ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পন্ডিত মধুসূদন গুপ্ত, ভারতবর্ষের প্রথম অ্যানাটমিস্ট


গো নিউজ২৪ প্রকাশিত: জুলাই ৯, ২০১৮, ১০:৪৯ পিএম
পন্ডিত মধুসূদন গুপ্ত, ভারতবর্ষের প্রথম অ্যানাটমিস্ট

কুসংস্কার কিংবা ধর্মীয় গোঁড়ামি অনেক ক্ষেত্রেই সামাজিক উন্নতির পথে অন্তরয় হিসেবে আবির্ভূত হয়। কিন্তু সব যুগেই কিছু ব্যক্তি থাকেন যারা সংস্কারের মাধ্যমে দৃপ্ত পদক্ষেপে সমাজকে সময়ের সাথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটি পালন করেন। তেমনই একজন মানুষ হলে পন্ডিত মধুসূদন গুপ্ত। 

তখনকার দিনে গোঁড়া হিন্দু সমাজে শবব্যবচ্ছেদ নিষিদ্ধ ছিল। তাই ১৮৩৬ সালের আগে ইউরোপীয় এলোপ্যাথি পদ্ধতিতে চিকিৎসা করবে উপমহাদেশে এরকম কোনো চিকিৎসক ছিলনা। কারণ এলোপ্যাথিক উপায়ে চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ন করতে হলে শবব্যবচ্ছেদের মাধ্যমে শারীরতত্ত্ব পড়তে হবে। তৎকালীন গোঁড়া হিন্দু সমাজে এ ধরনের কাজকে গর্হিত এবং ধর্মহীনতার লক্ষণ বলে বিবেচনা করা হতো। একজন আয়ুর্বেদী শল্যচিকিৎসক হিসেবে মধুসূদন গুপ্ত সর্বপ্রথম এ কাজে এগিয়ে আসেন। ১৮৩৬ সালের ১০ জানুয়ারি প্রথম বাঙালি হিসেবে তিনি কলকাতা মেডিকেল কলেজে শবব্যবচ্ছেদের মাধ্যমে এ ইতিহাস গড়েন।

ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে সেই প্রাচীনকালে চিকিৎসা বিজ্ঞানী সুশ্রুতের পর এই প্রথম মধুসূদন গুপ্তের মাধ্যমে শবব্যবচ্ছেদ সম্পন্ন হয়। মধুসূদন গুপ্ত রক্ষণশীল এবং প্রাচীনপন্থী সকল হিন্দু মোড়লদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে এ কাজে অংশ নেন। এভাবেই নিষেধের সকল বাধা পেরিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞান এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছিল তাঁর হাত ধরেই।

তাঁর জন্ম (খুব সম্ভবত) ১৮০০ সালে। এ সময় কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ স্থাপিত হয়। তিনি ছিলেন হুগলি জেলার বৈদ্যবাটি গ্রামের এক আয়ুর্বেদিক বৈদ্য পরিবারের সন্তান। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় তাঁর পরিবারের খুব প্রভাব প্রতিপত্তি ছিল বলে জানা যায়। পিতামহ ছিলেন হুগলির নবাব পরিবারের গৃহ চিকিৎসক। ছেলেবেলায় তিনি অবশ্য একদম পড়াশোনা করতে চাইতেন না। এমনও শোনা যায় যে, তাঁর বাবা তাঁকে পড়াশুনায় অমনোযোগী বলে একবার বাড়ি থেকে বেরও করে দিয়েছিলেন।

প্রাথমিক শিক্ষা শেষে তিনি ভর্তি হন সংস্কৃত কলেজের আয়ুর্বেদ বিভাগে। আয়ুর্বেদে অসাধারণ দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি সংস্কৃত, ন্যায়শাস্ত্র, অলংকার প্রভৃতি বিষয় পাঠে তিনি যথেষ্ট বৈদগ্ধ্যের পরিচয় দেন। সংস্কৃত কলেজে ভর্তি হওয়ার আগে তিনি কেবল রাম কবিরাজ নামে এক বৈদ্যের কাছে দেশজ পদ্ধতিতে রোগ নির্ণয় ও ওষুধ দেওয়ার বিধি বিধান সম্বন্ধে হাতে কলমে শিক্ষা নেন। সে সময়ে তিনি বিভিন্ন বৈদ্যের সাথে গ্রামে গ্রামে রোগী দেখতে যেতেন। এই অভিজ্ঞতা তাঁকে চিকিৎসাশাস্ত্র সম্বন্ধে ব্যুৎপত্তি অর্জনে পরবর্তীতে সাহায্য করেছিল।

