ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পড়া শেষ হলে ঝালমুড়ি বিক্রি করতে নেমে যান অনার্স পড়ুয়া মেহেদী


গো নিউজ২৪ | ক্যাম্পাস প্রতিনিধি প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৪, ২০২০, ০৯:১৪ পিএম
পড়া শেষ হলে ঝালমুড়ি বিক্রি করতে নেমে যান অনার্স পড়ুয়া মেহেদী

পড়েন অনার্স শেষ বর্ষে। বিক্রি করেন ঝালমুড়ি। এ নিয়ে নেই বিন্দুমাত্র হীনমন্যতা। বরং গর্ব করে বলেন, ‘আমি বেকার না। পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু একটা করতে পারছি। নিজের খরচ নিজেই যোগাড় করছি। পরিবারকেও সহায়তা করছি।’

বলছিলাম কোনো কাজকেই ছোট মনে না করা স্বপ্নবাজ তরুণ মেহেদী হাসানের কথা। রাজশাহী কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে অনার্স শেষ বর্ষে পড়া এই তরুণ নিজের তৈরি বিশেষ ধরনের ঝালমুড়ি বিক্রি করেন রাজশাহীর পদ্মা পাড়ের লালন শাহ্ মুক্তমঞ্চ এলাকায়।

পড়ালেখা শেষ করার আগেই ব্যবসায়ে নেমে পড়া মেহেদী হাসান স্বপ্ন দেখেন একদিন অনেক বড় উদ্যোক্তা হবেন। দেশের ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গড়ে তুলবেন নিজের তৈরি বিশেষ ঝালমুড়ির দোকান। ইতোমধ্যে ব্যবসা শুরুর মাত্র দুই মাসের মধ্যে রাজশাহী শহরে নিজের ঝালমুড়ির দ্বিতীয় শাখা চালু করেছেন।

ছাত্রজীবনে ঝালমুড়ির ব্যবসায় নেমে পড়ার বিষয়ে মেহেদী হাসান বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে চাকরির অবস্থা খুবই করুন। বেকারত্বের পরিমাণ অনেক বেশি। আমি চেষ্টা করছিলাম নিজে উদ্যোক্তা হয়ে কাজ করতে। ২০১৭ সালে একটি রেষ্টুরেন্টে ওয়েটার হিসেবে কাজ শুরু করেছিলাম। করোনা আসার কারণে বেকার হয়ে ঘরে বসে ছিলাম। কেনো চাকরি পাইনি।’

‘১৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে আসি এবং অনেক জায়গায় চাকরির জন্য চেষ্টা করি। কোনো চাকরি হচ্ছিল না। একটা চাকরি পাই, তারা বেতন দেবে ৬ হাজার টাকা, ৮ ঘণ্টা ডিউটি। সেটা আমার পছন্দনীয় ছিল না। সে কারণে আমার উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছায় ঝালমুড়ি নিয়ে মাঠে এসেছি’ বলেন অনার্স শেষ বর্ষের এই শিক্ষার্থী।

তিনি বলেন, ‘আমি চলতি বছরের ৬ অক্টোবর থেকে এ ব্যবসায় নেমেছি। ডিসেম্বরের ১ তারিখে আমার দ্বিতীয় শাখা ওপেন হয়েছে, বড় কুঠির মুক্তমঞ্চে। আমি স্বপ্ন দেখি একদিন দেশের ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিজের ঝালমুড়ির দোকান দেবো।’

শিক্ষাজীবন শেষ করার আগেই ঝালমুড়ির ব্যবসায় নেমে পড়ায় বন্ধুদের কাছ থেকে কোনো বিরূপ মন্তব্য শুনতে হয়েছে কি-না? জানতে চাইলে মেহেদী বলেন, ‘আমি মনে করি কোনো কাজ ছোট না। এটা ঝালমুড়ি বিক্রি হোক বা অন্য যাই হোক। আমি নিজে প্রাউড ফিল করি (গর্ববোধ করা), আমি একজন মুড়ি বিক্রেতা এবং সফল মুড়ি বিক্রেতা। আমি সৎভাবে ব্যবসা করে নিজে চলতে পারি, এটাই আমার বড় পাওয়া।’

তিনি বলেন, ‘আমাকে আমার অনেক সহপাঠী উৎসাহ দিয়েছে। আবার কেউ কেউ ইনসাল্ট (তিরস্কার) করেছে। তবে তাদের ইনসাল্টগুলোকে আমি অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়েছি। আমি বিশ্বাস করি ভবিষ্যতে একদিন আমি অনেক বড় কিছু করতে পারবো। যারা আমাকে ইনসাল্ট করেছে তারাই একদিন গর্ব করবে আমি তাদের বন্ধু ছিলাম।’

কিছু সহপাঠী বিরুপ মন্তব্য করলেও একজন শিক্ষককে নিজের পাশে পেয়েছেন সে কথাও বেশ গর্বের সঙ্গে বললেন এই তরুণ। তিনি জানান, কিছুদিন আগে এক শিক্ষকের বিদায় অনুষ্ঠান উপলক্ষে কলেজে যান। সে সময় কয়েকজন সহপাঠী তাকে বলেন- ‘তুই ঝালমুড়ি বিক্রি করিস, এখানে এসেছিস কেন?’

