ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বকাপে জার্মানি-আর্জেন্টিনাসহ যাদের এগিয়ে রাখলেন পেলে


গো নিউজ২৪ | স্পোর্টস ডেস্ক প্রকাশিত: মে ১৭, ২০১৮, ১২:০৫ পিএম
বিশ্বকাপে জার্মানি-আর্জেন্টিনাসহ যাদের এগিয়ে রাখলেন পেলে

ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ভাস্কো দ্য গামা বিলের নামানুসারেই সহপাঠীরা পেলেকে ডাকা শুরু করেন বিলি। যদিও বাবা-মায়েল দেয়া নাম এডসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো। এরপর উচ্চারণের তারতম্যের কারণে তা বিলি থেকে পেলেতে রুপ নেয়। মজার ব্যাপার হলো, এই পেলে নামের কারণে পরবর্তী চারমাস কেঁদেছিলেন তিনি। অথচ এই নাম যে একসময় বিশ্বসেরা বনে যাবে তা হয়তো ধারণা ছিল না তার। 

আসন্ন ফুটবল নিয়ে সম্প্রতি ফিফাডটকমকে এক নাতিদীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ব্রাজিলের কিংবদন্তী ফুটবলার পেলে। সেখানে তিনি শৈশব-ক্যারিয়ার ও বর্তমান ফুটবল নিয়ে কথা বলেছেন। 

ফিফা : দশকের পর দশক ধরে চলমান এই টুর্নামেন্ট আপনার কাছে কী অর্থ বহন করছে?
পেলে : বিশ্বকাপ নিয়ে আমার অনেক গল্প বলার আছে। ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপ এখনো আমার জন্য একটি স্বপ্ন। তখন আমি একদমই ছোট এবং কেউ বিশ্বাসই করতে পারেনি আমরা চ্যাম্পিয়ন হব।

তখন তারা ভিসেন্তে ফিওলাকে প্রশ্ন করেছিল, আপনার দলে ১৭ বছরের এক বালক থাকতে  কিভাবে সুইডেন বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন দেখেন। তারপর ১৯৬২ সালে আমরা বিশ্বকাপ জিতে নিই। যদিও ওই সময় আমি ইনজুরিতে পড়ি। ইংল্যান্ডে আমার মেনিসকাস ভেঙ্গে যাওয়াতে আমরা বাদ পড়ে যাই।  কিন্তু ১৯৭০ সালের ঘুরে দাড়াই এবং বাজিমাত দেখিয়ে চ্যাম্পিয়ন হই।

পেলের সঙ্গে নেইমার।

ফিফা : ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে ডি-বক্সের ভেতর ডিফেন্ডারের মাথার উপর দিয়ে ফ্লিকিংয়ের মাধ্যমে অসাধারণ গোল করার পর প্রথমে আপনার মাথায় কী কাজ করেছিল?
পেলে : আগে থেকেই প্ল্যান করে এমনটা করেনি।  এটা স্বতঃস্ফুর্তভাবেই চলে এসেছিল।  আর খেলোয়াড় হিসেবে এটি আমার অন্যতম শক্তি।  এজন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।   ওই সময় প্রথমে আমি বলটিকে কাঁধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করি তারপর বলটি মাটিতে পড়ার আগেই ফ্লিক করি ডিফেন্ডারের মাথার উপর দিয়ে।  আর ওই সময় এগুলো নিয়ে এতো ভাববার কিছুই ছিল না।

ফিফা : একইভাবে মেক্সিকো বিশ্বকাপে ইতালির বিপক্ষে হেডে করা আপনার ক্ল্যাসিক গোলটির ফিনিশিংও ছিল অসাধারণ...!
পেলে : ট্রেনিং সেশনে এটা নিয়ে কাজ করেছিলাম।  যদিও পুরোপুরিভাবে নয়; কিন্তু অবশ্যই আমাদের অবস্থান নির্ণয় নিয়ে কাজ করেছিলাম। আমরা একটি থ্রো-ইন পেয়েছিলাম এবং আমরা জানতাম কী হবে। অন্য খেলোয়াড়দের মত আমরা থ্রো জোরে ছুঁড়ে মারলাম না, সেটিকে আস্তে মেরে আরেক খেলোয়াড়ের কাছে পাঠিয়ে দিলে সে বাঁ-পাশ থেকে উড়িয়ে ডান পাশে ডি বক্সের ভেতর ফেলেছিল। আমি ডিফেন্ডারের কিছুটা পেছনে অবস্থান করছিলাম। আমি ও রিভেলিনো গোলের জন্য ডি বক্সে ছিলাম। শেষ পর্যন্ত সেটি গোল হয়ে যায় একভাবে; কিন্তু আমরা এটা নিয়ে কাজ করেছিলাম কিছুটা।

