ভেষজ উপাদানটি রান্নার কাজে এবং ঔষধ হিসেবে প্রায় ৫০০০ বছরের উপরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, বিশেষ করে এশিয়ার দেশগুলোতে এর ব্যবহার বেশি। আদার ঔষধি গুনাগুন পৃথিবীর বহুল ব্যবহৃত ভেষজগুলোর মাঝে অন্যতম এবং এটা আয়ুর্বেদিক সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মাঝে বিশুদ্ধ মশলা হিসেবে পরিচিত।যেকোনো কার্যকর ও শক্তিশালী ঔষধেরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, আদার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। যদি বেশি পরিমান আদা গ্রহন করা হয় তাহলে পেট ব্যাথা, পেটফোলা, বমিবমি ভাব, বুকজ্বালা বা গ্যাসের সমস্যা হতে পারে এবং রক্তপাতের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। তাই ভেষজবিদরা বেশী আদা খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন।
আসুন জেনে নেই কেন আদা খাবেন:-
অ্যালার্জির প্রকোপ কমায়:- বেশীরভাগ মানুষ ধুলাবালি, রেণু, ময়লা ও দূষিত বাতাসে অ্যালার্জির সমস্যার মুখোমুখি হন। এই ধরণের অ্যালার্জিকে সাধারণত ডাস্ট অ্যালার্জি বলা হয়। একবার এই অ্যালার্জির দেখা দিলে বেশ লম্বা সময় ধরে ভুক্তভোগীকে অসুস্থ থাকতে হয়। আদা এক্ষেত্রে দারুণ উপকারী খাদ্য উপাদান হিসেবে কাজ করে। কাঁচা আদা চিবিয়ে, চায়ের সাথে অথবা আদার শরবত তৈরি করে পান করলে অ্যালার্জির সমস্যা অনেকটা কমে। আদাতে থাকা অ্যান্টি-হিস্টামিন উপাদান অ্যালার্জি তাৎক্ষনিকভাবে অনেকটা কমিয়ে আনে।
খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে:- মজাদার খাবার রান্নায় আদা বাটা কিংবা আদা কুঁচি আবশ্যি একটি মশলা, খাদ্য পরিপাকের জন্য ভীষণ উপকারী এই উপাদানটি সর্বদা আমাদের ব্যবহার করতে হয়। আদার রস খাদ্য গল ব্লাডার হতে বাইল রস নিঃসরণ করে, যা আপনার খাদ্য দ্রুত ও সহজে পরিপাক হতে সাহায্য করে।
ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করে:- মিশিগান ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা বেশ কিছু গবেষণা ও পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করেছে, আদার পাউডার ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে। তারা বিশেষভাবে সুপারিশ করে, মেডিসিন হিসেবে আদা গ্রহণ করলে ফুসফুস, প্রোস্টেট, ওভারিয়ান ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে উপকার পাওয়া সম্ভব।
সকালের বমিভাব দূর করে:- অসুস্থতাজনিত কারণে অনেক ক্ষেত্রে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মাথা ঘোরানোর সমস্যাসহ বমিভাব দেখা দেয়। সাধারণত গর্ভবতী নারীদের এই সমস্যাটি প্রকট আকারে দেখা দেয়। এই ধরণের সমস্যায় অন্য কোন খাবারের পরিবর্তে আদা খেলে উপকার পাওয়া যাবে। আদাতে থাকা ভিটামিন-বি৬ বমিভাব কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও শারীরিক দুর্বলতা, আলস্য, মাথা ঘোরানো সহ অন্যান্য সমস্যাও দূর করে।
প্রদাহ কমায় আদা:- শরীরের যেকোন ধরণের প্রদাহ ও ব্যথা কমাতে ব্যবহার করতে হবে আদা। আদা হলো অন্যতম উপকারী প্রদাহ-বিরোধী প্রাকৃতিক উপাদান। শরীরে কোন প্রদাহ দেখা দিলে, ফোলাভাব তৈরি হলে কিংবা ব্যথাভাব দেখা দিলে আদা গ্রহণে তাৎক্ষনিক উপশম পাওয়া সম্ভব হয়। সমস্যার ধরণ বুঝে আদা খেতে হবে অথবা আদা তেল তৈরি করে ম্যাসাজ করতে হবে।
কোলেস্টেরলের মাএা কমায়:- প্রতিদিন মাএ তিন গ্রাম আদার গুড়ো খেলে শরীরের বাজে কোলেস্টেরলের মাএা কমে যায়। এতে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে, মাইগ্রেনের ব্যাথা ও ডায়াবেটিস জনিত কিডনির জটিলতা দূর করে আদা।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়:- আদার রস শরীর শীতল করে এবং হার্টের জন্য উপকারী। প্রতিদিন মাএ ২ গ্রাম আদার গুড়ো ১২ সপ্তাহ ধরে খেলে ডায়াবেটিসের ঝুাকি ১০ ভাগ কমে আসে। পাশপাশি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় ১০ ভাগ।
মস্তিস্ক ঠিক রাখে:- আদার মধ্যে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও বায়োঅ্যাকটিভ উপাদান আপনার মস্তিস্কের অকালবার্ধক্য কমাতে সাহায্য করে এবং মস্তিস্ক ঠিক রাখে।
পিরিয়ডজনিত ব্যাথা কমায়:- পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে তলপেটে প্রচন্ড ব্যথাভাব দেখা দেওয়া খুবই সাধারণ একটি লক্ষণ। বিরক্তিকর ও কষ্টদায়ক এই ব্যথা কমানোর ক্ষেত্রে আদা চা পান উপকারী।
সর্দি-কাশি দূর করে:- ঠান্ডায় আদা ভীষণ উপকারী। এতে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট, যা শরীরের রোগ জীবাণুকে ধ্বংস করে এবং জ্বর জ্বর ভাব, গলা ব্যাথা ও মাথাব্যাথা দূর করতে সাহায্য করে। কাশি বা হাপানির সমস্যা যাদের আছে, তারা আদার রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে বেশ উপকার পাবেন।
গো নিউজ২৪/জেপি