ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ধূমপান ত্যাগে প্রযুক্তির আশ্রয়


গো নিউজ২৪ | শেখ আনোয়ার প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০১৯, ০৯:৪৭ পিএম
ধূমপান ত্যাগে প্রযুক্তির আশ্রয়

ধূমপান। প্লেগ মহামারির চেয়েও ভয়ংকর এক আতঙ্কের নাম। প্লেগের সঙ্গে ধূমপানের পার্থক্য শুধুমাত্র সময় নিয়ে। প্লেগের জীবাণু সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণ করে। আর ধূমপানের বিষাক্ত পদার্থ আক্রমণ করতে সময় নেয় দশ বছর। বেশি সময় নেয় বলে সময়ের ফাঁকে তামাক ব্যবসায়ীরা বিশ্ববাসীকে ধূমপানের দিকে টেনে নিয়ে নীরবে খুন করতে সক্ষম হচ্ছে। 

বর্তমান প্রজন্মের লাখ লাখ তরুণ-তরুণী যদি এখন থেকে ধূমপানের অভ্যাস পরিত্যাগ না করে তবে আগামী দশ বছরের মধ্যে ধূমপানগ্রস্থ লাখ লাখ মানুষ ধূমপানজনিত ভয়ংকর রোগে মারা যাবে। একই বছরে একই হারে লাখ লাখ মানুষের এই মৃত্যু প্লেগ মহামারীর চেয়ে কম কিসে? 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী সারা বিশ্বে ধূমপান বা নিকোটিনে আসক্ত মানুষের সংখ্যা এক দশমিক এক হাজার মিলিয়ন। এর মধ্যে তিনভাগের একভাগই হচ্ছে পনের থেকে কিছু বেশি বয়সের তরুণ। এদের অধিকাংশের বসবাস উন্নয়নশীল দেশে। 

সংস্থাটি জানায়, দারিদ্র্যতার  হতাশায় অল্প বয়সী তরুণ-তরুণীরা ধূমপানে আসক্ত হচ্ছে। অনেকেই এ ধারণার বশবর্তী হয়ে ধূমপান করেন যে, সিগারেট মানসিক হতাশা দূর করতে সহায়তা করে। বিজ্ঞানীদের মতে, এ ধারণা ভুল। বিজ্ঞানীরা জানান, যে সমস্ত কর্মী খনিজ পদার্থ, আর্সেনিক, নিকেল, রংজাত দ্রব্য, অ্যালুমিনিয়ামের বৈদ্যুতিক গলন, অ্যালকোহলিক পানীয় ইত্যাদি পেশায় নিয়োজিত, তারা ভয়ংকর রোগে এমনিতেই আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এসব ভয়ংকর রোগের মধ্যে রয়েছে ফুসফুস, নাসিকা, গলব্লাডার, মুখগহবর, গলা ও অন্ননালীর মত স্থানে মারাত্মক ক্যান্সার জনিত রোগ। এসমস্ত রোগ আরও চরম ভয়াবহ আকার ধারণ করে যদি এ সমস্ত কর্মী হয়ে থাকেন নিয়মিত ধূমপায়ী। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক এক তথ্যে প্রকাশ, ধূমপায়ীদের শরীরে এক ধরণের বিশেষ জিন তৈরি হয় এবং তা অবস্থান করে। এমনিতেই ধূমপানে হৃদরোগের ঝুঁকি থাকে। কিন্তু অপরিমিত ধূমপায়ীর শরীরে তৈরি হওয়া এ জিনটি হৃদরোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি আরও তিনগুণ বাড়িয়ে দেয়। 

অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অবস্থিত প্রিন্স হেনরি বিশ্ববিদ্যলয়ের অধ্যাপক ডেভিড উইলকেন ও তাঁর সহযোগীরা ধূমপায়ীর দেহে এমন এক জিনের সন্ধান পেয়েছেন, যা সামগ্রিক  জনসংখ্যার শতকরা প্রায় সাত ভাগের  শরীরে অবস্থান করছে। এটি পাওয়া যায়, ধূমপায়ীদের শরীরের সাত নম্বর ক্রোমোজোমের লম্বা বাহুতে। বিজ্ঞানীরা এ ধরণের বিশটি জিনকে সনাক্ত করতে পেরেছেন। যেসব জিন শরীরের কোলেস্টেরল বৃদ্ধি ও রক্ত জমাট বাঁধার কাজে ভূমিকা রাখে। ক্ষতিকর জিনটি কোন কোন ক্ষেত্রে অধূমপায়ীর শরীরেও বাসা বাঁধে পরোক্ষ ধূমপানের আক্রান্ত হবার কারণে। তবে তাদের শরীরে এ জিনটির প্রভাবে রক্ত নালীর সঙ্কোচনশীল অবস্থা সৃষ্টি হলেও খুব একটা ক্ষতি করতে পারেনা। কিন্তু জিনটি অপরিমিত ধূমপায়ীর শরীরে অবস্থান করে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। 

বিজ্ঞানীরা মন্তব্য করেন, এমনিতেই ধূমপানের ফলে নিকোটিনের প্রভাবে রক্তনালী সঙ্কোচিত হয়ে হৃদরোগের ক্ষেত্র তৈরি হয়। তার ওপর নতুন আবিষ্কৃত জিনটি অবস্থান করলে আরও বেশি দ্রুত হৃদরোগে আক্রান্ত হবার আশংকা থাকে। এই ক্ষতিকর জিন যাদের শরীরে থাকে তাদের কেউ কেউ চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে ধূমপান ত্যাগ করে আবার ধূমপানে আসক্ত হয়েছেন। কেউবা সাত থেকে আটদিন পর আবার ফিরে এসেছেন ধূমপানে। কিন্তু কেন? এদের এই অবস্থা থেকে উত্তরণের কী কোন পথ নেই?

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা আবিস্কার করেছেন, ধূমপান ত্যাগের নতুন এক বৈজ্ঞানিক চমক। যার নাম নিকোডার্ম বা ‘নিকোইটিন সিকিউ’। এটি বিশেষ ধরনের রাসায়নিক পট্রির নাম। যার মধ্যে রয়েছে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন এন্টি নিকোটিন পদার্থ। এই পট্রি দেখতে অনেকটা বাজারে বহুল প্রচলিত ব্যথা নিবারক তালি, পট্রি বা গজ ব্যান্ডেজের মতো। যার প্রতিটিতে রয়েছে একুশ মিলিগ্রাম ক্ষমতা সম্পন্ন এন্টি নিকোটিনের রাসায়নিক প্রলেপ। এসবি প্রোডাকশনের ব্যানারে বাজারজাতকৃত ‘নিকোইটিন সিকিউ’ এর প্রতি প্যাকেটে রয়েছে মোট সাতটি পট্রি বা প্যাচ। পরপর সাতদিন এই পট্রি ব্যবহার করতে হয়। শরীর থেকে নিকোটিন শুষে নেয়ার কাজ করার কারণেই বিশেষ মুহুর্তে ধূমপায়ীর ধূমপানের মানসিকতা বা ইচ্ছা তাৎক্ষণিক নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। ব্রিটেনে লাখ লাখ মানুষ এন্টি নিকোটিন সমৃদ্ধ এই পট্রি ব্যবহারের মাধ্যমে তাৎপর্যপূর্ণভাবে ধূমপান ত্যাগে সফল হয়েছেন। ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন ধূমপান প্রতিরোধের ব্যাপক কর্মসূচির অংশ হিসেবে ‘নিকোইটিন সিকিউ’ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। ‘নিকোইটিন সিকিউ’ বৈজ্ঞানিক গবেষণায় স্বীকৃত এবং ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ধূমপান নিবারণে একটি কার্যকর রাসায়নিক প্রযুক্তি হিসেবে স্বীকৃত। 

