ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ হাসিনার মধ্যে একনায়কতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য আছে


গো নিউজ২৪ | কুলদীপ নায়ার প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৮, ০৭:০৭ পিএম
শেখ হাসিনার মধ্যে একনায়কতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য আছে

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা আত্মবিশ্বাস ক্ষরণ করছে। আমি প্রথমবার ঢাকা সফর করেছিলাম ১৯৭২ সালের এপ্রিলে, বাংলাদেশ জন্মলাভের চার মাসের মধ্যে। তখন ঢাকার উচ্চারণ ছিল অন্যরকম (Dacca)। চেষ্টা করছিল সার্বভৌম একটি রাষ্ট্রের চাহিদার সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার। সংশয়হীনভাবেই বলা যায়, বহুতল ভবনরাজির সমারোহে নগরীর পুরনো ঘন সবুজ উবে গেছে। অবশ্য কমবেশি বিশ্বের সব রাজধানীর ক্ষেত্রেই কথাটি প্রযোজ্য। ব্যতিক্রম কেবল ইসলামাবাদ। সেখানকার উন্মক্ততা ও বৃক্ষরাজি এখনো অটুট রয়েছে।

ঢাকা বিমানবন্দরে ১৯৭২ সালে হতাশাজনকভাবে দীর্ঘ লাইনগুলো অতি ধীরগতিতে অভিবাসন কাউন্টার অতিক্রম করছিল, সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল লাগেজ। তবে আমি যাত্রীদের মুখে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান শুনলাম। মনে হলো তারা ‘প্রতিশ্রুত ভূমিতে’ ফিরছে। আমি নগরী চক্কর দিয়ে যোগ-বিয়োগের হিসাব কষতে থাকলাম, তখন এ দেশটি নিজেই তা কখনো করবে কিনা সে প্রশ্নটি ভাবনায় এলো। ৪০ বছর পর চকচকে বিমানবন্দর ও সুশৃঙ্খল জনতা আপনাকে বলবে, বাংলাদেশ এসে গেছে। আমি আস্থার সাথে বলতে পারি, এ জাতি সংশয়বাদীদের ভুল প্রমাণ করেছে। কঠোর পরিশ্রমী জনগণের দেশে ও বিদেশে কাজ করার ফল পাওয়া গেছে। দেশটির প্রবৃদ্ধির হার ৬.৪ ভাগ, যে দেশটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে, সেই পাকিস্তানের তা ২.৩ শতাংশ। আরো ভালো ও আরো স্থিতিশীল ভবিষ্যতের আশায় থাকা বাংলাদেশীদের আমি দেখেছি।

পাকিস্তানের তুলনায় বিষয়টি সম্পূর্ণ বিপরীত। পক্ষকাল আগে আমি ওই দেশে গিয়েছিলাম। দেশটি অবসাদগ্রস্ত, ভবিষ্যতে কী আছে জানে না। সন্ত্রাসবাদেরও আতঙ্ক আছে। তবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৌলবাদীদের এবং বাংলাদেশের মাটি থেকে কার্যক্রম চালনাকারী উলফার (ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম) মতো বিতাড়িত সংগঠনগুলোর প্রতি কোনো করুণা না দেখিয়ে সন্ত্রাস নির্মূল করেছেন।

আমি একটি পত্রিকার ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে নোবেল পুরস্কারজয়ী মোহাম্মদ ইউনুসের সাথে দেখা করেছি। তিনি তিক্ত বা হতাশ- কোনোটিই নন। তিনি গরিবদের সাহায্য করা নিয়ে তার পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি আমাকে বললেন, সারা বিশ্বের ১০৮টির মতো গ্রামীণ ব্যাংক তার প্রতি সংহতি জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছে। আমি ভেবে দেখলাম, হাসিনা যদি তাকে দেশের বিশেষ রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করত, তবে বাংলাদেশ কতই না উপকৃত হতো। বাংলাদেশের সামনে সব দরজা খুলে যেত। তার অপসারণে হাসিনার বদনাম হয়েছে। তবে বিস্ময়ের বিষয় হলো, ব্যাপক সমালোচনা সত্ত্বেও হাসিনা অনুতপ্ত নন।

