ঢাকা সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারি কর্মচারীদের ৩৯ ধরনের ভাতার অধিকাংশই সঙ্গতিপূর্ণ নয়


গো নিউজ২৪ | নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: এপ্রিল ৪, ২০২৩, ০৭:২০ পিএম আপডেট: এপ্রিল ৪, ২০২৩, ০৭:৩২ পিএম
সরকারি কর্মচারীদের ৩৯ ধরনের ভাতার অধিকাংশই সঙ্গতিপূর্ণ নয়

ছুটির দিন বাড়তি দায়িত্ব পালনের (ওভারটাইম) জন্য একজন সরকারি কর্মচারী প্রতি ঘণ্টায় টিফিন ভাতা পান পাঁচ টাকা। যাতায়াত ভাতা হিসাবে প্রতিদিন পাচ্ছেন গড়ে তেরো টাকা তেষট্টি পয়সা। সভা ও সেমিনারে আপ্যায়ন বাবদ বরাদ্দ জনপ্রতি চল্লিশ টাকা। পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের একজন সিপাহি প্রতি মাসে ধোলাই ভাতা পাচ্ছেন একশ টাকা। ডাক বিভাগের একজন (এক্সট্রাডিপার্টমেন্টাল কর্মচারী) ডাক হরকরা প্রতিদিন সম্মানি হিসাবে পাচ্ছেন ১৪৩ টাকা ৩৩ পয়সা। বিভিন্ন ভাতা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ভাতার পরিমাণ খুবই কম এবং সেকেলে। বিগত ১৫ বছরের মধ্যে হালনাগাদ করা হয়নি এমন ভাতাও রয়েছে।

বর্তমান বাজার ব্যবস্থার সঙ্গে উল্লিখিত ভাতার কোনো সামঞ্জস্য নেই বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া ভাতা তুলতে গিয়ে ঘটে আরেক বিপত্তি। সামান্য বিল পাশ হতে লেগে যায় মাসের পর মাস। ফলে ভাতা নিয়ে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সরকার এবং কর্মচারী উভয়পক্ষই বিপাকে পড়েছে। অর্থের পরিমাণ কম হওয়ায় ভাতা নিয়ে কর্মচারীরা অসন্তুষ্ট। অপরদিকে সরকার অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ভাতার পরিমাণ বাড়াতেও পারছে না। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছুটির দিন ৩ ঘণ্টা কাজের জন্য পনেরো টাকা টিফিন ভাতা দেওয়া হয়। অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় পাঁচ টাকা। অর্থ বিভাগ থেকে ২০০৮ সালে ৬ নভেম্বর ছুটির দিনে ৩ ঘণ্টা দায়িত্ব পালনের জন্য পনেরো টাকা এবং ৩ ঘণ্টার বেশি সময় কাজের জন্য বিশ টাকা টিফিন ভাতা নির্ধারণ করে আদেশ জারি করা হয়। বিগত ১৫ বছরে এ ভাতা বৃদ্ধির কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ২০১৫ সালে একজন কর্মচারীকে মাসে একশ টাকা ধোলাই ভাতা দিয়ে আদেশ জারি করে অর্থ বিভাগ। তখন সব ধরনের সাবান এবং ডিটারজেন্টের মূল্য বর্তমান মূল্যের অর্ধেকেরও কম ছিল। বর্তমানে সবচেয়ে কম মূল্যের প্রতি কেজি ডিটারজেন্ট ২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরকারি অফিসের সভার আপ্যায়নে জনপ্রতি ব্যয় হয় ৪০ টাকা। এ ৪০ টাকার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। ফলে আপ্যায়নের জন্য মূলত ব্যয় হয় মাত্র ৩৪ টাকা।

১১ থেকে ২০ গ্রেডের সরকারি কর্মচারীরা যাতায়াত ভাতা পান তিনশ টাকা। তবে পৌরসভার বাহিরে হলে এ ভাতা পাবেন না। কর্মস্থলে যাওয়া-আসায় (২২ দিনে মাসে) প্রতিদিন গড়ে পাচ্ছে ১৩ টাকা ৬৩ পয়সা। বর্তমানে অতি সাধারণ মানের গণপরিবহণের ভাড়াও এরচেয়ে অনেক বেশি। একই গ্রেডের কর্মচারীদের মাসে ২০০ টাকা টিফিন ভাতা দেওয়া হয়। প্রতিদিন গড়ে একজন কর্মচারী নয় টাকা নয় পয়সা টিফিন ভাতা পাচ্ছেন। কিন্তু এ টাকায় বর্তমানে কোনো টিফিনই পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে অতিসাধারণ মানের একটি কলাও দশ টাকা বিক্রি হয়। ২০১৫ সালে টিফিন ভাতা ও যাতায়াত ভাতার পরিমাণ নির্ধারণ করে আদেশ জারি করে অর্থ বিভাগ। গেল আট বছরে এ ভাতা বৃদ্ধির কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি।

জানতে চাইলে ভাতার পরিমাণ কম স্বীকার করে অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বাস্তবায়ন) মো. আব্দুর রহমান খান বলেন, সরকার সামর্থ্য অনুযায়ী কর্মচারীদের ভাতা দিচ্ছে। অনেক আগে যেসব খাতের ভাতা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেগুলো বাড়িয়ে পুনর্নির্ধারণ করা দরকার। তবে এই মুহূর্তে ভাতা বাড়ানো যাবে না। কারণ বিশ্বময় অর্থনৈতিক সংকট চলছে। এখন টিকে থাকার সময়।