যখন তিনি সংস্কৃত কলেজে আয়ুর্বেদ শাস্ত্র পড়তেন তখন থেকেই শারীরতত্ত্ব সম্বন্ধে তাঁর আগ্রহ সৃষ্টি হয়। তিনি কাঠ বা মোম দিয়ে তৈরি বিভিন্ন অস্থি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতেন। মাঝে মধ্যে নিজ থেকেই বিভিন্ন জীবজন্তুর দেহ ব্যবচ্ছেদের মাধ্যমে তিনি ব্যবচ্ছেদ কার্যে আস্তে আস্তে পটু হয়ে উঠেন। তাছাড়া ক্রমে তাঁর জ্ঞানের প্রতি তৃষ্ণা বাড়তে থাকে। বুদ্ধি ও চারিত্রিক দৃঢ়তায়ও তিনি হয়ে উঠতে থাকেন স্থির ও সাবলীল। কলেজে অনেক ইংরেজি ভাষায় রচিত চিকিৎসা শাস্ত্রীয় বই ছিল। তিনি ইংরেজি ভাষা ভালমত রপ্ত করে সেই বইগুলি পড়ে ফেলেন। সংস্কৃত কলেজে থাকার সময়েই তিনি হুপারের লেখা “Anatomist’s Vade Mecum”  বইটি সংস্কৃতে অনুবাদ করে ১০০০ টাকা পুরস্কার লাভ করেন।

স্থানীয়দের চিকিৎসা দানের জন্যে ১৮৩২ সালের প্রথমে সংস্কৃত কলেজের পাশেই একটি একতলা বাড়িতে একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। সংস্কৃত কলেজের শিক্ষকেরা এসে এখানে ক্লাস নিতেন ও চিকিৎসা বিষয়ে বক্তৃতা দিতেন। মধুসূদন গুপ্ত সেই বক্তৃতা শুনতেন যথেষ্ট মনোযোগ সহকারে। ফলে বিভিন্ন সহপাঠির চেয়ে তাঁর জ্ঞান ছিল অনেক বেশি প্রখর ও ঋদ্ধ। ১৮৩৫ সালে কলকাতা মেডিকেল কলেজ খোলার পর সংস্কৃত কলেজের আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রের বিভাগটি বন্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকে ১৮৩৫ সালের ১৭ই মার্চ থেকে তিনি মেডিকেল কলেজের ডেমোনস্ট্রেটরের কাজে নিযুক্ত হন ও সহকারী অধ্যাপকের কাজ করতে থাকেন। কিন্তু একজন সহপাঠীর কাজ থেকে পাঠ নিতে শিক্ষার্থীরা আপত্তি জানায়। তাই পাশ করা ডাক্তারের সমতুল্য হওয়ার জন্য পরীক্ষা দিতে হয় তাঁকে। আর তাতে তিনি সসম্মানে উত্তীর্ণ ও হন। এর পর ১৮৩৬ সালের ১০ই জানুয়ারি সৃষ্টি হয় সেই ইতিহাসের। যার মাধ্যমে এক নতুন যুগ আসে ভারতীয় উপমহাদেশের চিকিৎসাশাস্ত্রের পটভূমিতে।

