ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ফাঁসির মঞ্চে আসামির চিৎকার ‍‍`আমি খুন করিনি‍‍`


গো নিউজ২৪ | আইন ও আদালত প্রকাশিত: অক্টোবর ১৩, ২০২১, ১১:৫৫ পিএম
ফাঁসির মঞ্চে আসামির চিৎকার ‍‍`আমি খুন করিনি‍‍`

দিনাজপুর জেলা কারাগারে প্রথমবারের মতো ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। স্ত্রী হত্যার দায়ে আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত আবদুল হক নামের এক আসামির ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

চলতি বছর ৯ জুন প্রস্তুত হচ্ছিল দিনাজপুর জেলা কারাগার। যাকে কেন্দ্র করে পুরো কারাগারে এমন কর্মচাঞ্চল্য, সেই ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামি আবদুল হকের মধ্যে ছিল না কোনো প্রতিক্রিয়া। কারণ, তিনি জানতেও পারছিলেন না যে তাকে নিয়েই কারাগারে সৃষ্টি হয়েছে ভিন্ন এক পরিবেশ। কয়েক ঘণ্টা পরই ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হবে তাকে। 

কনডেম সেলে বন্দী আবদুল হক শুয়ে বসে সময় কাটাচ্ছেন অন্যান্য দিনের মতোই। কারাগারে তার বন্দী জীবন যখন শুরু হয়, তখন তার বয়স ছিল ৩৩। এখন ৫২। দীর্ঘ ১৯ বছর কারাগারে বন্দী জীবনের অবসান ঘটবে তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। সেদিন বিকালেই কারাগারের ফাঁসির সেলের কাছে হঠাৎ আত্মীয়-স্বজনকে দেখে তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। অন্যান্য সময়ে যেভাবে তাকে দেখতে আসতেন, সে রকম সাধারণ দিনের মতোই ভেবেছিলেন আবদুল হক। আত্মীয়-স্বজনকেও এ বিষয়ে কথা বলতে বারণ করে দিয়েছিলেন কারা কর্তৃপক্ষ। করোনাকাল। যে কারণে, যারা দেখতে আসতে পারেনি, তাদের সঙ্গেও মোবাইলে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়। 

এরপরও ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি আবদুল হক, এ দেখাই শেষ দেখা প্রিয় স্বজনদের সঙ্গে। সন্ধ্যার মধ্যেই সবাই চলে যান। আবারও একা জীবন। আত্মীয়রা সঙ্গে করে কিছু খাবার এনেছিলেন। আর এনেছিলেন তার প্রিয় আম। সেই আম কেটে দেওয়া হয়েছিল আবদুল হককে। কিন্তু খাননি। প্লেট ভর্তি আম রয়ে গেছে। কিছু সময় পর একজন ডেপুটি জেলার কয়েকজন কারারক্ষীকে নিয়ে গেলেন সেই কনডেম সেলে। আবদুল হক শুয়ে ছিলেন। কারা কর্মকর্তার ডাকে তিনি উঠে বসলেন। 

ডেপুটি জেলার তাকে বললেন, আপনাকে প্রস্তুত হতে হবে। আর কিছুক্ষণ পরই যেতে হবে। এটাই জীবনের শেষ সময় আপনার। ডেপুটি জেলারের মুখে এমন ভয়ংকর কথা শুনে কিছু বললেন না আবদুল হক। কথাটা শোনা মাত্রই সামনে রাখা প্লেট ভর্তি আমের দিকে তাকালেন। আমের টুকড়া হাতে নিয়ে মুখে দিলেন। খেতে থাকলেন। একটা শেষ হতে আরেকটা। একটার পর একটা। তৃপ্তি সহকারে খাচ্ছেন। অন্য কোথাও তাকাচ্ছেন না। দৃষ্টি আমের প্লেটে। সেদিকে তাকিয়েই খেয়ে যাচ্ছেন। মনে হচ্ছিল দৃষ্টি সরালেই হয়তো কেউ আম সরিয়ে নেবে। চোখ তার সরেনি প্লেট ভর্তি আম শেষ না হওয়া পর্যন্ত। 

আবদুল হক কোনো কথা বলেননি। জবান বন্ধ। ডেপুটি জেলার তাকে জিজ্ঞাস করলেন, আর কিছু খেতে মন চায় কি না। কিন্তু আবদুল হকের জবান বন্ধ। ডেপুটি জেলার তাকে প্রস্তুত হতে বলে চলে গেলেন। এরপর আসলেন জেলা কারাগার মসজিদের ইমাম। আবদুল হককে গোসলের পর অজু করতে বলেন। এরপর তওবা পাঠ করান তাকে। একদম ধীর স্থির হয়ে যান আবদুল হক। কোনো কথাই ছিল না তার মুখে। ইতিমধ্যে সময় ঘনিয়ে আসে। 