মিটিংয়ে আপ্যায়ন ব্যয় ৪০ টাকা পর্যাপ্ত কিনা জানতে চাইলে জবাবে অতিরিক্ত সচিব বলেন, আগে আপ্যায়নের জন্য ২৫ টাকা দেওয়া হতো। সে তুলনায় এখন বেশি দেওয়া হচ্ছে। তবে বাজারমূল্যের তুলনায় পর্যাপ্ত নয় বলে জানান তিনি। জানতে চাইলে সাবেক জনপ্রশাসন সিনিয়র সচিব শেখ ইউসুফ হারুন যুগান্তরকে বলেন, ভাতার পরিমাণ বাড়িয়ে পুনর্নির্ধারণ করা উচিত। তবে কর্মচারীদের সরকারের আর্থিক সামর্থ্যও বিবেচনায় রাখতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। শিক্ষা সহায়ক ভাতা হিসাবে মাসে এক সন্তানের জন্য পাঁচশ এবং ২ সন্তানের জন্য এক হাজার টাকা পাচ্ছেন কর্মচারীরা। বর্তমান শিক্ষা উপকরণের মূল্যের তুলনায় এ খাতের ভাতা খুবই সামান্য। সচিব থেকে অফিস সহায়ক পর্যন্ত সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী মাসিক এক হাজার পাঁচশ টাকা চিকিৎসা ভাতা পাচ্ছেন। বর্তমানে এ টাকায় ওষুধ ক্রয় ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো এখন প্রায় অসম্ভব।

প্রশিক্ষণকালে দুপুর ও রাতের খাবারের জন্য জনপ্রতি পাঁচশ টাকা দেওয়া হয়। অর্থাৎ প্রতি বেলার খাবারের জন্য ২৫০ টাকা দেওয়া হয়। নাস্তার জন্য দেওয়া হয় চল্লিশ টাকা। নাস্তা ও খাবারের জন্য দেওয়া অর্থের ওপর আবার ১৫ শতাংশ ভ্যাট কেটে নেওয়া হয়। ফলে সভা, কনফারেন্স, প্রশিক্ষণ কোর্স, বিভিন্ন বোর্ড ও কমিশনের সভা আপ্যায়নে অতি নিুমানের নাস্তা বিতরণ করা হয়। একাধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৫ আপ্যায়ন ব্যয় নির্ধারণ করে অর্থ বিভাগ। বিগত প্রায় ৮ বছরে এ খাতের ব্যয় আর বাড়ানো হয়নি। এখন সব ধরনের নাস্তার মূল্য অনেক বেশি। ফলে কম দামের দেশি ফল দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।

গ্রাম পুলিশ সদস্যদের মাসে তিনবার থানা সদরে গিয়ে হাজিরা দিতে হয়। দশ কিলোমিটার দূরত্বে থানা সদরে যাতায়াত বাবদ তিনশ টাকা ভাতা দেওয়া হয়। ইউনিয়ন পর্যায়ে গণপরিবহণও নেই। বর্তমানে এ পরিমাণ টাকায় যাতায়াত ও খাওয়া প্রায় অসম্ভব। ২০১৭ সালে এ ভাতা নির্ধারণ করা হয়।

তারপর থেকে পুনর্নির্ধারণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি স্থানীয় সরকার বিভাগ। বিভিন্ন মামলার সাক্ষ্য দিতে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যেতে হয় পুলিশ সদস্যদের। কিন্তু এক্ষেত্রে যাতায়াত ও খাওয়া ছাড়া অন্য কোনো ভাতা তারা পান না বলে জানা গেছে। একইভাবে ক্যাডার কর্মকর্তাদেরও বিভিন্ন ধরনের মামলায় সাক্ষ্য দিতে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যেতে হয়। তারাও যাতায়াত এবং খাওয়া ছাড়া বাড়তি কোনো ভাতা পান না বলে একাধিক ক্যাডার কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। সরকার কর্মচারীদের মোট ৩৯ ধরনের ভাতা দিচ্ছে। অধিকাংশ ভাতাই বর্তমান বাজার ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে দাবি করছেন কর্মচারীরা।
সূত্র: যুগান্তর

সংবাদপত্রের পাতা থেকে বিভাগের আরো খবর
ব্যাংকে জমানো আমানত কমে যাচ্ছে

ব্যাংকে জমানো আমানত কমে যাচ্ছে

কারা হবে বিরোধী দল, লাঙ্গল না স্বতন্ত্র?

কারা হবে বিরোধী দল, লাঙ্গল না স্বতন্ত্র?

বিভিন্ন ছাড়ে ব্যাংক খাতের আসল চিত্র আড়ালের সুযোগ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

বিভিন্ন ছাড়ে ব্যাংক খাতের আসল চিত্র আড়ালের সুযোগ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

পাসপোর্ট এনআইডিসহ ১৯ কাজের অতি প্রয়োজনীয় জন্মসনদ এখন ‘সোনার হরিণ’

পাসপোর্ট এনআইডিসহ ১৯ কাজের অতি প্রয়োজনীয় জন্মসনদ এখন ‘সোনার হরিণ’

সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় যে ব্যাংক

সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় যে ব্যাংক

প্রশাসনের শীর্ষ পদে পদোন্নতিপ্রত্যাশীদের হতাশা বাড়ছে

প্রশাসনের শীর্ষ পদে পদোন্নতিপ্রত্যাশীদের হতাশা বাড়ছে