ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কৌশলে বাড়তি ভাড়া আদায় চলছেই


গো নিউজ২৪ | নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২, ২০২০, ০৮:৩৪ এএম
কৌশলে বাড়তি ভাড়া আদায় চলছেই

কাগজে-কলমে গণপরিবহন আগের ভাড়ায় ফিরলেও, করোনাকালের আগে যে কৌশলে বাড়তি ভাড়া আদায় হতো, এখনও সে রকমই চলছে। সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় অর্ধেক সিট খালি রাখার শর্তে বাড়ানো ৬০ ভাগ ভাড়া প্রত্যাহার করা হলেও অধিকাংশ বাসে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে। নগর পরিবহনের কাউন্টার সার্ভিস বাসে দূরবর্তী গন্তব্যের ভাড়া তোলার মাধ্যমে কৌশলে বাড়তি টাকা আদায় করা হচ্ছে।

বাড়তি ভাড়া থাকলেও যাত্রী সংকটের কারণে দাঁড়িয়ে লোক তোলার অভিযোগ এখনও নেই। তবে বাসে সাবান, পানি, স্যানিটাইজার রাখার শর্ত মানা হচ্ছে না। মাস্ক পরার শর্ত পালনেরও বালাই নেই। যাত্রার আগে-পরে বাস জীবাণুমুক্ত করার শর্ত মানার নজির পাওয়া যায়নি। গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিন এ চিত্র দেখা গেছে। কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর হয়ে চিটাগাং রোড পর্যন্ত চলে রজনীগন্ধা পরিবহনের বাস।

সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ভাড়ার তালিকা অনুযায়ী এ রুটের জিগাতলা থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত দূরত্ব চার দশমিক ৭ কিলোমিটার। বড় বাসে কিলোমিটারে এক টাকা ৭০ পয়সা হিসাবে ভাড়া ৮ টাকা। অর্ধেক সিটি খালি রেখে ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির পর নেওয়া হতো ২৫ টাকা! গতকাল থেকে নেওয়া হচ্ছে ১৫ টাকা, যা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার প্রায় দ্বিগুণ।

জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় রজনীগন্ধার টিকিট মাস্টার মো. ফরিদের সঙ্গে। ১৫ টাকা ভাড়ার পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি জানালেন, জিগাতলা তাদের কোম্পানির অনুমোদিত স্টপেজ নয়। যাত্রী এখান থেকে উঠলেও মোহাম্মদপুর থেকে ভাড়া ধরা হয়। এ কারণে ১৫ টাকা নেওয়া হয়। অথচ বিআরটিএর তালিকাতে মোহাম্মদপুর থেকে গুলিস্তানের ভাড়া ১২ টাকা। এ হিসাবেও ৩ টাকা বাড়তি নেওয়া হচ্ছে। মো. ফরিদ জানালেন, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। কোম্পানি যে ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে, তা আদায় করছেন। বাসের যাত্রী কামরুল ইসলাম জানালেন, শুধু গুলিস্তান নয়, শাহবাগে নামলেও ১৫ টাকাই ভাড়া দিতে হয়।

মোহাম্মদপুর থেকে খিলগাঁও রুটের বাস 'মিডলাইন'। এ বাসে জিগাতলা থেকে গুলিস্তানের ভাড়া ২০ টাকা। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার আড়াই গুণ নিচ্ছে বাসটি। অর্ধেক আসন খালি রাখার সময় ৩০ টাকা ভাড়া নেওয়া হতো। মোহাম্মদপুর থেকে খিলগাঁও তালতলার দূরত্ব ১৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার। নির্ধারিত ভাড়া ২৫ টাকা। ক'দিন আগে নেওয়া হতো ৫০ টাকা। এখন নেওয়া হচ্ছে ৩৫ টাকা।

সরকার নির্ধারিত বাড়ার তালিকা বাসের দৃশ্যমান স্থানে লাগানো বাধ্যতামূলক হলেও মিডলাইনের ঢাকা মেট্রো-৪-১৩-০৩০১ নম্বরের বাসটিতে তা খুঁজে পাওয়া গেল না। যাত্রীদের অভিযোগ, তারা জানেন না কোন গন্তব্যের দূরত্ব কত, ভাড়া কত। তাই কাউন্টারে বা বাসে যে ভাড়া দাবি করা হয়, সেটাই তারা দিতে বাধ্য হন। কোনো যাত্রী দিতে না চাইলে ঝগড়া হয়।

বড় বাসে সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন ভাড়া ৭ টাকা। অর্ধেক আসন খালি রাখার সময় তা বাড়িয়ে ১০ টাকা করা হয়েছিল। আগের নিয়মে ফিরলেও গতকাল কোনো বাসে ১০ টাকার কমে সর্বনিম্ন ভাড়া দেখা যায়নি। লোকাল হিসেবে চলা গাবতলী-সদরঘাট রুটের ৭ নম্বর বাসেও সর্বনিম্ন ভাড়া এখন ১০ টাকা। অথচ মিনিবাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ টাকা।

