ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু, ‘লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত মিনা


গো নিউজ২৪ | ইসলাম ডেস্ক: প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০১৮, ১০:৫৬ এএম
হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু, ‘লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত মিনা

ঢাকা: সৌদি আরবের মিনায় মুসল্লিদের জড়ো হওয়ার মধ্য দিয়ে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।  এরি মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ৩০ লাখ মুসল্লি দুই টুকরো সাদা ইহরাম কাপড়ে শরীর ঢেকে সমবেত হয়েছেন তাবুর শহর মিনায়।

কাল থেকেই ‘লাব্বায়িক আল্লাহুম্মা লাব্বায়িক’ধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠবে মক্কার আরাফাত ময়দান। এ বছর বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১২২টি দেশের হজযাত্রীরা হজে অংশ নিচ্ছেন। তবে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৬ হাজার ৭৯৮ জন হজ পালনের কথা থাকলেও নানা জটিলতায় ৬০৬ জন আসতে পারেননি।

এরই মধ্যে হজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। মক্কা, মিনা, মুজদালিফা ও আরাফাত ময়দানে হাজিদের সব ধরনের সহযোগিতা ও নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে সৌদি প্রশাসন।

পবিত্র নগরী মক্কা থেকে তাবুর শহর মিনার দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার। হজ পালনকারীদের অনেকেই এ পথ পায়ে হেঁটে অতিক্রম করবে। ২০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মিনা প্রান্তরে ৮ জিলহজ জোহর থেকে ৯ জিলহজ ফজর পর্যন্ত অবস্থান করা সুন্নাত। সেখানে তারা এ সময়ে মোট পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবেন।

হজ পালনকারীদের অবস্থানের জন্য ইতোমধ্যে লক্ষাধিক তাবু স্থাপন করা হয়েছে। হজের কাজ সম্পাদনে ধর্মপ্রাণ মুসলমান নারী-পুরুষ ৬ দিন ৬ রাতের মধ্যে ৫ দিন ৫ রাতই অবস্থান করতে হবে মিনার এ তাবুগুলোতে।

৯ জিলহজ ফজরের নামাজের পর মিনা থেকেই হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা জাবালে রহমতের পাদদেশ ও মসজিদে নামিরা সংলগ্ন ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দানে উপস্থিত হবে মুসলিম উম্মাহ। দিনব্যাপী তাসবিহ-তাহলিল, দোয়া ও মাগফেরাত কামনায় কান্নায় মুখরিত করে তুলে আরাফাত নগরী।

আরো পড়ুন: কোরবানির পশু সংক্রান্ত করণীয় ও বর্জনীয় 

মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ ও শান্তির লক্ষ্যে সেখানে বাদ জোহর ঐতিহাসিক খুতবা প্রদান করা হবে। হজে অংশগ্রহণকারী মুসলিম উম্মাহ সে খুতবা শুনবে। একসঙ্গে দোয়া ও মোনাজাতে অংশগ্রহণ করবে তারা। সূর্য অস্ত যাওয়ার আগ পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করবে মুসলিম উম্মাহ।

৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান শেষে সূর্যাস্তের পর মুজদালিফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে হজপালনকারীরা। সেখানে গিয়ে এক সঙ্গে মাগরিব ও ইশার নামাজ আদায় করবে তারা।

৯ জিলহজ দিবাগত রাতে মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে রাতযাপন করা সুন্নাত। আর ১০ জিলহজ ফজরের নামাজের পর সূর্য ওঠার আগে সামান্য সময় মুজদালিফায় অবস্থান করা ওয়াজিব।

১০ জিলহজ সূর্য ওঠার আগেই মিনার উদ্দেশ্যে মুজদালিফা ত্যাগ করতে হবে। মিনায় গিয়ে দুপুরের আগেই জামরাতে আকাবায় অর্থাৎ বড় জামরায় ৭টি কংকর নিক্ষে করতে হবে।

১০ জিলহজ কংকর নিক্ষেপের পর কুরবানি আদায় করতে হবে। কুরবানি যদি ব্যাংকের মাধ্যমে আদায় করতে হয় তবে কুরবানির সময় জেনে নেয়া। কেননা কুরবানির পরের কাজই হলো মাথা মুণ্ডন বা ন্যাড়া করা। তাই কুরবানির সঠিক সময় জেনে নিয়েই মাথা ন্যাড়া করতে হবে। মাথা ন্যাড়া করার মাধ্যমে ইহরাম থেকে হালাল হবে হজ পালনকারীরা। তারা স্ত্রীসহবাস ব্যতিত বাকি সব কাজ করতে পারবে।

