ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শাস্তির বদলে ১০ বছর পর জামিন পেলেন রানা প্লাজার সেই রানা


গো নিউজ২৪ | নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: এপ্রিল ৬, ২০২৩, ০৯:১৪ পিএম আপডেট: এপ্রিল ৬, ২০২৩, ০৯:২১ পিএম
শাস্তির বদলে ১০ বছর পর জামিন পেলেন রানা প্লাজার সেই রানা

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় হত্যা মামলার আসামি সোহেল রানাকে জামিন দিয়েছেন উচ্চ আদালত। মামলাটি ৯ বছর পর ২০২২ সালে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয় এবং বর্তমানে মাত্র সাত শতাংশ সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। এ মাসেই ২৪ এপ্রিল সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার ১০ বছর হতে চলেছে। তার ঠিক আগে রানার আকস্মিক জামিনে বিস্মিত ভুক্তভোগী শ্রমিক, শ্রমিক অধিকার নেতা, এমনকি মামলার সংশ্লিষ্ট আইনজীবীও। তারা বলছেন, ১০ বছরে এসে আমরা শাস্তির খবরের জায়গায় পেলাম জামিনের খবর। এতদিনেও বিচার শেষ না করতে পারাটাকে ‘চরম অমনোযোগ’ হিসেবে উল্লেখ করছেন তারা। আর পাবলিক প্রসিকিউটর বলছেন, সবাই ১০ বছরে মামলা শেষ না হওয়ার বিষয়টি সামনে আনে, কিন্তু কেন মামলা শেষ করা গেলো না, সেই বিষয়টি নিয়ে কেউ কথা বলে না।

বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) সাভারে রানা প্লাজা ধসে হতাহতের মামলায় ভবন মালিক সোহেল রানাকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। তার জামিন প্রশ্নে রুল যথাযথ ঘোষণা করে বৃহস্পতিবার এ রায় দেন বিচারপতি আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি শাহেদ নুরুউদ্দিনের  হাইকোর্ট বেঞ্চ।

সোহেল রানার পক্ষের আইনজীবী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘হত্যা মামলায় সোহেল রানাকে নিয়মিত জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। সব মামলায় তিনি জামিনে আছেন। এখন রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে গিয়ে এ জামিন আদেশে স্থগিতাদেশ না নিলে, তার মুক্তিতে বাধা নেই। তবে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিকারী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মহিউদ্দিন দেওয়ান বলেন, ‘জামিন আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ চেম্বার আদালতে যাবে।’

মামলাটি বর্তমানে অধস্তন আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে উল্লেখ করে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি বিমল সমাদ্দার জানান, এ মামলার সাক্ষীর সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় ২০২২ সালের মাঝামাঝি। আর এরমধ্যে ৪১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্ভব হয়েছে গত একবছরে। ঘটনার ১০ বছরেও মামলাটি শেষ না করতে পারার কারণে জামিন হয়ে গেলো কিনা— প্রশ্নে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘জামিনের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে বারবার বলা হয়, মামলার দীর্ঘসূত্রতার কথা। কিন্তু কেন মামলাটি ঝুলে গেলো সেটা নিয়ে কেউ কথা বলে না।’

পিপি বিমল সমাদ্দার বলেন, ‘এই মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন আসামি উচ্চ আদালতে আবেদন করেন। এর মধ্যে ছয় জনের পক্ষে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ আসে। এখনও দুই জনের স্থগিতাদেশ বহাল আছে। এ রকম পরিস্থিতিতে আপনি মামলা শুরু করতে পারবেন না। ফলে বিচারিক আদালতের ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও উচ্চ আদালতের এই আদেশের কারণে শুরু করতে পারেননি। পরবর্তী সময়ে গত বছর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যাদের স্থগিতাদেশ নেই তাদের মামলা চালিয়ে নেওয়ার।’

এক বছরে ৪১ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ হলে কতদিন লাগবে সবার সাক্ষ্য শেষ করতে, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে একইসঙ্গে আরও অনেক মামলা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতে হয়। প্রতি ১৫ দিন বা এক মাস পরপর আমরা এই মামলার ডেট পাচ্ছি। একেকবার সাক্ষী পাওয়ার ওপর ভিত্তি করে পাঁচ জন পর্যন্ত সাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়েছি।’ সাক্ষী পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সাক্ষীদের অনেকেই এখন আর তাদের আগের ঠিকানায় থাকেন না। ফলে তাদেরকে বিভিন্ন জায়গা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিয়ে আদালতে আনা হয়। সব মিলিয়ে চ্যালেঞ্জ অনেকগুলো।’

১০ বছরে এসে শাস্তির খবরের জায়গায় জামিনের খবরে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, ‘১০ বছর হতে আর কয়েকটা দিন বাকি আছে। এমন সময় এ রকম শিরোনামের খবর শ্রমিকদের সেই নিষ্ঠুর দিনটিকে যেন উপহাস করছে। এই ধসের ঘটনায় হাজারো শ্রমিক প্রাণ হারায় শুধু এই আসামিদের সম্মিলিত অবহেলার কারণে। ১০ বছর ধরে সরকার সেই ঘটনায় দায়ীদের শাস্তির মুখোমুখি করতে না পারাটা, বিচারহীনতার সংস্কৃতির দিকেই আমাদের নিয়ে গেলো। আমরা তীব্র ক্ষোভ জানাচ্ছি।’

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে সাভার বাসস্ট্যন্ড-সংলগ্ন আট তলা রানা প্লাজা ভেঙে পড়লে শিল্প ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটে। ওই ঘটনায় নিহত হন এক হাজার ১৩৫ জন, আহত হন আরও হাজারখানেক শ্রমিক।

ভবন ধসে প্রাণহানির ঘটনায় প্রথমে ‘অবহেলাজনিত মৃত্যুর’ অভিযোগে একটি মামলা করেন সাভার থানার এসআই  ওয়ালী আশরাফ। তদন্ত শেষে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে ৪১ জনকে আসামি করে তাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত মৃত্যু ঘটানোসহ দণ্ডবিধির বেশকিছু ধারায় বিভিন্ন অভিযোগ আনেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের  (সিআইডি) সহকারী সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ২০১৫ সালের ১ জুন অভিযোগপত্র জমা দেন।

এ মামলায় রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা কারাগারে আছেন। ৩২ জন জামিনে আছেন, পলাতক ৬ জন এবং ২ জন আসামি মারা গেছেন।

আইন-আদালত বিভাগের আরো খবর
জামিন পেলেন মামুনুল হক

জামিন পেলেন মামুনুল হক

৫ মিনিটের মধ্যেই জামিন পেলেন ড. ইউনূস

৫ মিনিটের মধ্যেই জামিন পেলেন ড. ইউনূস

নোবেলজয়ী  ড. ইউনূসের ৬ মাসের কারাদণ্ড

নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের ৬ মাসের কারাদণ্ড

‘খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না’

‘খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না’

দেশটা তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে হাইকোর্ট

দেশটা তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে হাইকোর্ট

ভাইস চেয়ারম্যানসহ ১৫ বিএনপি নেতার চার বছরের কারাদণ্ড

ভাইস চেয়ারম্যানসহ ১৫ বিএনপি নেতার চার বছরের কারাদণ্ড