ফিফা : হেড নিয়ে যদি কিছু বলতেন

পেলে : এটা অনেকটা পরিবারের কাছ থেকে আমি পেয়েছি।  আমার বাবা একজন সাবেক ফুটবলার।  হেডে অসংখ্য গোল তিনি করেছেন। আমি সব সময় চাইতাম তাকে অনুকরণ করতে। আমি অতোটা লম্বা ছিলাম না; কিন্তু আমার পায়ের শক্তি ছিল অনেক। আমার বাবা সব সময় আমাকে বলতেন, ‘বেশিরভাগ খেলোয়াড় বল যখন আসে তখন হেড দেওয়ার আগে চোখ বন্ধ করে রাখে। বল যখন তোমার কাছে আসবে, চোখটাকে বড় করো এবং ঠিক করো কোন জায়গাটাতে তুমি সেটিকে পাঠাবে।’ আমি প্রতিনিয়ত এটি নিয়ে কাজ করেছি। আমি অসংখ্য গোল করতে সক্ষম হয়েছি এই উপায়ে। চোখটাকে খুলো এবং হেডে বলটিকে জালে পাঠাও।

ফিফা : ব্রাজিলের একটা কিংবদন্তি প্রজন্ম ছিল ১৯৫০ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত। আপনার কী মনে হয় আপনি তাদের থেকে সেরা ছিলেন?
পেলে : ব্রাজিলের জন্য তখন আসলেই অসাধারণ একটা সময় ছিল। বিশেষ তরুণ ফুটবলার যেমন গারিঞ্চা, দিদি ও জিকো ছিল। আমার মনে আছে ভিসেন্তে ফিওলা আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলছিলেন, ‘আমি জানি আমি কী বলতে চাচ্ছি। আমি তোমাদের থেকে বড়, আমি কোচ। একটা জিনিস স্মরণে রাখবে তুমি হচ্ছো বিশ্বসেরা দলের একজন; কিন্তু তোমার সব প্রতিপক্ষকে সম্মান করতে হবে। এক মিনিটের জন্যও প্রকাশ করবে না, যে তুমি জিততে চাও। তুমি মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে যাবে যেখানে প্রতিপক্ষের সম্মান অর্জন করতে পারো।’ আমি এখনো সেই কথাগুলো মনে রেখেছি। তিনি আমাদের শিক্ষক ছিলেন।

পেলের সঙ্গে মেসি।

ফিফা : চলতি বছরে বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টের আয়োজন বসছে রাশিয়ায়। আপনার কি মনে হয়, ব্রাজিল এবার বিশ্বকাপ জিততে পারবে?
পেলে : ব্রাজিলের প্রত্যেকবারই এমন দল থাকে যারা বিশ্বকাপ জয় করতে পারে; কিন্তু সম্প্রতি টুর্নামেন্টগুলোতে প্রস্তুতির অভাবে সবকিছু ভেস্তে যাচ্ছে। ব্রাজিলের বেশিরভাগ ফুটবলারই এখন ব্রাজিলের বাইরে ফুটবল খেলে থাকে। আমাদের সময়টা ফিরিয়ে আনা এখন কঠিন। আমাদের এখনো সময় আছে। ঠিকভাবে দল গঠন করাটা কোচিং স্টাফদের জন্য আরো দুরূহ কাজ হয়ে দাঁড়ায়। অনেক কিছুই পরিবর্তিন হচ্ছে। এটা খুব সহজ হবে না বলা যে, ‘এটাই আমার দল’। কিন্তু আমার বলতে দ্বিধা নেই যে ব্রাজিলের খেলোয়াড়রাই বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়।

