ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় বাংলাদেশের নীরব সর্বনাশ হতে পারে


গো নিউজ২৪ | নিজস্ব প্রতিনিধি প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২০, ০৭:০৬ পিএম
করোনায় বাংলাদেশের নীরব সর্বনাশ হতে পারে

সবচেয়ে বেশি করোনা সংক্রমিত দেশগুলোর তালিকায় ১৫ নম্বরে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। যে ইতালি নিয়ে এত হইচই হচ্ছিল, সেই ইতালিকে হটিয়ে বাংলাদেশ ১৫ তম স্থান দখল করে নিয়েছে এবং সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে তাতে আগামীতে বাংলাদেশ যে শীর্ষ দশে যাবেনা তা হলফ করে কেউ বলতে পারে না। যদিও বাংলাদেশে করোনা নিয়ে তেমন কোন আতঙ্ক নেই, দুশ্চিন্তাও আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে।

মানুষ করোনাকে এখন আর আগের মতো পাত্তা দিচ্ছে না। বরং জীবীকার প্রয়োজনে সবকিছু স্বাভাবিক করার জন্যে সরকার একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে। আগে যেমন সীমিত আকার অফিস-আদালত চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, সেখান থেকে সরকার সরে এসেছে। সরকারি অফিসগুলো সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত চালু রাখার নির্দেশনা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দেওয়া হয়েছে। আদালত খুলে দেওয়া হয়েছে এবং উচ্চ আদালতও খুলে যাচ্ছে। শুধুমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়া সমস্ত কর্মকাণ্ডই স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পর্যটন শিল্পগুলো বাঁচানোর জন্যে কক্সবাজারের হোটেল-মোটেলগুলো চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের এই সিদ্ধান্তগুলোর পেছনে সবথেকে বড় কারন হিসেবে কাজ করেছে করোনায় মৃত্যুহার, যা এখন পর্যন্ত অত্যন্ত কম। এখন পর্যন্ত ১ দশমিক ৩- এর কাছাকাছি হারে করোনায় মানুষ মারা গেছে। এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যুবরণ করলেন ৩৩৩৩ জন।

করোনাকে স্বাভাবিকভাবে নেওয়ার ক্ষেত্রে আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে সুস্থতার হার বেশি। যারা আক্রান্ত হচ্ছে তাঁদের মধ্যে প্রায় ৫৭ ভাগ মানুষ ইতিমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। ফলে মানুষ এটাকে আর ৮-১০ টা রোগের মতোই মনে করছে। প্রথমে যেমন মনে করা হচ্ছিল যে, হাসপাতালগুলোর উপরেচাপ পরবে, এখন সেই অবস্থারও পরিবর্তন হয়েছে। মানুষের হাসপাতাল নির্ভরতাও কমে গেছে। এখন মানুষ আক্রান্ত হলে বাসাতেই চিকিৎসা নিচ্ছে। যদিও বাসাতেও মৃত্যু হচ্ছে, যদিও বা সেই হার উদ্বেগজনক নয়।

ফলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং সরকার মনে করছে যে, করোনাকে সঙ্গে নিয়েই বসবাসের নীতিতে এগোতে হবে এবং করোনার থেকে অর্থনৈতিক দিককে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে। কিন্তু এরকম সিদ্ধান্তে যেমন ইতিবাচক দিক রয়েছে, তেমনি এর কিছু ঝুঁকিও রয়েছে বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞরা। এর ফলে বাংলাদেশের নীরব সর্বনাশ হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। যেসব ক্ষেত্রে এই সর্বনাশগুলো হতে পারে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-

আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্নতা

ইতিমধ্যেই জাপান, ইতালি, কুয়েতসহ বেশকিছু দেশ বাংলাদেশিদের ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বাংলাদেশে যদি দীর্ঘমেয়াদে করোনা থাকে এবং সারাবিশ্ব যদি করোনাকে প্রতিরোধ করতে পারে তাহলে বাংলাদেশের জন্যে সারাবিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা কঠিন হয়ে পড়বে, বাংলাদেশ সারাবিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে। এটা বাংলাদেশের অভিবাসনসহ আমাদের অর্থনীতির উপরে একটি ভয়ংকর প্রভাব ফেলতে পারে।

