ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে ১৭ বানান ভুল!


গো নিউজ২৪ | নিজস্ব প্রতিবেদন: প্রকাশিত: জুলাই ৮, ২০২০, ০৫:২৬ পিএম আপডেট: জুলাই ৮, ২০২০, ১১:২৬ এএম
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে ১৭ বানান ভুল!

রিজেন্ট হাসপাতাল বন্ধ করার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গতকাল দেশের গণমাধ্যমগুলোতে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠায়। বাংলা-ইংরেজি শব্দ মিলিয়ে পুরো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি ১০ লাইনের। এই ১০ লাইনের বিজ্ঞপ্তিতে বানান ও বাক্যে অসংগতিসহ মোট ১৭টি ভুল পাওয়া গেছে। যিনি স্বাক্ষর করেছেন, তার নাম-পরিচয়েও রয়েছে ভুল বানান।

অভিযানের একদিন পর গতকাল মঙ্গলবার হাসপাতালের শাখা দুটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বন্ধ করার বিষয়টি জানাতে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

বিজ্ঞপ্তির প্রথম বাক্যটি হচ্ছে, ‘রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেড, উত্তরা এবং রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেড, মিরপুর ঢাকা (উভয় বেসরকারী হাসপাতাল), মার্চ/ ২০২০ থেকে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছিল।’ এই বাক্যে ‘বেসরকারী’ শব্দটি ভুল। এটি হবে ‘বেসরকারি’।

দ্বিতীয় বাক্য, ‘কিন্তু গত ০৬-০৭-২০২০ খ্রি. তারিখে র‌্যাব এর অভিযানে (মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকালে) রিজেন্ট হাসপাতাল লিঃ, উত্তরা শাখায় (মূল শাখা) বিভিন্ন অনিয়ম ধরা পড়ে, যা বিভিন্ন ইলেকট্রিক মিডিয়া এবং দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।’ এই বাক্যে ‘র‌্যাব এর’ বলা হলেও এটি হবে ‘র‌্যাবের’। অর্থাৎ ‘এর’ আলাদা করে বসবে না। আর লিমিটেডের সংক্ষিপ্ত রূপ কখনোই ‘লিঃ’ নয়, বরং ‘লি.’। এই বাক্যে গুরুতর ভুলটি হচ্ছে ‘ইলেকট্রনিক’ লিখতে গিয়ে লেখা হয়েছে ‘ইলেকট্রিক’।

আবার শব্দের শুরুতে এ-কারে কোনো মাত্রা হবে না। কিন্তু ‘মোবাইল’ শব্দটিতে মাত্রা দেওয়া হয়েছে। বানান ভুলের পাশাপাশি বাক্য গঠনেও ভুল রয়েছে। যেমন- পত্রিকায় প্রকাশের ব্যাপার থাকলেও টেলিভিশন চ্যানেলে তা হয় প্রচার। বিজ্ঞপ্তিতে উভয় ক্ষেত্রেই প্রকাশ বলা হয়েছে।

এরপর তৃতীয় বাক্য। ‘প্রকাশিত সংবাদে দেখা যায় উক্ত হাসপাতাল দুটি রোগীদের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে বিরাট অংকের টাকা আদায় করছে।’ এখানে ‘অংক’ বানানটি ভুল, হবে ‘অঙ্ক’। আর হাসপাতাল যেহেতু সোমবার থেকেই বন্ধ, ফলে ঘটমান বর্তমান ‘আদায় করছে’র পরিবর্তে হবে পুরাঘটিত বর্তমান ‘আদায় করেছে’।

চতুর্থটি বাক্যে বলা হয়েছে, ‘অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও RT-PCR পরীক্ষার নামে ভুয়া রিপোর্ট প্রদান করে টাকা হাতিয়ে নেয়া, তাগিদ প্রদান করা সত্ত্বেও লাইসেন্স নবায়ন না করাসহ আরো অনিয়ম করছে বলে প্রমানিত হয়।’ এই বাক্যে তিনটি ভুল। প্রথম ভুলটি হচ্ছে ‘নেয়া’। বোঝা যাচ্ছে বিজ্ঞপ্তিতে ‘নেওয়া’ অর্থে ‘নেয়া’ উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু বাংলা একাডেমির আধুনিক বাংলা অভিধান ঘেঁটে দেখা গেছে, অভিধানে ‘নেয়া’ বলতে কোনো শব্দই নেই।

