ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দেশে করোনায় মৃত্যু বাড়ছে যে কারণে


গো নিউজ২৪ | নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: আগস্ট ৩১, ২০২০, ১০:১২ পিএম
দেশে করোনায় মৃত্যু বাড়ছে যে কারণে

গত কিছুদিন দেশে করোনাতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা আবারও বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে (২৪ থেকে ৩০ আগস্ট) মারা গেছেন ৩০৭ জন। এ নিয়ে গত প্রায় তিন সপ্তাহ ধরেই করোনায় মৃত্যু বেড়েছে। যদিও গত ২৪ ঘণ্টায় (৩০ আগস্ট) রোগী শনাক্তের হার কমেছে। এই সময়ে রোগী শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৯০ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি সঠিকভাবে এর কারণ বিশ্লেষণ করে পদক্ষেপ নেওয়া হতো তাহলে মৃত্যু কমে আসতো।

এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের পদক্ষেপে ঘাটতি ও সমন্বয়হীনতা রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর নিজেও স্বীকার করেছে, মৃত্যু কমছে না। এজন্য দেরিতে হাসপাতালে আসাকে কারণ হিসেবে বলছে তারা।

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৫তম আর মৃতের সংখ্যায় ২৯তম। গত মার্চে করোনা রোগী শনাক্তের পর সংক্রমণের দশম সপ্তাহ (১০ থেকে ১৬ মে) দেশে করোনা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি শুরু হয়। জুন মাসে সেটা তীব্র আকার ধারণ করলেও গত জুলাই মাসের করোনা পরীক্ষায় ফি নির্ধারণ, দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা, নমুনা পরীক্ষা করায় ভোগান্তিসহ নানা কারণে টেস্ট কমতে শুরু করে, কমতে থাকে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা।

দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের কথা জানা যায় গত আট মার্চ। প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর কথা জানানো হয় গত ১৮ মার্চ। মৃতের সংখ্যা চার হাজার ছাড়ায় গত ২৫ আগস্ট। এর মধ্যে গত ৩০ জুন একদিনে সর্বোচ্চ ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। মোট মৃত্যুর মধ্যে প্রায় অর্ধেকই ঢাকা বিভাগে আর সবচেয়ে কম মৃত্যু ময়মনসিংহ বিভাগে।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় (৩০ আগস্ট) আরও ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখন পর্যন্ত (৩০ আগস্ট) করোনায় এ নিয়ে মারা গেলেন চার হাজার ২৪৮ জন। মারা যাওয়া ৪২ জনের মধ্যে পুরুষ ৩৫ আর নারী সাত জন। এখন পর্যন্ত মারা যাওয়াদের তিন হাজার ৩৩৫ জন পুরুষ এবং ৯১৩ জন নারী। যা শতাংশের হিসাবে পুরুষ ৭৮ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং নারী ২১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে তিন জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে দুই জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে চার জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে নয় জন এবং ৬০ বছরের বেশি রয়েছেন ২৪ জন।

বয়স বিবেচনায় মৃতের সংখ্যা এবং শতকরা হারে দেখা গেছে, শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে মারা গেছে ১৯ জন, যা শতকরা হিসাবে শূন্য দশমিক ৪৫ শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ৩৬ জন, যা শূন্য দশমিক ৮৫ শতাংশ; ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ১০৩ জন, যা ২ দশমিক ৪২ শতাংশ; ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ২৫৯ জন, যা ৬ দশমিক ১০ শতাংশ; ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৫৭০ জন, যা ১৩ দশমিক ৪২ শতাংশ; ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে এক হাজার ১৬৫ জন, যা ২৭ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে দুই হাজার ৯৬ জন, যা শতকরা হিসাবে ৪৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

গত ২৯ আগস্ট ২৪ ঘণ্টায় মারা যান ৩২ জন, ২৮ আগস্ট ৪৭ জন, ২৭ আগস্ট ৪৫ জন, ২৬ আগস্ট ৫৪ জন, ২৫ আগস্ট ৪৫ জন এবং ২৪ আগস্ট ৪২ জন। তাদের মধ্যে শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষ রয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মৃত্যুর বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায়, দেশে মোট মৃত্যুর প্রায় অর্ধেক ৬০ বছরের বেশি বয়সী। গত ২৭ আগস্ট কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটি এজন্য তাদের সভায় করোনার টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর কথা উল্লেখ করেছে।

দেশে সংক্রমণ নিম্নমুখী হলেও মৃত্যু কমছে না, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৫৪ জন, এটা অনেক বেশি বলে গত ২৬ আগস্ট জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা। তিনি বলেন, ‘বেশি বয়সে অন্যান্য রোগ থাকে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত থাকেন বেশি। ক্যানসার ও হৃদরোগসহ যারা অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত থাকেন তাদের জন্য করোনায় মৃত্যুঝুঁকি বেশি।’ এ জন্য ঘরের বয়োবৃদ্ধদের প্রতি সব সময় তিনি আলাদা নজর দেওয়ার কথা বলেন।

