ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিদারুণ সমস্যায় হতাশ নারী ট্রাফিক পুলিশ সদসরা


গো নিউজ২৪ | নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২০, ০১:২৬ পিএম আপডেট: নভেম্বর ২১, ২০২০, ০৭:২৬ এএম
নিদারুণ সমস্যায় হতাশ নারী ট্রাফিক পুলিশ সদসরা

রাজধানীর অনেক ট্রাফিক পুলিশ বক্সে নেই টয়লেট। এ নিয়ে প্রতিনিয়ত দারুণ অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে নারী ট্রাফিক পুলিশদের। দীর্ঘদিনেও এর সমাধান না পেয়ে হতাশ তারা। এমনকি টয়লেটে যেন কম যেতে হয় সেজন্য হাড়ভাঙা ডিউটিতেও পানি পানের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন অনেকে!

প্রতিদিন দুই শিফটের ডিউটি। এমনিতে একটুখানি বিরতি নেওয়ার সুযোগ নেই। বিরতি নিতে গেলেই লেগে যায় যানজট। কিন্তু টয়লেটে তো যেতেই হবে। এর জন্য যদি আবার টয়লেটটা খুঁজে বের করতে হয় বা লাইন ধরতে হয়, তবে বিড়ম্বনা ষোলোআনা।

ট্রাফিকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলছে, টয়লেট সমস্যার সমাধানে ইতোমধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোশেনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই একটা সমাধান আসবে।

জানা গেছে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিএমপিতে ১৩২৫ জন নারী পুলিশ কাজ করেন। এরমধ্যে রাজধানীতে ৩৫ জন নারী সার্জেন্ট কাজ করেন। সার্জেন্টেদের পাশাপাশি সড়কের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে নারী কনস্টেবলরাও দায়িত্ব পালন করছেন। সাধারণত প্রতিদিন সকাল ৭ থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত দুই শিফটে কাজ করেন তারা।

ডিএমপির ট্রাফিকের তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার শাহেদ আলম মাসুদ বলেন, সাধারণত যেসব এলাকায় যানবাহন চলাচল কম সেখানে দুই শিফটে ট্রাফিক সদস্যরা কাজ করে। যানবাহন বেশি চললে তিন শিফট আছে। শিফটগুলো সকাল ৭ থেকে শুরু হয় দুপুর ২টায় শেষ হয়। দুপুরে যেটা শুরু হয় সেটা রাত ১০ টায় শেষ হয়। এরপর রাত ১০টা থেকে সকাল ৭টা। দুই শিফট হলে সকাল ৭টা থেকে দুপুর ২টা। আর ২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ডিউটি করতে হয়।

নারী ট্রাফিক পুলিশরা বলছেন, টানা আট ঘণ্টা দায়িত্ব পালনকালে ট্রাফিক পুলিশদের কমপক্ষে দুইবার টয়লেটে (ওয়াশরুম) যেতেই হয়। কিন্তু দুয়েকটি ছাড়া আর কোনও ট্রাফিক পুলিশ বক্সে টয়েলেট নেই। বাধ্য হয়ে ডিউটি স্থানের আশপাশের হাসপাতাল, মার্কেটের ওয়াশরুম খুঁজে বের করতে হয় আমাদের। এদিকে রাত ৮ পর মার্কেটগুলো বন্ধ হয়ে যায়। তখন বেশি বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। অনেক টয়লেটে যাওয়ার ভয়ে দায়িত্ব পালনকালে ঠিকমতো পানিও খান না।

নারী পুলিশরা আরও বলেছেন, মাসের নির্ধারিত কয়েকটি দিন নারীদের ঋতু চলাকালে হাসপাতাল বা অন্য কোনও জায়গার টয়লেট ব্যবহার করা অস্বস্তিকর। তাই নারীদের জন্য পুলিশ বক্সে আলাদা টয়লেট স্থাপন করুরি।

রাজধানীর শ্যামলী শিশুমেলার সামনে সার্জেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন ইসমত তারা। ২০১৫ সালে পুলিশে যোগ দেন তিনি। শিশুমেলার সামনে কিছুক্ষণ অবস্থান করে দেখা যায় সড়কের যানবাহনের শৃঙ্খলা রক্ষার কাজের পাশাপাশি শারীরিক প্রতিবন্ধীদের রাস্তা পারাপার এবং গাড়িতে উঠতেও সাহায্য করছেন তিনি।

ইসমত তারা বলেন, আমাদের নিজস্ব টয়লেট না থাকায় ডিউটি পালনকালে আশপাশের হাসপাতাল বা ব্যাংকের ওয়াশরুম ব্যবহার করতে হয়। তখন ওইসব জায়গার লোকজনের কাছে যখন ওয়াশরুম কোথায় জানতে চাই, তখন বিব্রতকর অবস্থায় পড়ি।

তিনি বলেন, এখানে দায়িত্ব পালনকালে রাত ৮টা পর্যন্ত শিশুমেলার টয়লেট ব্যবহার করতে পারি। কিন্তু ৮ টার পর শিশুমেলা বন্ধ হয়ে গেলে আর যাওয়ার জায়গা থাকে না। এই ভয়ে অনকে সময় পানিও খাই না।

