ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অর্পিত সম্পত্তির পাঁচ সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ


গো নিউজ২৪ | নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২১, ০১:৫৭ পিএম আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২১, ০৭:৫৭ এএম
অর্পিত সম্পত্তির পাঁচ সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ

অর্পিত সম্পত্তি বিষয়ক কয়েকটি সমস্যা চিহ্নিত করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। এসব সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে এ সংক্রান্ত আইন সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। আইন সংশোধনের মাধ্যমে দ্রুতই সমস্যাগুলোর সমাধান হবে বলে প্রত্যাশা করছেন কর্মকর্তারা।

অর্পিত সম্পত্তি কি?

১৯৬৫ থেকে ১৯৬৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যেসব পাকিস্তানি নাগরিক পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে গিয়েছিলেন, তাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তি তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ‌‘শত্রু সম্পত্তি’ হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৭৪ সাল থেকে শত্রু সম্পত্তির নতুন নাম দেওয়া হয় ‘অর্পিত সম্পত্তি’।

অর্পিত সম্পত্তির দুই ক্যাটাগরি

সরকার দুটি ক্যাটাগরিতে অর্পিত সম্পত্তির তালিকা করে। এরমধ্যে ‘ক’ তালিকাভুক্ত সম্পত্তি সরকারের দখলে রয়েছে বা ইজারা দেওয়া হয়েছে। আর ‘খ’ তালিকার সম্পত্তি সরকারের দখলে বা ইজারায় নেই। 

পরিমাণ ছয় লাখ ৬০ হাজার একর

সরকারি হিসেবে বাংলাদেশে অর্পিত সম্পত্তির পরিমাণ ছয় লাখ ৬০ হাজার একর। এরমধ্যে প্রত্যর্পণযোগ্য বা হস্তান্তরযোগ্য সরকারের দখলে থাকা ‘ক’ তালিকাভুক্ত সম্পত্তির পরিমাণ এক লাখ ৮৯ হাজার ৬৬২ একর। আর সরকারের দখলের বাইরে ‘খ’ তালিকাভুক্ত অর্পিত সম্পত্তির পরিমাণ চার লাখ ৭০ হাজার ৫৫৮ একর। 

ফিরিয়ে দিতে আইন

অর্পিত সম্পত্তি হিসাবে তালিকাভুক্ত সম্পত্তি বৈধ মালিকের কাছে প্রত্যর্পণ বা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ২০০১ সালে ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, ২০০১’ প্রণয়ন করা হয়। ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, অর্পিত সম্পত্তি বিষয়ে প্রকাশিত গেজেটে কিছু ভুল-ত্রুটি থেকে গেছে। ক্ষেত্রভেদে কিছু প্রত্যর্পণযোগ্য সম্পত্তি প্রকাশিত গেজেট থেকে বাদ পড়ে যায়।

প্রত্যর্পণযোগ্য সম্পত্তি বাদ পড়া ও সংশোধনী তালিকার গেজেট প্রকাশের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা একাধিকবার আইন সংশোধনের মাধ্যমে বাড়িয়ে একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। আইন সংশোধনের মাধ্যমে বর্ধিত সময়সীমার মধ্যে কিছু প্রত্যর্পণযোগ্য সম্পত্তি বাদ পড়া ও সংশোধনী তালিকার গেজেট প্রকাশের বাইরে থাকে।

মন্ত্রণালয় জানায়, একাধিকবার বাদ পড়া ও সংশোধনী তালিকার গেজেট প্রকাশের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা বাড়ানো হলেও প্রায়ই ত্রুটি-বিচ্যুতির প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সংশ্লিষ্ট সেবা প্রত্যাশী ও বৈধ মালিকরা যেন অর্পিত সম্পত্তি বিষয়ক সমস্যার দ্রুত সমাধান পেতে পারেন সেজন্য আইনে আরও কিছু সংশোধনী আনতে কাজ শুরু করেছে মন্ত্রণালয়। 
 
সমস্যা সমাধানে দেওয়া হবে প্রস্তাব

ভূমি সচিব মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অর্পিত সম্পত্তি বিষয়ক চিহ্নিত সমস্যাগুলোর যথাযথ সমাধানের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হবে, যেন পরবর্তীতে আর এবিষয়ে সমস্যা দেখা না দেয়। 

চিহ্নিত সমস্যাগুলো

অর্পিত সম্পত্তি বিষয়ক পাঁচটি সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। গত ৪ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের কক্ষে ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, ২০০১ এর অধিকতর সংশোধনী’ বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১৯ জন অংশগ্রহণকারী চারটি আলাদা দলে ভাগ হয়ে অর্পিত সম্পত্তি বিষয়ক পাঁচটি সমস্যার সমাধানপ্রস্তাব তৈরি ও উপস্থাপনা করেন।

১। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইব্যুনালের বিচারক হিসেবে জেলা জজ বা অতিরিক্ত জেলা জজের কিছু সিদ্ধান্ত বা রায় আইনগত কারণে পরবর্তী আপিলের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

২। প্রকাশিত প্রত্যর্পণযোগ্য সম্পত্তির তালিকায় কিছু ভুল হওয়া এবং কিছু সম্পত্তি বাদ পড়ে যাওয়ায় জনস্বার্থে প্রকাশিত তালিকার সংশোধনী এবং বাদ পড়া সম্পত্তির তালিকা প্রকাশের প্রয়োজন রয়েছে। এ ধরনের সংশোধন ও তালিকা প্রকাশের সময়সীমা ২০১৪ সালে শেষ হয়েছে।

৩। প্রত্যর্পণযোগ্য সম্পত্তিতে আইনের ধারা ১০-এর বিধান মোতাবেক দাবিদাররা দাবির আইনগত সময়সীমা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর এবং সংশোধনী তালিকার ক্ষেত্রে ২০১৪ সালে শেষ হয়েছে। এক্ষেত্রে অনেক দাবিদার দাবি করতে পারছে না।

৪। এ আইনের ধারা ১৮-এর উপধারা ৪ অনুযায়ী, সিদ্ধান্ত বা রায় দেওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে আপিলের বিধান রয়েছে। এক্ষেত্রে দেরিতে রায়ের কপি বা আদেশের সার্টিফায়েড কপি দেওয়ার কারণে আইন অনুযায়ী ৪৫ দিনের মধ্যে আপিল করা সম্ভব হয়ে উঠে না।

৫। এ আইনের ধারা ২৬-এর বিধান অনুযায়ী, অদাবি করা এবং দাবি অপ্রমাণিত সম্পত্তিকে ‘সরকারি সম্পত্তি’ বলা হয়েছে। কিন্তু ওই সরকারি সম্পত্তির রেকর্ড সংশোধন ও নিষ্পত্তির বিষয়ে স্পষ্ট বিধান নেই।

ধারা ২৬-এর উপ-ধারা ১-এ বলা হয়, ‘এই আইনের অধীন আবেদনের জন্য নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে আবেদন করা না হলে বা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আপিল দায়ের করা না হলে বা আপিলে দাবি প্রমাণিত না হলে সংশ্লিষ্ট অর্পিত সম্পত্তি সরকারি সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হবে।’
 
উপ-ধারা ২-এ বলা হয়, ‘উপ-ধারা ১-এ বর্ণিত সরকারি সম্পত্তি সরকার বিক্রয় বা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তর বা সরকারের বিবেচনামতে যেকোনোভাবে ব্যবহার বা নিষ্পত্তি করতে পারবে।’

সমস্যা সমাধানে আনা হবে আইনে সংশোধন

ভূমি মন্ত্রণালয়ের আইন শাখার অতিরিক্ত সচিব মুহাম্মদ সালেহউদ্দীন বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে একটি কর্মশালা করেছিলাম। মাঠ পর্যায়ে যেসব সমস্যা তৈরি হয়েছে, সেসব সমস্যা নিয়ে ওই কর্মশালায় মতামত তুলে ধরা হয় এবং পরামর্শ দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখান থেকে নিয়মকানুন বা পরিপত্র দেই। বাস্তবায়ন করেন এসিল্যান্ড, ইউএনও ও ডিসিরা। তারাই সমস্যাগুলো ফেস করে। এ ধরণের পাঁচটি সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব সমস্যার সমাধানের জন্য পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। সেসব নিয়ে আমরা সচিবসহ সিদ্ধান্ত নেব। মূল কথা সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আইনটি সংশোধন করা হবে।’

এক্সক্লুসিভ বিভাগের আরো খবর
যারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিয়ে করতে চান, তাদের যে বিষয়গুলো জেনে রাখা দরকার

যারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিয়ে করতে চান, তাদের যে বিষয়গুলো জেনে রাখা দরকার

নিরাপদ বিনিয়োগের অপর নাম সঞ্চয়পত্র, কোনটি কিনতে কী কাগজপত্র লাগে

নিরাপদ বিনিয়োগের অপর নাম সঞ্চয়পত্র, কোনটি কিনতে কী কাগজপত্র লাগে

ঢাকা শহরে সব কাজই করেন মেয়র, এমপির কাজটা কী

ঢাকা শহরে সব কাজই করেন মেয়র, এমপির কাজটা কী

নতুন আয়কর আইনে একগুচ্ছ পরিবর্তন

নতুন আয়কর আইনে একগুচ্ছ পরিবর্তন

দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে আর ভোগান্তি থাকবে না

দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে আর ভোগান্তি থাকবে না

ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানতকারীদের আয়কর রিটার্ন নিয়ে যা জানা জরুরী

ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানতকারীদের আয়কর রিটার্ন নিয়ে যা জানা জরুরী