যেকোন সময় পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে

যদিও বলা হচ্ছে যে, বিশেষজ্ঞদের ভবিষ্যত বানী ভুল প্রমাণিত হয়েছে, কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, তাঁদের ভবিষ্যত বানী সঠিক না ভুল তা এখন পর্যন্ত বলার সময় হয়নি। কারণ বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি বোঝার মতো পরিস্থিতি এখনো হয়নি। কারণ বাংলাদেশে যে পরীক্ষা হয়েছে সেই পরীক্ষার হার অত্যন্ত কম এবং ১৭ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশের জন্য এই পরীক্ষা খুবই কম। এখন পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে এই কারণে যে, আসলে পরিস্থিতি কি তা বোঝার জন্যে যে পরিমাণ পরীক্ষা দৈনিক হওয়ার কথা সেই পরিমাণ পরীক্ষাও হচ্ছে না। ফলে আমাদের হঠাত করেই পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে।

জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি

দীর্ঘমেয়াদী করোনা বাংলাদেশে থাকলে সেটা আমাদের জনস্বাস্থ্যের জন্যে একটি বড় হুমকি হবে। কারণ করোনার চিকিৎসার জন্যে অন্যান্য চিকিৎসা গুলো যেমন ব্যহত হবে, তেমনি মানুষের স্বাস্থ্যগত নানা সমস্যা জটিল হবে। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা চালানো কঠিন হয়ে যাবে এবং সামগ্রিক ভাবে একটি জনস্বাস্থ্য হুমকিতে পড়তে পারে দেশ।

ভ্যাকসিন বিতর্ক

করোনা সঙ্কট দীর্ঘমেয়াদী হলে আমাদের ভ্যাকসিনের উপর নির্ভরশীল হতে হবে এবং সেই ভ্যাকসিন আসলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে পাবো কিনা বা কোথা থেকে পাবো ইত্যাদি বিতর্কের সঙ্গে বাংলাদেশ জড়িয়ে পড়েছে। ফলে এখন মৃত্যুহার কম এবং সুস্থতা বেশি হলেও যদি আমরা ভবিষ্যতে ভ্যাকসিন না পাই তাহলে আমাদের পরিস্থিতি কি হবে তা সহজেই অনুমেয়।

আর এই সমস্ত বাস্তবতার কারণে করোনা দীর্ঘমেয়াদী থাকায় আমাদের নীরব সর্বনাশ হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে এবং এই উপেক্ষার মাশুল হয়তো বাংলাদেশকে দিতে হতে পারে। তবে সেটা নির্ভর করছে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি কতদিন থাকে, কিভাবে থাকে এবং করোনার ভয়াবহতা কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয় তার উপরে।

গোনিউজ২৪

এক্সক্লুসিভ বিভাগের আরো খবর
যারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিয়ে করতে চান, তাদের যে বিষয়গুলো জেনে রাখা দরকার

যারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিয়ে করতে চান, তাদের যে বিষয়গুলো জেনে রাখা দরকার

নিরাপদ বিনিয়োগের অপর নাম সঞ্চয়পত্র, কোনটি কিনতে কী কাগজপত্র লাগে

নিরাপদ বিনিয়োগের অপর নাম সঞ্চয়পত্র, কোনটি কিনতে কী কাগজপত্র লাগে

ঢাকা শহরে সব কাজই করেন মেয়র, এমপির কাজটা কী

ঢাকা শহরে সব কাজই করেন মেয়র, এমপির কাজটা কী

নতুন আয়কর আইনে একগুচ্ছ পরিবর্তন

নতুন আয়কর আইনে একগুচ্ছ পরিবর্তন

দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে আর ভোগান্তি থাকবে না

দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে আর ভোগান্তি থাকবে না

ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানতকারীদের আয়কর রিটার্ন নিয়ে যা জানা জরুরী

ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানতকারীদের আয়কর রিটার্ন নিয়ে যা জানা জরুরী