ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-বিরোধী শক্তির আখড়া হয়ে উঠেছে লন্ডন!


গো নিউজ২৪ | শেখ আদনান ফাহাদ প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০১৮, ০৬:২৯ পিএম আপডেট: এপ্রিল ১৯, ২০১৮, ১২:২৯ পিএম
বাংলাদেশ-বিরোধী শক্তির আখড়া হয়ে উঠেছে লন্ডন!

লন্ডন যেন বাংলাদেশ-বিরোধী শক্তির আখড়া হয়ে উঠেছে। সরকার বিরোধীদের আমি বাংলাদেশ-বিরোধী বলছি না। যারা ষড়যন্ত্র আর অসভ্য আচরণ করে বাংলাদেশের দুর্নাম করছে, এদেরকেই আমি বাংলাদেশ-বিরোধী বলছি। এই বাংলাদেশ বিরোধী অপশক্তি গেল কদিন আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিকে ভয়ংকরভাবে অপমান করেছে। লন্ডনের বাংলাদেশ মিশন অফিসে হামলা চালিয়েছে। এরাই এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিব্রত করার অপচেষ্টা করছে। নিজের পতাকা, নিজের দূতাবাস, নিজের জাতির পিতা এবং প্রধানমন্ত্রীকে যারা অবমাননা করতে পারে এদেরকে বাংলাদেশ-বিরোধী বলা ছাড়া আর কিইবা বলা যেতে পারে?

দুঃখজনক হলেও সত্য যে লন্ডনের এই বাংলাদেশ-বিরোধী শক্তির নেতৃত্বে আছেন ‘মুক্তিযোদ্ধা’ জিয়াউর রহমান সাহেবের ছেলে তারেক রহমান। আরও পরিষ্কার করে বলা যায়, তারেক রহমানকে কব্জা করে নিয়েছে জামাত এবং এর ছাত্র সংগঠন শিবির। বিএনপি ও জামাত কিংবা ছাত্রদল এবং শিবির, এগুলোর মধ্যে একটা সময় পর্যন্ত পার্থক্য নিরূপণ করা যেত। গত কয়েক বছর, বিশেষ করে তারেক রহমান সাহেবের কথাবার্তা আর কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে সেই পার্থক্য এখন আর নেই। ছাত্রদলের যারা এ নতুন বাস্তবতা উপলব্ধি করছেন তাদেরও এখন করার কিছু নেই। এরাও অসহায়।    

গত বিএনপি-জামাত আমলে সাংবাদকিতার খাতিরে কাছ থেকে দেখা এক শিবির নেতাকে একটি ছবিতে দেখলাম লন্ডনে তারেক রহমান ও তার স্ত্রীকে ফুল দিয়ে বরণ করে নিচ্ছে। ছাত্রদলের নেতারা তারেক রহমানের এত কাছে যেতে চান নিশ্চয়। কিন্তু তারেক রহমান নিজেই ছাত্রদল আর বিএনপির প্রগতিশীল অংশ থেকে অনেক দূরে চলে গেছেন। শিবির আর জামাত মিলে তারেক রহমানকে কব্জা করে নিয়েছে বহু আগে। লন্ডনের ওয়াটার লিলি গার্ডেন এ নিন্দিত বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মজহার সাহেবের বক্তৃতা শুনলেও বোঝা যায়, লন্ডন হয়ে উঠেছে শিবিরের ঘাঁটি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ছবিকে ভয়ংকরভাবে অপমান করা হয়েছিল তারেক রহমানের নির্দেশেই। বিএনপি বিলীন হয়েছে জামাতে, ছাত্রদল বিলীন হয়েছে শিবিরে। লন্ডন সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে চ্যানেল ৪ এর একটি প্যাকেজ নিউজ দেখেও আমরা টের পাই, ষড়যন্ত্র কত গভীর আর বিস্তৃত।

ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য উন্মাদ হয়ে গেছে লন্ডনের এই বাংলাদেশ-বিরোধীরা। বাংলাদেশ হাইকমিশনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ছবিকে কীভাবে, কী এক নিষ্ঠুর কায়দায় অপমান করা হয়েছিল সেই ভিডিও দেখে আমাদের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে। কী লজ্জাজনক বেঈমানি জাতির পিতার সাথে, নিজ মাতৃভূমির সাথে। বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে লাল-সবুজের পাসপোর্ট হাতে আসত না কারো। সেই পাসপোর্ট ব্যবহার করে লন্ডনে গিয়ে জাতির পিতার ছবিকে যারা অপমান করতে পারে, যারা নিজেদের হাই কমিশনে হামলা চালাতে পারে, তাদেরকে বেঈমান বলা ছাড়া আর কোনো ভাষা আমাদের জানা নেই। এই সন্ত্রাসী হামলার কোনো বিচার করেনি ব্রিটিশ প্রশাসন। দূতাবাস থেকেও শক্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলা আমাদের জানা নেই। এমনকি লন্ডনে যারা নিজেদের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ বলে দাবড়িয়ে বেড়ান তারাও শক্ত কোনো প্রতিবাদ করতে পেরেছেন বলে আমরা দেখিনি। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে থেকে মনে হয় ইনাদের শরীরে আলসেমি এসে গেছে। না হলে জাতির পিতার সাথে এত বড় অপমান হলেও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে শক্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায়নি কেন?