ফিফা : তারা কি বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম দাবিদার? 
পেলে : অবশ্যই। যদি ব্রাজিল নিজেদের প্রস্তুত করার পর্যাপ্ত সময় পায় তাহলে তারা বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে।

ফিফা : অন্য আর কোন দল এই মুহূর্তে আপনার মাথায় আসছে?
পেলে : জার্মানিকে সর্বদাই আপনার সম্মান করতে হবে। এমনকি রাশিয়াও ঘরের মাঠে শক্তিশালী দল নিয়ে সবাইকে বিপদে ফেলতে পারে। লাতিন আমেরিকান দিক দিয়ে বলতে গেলে আর্জেন্টিনার সামর্থ্য রয়েছে বিশ্বকাপ জয় করার।

ফিফা : নেইমার কি একাই ব্রাজিলকে চ্যাম্পিয়ন বানাতে পারবে?
পেলে : নেইমারের অবস্থান জাতীয় দলে আসলে অনেকটা পরিবর্তন হয়ে যায়। সে ক্লাব ফুটবলে অনেকটা লেফট অ্যাটাকার হিসেবে খেলে; কিন্তু ব্রাজিল দলে সে মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রনে থাকে যা ঐতিহ্যগতভাবে নাম্বার টেন’দের কাজ। এটা আসলেই কঠিন কিন্তু সে নিজের খেলার সাথে এটিকে মানিয়ে নিতে পারে। আপনি যদি বিশ্বের অন্য দিকে তাকান তাহলে কারা এখন বিশ্ব রাজত্ব করছে? লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো এবং নেইমার। তারা ছাড়া আর কোন সুপারস্টার নেই। জাতীয় দলের হয়ে গুরুত্বপুর্ণ বিষয় হলো একটা গ্রুপ হিসেবে গঠিত হওয়া, কারণ এখানে তিন কিংবা চারজন ফুটবলার এক পজিশনের জন্য নেই। এটা জার্মানির জন্যেও প্রযোজ্য যাদের সমষ্টিগত জোর অনেক। আগের দিনে ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের উপর অনেক কিছু নির্ভর করতো; কিন্তু এখন সেটি পাল্টে গেছে। বর্তমান সময়ে এটিই স্বাভাবিক।

ফিফা : আপনার কী মনে হয় নেইমার এখনই দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার মত প্রস্তুত? 
পেলে : হ্যাঁ, সে প্রস্তুত। ক্লাব থেকে জাতীয় দলে এসে তার নিজের খেলার অবস্থান এবং ধরণের পরিবর্তনগুলো পরিষ্কার না। কিন্তু নেইমার ব্রাজিলের দলের মূল খেলোয়াড়। সে এটার জন্যেই নিজেকে প্রস্তুত করছে। এবং আমি একটু সামনে যেতে যাই, টেকনিক্যালি সে বর্তমান সময়ের সেরা খেলোয়াড়। আমি নির্দ্বিধায় এটি বলতে পারি।
গোনিউজ২৪/এএটি

সংবাদপত্রের পাতা থেকে বিভাগের আরো খবর
ব্যাংকে জমানো আমানত কমে যাচ্ছে

ব্যাংকে জমানো আমানত কমে যাচ্ছে

কারা হবে বিরোধী দল, লাঙ্গল না স্বতন্ত্র?

কারা হবে বিরোধী দল, লাঙ্গল না স্বতন্ত্র?

বিভিন্ন ছাড়ে ব্যাংক খাতের আসল চিত্র আড়ালের সুযোগ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

বিভিন্ন ছাড়ে ব্যাংক খাতের আসল চিত্র আড়ালের সুযোগ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

পাসপোর্ট এনআইডিসহ ১৯ কাজের অতি প্রয়োজনীয় জন্মসনদ এখন ‘সোনার হরিণ’

পাসপোর্ট এনআইডিসহ ১৯ কাজের অতি প্রয়োজনীয় জন্মসনদ এখন ‘সোনার হরিণ’

সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় যে ব্যাংক

সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় যে ব্যাংক

প্রশাসনের শীর্ষ পদে পদোন্নতিপ্রত্যাশীদের হতাশা বাড়ছে

প্রশাসনের শীর্ষ পদে পদোন্নতিপ্রত্যাশীদের হতাশা বাড়ছে