ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভারতকে ছেড়ে চীনের দিকে ঝুঁকছে ভুটান, অস্বস্তিতে দিল্লি


গো নিউজ২৪ | আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০১৭, ১২:০১ পিএম
ভারতকে ছেড়ে চীনের দিকে ঝুঁকছে ভুটান, অস্বস্তিতে দিল্লি

ডোকলাম সীমান্ত নিয়ে চলমান সংকটে ভারতকে আরো চাপে ফেলতে নতুন কৌশল নিয়েছে চীন। সামরিক হুমকির পাশাপাশি এবার কূটনৈতিকভাবেও দিল্লিকে কোনঠাসা করে ফেলার চেষ্টা শুরু করেছে বেইজিং। ডোকলাম নিয়ে নিজের অবস্থান নেপালকে তা বিশদভাবে জানিয়েছে তারা। দিল্লি, কাঠমন্ডু এবং বেইজিং- তিন জায়গায়ই নেপালি কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে চীনা প্রশাসনের।

এদিকে ডোকলাম উপত্যকায় অব্যাহত সামরিক উত্তেজনার মধ্যেই দিল্লি ও থিম্ফুর কূটনৈতিক সম্পর্ক কোনদিকে গড়াচ্ছে- তা নিয়ে ভারতের মধ্যেই নানা মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ভারত ও ভুটানের ‘বিশেষ সম্পর্ক’ প্রায় ৭০ বছরের পুরনো। কিন্তু সেই সম্পর্কে এবার চীনের ছায়া পড়ছে বলে সম্প্রতি ভারতেরই অনেক পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষক মনে করছেন।

চীনের সঙ্গে ভুটানের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও সম্প্রতি বেইজিং কর্তৃপক্ষ যে নানাভাবে থিম্ফুর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে চাইছে, সেই ইঙ্গিতও স্পষ্ট। এই পটভূমিতে হিমালয়ের পার্বত্য দেশ ভুটানকে ঘিরে দুশ্চিন্তা বাড়ছে ভারতে। চীন-ভারত সামরিক সংঘাতকে কেন্দ্র করে গত মাসে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ যখন পার্লামেন্টে বিবৃতি দেন, তখন বিরোধীদের সমালোচনা ছিল বর্তমান সরকারের আমলে সব প্রতিবেশীর সঙ্গেই ভারতের সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে।

জবাবে তিনি যে দুই প্রতিবেশীর সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্বের দৃষ্টান্ত দেন, তার একটি ছিল বাংলাদেশ আর অপরটি ভুটান। ভুটানকে ভারতের প্রিয়তম বন্ধু বলে বর্ণনা করেন সুষমা। তিন বছর আগে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার প্রথম বিদেশ সফরে এই ভুটানেই গিয়েছিলেন- সে কথাও মনে করিয়ে দেন। তিনি।

দুদেশের মধ্যকার ‘ফ্রেন্ডশিপ ট্রিটি’ অনুযায়ী ভুটানের প্রতিরক্ষা, বিদেশনীতি ও বাণিজ্যে ভারতের প্রভাব দ্বিপাক্ষিকভাবেই স্বীকৃত। এই মুহূর্তে ডোকলাম উপত্যকায় যেসব ভারতীয় সেনা চীনা বাহিনীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আছে, তারা অবস্থান করছে ভুটানের ভূমিতেই। ডোকলামকে কেন্দ্র করে ভারত ও চীনের মধ্যকার টানাপড়েনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে নিজের পক্ষে টেনে আঞ্চলিক সমীকরণে ভারতকে টেক্কা দিতে চাইছে বেইজিং। সে লক্ষ্যেই দেশটি নেপালকে কাছে টানার চেষ্টা করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ভারতের বর্তমান সরকার ভুটানের সঙ্গে ঐতিহাসিক মৈত্রীর সম্পর্ককে দুর্বল করে ফেলেছে বলেই মনে করেন সিনিয়র কংগ্রেস নেতা, সাবেক এমপি ও কূটনীতিক মণিশঙ্কর আইয়ার। তিনি বলেন, ‘একটি প্রাণোচ্ছল গণতন্ত্র হিসেবে ভুটানের বিবর্তন হয়েছে খুব দ্রুত। ফলে তাকে আর আগের মতো শুধু একটি রাজতন্ত্র-শাসিত দেশ হিসেবে দেখলে চলবে না, সেখানেও যে বিবিধ রাজনৈতিক মতামত জন্ম নিচ্ছে সেটাকেও স্বীকৃতি দিতে হবে। বন্ধু হিসেবে ভুটান যাতে দূরে সরে না যায়, সেজন্য আমাদের কূটনীতিকে হতে হবে বহুমাত্রিক। আর আমাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে চাপিয়ে দেয়া চলবে না মোটেই। কারণ ভুটানেও অনেকেই সেটা পছন্দ করেন না।’