লন্ডনে জামাত এবং শিবিরের ক্যাডারদের বর্তমান ঘাঁটি তৈরি করা শুরু হয়েছে অনেক দিন সময় নিয়ে। পাঠকের নিশ্চয় মনে আছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত এবং আইনি প্রক্রিয়ায় সাজাপ্রাপ্ত জামাত নেতাদের আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক। তিনি এক পর্যায়ে অগোচরে দেশ ছেড়ে চলে গিয়ে থিতু হলেন লন্ডনে। যখন বুঝলেন আইনি প্রক্রিয়ায় জামাত নেতাদের বিচার ঠেকাতে পারবেন না, তখন বিশেষ কৌশলের অংশ হিসেবে ব্যারিস্টার সাহেব চলে গেলেন লন্ডন। আমাদের পরিচিত অনেক শিবির নেতা, শিবিরের সাংবাদিকও ধীরে ধীরে লন্ডন চলে যেতে লাগলেন। ইনারা বুঝতে পেরেছিলেন গণতান্ত্রিক পন্থায় শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানো যাবে না। তাই ষড়যন্ত্রের পথ অবলম্বন করলেন। বাংলাদেশ-বিরোধী ষড়যন্ত্রের অন্যতম কৌশল হচ্ছে, সরকারকে স্বৈরাচার, অগণতান্ত্রিক হিসেবে উপস্থাপন করা। এর জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। চ্যানেল ফোর একটি নিউজ দেখলাম। ইউটিউবে পাওয়া যাওয়া সে ভিডিওর শিরোনাম ছিল  ‘Bangladesh PM refuses to answer questions on human rights record’। ভিডিওটি পুরো দেখলে বোঝা যাবে, শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নেতিবাচক ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা চলমান লন্ডন সফরে চ্যানেল ফোরের সাংবাদিকের কোনো প্রশ্ন এড়িয়ে যান নি। সাংবাদিক নিজের ইপ্সিত নিউজ প্যাকেজের সাথে খাপ খায় এমন একটি প্রশ্ন করেছিলেন । শেখ হাসিনা সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তর দিতে যাবেন, এমন সময় শেখ হাসিনার পাশে বসা স্থানীয় সমন্বয়কারী (সম্ভবত ব্রিটিশ) বলেন, ‘ আপনি ইতোমধ্যে একটি প্রশ্ন করেছেন, আর সুযোগ নেই, প্রধানমন্ত্রীর আরও অনেক কাজ আছে, তাঁকে যেতে হবে’। চ্যানেল ফোর সেই সাংবাদিক শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন । তার প্যাকেজ নিউজটিও ছিল জামাত আর শিবির নেতাদের নানা ইন্টার্ভিউ আর স্থানীয় বিএনপি-জামাতের শেখ হাসিনা-বিরোধী মিছিলের ভিডিওতে ভরা। চ্যানেল ফোর প্রমাণ করতে চেয়েছে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি খারাপ। এর আগে আমরা দেখেছি, জার্মানির বারটলসম্যান স্টিফটুং, আল-জাজিরা চ্যানেল ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল একই কাজ করেছে। চ্যানেল ফোর গত ২০১৩-২০১৫ সালে বিএনপি-জামাতের সন্ত্রাসীদের পেট্রোল বোমা সন্ত্রাস নিয়ে একটা শব্দও খরচ করেনি।