হাসিনাকে নিয়ে সমস্যা হলো, তার মধ্যে একনায়কতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য আছে, অন্য কোনো দৃষ্টিভঙ্গি সহ্য করতে পারেন না। আমি দেখেছি, ইন্দিরা গান্ধী কিভাবে এসব বৈশিষ্ট্য গ্রহণ করে তার বাবা জওহের লাল নেহরুর সংশোধনমূলক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন, সেগুলো ধ্বংস করে ফেলেছিলেন। রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী যে ক্ষতি করে গেছেন, ভারত এখন পর্যন্ত তা কাটিয়ে ওঠতে পারেনি।

বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সবসময়ই সমালোচনার ঊর্ধ্বে বলে বিবেচিত হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে, বিশেষ করে মুহাম্মদ ইউনূসের অপসারণ প্রশ্নের ফলে লোকজনের মধ্যে প্রশ্ন জেগেছে, ভারতীয় বিচার বিভাগ ১৫ ভাগ দুর্নীতিগ্রস্ত বলে যে কথাটি প্রচলিত রয়েছে তা তাদের নিজেদের বিচার বিভাগ সম্পর্কেও প্রযোজ্য কিনা। প্রখ্যাত আইনজীবী কামাল হোসেন আমাকে বলেছেন, ইউনূসের মামলার যুক্তি-তর্কের সময় তিনি এমনকি যথাযথ শুনানি পর্যন্ত পাননি। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে শাসকরা বিচার বিভাগের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য পরিচিত, বাংলাদেশও হয়তো ব্যতিক্রম নয়।

শেখ হাসিনার অগণতান্ত্রিক আচরণ অনেক বেশি ক্ষতি সৃষ্টি করতে পারে। কারণ সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদের শক্তিগুলো ওঁত পেতে আছে। তারা ইতোমধ্যেই তেমন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে ফেলেছে, তাদের সংগঠিত গুটিকতেক হরতালে তারা অনুকূল অবস্থা দেখতে পেয়েছে। হাসিনা বুঝতে পেরেছেন, তারা জনপ্রিয়তার রেখাচিত্র নিম্নমুখী। আর এ কারণেই হেরে যাওয়ার শঙ্কায় ঢাকার মেয়র নির্বাচন পর্যন্ত তিনি আয়োজন করতে চাননি। রাজপথে নেমে হরতাল, যা বিরোধী দলের বাতিক কিন্তু বাংলাদেশের জন্য অভিশাপ, ডাকার সময় এসে গেছে- এমন চিন্তা করার সুযোগ তিনি বিরোধীদের দিচ্ছেন না।

বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমান বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিলেন একদলীয় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে এবং দেশে মাত্র দুটি সংবাদপত্র রাখার পরিকল্পনা করে, যেমনটি সোভিয়েত ইউনিয়নে ছিল প্রাভদা ও ইজভেস্তিয়া। তবে মুজিব ছিলেন আইকন, তাকে যে জনগণ ভালোবাসে তাদের কাছে যেকোনো কিছু বিক্রি করতে পারতেন। তার মেয়ে হাসিনা তার বাবার মর্যাদার মতো নন, তার মতো বিপুল জনপ্রিয়ও নন। তিনি কেবল তার নিজের এবং সেইসাথে জাতির ক্ষতি সাধন করতে পারেন।

 

লেখক: কুলদীপ নায়ার

ভারতীয় প্রথিতযশা প্রবীণ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

 

গো নিউজ২৪/আই

সংবাদপত্রের পাতা থেকে বিভাগের আরো খবর
ব্যাংকে জমানো আমানত কমে যাচ্ছে

ব্যাংকে জমানো আমানত কমে যাচ্ছে

কারা হবে বিরোধী দল, লাঙ্গল না স্বতন্ত্র?

কারা হবে বিরোধী দল, লাঙ্গল না স্বতন্ত্র?

বিভিন্ন ছাড়ে ব্যাংক খাতের আসল চিত্র আড়ালের সুযোগ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

বিভিন্ন ছাড়ে ব্যাংক খাতের আসল চিত্র আড়ালের সুযোগ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

পাসপোর্ট এনআইডিসহ ১৯ কাজের অতি প্রয়োজনীয় জন্মসনদ এখন ‘সোনার হরিণ’

পাসপোর্ট এনআইডিসহ ১৯ কাজের অতি প্রয়োজনীয় জন্মসনদ এখন ‘সোনার হরিণ’

সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় যে ব্যাংক

সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় যে ব্যাংক

প্রশাসনের শীর্ষ পদে পদোন্নতিপ্রত্যাশীদের হতাশা বাড়ছে

প্রশাসনের শীর্ষ পদে পদোন্নতিপ্রত্যাশীদের হতাশা বাড়ছে