ডেঙ্গু - মশা বাহিত একটি ভাইরাস, সাধারণত স্ত্রী এডিস মশা এই ভাইরাস ছড়ায়। স্ত্রী এডিস মশার দুটি প্রজাতি। একটি প্রজাতির নাম এডিস এজেপ্টি (Aedes Aegepti) যা গৃহ পালিত এবং ডিম পাড়ে ফুলের টবের পানিতে, এ্যাকুরিয়াম, ফ্রিজ বা এয়ারকন্ডিশনারের জমাট বদ্ধ পরিস্কার পানিতে। আরেক প্রজাতীর নাম এডিস এল্বপটিকাস (Aedes Albopticus) যা গ্রামে বা মফস্বলের জমাট বৃষ্টির পানি, নারকেলের খোসা বা গাছের কোটরের পানিতে ডিম পাড়ে। তাই ডেঙ্গু এখন শহর বা মফস্বল এবং গ্রামে গঞ্জেও ছড়িয়ে পড়ছে। সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঘটে।
ডেঙ্গুর ৪টা সেরোটাইপ- DEN1, DEN2, DEN3 এবং DEN4। বর্তমান সময়ে DEN3- তে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশী পাওয়া যাচ্ছে।
ডেঙ্গুর লক্ষন সমূহঃ
প্রচন্ড জ্বর (১০২ থেকে ১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত), ব্যাপ্তিকাল ২ থেকে ৭ দিন
মাথা ব্যাথা, চোখের পেছনে ব্যাথা
শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা, বমি, পেট ব্যাথা
দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া
জ্বরের ৩ থেকে ৪ দিনের মাথায় শরীরে লাল দানার মতো দেখা যাওয়া
বমির সাথে রক্ত যাওয়া
ফুসফুসে এবং পেটে পানি আসা
প্রশ্রাব কমে যাওয়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়া
করণীয়ঃ
সচেতনতা বৃদ্ধি - নিজেকে এবং অপরের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং জনপ্রতিনিধিগণ নিজ নিজ এলাকায় ডেঙ্গু মশা নিধনের ব্যাবস্থা করবেন।
শিশুদের ক্ষেত্রে ডেঙ্গু জ্বর মারাত্বক। তাই লক্ষণ সমূহ দেখা যাবার সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
বাসার আসবাবপত্র এবং আশপাশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ঘুমানোর সময় এবং দিনের বেলায় ও শিশুদের মশারির ভেতর রাখা উচিৎ।
জ্বর হলে প্রচুর খাবার স্যালাইন, ডাবের পানি, ফলের রস, চিড়ার পানি, জাউভাত, স্যুপ খাওয়া উচিৎ।
জ্বর হলে শুধুমাত্র প্যারাসিটামল সিরাপ বা ট্যাবলেট ডোজ অনুযায়ী খাওয়ানো উচিৎ। কোনক্রমেই এসপিরিন, ক্লোফেনাক, আইবুপ্রোফেন বা এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যাবে না।
বিপদ চিহ্ন দেখা যাবার সাথে সাথে দ্রুত হাসপাতালে যোগাযোগ করা উচিৎ।
জ্বর ৩ দিনের মাথায় কমে যাওয়ার পর পরের ৪৮ ঘন্টা খুব সাবধানে থাকতে হবে। কারণ এ সময়টাকে আমরা ক্রিটিক্যাল ফেইজ বলি যা খুব মারাত্বক।
বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে জ্বর হওয়ার দুই দিনের মাথায় বিশেষ করে শিশুরা শকে (Shock) এ চলে যচ্ছে যা খুবই মারাত্বক, তাই এসময়ে শিশুদের জ্বরের সাথে মাথা ব্যাথা বা বমি থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হয়ে পরিক্ষা-নিরীক্ষা করা উচিৎ।
ডেঙ্গু প্রতিরোধই উত্তম। নিজে সচেতন হোন এবং সবাইকে সচেতন করুন।
ডা. রিজওয়ানুল আহসান বিপুল
আবাসিক চিকিৎসক ও সহকারী অধ্যাপক, ঢাকা শিশু হাসপাতাল
গো নিউজ২৪/আই