লন্ডনকে ঘিরে বিএনপি-জামাত জোটের নীল নকশার পেছনে তাত্ত্বিক গুরুদের একজন পতিত ‘বুদ্ধিজীবী’ ফরহাদ মজহার। ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে লন্ডনের ওয়াটার লিলি গার্ডেনে সিটিজেন্স মুভমেন্ট ইউকে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় নিজের ভাষণে তুলে ধরেছেন কিভাবে ২০১৩ সালের ৫ ই মে আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতের পরিকল্পনা করেছিলেন। বলেছেন, সরকার সেদিনই উৎখাত হত, যদি তার পরিকল্পনা সফল হত। তিনি এও বলেছেন, শুধু নির্বাচন দিয়ে এই সরকারকে বাংলাদেশ থেকে সরানো যাবেনা। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের মহাসমাবেশ নিয়ে দেশজুড়ে তিনি এবং আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান মিলে কীভাবে উল্টো প্রচার চালিয়ে হেফাজতে ইসলামের মত একটি শক্তির জন্ম দিয়েছেন সেই কৃতিত্বগাঁথাও তিনি এই ভাষণে বিধৃত করেছেন। ফরহাদ মজহার বাংলাদেশে ‘ইসলামি রাষ্ট্র’ কায়েম করার জন্য জিহাদের আহবান করেছেন সেখানে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়ে অনুষ্ঠিত গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনে অংশ নেয়া ছেলে-মেয়েদেরকে তিনি ‘উন্মাদ’ বলে বর্ণনা করেছেন সে ভাষণে। মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে পবিত্র ধর্ম ইসলামকে দাঁড় করাতে চেয়েছেন ফরহাদ মজহার। শিবিরে ঠাসা সেই লিলি গার্ডেনের কনফারেন্স কক্ষে ফরহাদ মজহার বলেছিলেন, ‘যারা ফাঁসি চায়, এবং ফাঁসি দেখে মোমবাতি জ্বালায়, এটা অদ্ভুত ব্যাপার, এর চেয়ে অসুস্থতা পৃথিবীতে আর দেখবেন না। পৃথিবীর কোথাও আপনি দেখবেন না যে, তরুণ ছেলেরা যারা নিজেদের আধুনিক বলে দাবি করে, প্রগতিশীল বলে দাবি করে তারা এরকম ফাঁসি ফাঁসি করে, বাচ্চা বাচ্চা ছেলেদের মধ্যে (কপালে হাত দিয়ে ইংগিত করে) ফাঁসির ট্যাগ লাগায়, বাচ্চাদেরকে ফাঁসি ফাঁসি শেখায়, যে বাচ্চা জানেনা ফাঁসি কী জিনিস।...সত্যিকারের তরুণ তো সে ছেলে যে হেঁটে এসেছে চিড়া আর গুড় নিয়া, তোমাদেরকে প্রতিবাদ করার জন্য। হেঁটে এসেছে, আমি জানি কুমিল্লা থেকে হেঁটে এসেছে, সেই হাটহাজারি থেকে হেঁটে এসেছে, সেই বিভিন্ন জায়গা থেকে, ফরিদপুর থেকে, উত্তরবঙ্গ থেকে বগুড়া থেকে হেঁটে এসেছে। আপনারা যদি সেই দৃশ্য দেখেছি, হেঁটে হেঁটে; মানুষ তাদেরকে পানি দিয়েছে, মেয়েরা তাদের জন্য খাওয়া পাক করছে। লোকে দিচ্ছে, মানুষের মনে বেদনা, মানুষের মনে দুঃখ; তারা তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে’।

লন্ডন তাই বাংলাদেশ-বিরোধী শক্তির আখড়া হয়ে উঠেছে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ছেলে তারেক রহমান সেই শক্তির মূল নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন । বিএনপি নিজেদেরকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি বলে দাবি করে। অথচ জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের অন্যতম নির্দেশদাতা হিসেবে কাজ করেছেন। চট্টগ্রামে পাকিস্তানের অস্ত্র খালাস করতে গিয়ে ঘটনাচক্রে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে ক্ষমতায় এসে গোলাম আযমসহ যুদ্ধাপরাধী আর খুনিদের পুনর্বাসন করেছেন। তার ছেলে এখন লন্ডনে বসে সর্বনাশা খেলায় মেতেছেন। এদেশের খেটে খাওয়া মানুষদের তাই অনেক সাবধান হতে হবে। যারা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে নিজেদের শক্তিকে স্থায়ী ভেবে ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন, তাদের পা কষ্ট করে মাটিতে নামাতে হবে। অপপ্রচারের জবাব প্রচার দিয়ে দিতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ চর্চা করে সৎ জীবন-যাপন করতে হবে। উন্নয়নকে অব্যাহত রাখতে হবে। এবং মানুষকে বোঝাতে হবে যাতে ষড়যন্ত্রে কেউ পা না দেয়।

লেখক: শেখ আদনান ফাহাদ, সহকারী অধ্যাপক, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়


গো নিউজ২৪/আই

সংবাদপত্রের পাতা থেকে বিভাগের আরো খবর
ব্যাংকে জমানো আমানত কমে যাচ্ছে

ব্যাংকে জমানো আমানত কমে যাচ্ছে

কারা হবে বিরোধী দল, লাঙ্গল না স্বতন্ত্র?

কারা হবে বিরোধী দল, লাঙ্গল না স্বতন্ত্র?

বিভিন্ন ছাড়ে ব্যাংক খাতের আসল চিত্র আড়ালের সুযোগ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

বিভিন্ন ছাড়ে ব্যাংক খাতের আসল চিত্র আড়ালের সুযোগ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

পাসপোর্ট এনআইডিসহ ১৯ কাজের অতি প্রয়োজনীয় জন্মসনদ এখন ‘সোনার হরিণ’

পাসপোর্ট এনআইডিসহ ১৯ কাজের অতি প্রয়োজনীয় জন্মসনদ এখন ‘সোনার হরিণ’

সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় যে ব্যাংক

সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় যে ব্যাংক

প্রশাসনের শীর্ষ পদে পদোন্নতিপ্রত্যাশীদের হতাশা বাড়ছে

প্রশাসনের শীর্ষ পদে পদোন্নতিপ্রত্যাশীদের হতাশা বাড়ছে