ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দেশে স্বাস্থ ব্যবস্থাকে তছনছ করা সেই সিন্ডিকেট এখনও বেপরোয়া


গো নিউজ২৪ | নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২০, ০৯:৫৭ এএম
দেশে স্বাস্থ ব্যবস্থাকে তছনছ করা সেই সিন্ডিকেট এখনও বেপরোয়া

অনিয়ম-দুর্নীতির ভয়াবহ অভিযোগ ওঠার পরও ১৮৩ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া বন্ধ হয়নি। বরং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেটটি নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করতে তৎপরতা চালাচ্ছে।

নিয়োগপ্রত্যাশী ১৫৭ জনের সাক্ষাৎকার গ্রহণের পরদিনই তাদের নিয়োগের জন্য ছাড়পত্র দিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

গত ১৬ জুন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. বেলাল হোসেন ১৫৭ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের ছাড়পত্র প্রদানে অনুমতি চান। বাকি ২৬ জনের সাক্ষাৎকার গ্রহণেরও প্রস্তুতি চলছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত লঙ্ঘন করে ৬২ জনকে নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে।

এ নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা রাষ্ট্রপতির প্রমার্জনার বিষয়টিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন। এতে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার কাজে যুক্ত থাকা মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা বাদ পড়েছেন।

তাদের কয়েকজন বলেন, একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় শুরু থেকে কাজ করার পরও তারা বঞ্চিত হয়েছেন। নিয়োগের জন্য ওই সিন্ডিকেটটি জনপ্রতি ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা করে নিয়েছেন। এ কারণে তাদের শ্রম ও ত্যাগের মূল্যায়ন হয়নি। করোনা সম্পর্কিত কেনাকাটার সিন্ডিকেটই নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত বলে জানিয়েছেন অনেকে।

শর্ত লঙ্ঘন করে নিয়োগের পাঁয়তারা :নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত মনোনীত ১৫৭ জনের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা যায়, স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টি থেকে পাস করা ৯৫ জন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে পাস করা ৫০ জন, বিএসসি ইন টেকনোলজিস্ট পাস করা ৯ জন, সনদবিহীন ২ জন এবং ডিপ্লোমা ইন ফার্মাসি পাস করা একজনের নাম রয়েছে তালিকায়। অথচ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পদ সৃষ্টির সরকারি আদেশ (জিও) অনুসারে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকার স্বীকৃত বোর্ড থেকে এসএসসি অথবা সমমান পাসসহ সরকার স্বীকৃত ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিস্ট (আইএইচটি) থেকে সংশ্নিষ্ট বিষয়ে নূ্যনতম তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা পাস হতে হবে।

তবে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, বিএসসি ইন টেকনোলজিস্ট, ডিপ্লোমা ইন ফার্মাসি পাস করা টেকনোলজিস্ট এবং সনদবিহীনরা এই শর্ত পূরণ করেন না। কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে পাস করা টেকনোলজিস্টরা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে পারবেন কি-না, তা নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা চলছে। ওই মামলার বিষয়টি এখনও নিষ্পত্তি হয়নি।

এ ছাড়া নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে বিএসসি ইন টেকনোলজিস্ট পাস করা কাউকে আবেদন করতে বলা হয়নি। একই সঙ্গে ফার্মাসি পাস করা একজনকে টেকনোলজিস্ট পদের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।

সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটেছে, সনদ নেই এমন দু'জনকে টেকনোলিস্ট পদের নিয়োগের জন্য ছাড়পত্র চাওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত নিয়োগের জন্য সুপারিশ পাওয়া এই ৬২ জন এই শর্তের মধ্যে পড়েন না।

এদিকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব খন্দকার জাকির হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ১৮৩ জনের নিয়োগের শিক্ষাগত যোগ্যতা ব্যতীত অন্যান্য যোগ্যতা এবং স্বাভাবিক নিয়ম প্রমার্জন করে সরাসরি নিয়োগের অনুরোধ করা হয়। অথচ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের দুই কর্মকর্তা বলেছেন, ১৮৩ টেকনোলজিস্ট নিয়োগে রাষ্ট্রপতির প্রমার্জনা আছে। এসব ব্যক্তি দুর্যোগকালীন সময়ে মাঠে কাজ করেছেন। সুতরাং তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে ওইসব শর্ত প্রযোজ্য হবে না।