অতঃপর ১০ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগেই তাওয়াফে জিয়ারত আদায় করতে হবে। তাওয়াফে জিয়ারত আদায় করে পুনরায় মিনায় অবস্থান করতে হবে।

১১ জিলহজ সৌদি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে ছোট, মধ্যম ও বড় জামরাতে কংকর নিক্ষেপ করতে হবে।

১২ জিলহজ ও সৌদি হজ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে ছোট, মধ্যম ও বড় জামরাতে ৭টি করে কংকর নিক্ষেপ করে সূর্যাস্তের আগেই মিনা ত্যাগ করতে হবে।

যদি কেউ ১২ তারিখ সূর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করতে না পারে তবে তাকে ১৩ তারিখও মিনায় অবস্থান করতে হবে। আর ১৩ তারিখও ছোট, মধ্যম ও বড় জামরাতে ৭টি করে ২১টি কংকর নিক্ষেপ করতে হবে।

মিনার জামরাতগুলোতে বাংলায় কংকর নিক্ষেপের দিক-নির্দেশনা প্রদান করা হয় তা মনোযোগ সহকারে শুনে কংকর নিক্ষেপ করা সহজ। নারী ও দুর্বল হজ পালনকারীদের জন্য রাতে কংকর নিক্ষেপ করা নিরাপদ।

অতঃপর ১৩ জিলহজের পর বিদায়ী তাওয়াফের মাধ্যমে নিজ নিজ গন্তব্যে (দেশে) ফিরবে হজ পালনকারীরা। ১৩ জিলহজের পর যে কোনো নফল তাওয়াফই বিদায়ী তাওয়াফ হিসেবে সাব্যস্ত হবে।

মক্কা থেকে দেশে ফিরতে দেরী হলে দেশে ফেরার আগে অবশ্যই বিদায়ের নিয়তে পুনরায় তাওয়াফ করতে হবে। আর এভাবেই শেষ হবে হজের আনুষ্ঠানিকতা।

এদিকে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের নি‌র্দেশনায় মিনার মা‌ঠে অসুস্থ বাংলা‌দেশি হাজিদের চি‌কিৎসা দিতে ৪০ সদ‌স্যের মে‌ডি‌কেল টিম গ‌ঠন করা হ‌য়ে‌ছে। এদির ম‌ধ্যে ১৫ জন ডাক্তার, ১৫ জন নার্স, ব্রাদার, ফার্মা‌সিস্ট ওটি সহকা‌রী ও ১০ জন হজ সহায়ক রয়েছেন। তারা ৮ ঘণ্টা ক‌রে তিন শিফ‌টে দা‌য়িত্ব পালন কর‌বেন। বাংলা‌দেশ হজ মে‌ডি‌কেল সেন্টা‌রের টিম প্রধান ডা. মো. জা‌কির হো‌সেন খান এ তথ্য জানিয়েছেন।

এছাড়া আরাফাত ও মিনার আশপা‌শে সৌ‌দি সরকা‌রের ক‌য়েক‌টি স্থায়ী হাসপাতা‌লে দুজন ক‌রে ডাক্তার থাক‌বেন।

ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান ও ধর্ম সচিব মো. আনিছুর রহমান মক্কায় বাংলাদেশ হজ মিশনে থেকে পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন।

এদিকে শুক্রবার এক হাজার ৬৬জন হজযাত্রী ঢাকা থেকে জেদ্দা পৌঁছেছেন। এনিয়ে সৌদি আরবে সর্বমোট বাংলাদেশি হজযাত্রী পৌঁছেছেন এক লাখ ২৭ হাজার ২৭৫ জন।

এদিকে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হওয়ার পূর্বে শনিবার পর্যন্ত বার্ধক্য, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ৫১ বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে ৪২ পুরুষ ও ৯ নারী রয়েছে।

গো নিউজ২৪/এমআর

ইসলাম বিভাগের আরো খবর
তাবলিগের বিরোধটা আসলে কোথায়

তাবলিগের বিরোধটা আসলে কোথায়

ওয়াজ মাহফিল সরকারিভাবে মনিটরিংয়ের অনুরোধ

ওয়াজ মাহফিল সরকারিভাবে মনিটরিংয়ের অনুরোধ

নামাজের নিয়ত মুখে উচ্চারণ না করলে নামাজ হবে?

নামাজের নিয়ত মুখে উচ্চারণ না করলে নামাজ হবে?

আশুরার দিনে যে দুইটি আমল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ

আশুরার দিনে যে দুইটি আমল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ

পবিত্র আশুরা ২৯ জুলাই

পবিত্র আশুরা ২৯ জুলাই

‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাত ময়দান

‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাত ময়দান