তৎকালীন কলকাতা মেডিকেল কলেজ স্থাপনা
ছবিঃ কলকাতা শহরের ইতিবৃত্ত - বিনয় ঘোষ

এলিট ড্রিংকওয়াটার এর মুখেই সেই দিনের রোমাঞ্চকর স্মৃতিচারণা শুনুন-

“ ….. মেডিকেল কলেজের সব ফটকগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, পাছে এই বিধর্মী কাজ বন্ধ করার জন্য প্রাচীনপন্থীরা কলেজে আক্রমণ চালায়! মেডিকেল কলেজের মর্গে তিল ধারণের ঠাঁই নেই, সেখানে উপস্থিত মেডিকেল কলেজের সব ইংরেজ অধ্যাপক, ছাত্রেরা ভিড় করে দাঁড়িয়েছে ঘরের বাইরের দরজায়, জানালার ফাঁকে ফাঁকে চোখ রেখে অপেক্ষা করছে অনেকে। সারা ক্যাম্পাস ফাঁকা। নির্দিষ্ট সময়ে ডাক্তার গুডিভের সঙ্গে দৃপ্তপদে ঘরে ঢুকলেন একদা সংস্কৃত কলেজের আয়ুর্বেদ বিভাগের ছাত্র পণ্ডিত মধুসূদন গুপ্ত। বর্তমানে যিনি একই সঙ্গে মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ও ছাত্র। ডাক্তারী শাস্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ সার্জারি, যা ভারতে এখনও করানো সম্ভব হয়নি, শবব্যবচ্ছেদ নিয়ে বর্ণ হিন্দুদের গোঁড়া কুসংস্কারের জন্য, সেই কাজটিই আজ করতে এসেছেন পন্ডিত মধুসূদন, হাতে তাঁর একটি শব ব্যবচ্ছেদ করার তীক্ষ্ণ ছুরি। তাঁর সঙ্গে যোগ দেবার জন্য দলে নাম ছিল উমাচরণ শেঠ, রাজকৃষ্ণ দে, দ্বারকানাথ গুপ্ত ও নবীন চন্দ্র মিত্রের। কিন্তু তাঁরা দরজার বাইরেই ভিড় করে দাঁড়িয়ে রইলেন।

ঘরে ঢুকে মধুসূদন বিনাদ্বিধায় এগিয়ে গেলেন শবের দিকে। শবদেহের নির্ভুল জায়গায় ছুরিটি প্রবেশ করালেন তিনি। মুখে কোনও আড়ষ্টতা বা অস্থিরতার চিহ্ন নেই। খুব নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করলেন ব্যবচ্ছেদের কাজ। ভারতবর্ষের চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে বিজ্ঞানী শুশ্রূতের পরে এই প্রথম হল শবব্যবচ্ছেদ। দীর্ঘকালের কুসংস্কারের আর গোঁড়া পন্ডিতদের বাধা নিষেধের বেড়া ভেঙে দিলেন তিনি এই একটি কাজের মাধ্যমে। নিষেধের জগদ্দল ভার সরিয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানে ভারতবর্ষ এক নতুন যুগে প্রবেশ করল।”

১৮৪৭ এ চিকিৎসাশাস্ত্র বিষয়ক জার্নাল ল্যান্সেটের সম্পাদকে একটি চিঠিতে ডাক্তার গুডিভ এই সময়টাকে স্মরণ করে লিখেছিলেন-

“The most important blow which has yet been struck at the root of native prejudices and superstition, was accomplished by the establishment of the Medical College of Calcutta, and the introduction of practical anatomy as a part of the professional education of Brahmins and Rajpoots, who may now be seen dissecting with an avidity and industry which was little anticipated by those who know their strong religious prejudices upon this point twenty years since.”

ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থান থেকে আহত ভারতীয় সৈন্যদের চিকিৎসার সুবিধার জন্যে ১৮৩৯ সালে কলকাতা মেডিক্যালের সাথে একটি হিন্দুস্থানি শ্রেণী খোলা হয়। ১৮৪২-৪৩ এর দিকে এই বিভাগটি যখন ঢেলে সাজানো হয় তখন এর অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত হন মধুসূদন গুপ্ত। এই বিভাগ পরিচালনা এবং বিশেষত তৎকালীন প্রাচীনপন্থী হিন্দুদের অস্ত্রোপচারের জন্যে রাজী করানোর ক্ষেত্রে তিনি অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৮৪৫ সালেই তিনি লন্ডন ফার্মাকোপিয়ার অনুবাদ শেষ করেন। এটি প্রকাশিত হয় ১৮৪৯ সালে। বইটির পুরো নাম দেওয়া হয় “লণ্ডন ফার্ম্মাকোপিয়া/অর্থাৎ/ইংলন্ডীয় ঔষধ কল্পাবলী”।