‘আমি তাদের প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগেই আমার একজন শিক্ষক বলেন- “কোনো কাজই ছোট না। ও চুরি-ডাকাতি করে না। বেকার বসে নেই। পড়ালেখার পাশাপাশি ঝালমুড়ি বিক্রি করে নিজের খরচ নিজেই যোগাড় করছে। এতে লজ্জার কিছু নেই।” আমার শিক্ষকের এমন কথায় আমি আরও উৎসাহ পেয়েছি’ বলেন মেহেদী।

একদিন অনেক বড় ব্যবসায়ী হবেন এমন স্বপ্নের কথা জানিয়ে মেহেদী বলেন, ‘আমি একজন সফল ব্যবসায়ী হতে চাই। বর্তমানে ঝালমুড়ি বিক্রি করছি। এই ঝালমুড়ি থেকেই ধীরে ধীরে একদিন বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখি।’

এতো শাখা খোলার উৎসাহ কিভাবে পাচ্ছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাজশাহীতে আমি ছাড়া কেউ চ্যালেঞ্জ দিয়ে ঝালমুড়ি বিক্রি করে না। আমার ঝালমুড়ি যদি ভালো না লাগে তাহলে দ্বিগুণ টাকা ফেরত দেব, এমন ওপেন চ্যালেঞ্জ দিয়ে আমি ঝালমুড়ি বিক্রি করি। আজ পর্যন্ত কেউ বলেনি আমার ঝালমুড়ি খারাপ লেগেছে।’

ঝালমুড়ির বৈশিষ্ট্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি খুলনার বিখ্যাত চুই ঝাল দিয়ে ঝালমুড়ি বানাই। এছাড়া খুলনার স্পেশাল বিরানি চানাচুর আছে। আর আমার মসলাটা এক্সেপশনাল (ব্যতিক্রম), যেটা আমি নিজেই তৈরি করি।’

ব্যবসা করতে গিয়ে লেখাপড়ায় ক্ষতি হচ্ছে কি না? এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমি অনার্স প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছি। তৃতীয় বর্ষের রেজাল্ট এখনো হয়নি, আশা করি এটাতেও ফার্স্ট ক্লাস থাকবে।’

পরিবারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার গ্রামের বাড়ি রাজশাহী শহর থেকে ৪২ কিলোমিটার দূরে। গ্রামের বাড়িতে বাবা-মা ও ছোট ভাই থাকে। বাবা কৃষক। আমি এখানে ঝালমুড়ির ব্যবসা করি এটা আমার বাবা-মা জানেন। তাদের একটাই কথা আমি যা করি, যেন সততার সঙ্গে করি।’

ফিচার বিভাগের আরো খবর
তিশার বাবার কান্না দেখেছেন কি

তিশার বাবার কান্না দেখেছেন কি

ডাক্তার মেয়ে ও সরকারি চাকরিজীবী ছেলের মা বৃদ্ধাশ্রমে

ডাক্তার মেয়ে ও সরকারি চাকরিজীবী ছেলের মা বৃদ্ধাশ্রমে

পেনশন তহবিল: যে কৌশলে চাকরি না থাকলেও সমস্যা নেই

পেনশন তহবিল: যে কৌশলে চাকরি না থাকলেও সমস্যা নেই

রাজার মুকুটে ২৮৬৮টি হীরা ও নীলকান্তমণি-পান্না-রুবিসহ ৪৪৪ রত্ন

রাজার মুকুটে ২৮৬৮টি হীরা ও নীলকান্তমণি-পান্না-রুবিসহ ৪৪৪ রত্ন

‘একটু জোরে কথা বললে হিসু করে দিই, শরীর কেঁপে জ্বর আসে’

‘একটু জোরে কথা বললে হিসু করে দিই, শরীর কেঁপে জ্বর আসে’

সৌদি আরবে আগে চাঁদ দেখা যায় যে কারণে

সৌদি আরবে আগে চাঁদ দেখা যায় যে কারণে