ট্রাফিক পুলিশের নির্ধারিত ওয়াশরুম থাকার প্রয়োজনীতার কথা তুলে ধরে ইসমত তারা বলেন, নির্ধারিত কিছু ট্রাফিক পুশিল বক্সে নিজস্ব টয়লেটের ব্যবস্থা থাকা দরকার। তাহলে ডিউটি স্থানের আশপাশে যেখানে টয়লেট ব্যবস্থা থাকবে আমরা সেখানে গিয়েও ব্যবহার করতে পারবো। আসলে ওয়াশরুম নিয়ে শুধু নারীরা নন, আমাদের পুরুষ সহকর্মীরাও ভোগেন।

রাজধানীর ওয়ারীতে কথা হয় নারী সার্জেন্ট তানজিলার সঙ্গে। তানজিলা বলেন, টয়লেটের ব্যবহার নিয়ে শুরুতে ভোগান্তিতে বেশি পড়লেও এখন মানিয়ে নিয়েছি। এইখানে ডিউটি থাকলে পাশের হাসপাতালের ওয়াশরুম ব্যবহার করি। হাসপাতালের কর্মীরাও খুব ভালো ব্যবহার করেন।

টয়লেট সমস্যা ছাড়া দায়িত্ব পালনকালে অন্য কোনও সমস্যায় পড়তে হয় না উল্লেখ করে তানজিলা বলেন, আমাদের স্যারেরা খুব সহযোগিতা করেন।

তিনি আরও বলেন, আমি যখন রাস্তায় দাঁড়াই তখন বুঝতে পারি যে আশপাশের স্কুল, কলেজের মেয়েরা বেশ অনুপ্রাণিত হয়। তারা বিভিন্ন সময় এসে আমার সঙ্গে কথা বলেন। নিজেদের ভালোলাগার বিষয়গুলো শেয়ার করেন।

ধানমন্ডির ২৭ নাম্বার মোড়ে দায়িত্বপালকালে কথা হয় নারী সার্জেন্ট লিমার সঙ্গে। ২০১৫ সালে চাকরিতে যোগ দেন। বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, টয়লেটের সমস্যাটি এক-দুই দিনের নয়। চাকরিতে যোগদানের পর আমাদের স্যারেরা জানতে চেয়েছিল রাস্তায় কী ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হই আমরা। তখনই টয়লেট ভোগান্তির বিষয়টি উঠে এসেছিল।

তিনি বলেন, পুলিশ বক্সের সঙ্গে টয়লেট থাকলে আমাদের ভালো হতো। কিন্তু না থাকার কারণে আশপাশের হাসপাতাল বা বাড়ির টয়লেট ব্যবহার করতে হচ্ছে।

ফুটপাতের ওপরের ট্রাফিক বক্সে যখন সার্জেন্ট লিমার সঙ্গে কথা হচ্ছিল তখন পাশে থাকা পুলিশ কনস্টেবল মতিউর বলেন, রাজধানীর হাতিরঝিল ও কাকলী পুলিশ বক্সের ভেতরে ওয়াশরুমের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু তেজগাঁও ও মিরপুর অঞ্চলে এই সুবিধা নেই। টয়লেট ভোগান্তিতে শুধু আমাদের নারী সহকর্মীরা নয়, আমাদেরও পড়তে হয়। কারণ রাস্তায় ডিউটি রেখে মার্টেক বা হাসপাতালের টয়লেট ব্যবহার করতে গিয়ে অনেক সময় লাইন ধরতে হয়। রাত ৮ পর মার্কেটগুলো বন্ধও হয়ে যায়। তখন যাওয়ার জায়গা থাকে না।

ট্রাফিক পুলিশের টয়লেট সমস্যার বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত উপ কমিশনার ট্রাফিক (ট্রাফিক অ্যাডমিন এন্ড রিসার্চ) মো. শফিকুর রহমান বলেন, টয়লেট সমস্যার বিষয়টি সমাধান করা নিয়ে আমাদের সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আলাচ-আলোচনা চলছে। তারা বলেছে যে ওয়াশরুমের সুবিধাসহ তারা কিছু ট্রাফিক পুলিশ বক্স করে দেবে। আর সাধারণত আমরা নারী সার্জেন্ট এবং কনস্টেবলদের এমন জায়গায় ডিউটি দেই, যেখানে কাছাকাছি টয়লেট সুবিধা আছে। সূত্র:  বাংলা ট্রিবিউন

সংবাদপত্রের পাতা থেকে বিভাগের আরো খবর
ব্যাংকে জমানো আমানত কমে যাচ্ছে

ব্যাংকে জমানো আমানত কমে যাচ্ছে

কারা হবে বিরোধী দল, লাঙ্গল না স্বতন্ত্র?

কারা হবে বিরোধী দল, লাঙ্গল না স্বতন্ত্র?

বিভিন্ন ছাড়ে ব্যাংক খাতের আসল চিত্র আড়ালের সুযোগ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

বিভিন্ন ছাড়ে ব্যাংক খাতের আসল চিত্র আড়ালের সুযোগ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

পাসপোর্ট এনআইডিসহ ১৯ কাজের অতি প্রয়োজনীয় জন্মসনদ এখন ‘সোনার হরিণ’

পাসপোর্ট এনআইডিসহ ১৯ কাজের অতি প্রয়োজনীয় জন্মসনদ এখন ‘সোনার হরিণ’

সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় যে ব্যাংক

সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় যে ব্যাংক

প্রশাসনের শীর্ষ পদে পদোন্নতিপ্রত্যাশীদের হতাশা বাড়ছে

প্রশাসনের শীর্ষ পদে পদোন্নতিপ্রত্যাশীদের হতাশা বাড়ছে