প্রমার্জনার সুযোগ নিয়ে দুর্নীতি :সংশ্নিষ্টরা অভিযোগ করে বলেছেন, রাষ্ট্রপতির প্রমার্জনার সুযোগ নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের একশ্রেণির কর্মকর্তা টেকনোলজিস্ট নিয়োগ নিয়ে অনৈতিক বাণিজ্যে নেমেছেন। এ কারণেই নিয়োগের শর্ত লঙ্ঘন করেও ৬২ জনকে নিয়োগ দিতে তারা উঠেপড়ে লেগেছেন।

ফাইলপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত আছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, পরিচালক (প্রশাসন) ডা. বেলাল হোসেন, এনটিপি কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. শামিউল ইসলাম এবং পরিচালক (পরিকল্পনা) অধ্যাপক ডা. ইকবাল কবীরসহ কয়েকজন।

আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও অডিট অনুবিভাগ) শেখ মুজিবর রহমান। তিনি অভ্যন্তরীণ প্রশাসন ও শৃঙ্খলা অনুবিভাগেরও দায়িত্বে আছেন। এ ছাড়া স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন অধিশাখা) শাহিনা খাতুন, উপসচিব খন্দকার জাকির হোসেনও (প্রশাসন-১) এ নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত আছেন।

এ বিষয়ে শেখ মুজিবর রহমান বলেন, এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি পুরোপুরি অবহিত। রাষ্ট্রপতি চাইলে সবকিছু করতে পারেন। যারা নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন, তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন। সুতরাং রাষ্ট্রপতি তাদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য আদেশ দিয়েছেন। এরা কোনো ফর্মুলায় পড়বে না। পরবর্তীকালে যাদের নিয়োগ দেওয়া হবে তাদের ক্ষেত্রে ওইসব শর্ত প্রযোজ্য হবে।

অভিযুক্ত যারা :অনুসন্ধানে দেখা গেছে, চলতি ২ জুন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে ডা. বেলাল হোসেন ১৮৩ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্টের তালিকা পাঠান। ওই চিঠিতে অস্থায়ীভিত্তিতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের (ল্যাবরেটরি) নামের তালিকার কথা তিনি উল্লেখ করেন।

এনটিপি কর্মসূচির অধীনে ১৭ মে ৩৩ জন নিয়োগের পর তারা ২৩ মে থেকে যোগদান করেন। একই কর্মসূচির অধীনে ২৭ মে আরও ২৭ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদের অনেকে ১ জুন, আবার কেউ ২ থেকে ৭ জুন পর্যন্ত কর্মস্থলে যোগদান করেছেন। দাতা সংস্থা ইউএনএফপিএর অর্থায়নে তাদের প্রত্যেককে ২২ হাজার টাকা করে বেতন ধরা হয়েছে।

অথচ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এসব টেকনোলজিস্টের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নাম অন্তর্ভুক্ত করে গত ২ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়ে নিয়োগের জন্য সাক্ষাৎকার গ্রহণের অনুমতি নেওয়া হয়।

এনটিপি কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. শামিউল ইসলাম বলেছেন, পরিচালক প্রশাসন ফোন করে তার কর্মসূচিতে নিয়োগ পাওয়া টেকনোলজিস্টদের তালিকা পাঠাতে বলেছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ৬০ জনের তালিকা পাঠান। কিন্তু তাদের স্থায়ী নিয়োগ কিংবা অন্য কিছু করা হবে কিনা তা তার জানা নেই।

পরিচালক (পরিকল্পনা) থেকে নেওয়া ২৩ জনের তালিকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডা. ইকবাল কবীর বলেন, আইইডিসিআর যখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহের কাজ বন্ধ করে দেয়, তখন তার প্রকল্পে ১৪ জনকে নেওয়া হয়। ওই ১৪ জন এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে আরও ৯ জনের নাম যুক্ত করে পরিকল্পনা শাখার নামে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

কিন্তু মন্ত্রণালয়ে পাঠানো নামের তালিকায় আইইডিসিআর থেকে ৯ জনের নাম পাওয়া যায়। আইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা যাদের নামের তালিকা পাঠিয়েছিলেন তাদের কাউকে তালিকায় যুক্ত করা হয়নি।

