ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মহানবী (সা.) দেখতে কেমন ছিলেন


গো নিউজ২৪ | ড. মুহাম্মদ আবদুল হাননান  প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০১৮, ০৫:৫০ পিএম আপডেট: নভেম্বর ১৪, ২০১৮, ১১:৫০ এএম
মহানবী (সা.) দেখতে কেমন ছিলেন

♦ মানবজাতির জন্য মহান আল্লাহর প্রেরিত সর্বশেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সর্বগুণে গুণান্বিত অতি মহৎ একজন মানুষ ছিলেন। মানুষের দৃষ্টিতেও তিনি অত্যন্ত মর্যাদাশীল ছিলেন।

♦ তাঁর চেহারা মোবারক পূর্ণিমার চাঁদের মতো ঝলমল করত। মাঝারি গড়নবিশিষ্ট ব্যক্তি থেকে কিছুটা লম্বা, আবার অতি লম্বা থেকে খাটো ছিলেন তিনি।

♦ মাথা মুবারক সুসংগতভাবে বড় ছিল। কেশ মুবারক সামান্য কুঞ্চিত ছিল, মাথার চুলে অনিচ্ছাকৃতভাবে আপনাআপনি সিঁথি হয়ে গেলে সেভাবেই রাখতেন, অন্যথায় ইচ্ছাকৃতভাবে সিঁঁথি তৈরি করার চেষ্টা করতেন না। চিরুনি ইত্যাদি না থাকলে এরূপ করতেন। আর চিরুনি থাকলে ইচ্ছাকৃত সিঁথি তৈরি করতেন। কেশ মুবারক লম্বা হলে কানের লতি অতিক্রম করে যেত।

♦ শরীর মুবারকের রং ছিল অত্যন্ত উজ্জ্বল আর ললাট ছিল প্রশস্ত। ভ্রুদ্বয় বক্র, সরু ও ঘন ছিল। উভয় ভ্রু পৃথক পৃথক ছিল, মাঝখানে সংযুক্ত ছিল না। ভ্রুদ্বয়ের মাঝখানে একটি রগ ছিল, যা রাগের সময় ফুলে উঠত।

♦ তাঁর নাসিকা উঁচু ছিল, যার ওপর একপ্রকার নূর ও চমক ছিল। যে প্রথম দেখত সে তাঁকে উঁচু নাকওয়ালা ধারণা করত। কিন্তু গভীরভাবে দৃষ্টি করলে বুঝতে পারত যে সৌন্দর্য ও চমকের দরুন উঁচু মনে হচ্ছে, আসলে উঁচু নয়।

♦ দাড়ি মুবারক ভরপুর ও ঘন ছিল। চোখের মণি ছিল অত্যন্ত কালো। তাঁর গণ্ডদেশ সমতল ও হালকা ছিল এবং গোশত ঝুলন্ত ছিল না। তাঁর মুখ সুসংগতপূর্ণ প্রশস্ত ছিল।

♦ তাঁর  দাঁত মুবারক চিকন ও মসৃণ ছিল এবং সামনের দাঁতগুলোর মধ্যে কিছু কিছু ফাঁক ছিল।

♦ তাঁর গ্রীবা মুবারক সুন্দর ও সরু ছিল। তাঁর রং ছিল রুপার মতো সুন্দর ও স্বচ্ছ। তাঁর সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সামঞ্জস্যপূর্ণ ও মাংসল ছিল।

♦ আর শরীর ছিল সুঠাম। তাঁর পেট ও বুক ছিল সমতল এবং বুক ছিল প্রশস্ত। উভয় কাঁধের মাঝখানে বেশ ব্যবধান ছিল। গ্রন্থির হাড়গুলো শক্ত ও বড় ছিল (যা শক্তি-সামর্থ্যের একটি প্রমাণ)। শরীরের যে অংশে কাপড় থাকত না, তা উজ্জ্বল দেখাত। বুক থেকে নাভি পর্যন্ত চুলের সরু রেখা ছিল। তা ছাড়া বুকের উভয় অংশ ও পেট কেশমুক্ত ছিল। তবে উভয় বাহু, কাঁধ ও বুকের উপরিভাগে চুল ছিল।