বর্তমানে আমরা বাংলা ভাষায় বেশ কিছু চিকিৎসাশাস্ত্রের বই দেখতেপাই– যার শুরুটা হয়েছিল তাঁর হাত দিয়ে। ১৮৫২ সালে  কলকাতা মেডিকেল কলেজের একটি অনুষঙ্গ রূপে বাংলা বিভাগ খোলা হয়। এই বিভাগে চিকিৎসা বিষয়ক যাবতীয় বিষয় বাংলার মাধ্যমেই শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল। এই বিভাগে অধ্যক্ষ হিসেবে মধুসূদন সেই সময় যথেষ্ট প্রজ্ঞার পরিচয় দেন। তখন বিভিন্ন জেলা শহর ও গ্রামগুলোতে চিকিৎসকের প্রয়োজন ছিল প্রচুর আর চিকিৎসা সংক্রান্ত সবকিছু ইংরেজি ভাষায় হওয়ায় সকল ছাত্র ভর্তি হয়ে পুরোপুরি পড়া শেষ করতে পারতোনা। তার উপর ইংরেজি ভাষা শিক্ষা ছিল এখনকার তুলনায় অপ্রতুল। এজন্য মধুসূদন তাঁর সহপাঠীদের নিয়ে বিভিন্ন ইংরেজি বই অনুবাদের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। ১৮৫৩ সালে মধুসূদন প্রকাশ করলেন ‘এনাটমি’। আজ আমরা এনাটমির বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে যে প্রচলিত ‘শারীরবিদ্যা’ শব্দটি ব্যবহার করি সেটি প্রচলিত হয় মধুসূদন গুপ্তের হাত ধরে।

তিনি শুধু একজন দক্ষ শল্য চিকিৎসকই ছিলেন না । বরং ছিলেন একজন সমাজ সচেতন ব্যক্তিত্ব। দেশের জনস্বাস্থ্য, পানীয় জলের স্বচ্ছতা ও জীবাণুমুক্তকরণ, পরিবেশ পরিচ্ছন্নতা ও দূষণ মুক্ত করা ইত্যাদি নানা জনহিতকর কাজে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি নিজে ডায়াবেটিকের রোগী ছিলেন। কিন্তু বারণ না শুনে সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েও তিনি অনবরত শবব্যবচ্ছেদ করতেন এবং অন্যদের সাহস যোগাতেন। এই জীবাণু সংক্রমণেই ডায়াবেটিক সেপ্টিমিয়াতে আক্রান্ত হয়ে ভারতবর্ষে প্রথম বাঙালি শব ব্যবচ্ছেদকারী শল্য চিকিৎসকের মৃত্যু হয় ১৮৫৬ সালের ১৫ ই নভেম্বর। তাঁর মৃত্যুতে কলকাতার মেডিক্যাল কলেজের শোকবার্তায় তৎকালীন অধ্যক্ষ উইলসন লেখেন -

“To him a debt of gratitude is due by his countrymen. He was the pioneer who cleared a space in the jungle of prejudice, into which others have successfully pressed, and it is hoped that his countrymen appreciating his example will erect some monument to perpetuate the memory of the victory gained by Muddoosoodun Gooptu over public prejudice, and from which so many of his countrymen now reap the advantage.”

মধুসূদন দত্তের বাসভবনে আজও অবিকৃত ফলক তাঁর প্রতি বাংলা ও বাঙ্গালির কৃতজ্ঞতা বহন করছে সগৌরবে।

 

লেখকঃ অতনু চক্রবর্ত্তী, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগ, পুসান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, দক্ষিণ কোরিয়া

 

স্বাস্থ্য বিভাগের আরো খবর
করোনা নিয়ে হঠাৎ বড় দুঃসংবাদ

করোনা নিয়ে হঠাৎ বড় দুঃসংবাদ

দেশে এইডস রোগী বাড়ছে, বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন সমকামীরা

দেশে এইডস রোগী বাড়ছে, বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন সমকামীরা

বহির্বিশ্বে গ্রহণযোগ্যতা হারানোর পথে বাংলাদেশের এমবিবিএস ডিগ্রি

বহির্বিশ্বে গ্রহণযোগ্যতা হারানোর পথে বাংলাদেশের এমবিবিএস ডিগ্রি

বাংলাদেশে ডেঙ্গু টিকার সফল পরীক্ষা

বাংলাদেশে ডেঙ্গু টিকার সফল পরীক্ষা

মশা নিধন যাদের দায়িত্ব, তাদের তা সঠিকভাবে পালন করতে হবেঃ স্বাস্থ্যমন্ত্রী

মশা নিধন যাদের দায়িত্ব, তাদের তা সঠিকভাবে পালন করতে হবেঃ স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ইউটিউব দেখে ফিজিওথেরাপি সেন্টার!

ইউটিউব দেখে ফিজিওথেরাপি সেন্টার!