অথচ এই প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬০ টেকনোলজিস্ট করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহের কাজে যুক্ত ছিলেন। একইভাবে অন্যান্য মেডিকেল কলেজসহ জেলা সদর হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহের কাজে যুক্ত থাকা কারও নাম নেই চাকরির তালিকায়।

সংশ্নিষ্টরা জানান, কভিড রিপোর্ট নামে একটি মেইল থেকে টেকনোলজিস্ট নিয়োগের তালিকা চেয়ে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে ৩১ মে চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে ১ জুন সকাল ১০টার মধ্যে তালিকা পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারি চাকরিতে নিয়োগের চিঠি কভিড রিপোর্টের মেইল থেকে কেন পাঠানো হবে? এটি তো পরিচালক প্রশাসনের ভেরিফায়েড মেইল থেকে যাবে। আগের দিন বিকেলে চিঠি পাঠিয়ে পরদিন সকালে তালিকা চাওয়ার কারণ কী? কারণ চাকরি দেওয়ার সিদ্ধান্তটি তো আর রাতারাতি হয়নি। এর মধ্য দিয়েই প্রমাণ হয়, পুরো প্রক্রিয়াটি অনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।

এ ছাড়া ব্র্যাক, আইদেশী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যায়ে কাজ করা কয়েকজনকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। অথচ তারা প্রত্যেকে স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানে বেতনভুক্ত কর্মচারী।

এ ছাড়া তাদের কেউই শুরু থেকে মাঠ পর্যায়ে নমুনা সংগ্রহের কাজে যুক্ত ছিলেন না। তাহলে এসব টেকনোলজিস্ট কীভাবে স্বেচ্ছাসেবী হলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ মুজিবর রহমান বলেন, এসব বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের মাথাব্যথা নেই। তাছাড়া তিনিও পুরো বিষয়ে অবগত নন।

এই বিষয়গুলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করে থাকে। মাঠ পর্যায়ে কে কী করেন সে সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারাই অবগত। তিনি বলেন, 'তারা আমাদের কাছে একটি তালিকা পাঠিয়েছেন। আমরা সেটির অনুমোদন দিয়েছি। এর বাইরে কিছুই জানি না।'

কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ মুজিবর রহমান বলেন, সেটি পড়তে পারে। কিন্তু জরুরিভিত্তিতে যারা কাজ করছেন সে কারণে তাদের বিষয়ে অনেক শর্তই শিথিল করা হবে।

নিয়োগে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি হলে তা মন্ত্রণালয় দেখবে কিনা, কিংবা এই দুর্নীতি বন্ধে মন্ত্রণালয়ের করণীয় কিছু আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত সচিব বলেন, 'মন্ত্রণালয়ের নিয়োগের সব কাগজপত্র স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাই যাচাই-বাছাই করে দেখছেন। তারা দিনরাত পরিশ্রম করে প্রত্যেক প্রার্থীকে সশরীরে ডেকে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন। বাকি বিষয়গুলো নিয়ে আপনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জিজ্ঞেস করেন। একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।'
পরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. বেলাল হোসেনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সমকালকে বলেন, অনেকে এখনও সাক্ষাৎকার দিতে পারেননি। আবার যারা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, তাদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। সুতরাং এখনও সবকিছু চূড়ান্ত করা হয়নি।

১৫৭ জনের নিয়োগের ছাড়পত্র প্রদানের জন্য তার স্বাক্ষরিত চিঠি মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর প্রসঙ্গ তুলে ধরে জানতে চাইলে ডা. বেলাল হোসেন কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও ৬২ জনকে কীভাবে চাকরির জন্য সুপারিশ করা হলো- এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. বেলাল বলেন, সে জন্যই তো মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছে। নিয়োগবিধি অনুযায়ী সবাইকে নিয়োগ প্রদান করা হবে। এছাড়া রাষ্ট্রপতি এই নিয়োগের বিষয়ে প্রমার্জনা দিয়েছেন।

তালিকায় চেয়ে সারাদেশে চিঠি :১৮৩ জনের বাইরে আরও এক হাজার ১৭ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ করবে সরকার। এজন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গত বুধবার নামের তালিকা চেয়ে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