রাত পোনে ১২টায় তার সেলে যান জেলার, ডেপুটি জেলার, কারারক্ষী আর জল্লাদের সহযোগী। কালো রঙের জমটুপি পরিয়ে ধীরে ধীরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মঞ্চের দিকে। হাতে লাগানো হ্যান্ডকাফ। কিছুই বলছিলেন না। বাধাও দিচ্ছিলেন না আবদুল হক। তার কোনো বিকার ছিল না। তাকে দাঁড় করানো হয় মঞ্চে। জল্লাদ তার গলায় পরিয়ে দেন ফাঁসির দড়ি। সেখান থেকে সরে মঞ্চের হাতল নিয়ে প্রস্তুত হলেন। পিনপতন নিস্তব্ধতা। জেল সুপার তার বাম হাত উঁচু করে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছেন। আরেক হাতে তার লাল রুমাল। ১২টা ০১ মিনিটেই তার হাতের রুমাল ছেড়ে দেবেন। জল্লাদ তখনই হাতল ধরে টান দেবেন। আবদুল হকের পায়ের নিচের দুই পাটাতন দুই পাশে সরে যাবে। ঝুলে পড়বেন আবদুল হক। এমনই এক শাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। আর মিনিট সময় আছে। 

ঘড়ির সেকেন্ডের কাঁটা ঘুরছে। জল্লাদ হাতলে হাত রেখে তাকিয়ে আছেন জেল সুপারের হাতের রুমালের দিকে। আর দশ সেকেন্ড! ঠিক তখনই আবদুল হকের জবান খুলল। তিনি চিৎকার করে বলে উঠলেন, আমি খুন করিনি। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন। এ সময় আঁতকে ওঠেন উপস্থিত সবাই। বলে কী লোকটা। কিন্তু আবদুল হকের শেষ শব্দটাই ছিল জীবনের শেষ মুহূর্ত। রুমাল শূন্যে ভাসছে। জল্লাদ ততক্ষণে হাতল টেনে ধরেছেন। ফাঁসির দড়িতে ঝুলছেন আবদুল হক। স্ত্রী হত্যার দায়ে চলতি বছরের ৯ জুন বুধবার দিবাগত রাত ১২টা এক মিনিটে দিনাজপুর জেলা কারাগারে প্রথম ফাঁসি কার্যকর হলো এভাবেই।

জানা যায়, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ভক্তিপুর চৌধুরীপাড়া গ্রামের মৃত আছির উদ্দিনের ছেলে ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার স্ত্রী বেলি বেগমকে হত্যা করে। ওই মামলায় ২০০৭ সালে ৩ মে রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ আসামি আব্দুল হককে ফাঁসিতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রদান করে। পরবর্তীতে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট সাজা বহাল রাখে। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদনও নামঞ্জুর হলে কারা কর্তৃপক্ষ ফাঁসি কার্যকরের উদ্যোগ নেয় এবং কার্যকর করে।

 এই ফাঁসি কার্যকর করতে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে অহিদুল ইসলাম নামে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দীকে জল্লাদ হিসেবে আনা হয়। দিনাজপুর জেল সুপার মো. মোকাম্মেল হোসেন লাল রুমাল ফেলে ফাঁসির সংকেত দেন। এ সময় জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকী, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বিপিএম, পিপিএম (বার), সিভিল সার্জন ডা. আবদুল কুদ্দুস ছাড়াও রংপুর ডিআইজি (প্রিজন) আলতাফ হোসেন, জেলার ফরিদুর রহমান রুবেল, কারা চিকিৎসকসহ পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ২০০২ সালের ২৮ আগস্ট থেকে আবদুল হক রংপুর জেলা কারাগারে বন্দী ছিলেন। ফাঁসির রায় কার্যকর করতে তাকে দিনাজপুর জেলা কারাগারে নেওয়া হয়।
সূত্র-কালের কণ্ঠ

আইন-আদালত বিভাগের আরো খবর
জামিন পেলেন মামুনুল হক

জামিন পেলেন মামুনুল হক

৫ মিনিটের মধ্যেই জামিন পেলেন ড. ইউনূস

৫ মিনিটের মধ্যেই জামিন পেলেন ড. ইউনূস

নোবেলজয়ী  ড. ইউনূসের ৬ মাসের কারাদণ্ড

নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের ৬ মাসের কারাদণ্ড

‘খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না’

‘খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না’

দেশটা তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে হাইকোর্ট

দেশটা তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে হাইকোর্ট

ভাইস চেয়ারম্যানসহ ১৫ বিএনপি নেতার চার বছরের কারাদণ্ড

ভাইস চেয়ারম্যানসহ ১৫ বিএনপি নেতার চার বছরের কারাদণ্ড