বাক্যের পরের ভুলটি হচ্ছে ‘আরো’। অথচ শুদ্ধ বানান হচ্ছে ‘আরও’। বাংলা একাডেমির অভিধানে বলা হয়েছে, ‘আরো’-র সংগততর বানান হচ্ছে ‘আরও’। ব্যাকরণ অনুযায়ী ক্রিয়া বিশেষণের শেষে ব্যবহৃত অধিকন্তু অর্থে ‘ও’ বানানে ও-কার না হয়ে ‘ও’ বর্ণরূপে ব্যবহার করাই শ্রেয়। নইলে ‘আজ এসেছি, কালও আসব’ হয়ে যাবে ‘আজ এসেছি, কালো আসব।’ এদিকে ‘প্রমানিত’ বলেও কোনো শব্দ পাওয়া যায়নি অভিধানে। শব্দটি হবে ‘প্রমাণিত’।

শেষ বাক্যে রয়েছে, ‘উল্লেখিত অনিয়মের কারনে এবং The Medical Pactice & Private Clinic & Laboratories Regalation Ordinance-1982 অনুযায়ী হাসপাতালের কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশ প্রদান করা হলো।’ এই বাক্যে ‘উল্লেখিত’ শব্দটি ভুল। বাংলা একাডেমির অভিধানে আছে ‘উল্লিখিত’, যা আগে উল্লেখ করা হয়েছে অর্থে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া ‘কারণ’কে বিনা কারণে বলা হয়েছে ‘কারন’। বাক্যটিতে একদিকে অধ্যাদেশটির নাম শুদ্ধভাবে উল্লেখ করা হয়নি, অন্যদিকে ভুল করে ‘Practice’-এর বদলে ‘Pactice’ এবং ‘Regulation’-এর বদলে ‘Regalation’ শব্দ লেখা হয়েছে। অধ্যাদেশটির প্রকৃত নাম হচ্ছে, ‘The Medical Practice and Private Clinics and Laboratories (Regulation) Ordinance-1982’. আইনের নাম হুবহু লেখার নিয়ম থাকলেও ‘and’-এর পরিবর্তে দুবার লেখা হয়েছে ‘&’।

মূল বিজ্ঞপ্তি শেষ। এবার বিজ্ঞপ্তির নিচের দিকে ডান পাশে স্বাক্ষরদাতার নাম-পরিচয় প্রসঙ্গ। লেখা রয়েছে, ‘(ডাঃ মোঃ আমিনুল হাসান), পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক সমূহ)। ‘ডাঃ’ এবং ‘মোঃ’—দুটিই ভুল। কারণ, বিসর্গ (ঃ) দিয়ে লেখা হয়েছে। বিসর্গ নিজেই একটি বর্ণ। যেমন: তিন বর্ণ দিয়ে লেখা হয় ‘দুঃখ’ শব্দ। সংক্ষেপণ চিহ্ন হিসেবে অক্ষরের ডান পাশে নিম্নভাগে বিন্দুচিহ্ন বা ইংরেজি ফুলস্টপ (.) ব্যবহার করতে হয়। প্রকৃতপক্ষে ডাক্তার হবে ‘ডা.’ এবং মোহাম্মদ হবে ‘মো.’।

আর ক্লিনিকসমূহ এক শব্দ হলেও করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেন ‘সমূহ’কে একটু দূরেই ঠেলে দেওয়া হয়েছে। পুরো বিজ্ঞপ্তির শেষ লাইনটি অবশ্য শুদ্ধভাবে লেখা হয়েছে। সেটি হচ্ছে, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মহাখালী, ঢাকা-১২১২।’

গো নিউজ২৪/আই

এক্সক্লুসিভ বিভাগের আরো খবর
যারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিয়ে করতে চান, তাদের যে বিষয়গুলো জেনে রাখা দরকার

যারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিয়ে করতে চান, তাদের যে বিষয়গুলো জেনে রাখা দরকার

নিরাপদ বিনিয়োগের অপর নাম সঞ্চয়পত্র, কোনটি কিনতে কী কাগজপত্র লাগে

নিরাপদ বিনিয়োগের অপর নাম সঞ্চয়পত্র, কোনটি কিনতে কী কাগজপত্র লাগে

ঢাকা শহরে সব কাজই করেন মেয়র, এমপির কাজটা কী

ঢাকা শহরে সব কাজই করেন মেয়র, এমপির কাজটা কী

নতুন আয়কর আইনে একগুচ্ছ পরিবর্তন

নতুন আয়কর আইনে একগুচ্ছ পরিবর্তন

দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে আর ভোগান্তি থাকবে না

দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে আর ভোগান্তি থাকবে না

ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানতকারীদের আয়কর রিটার্ন নিয়ে যা জানা জরুরী

ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানতকারীদের আয়কর রিটার্ন নিয়ে যা জানা জরুরী