ভুটানের সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্ব নিয়ে যেকোনো প্রশ্ন উঠতে পারে- কয়েক বছর আগেও তা ভাবাই যেত না। কিন্তু এখন যাচ্ছে। আর তার মূলে আছে ভুটানের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করার জন্য চীনের মরিয়া প্রয়াস। ভারতের খ্যাতনামা স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালিস্ট রাহুল বেদীর ভাষায়, ‘আমি মনে করি ডোকলাম সংকট থেকে একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস স্পষ্ট হয়ে যাবে, সেটা হল ভুটান কি ভারতের সঙ্গে তাদের পরীক্ষিত সম্পর্কই টিকিয়ে রাখবে, না কি চীনের সঙ্গে আলাদা একটি সম্পর্ক গড়ে তুলবে। সম্ভবত এই মুহূর্তে ভুটান নিজেও এর উত্তর জানে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘তবে চীন এ ব্যাপারে প্রায় নাছোড়বান্দা, ডোকলাম সংকটের ঠিক আগে ভারতে চীনা রাষ্ট্রদূতের স্ত্রী পর্যন্ত থিম্ফ গিয়ে ভুটানের রাজমাতার সঙ্গে দেখা করে এসেছেন। চীনারা গত ২০ বছর ধরে দিল্লিতে ভুটানের দূতাবাসে গিয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করে আসছেন।’

ভারত সরকার ভুটানকে শুধু তাদের প্রিয়তম বন্ধু বলেই মনে করে না- কৌশলগত দৃষ্টিতেও ভুটানের গুরুত্বও ভারতের কাছে অপরিসীম। ৭০ বছরের এই পুরনো বন্ধুকে নিয়ে অন্যদের টানাটানি ভারত এখন কীভাবে সামলায়- সেটাই হবে দেখার বিষয়।

এদিকে নয়াদিল্লির চীনা দূতাবাসের উপ-প্রধান একটি ‘সৌজন্য বৈঠকে’ ভারতের নেপালি দূতাবাসের উপ-প্রধানের সঙ্গে ডোকলাম নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। ভারত-ভুটান-চীন সীমান্তের ডোকলামকে কেন্দ্র করে বেইজিং এবং দিল্লির মধ্যে দুমাসের বেশি সময় ধরে টানাপড়েন চলছে। এ বিষয়ে চীনের অবস্থান ঠিক কী, নেপালি কূটনীতিককে সে কথা চীনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

ভুটানের সঙ্গে আগেই কূটনৈতিক যোগাযোগ শুরু করেছে চীন। ডোকলাম থেকে সেনা প্রত্যাহার করার জন্য ভুটানও যাতে ভারতকে চাপ দেয়, সে বিষয়ে থিম্ফুকে রাজি করানোর চেষ্টা শুরু করেছে বেইজিং। এই প্রয়াস শুরুর পর থেকে চীনের প্রতি ভুটানের অবস্থান ক্রমশ নরম হতে শুরু করেছে। এবার কাঠমুন্ডুকেও নিজেদের দিকে টানার চেষ্টা শুরু করেছে বেইজিং।

সীমান্ত সমস্যা নিয়ে নেপালের সঙ্গে চীনের আলোচনাকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। ভুটানের সঙ্গে যেমন ভারত এবং চীনের সীমান্ত মিলেছে, তেমনই নেপালের সঙ্গেও ভারত ও চীনের সীমান্ত অন্তত দুটি জায়গায় মিলেছে। এর মধ্যে ভারতের উত্তরখণ্ড রাজ্যের সঙ্গে নেপালের পশ্চিমাংশের সীমানা যেখানে মিলছে, সেই লিপুলেখ এলাকাকে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। লিপুলেখকে দুদেশই নিজেদের এলাকা বলে দাবি করে। ওই সীমান্ত নিয়ে চীনের সঙ্গে একটি চুক্তিও হয়েছে ভারতের। লিপুলেখ নেপালের নাকি ভারতের- তা ফয়সালা হওয়ার আগেই ওই এলাকাকে নিয়ে নিজেদের মধ্যে ভারত এবং চীন কীভাবে চুক্তি করে ফেলল- এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল নেপাল। এবার সীমান্ত নিয়ে চীনের নতুন কূটনীতিতে দিল্লির অস্বস্তি বাড়ছে।

গো নিউজ২৪/ আরএস

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর
পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রশ্নে যা বলছে যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রশ্নে যা বলছে যুক্তরাষ্ট্র