করোনাতে কেন মৃত্যু বাড়ছে জানতে চাইলে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘যারা মারা যাচ্ছেন তারা কেন মারা যাচ্ছেন সে গবেষণা করা হয়নি, অধিদফতর প্রতিদিন কিছু সংখ্যা বলে যায়। তাদের মধ্যে যারা বেশি বয়স্ক এবং যারা আগে থেকেই অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত তারা বেশি মারা যাচ্ছেন।’

সংক্রমণের হার কম কিন্তু মৃত্যু কেন বেশি হচ্ছে সে বিষয়ে কোনও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না, যেটা মৃত্যু কেন বেশি হচ্ছে তার উত্তরে দেবে। মৃত্যু আরও বেড়ে যেতে পারে মন্তব্য করে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক রোগী হাসপাতালে আছেন কিন্তু তারা সুস্থ হচ্ছেন না, এমন রোগী জমা হয়ে গেছে। নতুন রোগী মারা যাচ্ছেন তা আমার মনে হয় না। বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করা দরকার। কিন্তু যেটা তথ্য পেতে সহযোগিতা করতো, করোনা বিষয়ক বুলেটিন বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারের নীতিনির্ধারকরা, স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান বলছেন, “দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে।” এসব কথা করোনার সচেতনতা কমাচ্ছে। মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানতে কিছুটা অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল, কিন্তু এসব কারণে খুব স্বাভাবিকভাবেই মানুষ বার্তা পাচ্ছে, দেশে করোনা নেই অথবা করোনা দুর্বল হয়ে গেছে।’

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, ‘মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব বাড়ছে দিনকে দিন, আর এজন্য দায়ী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আর অধিদফতর। যার কারণে হাসপাতালে যারা যাচ্ছেন তারা একেবারে ‘বেশি সমস্যা’ নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই শেষ পর্যায়ে হাজির হচ্ছে হাসপাতালে, এ কারণে তাদের বাঁচানো যাচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘গত দুই দিন মারা যাওয়াদের সবাই হাসপাতালে মারা গেছেন। এ থেকেই বোঝা যায়, রোগীরা শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে যাচ্ছেন। আর নীতিনির্ধারকদের কথায় মানুষের মধ্যে “গা সওয়া” ভাব চলে এসেছে। এ কারণে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত রোগীরা হাসপাতালে যাচ্ছেন কিন্তু তখন আর করার কিছু থাকছে না।’

দেরিতে হাসপাতালে আসার কারণে মৃত্যুহার বাড়ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমও। দেরিতে আসার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা বলছি, যদি শ্বাসকষ্ট না থাকে, অন্যান্য জটিলতা না থাকে তাহলে হাসপাতালে আসার দরকার নেই। কিন্তু যাদের কোমরবিড ইলনেস যুক্ত (যেমন– ডায়াবেটিস, হাইপার টেনশন, ক্যানসার অথবা এমন কোনও রোগ রয়েছে যার জন্য তাকে স্টেরয়েড খেতে হয়) রোগীরা যদি কোভিডে আক্রান্ত হন তারা যেন কখনও বাসায় না থাকেন। কারণ এসব রোগীদের “এক্সট্রা সার্পোট” দরকার হয়, যেগুলো বাড়িতে দেওয়া সম্ভব নয়।’

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক দেওয়ান সাবরিনা মাসুক (৩১ আগস্ট) রাতে হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছিলেন। নিজের পিপিই পরা অবস্থায় ছবি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লেখেন, ‘কী যে কষ্ট লাগে এতকিছু পরে থাকতে...। অথচ টিএসসি দিয়ে যখন আসলাম, মনে হলো কোনও উৎসব চলছে...।’বাংলা ট্রিবিউন

সংবাদপত্রের পাতা থেকে বিভাগের আরো খবর
ব্যাংকে জমানো আমানত কমে যাচ্ছে

ব্যাংকে জমানো আমানত কমে যাচ্ছে

কারা হবে বিরোধী দল, লাঙ্গল না স্বতন্ত্র?

কারা হবে বিরোধী দল, লাঙ্গল না স্বতন্ত্র?

বিভিন্ন ছাড়ে ব্যাংক খাতের আসল চিত্র আড়ালের সুযোগ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

বিভিন্ন ছাড়ে ব্যাংক খাতের আসল চিত্র আড়ালের সুযোগ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

পাসপোর্ট এনআইডিসহ ১৯ কাজের অতি প্রয়োজনীয় জন্মসনদ এখন ‘সোনার হরিণ’

পাসপোর্ট এনআইডিসহ ১৯ কাজের অতি প্রয়োজনীয় জন্মসনদ এখন ‘সোনার হরিণ’

সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় যে ব্যাংক

সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় যে ব্যাংক

প্রশাসনের শীর্ষ পদে পদোন্নতিপ্রত্যাশীদের হতাশা বাড়ছে

প্রশাসনের শীর্ষ পদে পদোন্নতিপ্রত্যাশীদের হতাশা বাড়ছে