরা তো যেতে দেয় না তোমাকে-

তাদের দোয়া যে কবুল হয়ে গেছে।’

আজ আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা- দেশের সকল

মানুষের কাছে- চিরদিনের ঋণ তাদের কাছে-

যারা আমার জন্যে হাত পেতে নিয়ে এসেছে

আরো কিছু আয়ু, আরো এক নতুন জীবন।

(সিঙ্গাপুর-২৯ অক্টোবর, ২০১৭। হাসপাতাল থেকে ফিরে)

গো নিউজ২৪/আই

সাহিত্য ও সংষ্কৃতি বিভাগের আরো খবর
‘ছি ছি ছি ছি’ দুয়োধ্বনি দিয়ে বইমেলা থেকে বিতাড়িত মুশতাক-তিশা!

‘ছি ছি ছি ছি’ দুয়োধ্বনি দিয়ে বইমেলা থেকে বিতাড়িত মুশতাক-তিশা!

৭৬ বছরে এসে কবি হেলাল হাফিজ বললেন, ‘একা থাকার সিদ্ধান্ত ছিলো ভুল’

৭৬ বছরে এসে কবি হেলাল হাফিজ বললেন, ‘একা থাকার সিদ্ধান্ত ছিলো ভুল’

বইমেলায় এসেছে ডিআইজি (প্রিজন্স) জাহাঙ্গীর কবিরের বিচিত্র কয়েদখানা

বইমেলায় এসেছে ডিআইজি (প্রিজন্স) জাহাঙ্গীর কবিরের বিচিত্র কয়েদখানা

বীর মুক্তিযোদ্ধা রাতুল কৃষ্ণ হালদার এর দুটি বই এবারের বই মেলায়

বীর মুক্তিযোদ্ধা রাতুল কৃষ্ণ হালদার এর দুটি বই এবারের বই মেলায়

এবার একুশে পদক পাচ্ছেন যারা

এবার একুশে পদক পাচ্ছেন যারা

যাত্রাপালার ইতিহাস

যাত্রাপালার ইতিহাস