কয়েকজন টেকনোলজিস্ট অভিযোগ করে বলেছেন, তালিকায় নাম থাকলে চাকরি নিশ্চিত মনে করে কাজ করেননি এমন ব্যক্তিরাও তালিকায় নাম উঠানোর চেষ্টা করছেন। এই তালিকায় নাম তুলতে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার বাণিজ্য হচ্ছে। এতে দুর্যোগকালে কাজ করা টেকনোলজিস্টরা চাকরি নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন।

চিকিৎসকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী সমকালকে বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলেও দুর্নীতিতে সফল হয়েছেন। মাস্ক কেলেঙ্কারি দিয়ে শুরু করে হাজার হাজার কোটি টাকার চিকিৎসাসামগ্রী কেনাকাটার নামে যেভাবে লুটপাট করা হয়েছে, সে সম্পর্কে সবাই অবগত। 

প্রধানমন্ত্রীও প্রকাশ্য ভিডিও কনফারেন্সে দুর্নীতির কথা বলেছেন। কেনাকাটার পর এখন নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি শুরু হয়েছে। যে প্রক্রিয়ায় টেকনোলজিস্টদের নিয়োগের জন্য বাছাই করা হয়েছে, তা পুরোপুরি অনৈতিক।

ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) এবং অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী অর্থাৎ বিনা বেতনে কাজ করেছেন- এমন টেকনোলজিস্টদের প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতিও তাদের ফাইলে প্রমার্জনা দিয়েছেন। কিন্তু যাদের জন্য এই নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, তাদের বাদ দিয়ে মে মাসের শেষ দিকে কিংবা জুনের প্রথম সপ্তাহে কাজ শুরু করাদের নেওয়া হয়েছে। এছাড়া এসব ব্যক্তির কেউই স্বেচ্ছাসেবীও নন। তারা প্রত্যেকে বেতনভুক্ত।

বিএমএ মহাসচিব বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয় নিয়োগে সীমাহীন দুর্নীতি ও অনৈতিক বাণিজ্য হয়েছে। সুতরাং দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করে জড়িতদের শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় প্রধানমন্ত্রীর ভালো উদ্যোগে কালিমা পড়বে। একই সঙ্গে সৎ ও দক্ষ ব্যক্তিদের যুক্ত করে এই নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করার আহ্বান জানান তিনি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য :স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তাও বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন। সুতরাং এ নিয়োগের বিষয়ে তারাই বিস্তারিত বলতে পারবেন। করোনা মোকাবিলা করে কীভাবে এই সংকট থেকে মানুষকে মুক্ত করা যাবে- এসব বিষয় নিয়ে তিনি কাজ করছেন। সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করছেন, তাদের পরামর্শ নিচ্ছেন। এর বাইরে ক্রয় প্রক্রিয়া, নিয়োগসহ অন্যান্য বিষয়ে তিনি মনোযোগ দেওয়ার সময় পাচ্ছেন না। ক্রয় প্রক্রিয়া ও নিয়োগসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড সংশ্নিষ্টরা স্বচ্ছতার সঙ্গে করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। সূত্র: সমকাল

গোনিউজ২৪/এন

সংবাদপত্রের পাতা থেকে বিভাগের আরো খবর
ব্যাংকে জমানো আমানত কমে যাচ্ছে

ব্যাংকে জমানো আমানত কমে যাচ্ছে

কারা হবে বিরোধী দল, লাঙ্গল না স্বতন্ত্র?

কারা হবে বিরোধী দল, লাঙ্গল না স্বতন্ত্র?

বিভিন্ন ছাড়ে ব্যাংক খাতের আসল চিত্র আড়ালের সুযোগ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

বিভিন্ন ছাড়ে ব্যাংক খাতের আসল চিত্র আড়ালের সুযোগ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

পাসপোর্ট এনআইডিসহ ১৯ কাজের অতি প্রয়োজনীয় জন্মসনদ এখন ‘সোনার হরিণ’

পাসপোর্ট এনআইডিসহ ১৯ কাজের অতি প্রয়োজনীয় জন্মসনদ এখন ‘সোনার হরিণ’

সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় যে ব্যাংক

সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় যে ব্যাংক

প্রশাসনের শীর্ষ পদে পদোন্নতিপ্রত্যাশীদের হতাশা বাড়ছে

প্রশাসনের শীর্ষ পদে পদোন্নতিপ্রত্যাশীদের হতাশা বাড়ছে