বাড়তি ভাড়ার বিষয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেছেন, সারাদেশে তাদের ম্যাজিস্ট্রেট ১১ জন। সব রুটে একসঙ্গে অভিযান চালানো যায় না। গতকাল প্রথম দিনে বাড়তি ভাড়া নেওয়ায় ৩০টি মামলা হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালতে। অভিযোগ পাওয়া মাত্র ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সরেজমিন দেখা যায়, বাড়তি ভাড়া নিলেও নগর পরিবহনের কোনো বাসে বাড়তি যাত্রী ছিল না। অধিকাংশ বাসে যাত্রীর সংখ্যা আসন সংখ্যার চেয়ে কম। চালক ও শ্রমিকরা জানান, ভাড়া কমলেও যাত্রী বাড়েনি। মালঞ্চ পরিবহনের চালক আবদুল মালেক জানান, করোনার আগে কর্মদিবসে ৫২ আসনের বাস 'সিটিং' করেও ১০-১২ জন যাত্রী দাঁড়িয়ে নিতেন। করোনার সময় সর্বোচ্চ ২৬ জন যাত্রীর নেওয়ার সুযোগ ছিল। তখন ১৪-১৫ জন যাত্রী পেতেন। এখন অফিস শুরু ও ছুটির সময় সর্বোচ্চ ৩০-৩৫ জন যাত্রী পাচ্ছেন। দিনের বাকি সময় ২০-২৫ জন যাত্রী পান।

দূরপাল্লায় বড় কোম্পানির প্রায় সব বাস সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় চলছে। করোনাকালে ঢাকা-ময়মনসিংহের ভাড়া বাড়িয়ে ৩৫০ টাকা করা হয়েছিল। গতকাল মহাখালী টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, তা আবার কমে ২২০ টাকা হয়েছে। লোকাল বাসে করোনাকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ২০০ থেকে ২৫০ ভাড়া নিত প্রত্যেক আসনে যাত্রী তুলে। এখন নিচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাস জীবাণুমুক্ত করা, সাবান ও স্যানিটাইজার রাখার শর্ত মানতে দেখা যায়নি এ বাসগুলোতে।

সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেছেন, ভাড়া কমানোর নির্দেশনা সব মালিককে দেওয়া হয়েছে। বাসে কিছুতেই দাঁড়িয়ে যাত্রী নেওয়া যাবে না। সবাইকে মাস্ক পরার শর্তও মানতে হবে। বাড়তি ভাড়ার অভিযোগ পেলে সংশ্নিষ্ট বাস মালিকের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চট্টগ্রাম থেকে সমকাল প্রতিবেদক তৌফিকুল ইসলাম বাবর জানিয়েছেন, বন্দরনগরীর গণপরিবহনে গাদাগাদি করে যাত্রী তোলা হচ্ছে। বাসে সামাজিক দূরত্ব ও মাস্ক পরার নিয়ম মানা হচ্ছে না। আগের ভাড়ায় ফিরলেও অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করায় যাত্রীদের সঙ্গে দিনভর বচসা লেগেই ছিল। গতকাল সকাল ও বিকেলে নগরীর বহদ্দারহাট-আগ্রাবাদ এলাকায় ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। বিকেলে ষোলশহর এলাকায় ১০টি রুটের বেশিরভাগ মিনিবাসে ঠাসাঠাসি করে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা যায়। একই চিত্র দেখা গেছে এক নম্বর রুটের বাসগুলোতেও।

শ্রমিকরা স্বাস্থ্য সুরক্ষা করে পরিবহন চালাচ্ছেন কিনা তা দেখতে মাঠে ছিলেন পরিবহন মালিক নেতারা। নগরীর কাপ্তাই রাস্তার মোড় এলাকায় ছিলেন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল। তিনি বলেছেন, সকাল ও বিকেলে যাত্রীর চাপ থাকে। আসন খালি না থাকার পরও অনেক যাত্রী জোর করে গাড়িতে উঠে পড়েন। ফলে স্বাস্থ্য সুরক্ষার শর্তগুলো রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে।

তবে যাত্রীরা বলছেন ভিন্ন কথা। গতকাল সকালে নগরীর বহদ্দারহাট থেকে জিইসি মোড়ে যান ব্যাংক কর্মকর্তা নাছির উদ্দিন। তিনি সমকালকে বলেন, বাস অনেক কম। এটা পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের একটা কৌশল হতে পারে। বাস উঠতে না পেরে তিনি অটোরিকশায় জিইসি যান। অটোরিকশাও বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে।সমকাল

সংবাদপত্রের পাতা থেকে বিভাগের আরো খবর
ব্যাংকে জমানো আমানত কমে যাচ্ছে

ব্যাংকে জমানো আমানত কমে যাচ্ছে

কারা হবে বিরোধী দল, লাঙ্গল না স্বতন্ত্র?

কারা হবে বিরোধী দল, লাঙ্গল না স্বতন্ত্র?

বিভিন্ন ছাড়ে ব্যাংক খাতের আসল চিত্র আড়ালের সুযোগ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

বিভিন্ন ছাড়ে ব্যাংক খাতের আসল চিত্র আড়ালের সুযোগ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

পাসপোর্ট এনআইডিসহ ১৯ কাজের অতি প্রয়োজনীয় জন্মসনদ এখন ‘সোনার হরিণ’

পাসপোর্ট এনআইডিসহ ১৯ কাজের অতি প্রয়োজনীয় জন্মসনদ এখন ‘সোনার হরিণ’

সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় যে ব্যাংক

সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় যে ব্যাংক

প্রশাসনের শীর্ষ পদে পদোন্নতিপ্রত্যাশীদের হতাশা বাড়ছে

প্রশাসনের শীর্ষ পদে পদোন্নতিপ্রত্যাশীদের হতাশা বাড়ছে