♦ তাঁর হাতের কবজি দীর্ঘ এবং হাতের তালু প্রশস্ত ছিল। শরীরের হাড়গুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ ও সোজা ছিল। হাতের তালু ও উভয় পা কোমল ও মাংসল ছিল। হাত-পায়ের আঙুলগুলো পরিমিত লম্বা ছিল। পায়ের তালু কিছুটা গভীর এবং কদম মুবারক এরূপ সমতল ছিল যে পরিচ্ছন্নতা ও মসৃণতার দরুন পানি আটকে থাকত না, সঙ্গে সঙ্গে গড়িয়ে পড়ত।

♦ তিনি যখন পথ চলতেন, তখন শক্তি সহকারে পা তুলতেন এবং সামনের দিকে ঝুঁকে চলতেন, পা মাটির ওপর সজোরে না পড়ে আস্তে পড়ত। তাঁর চলার গতি ছিল দ্রুত এবং পদক্ষেপ অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ হতো, ছোট ছোট কদমে চলতেন না। চলার সময় মনে হতো যেন তিনি উচ্চভূমি থেকে নিম্নভূমিতে অবতরণ করছেন।

♦ যখন কোনো দিকে মুখ ঘোরাতেন, তখন সম্পূর্ণ শরীরসহ ঘোরাতেন। তাঁর দৃষ্টি নত থাকত এবং আকাশ অপেক্ষা মাটির দিকে অধিক নিবদ্ধ থাকত।

♦ সাধারণত চোখের এক পার্শ্ব দিয়ে তাকাতেন। অর্থাৎ লজ্জা ও শরমের দরুন কারো প্রতি পূর্ণ দৃষ্টি খুলে তাকাতে পারতেন না।


♦ তিনি দুনিয়া বা দুনিয়ার কোনো বিষয়ে রাগান্বিত হতেন না। কারণ তাঁর দৃষ্টিতে দুনিয়া ও দুনিয়াবি বিষয়ের কোনো গুরুত্ব ছিল না। তবে দ্বীনি বিষয় বা হকের ওপর কেউ হস্তক্ষেপ করলে ক্রোধে তাঁর চেহারা এরূপ পরিবর্তন হয়ে যেত যে তাঁকে কেউ চিনতে পারত না।

♦ যখন কোনো কারণে কোনো দিকে ইশারা করতেন, তখন সম্পূর্ণ হাত দ্বারা ইশারা করতেন। বিনয়ের খেলাপ বলে আঙুল দ্বারা ইশারা করতেন না।

♦ তিনি আশ্চর্যবোধকালে হাত মুবারক উল্টে দিতেন। কথা বলার সময় কখনো (কথার সঙ্গে) হাত নাড়তেন, কখনো ডান হাতের তালু দ্বারা বাঁ বৃদ্ধাঙুলির পেটে আঘাত করতেন।

♦ কারো প্রতি অসন্তুষ্ট হলে তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতেন ও অমনোযোগিতা প্রকাশ করতেন অথবা তাকে মাফ করে দিতেন।

♦ যখন তিনি খুশি হতেন, তখন লজ্জায় চোখ নিচু করে ফেলতেন। তাঁর বেশির ভাগ হাসি মুচকি হাসি হতো। আর সেই সময় তাঁর দাঁত মুবারক শিলার মতো শুভ্র ও উজ্জ্বল দেখাত।

(সূত্র : বিদায়া নিহায়া, কানজুল উম্মাল; মাওলানা সাদ : হায়াতুস সাহাবাহ, প্রথম খণ্ড, দারুল কিতাব, ঢাকা ও শামায়েলে তিরমিজি, আল কাউসার প্রকাশনী, ঢাকা, ২০০৭)

গো নিউজ২৪/আই

ইসলাম বিভাগের আরো খবর
তাবলিগের বিরোধটা আসলে কোথায়

তাবলিগের বিরোধটা আসলে কোথায়

ওয়াজ মাহফিল সরকারিভাবে মনিটরিংয়ের অনুরোধ

ওয়াজ মাহফিল সরকারিভাবে মনিটরিংয়ের অনুরোধ

নামাজের নিয়ত মুখে উচ্চারণ না করলে নামাজ হবে?

নামাজের নিয়ত মুখে উচ্চারণ না করলে নামাজ হবে?

আশুরার দিনে যে দুইটি আমল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ

আশুরার দিনে যে দুইটি আমল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ

পবিত্র আশুরা ২৯ জুলাই

পবিত্র আশুরা ২৯ জুলাই

‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাত ময়দান

‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাত ময়দান