প্রস্তুতকারক কোম্পানির পরিচালক ড. লুই রুসেল বলেন, “ধূমপান করা বা না করার মাঝখানে মন:স্তাত্তিক দ্বিধাদন্ধের বিরুদ্ধে ‘নিকোইটিন সিকিউ’ জাদুর কাঠির মতো কাজ করে থাকে।” তিনি আরও জানান, সাধারণত হঠাৎ করে ধূমপান ত্যাগ করলে বা শরীর থেকে নিকোটিন আকস্মিক প্রত্যাহার করা হলে প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিষন্নতা, উত্তেজনা এবং শরীরে খিঁচুনি দেখা দেয়। এ কারণে বেশিরভাগ ধূমপায়ী মানুষ তিনদিনের বেশি ধূমপান বাদ দিয়ে থাকতে পারেন না। কিন্তু ‘নিকোইটিন সিকিউ’ এ সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। 

কোন এক ভোরে আপনি সিদ্ধান্ত নিলেন, আজ থেকে আপনি ধূমপান ছেড়ে দেবেন। ব্যাস। প্রথম দিনে হাতের কব্জিতে কিংবা কানের পাশে সেটে নিতে হবে, উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন প্রথম পট্রি ‘নিকোইটিন সিকিউ’ বা নিকোডার্ম। এরপর ক্রমান্বয়ে প্যাকেটে থাকা নিন্ম ক্ষমতাসম্পন্ন পট্রি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে যারা দৈনিক দশটির কম সিগারেট পান করেন তাদের জন্য মধ্যম শক্তি সম্পন্ন পট্রি ব্যবহার করাই যুক্তিযুক্ত। পট্রি লাগানোর মাত্র ক’সেকেন্ডের মধ্যেই শরীর থেকে চুম্বকের মতো নিকোটিন শুষে নেয়া শুরু করে । চব্বিশ ঘন্টা পর ঠিক একই সময়ে নতুন আরেকটি পট্রি বেঁধে নিতে হয়। দিনের বেলা এবং যতক্ষণ আপনি সজাগ থাকবেন আপনার  মনে একবারও ধূমপানের আসক্তি তৈরি হবে না। ধূমপান ত্যাগের ইচ্ছাশক্তি বেড়ে যাবে। নিয়ন্ত্রিত হবে ধূমপান। শান্ত এবং ধীর হবে আপনার মন। শরীর হবে চাঙ্গা। আপনি ফিরে পাবেন কৈশোরের মুক্ত নি:শ্বাসপূর্ণ চনমনে জীবন।        

লেখক: গবেষক, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

গো নিউজ২৪/আই                                                                                                                                              

স্বাস্থ্য বিভাগের আরো খবর
করোনা নিয়ে হঠাৎ বড় দুঃসংবাদ

করোনা নিয়ে হঠাৎ বড় দুঃসংবাদ

দেশে এইডস রোগী বাড়ছে, বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন সমকামীরা

দেশে এইডস রোগী বাড়ছে, বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন সমকামীরা

বহির্বিশ্বে গ্রহণযোগ্যতা হারানোর পথে বাংলাদেশের এমবিবিএস ডিগ্রি

বহির্বিশ্বে গ্রহণযোগ্যতা হারানোর পথে বাংলাদেশের এমবিবিএস ডিগ্রি

বাংলাদেশে ডেঙ্গু টিকার সফল পরীক্ষা

বাংলাদেশে ডেঙ্গু টিকার সফল পরীক্ষা

মশা নিধন যাদের দায়িত্ব, তাদের তা সঠিকভাবে পালন করতে হবেঃ স্বাস্থ্যমন্ত্রী

মশা নিধন যাদের দায়িত্ব, তাদের তা সঠিকভাবে পালন করতে হবেঃ স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ইউটিউব দেখে ফিজিওথেরাপি সেন্টার!

ইউটিউব দেখে ফিজিওথেরাপি সেন্টার!