ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

করোনার থাবায় তছনছ চট্টগ্রামের ক্যাফে জামান পরিবার


গো নিউজ২৪ | নিজস্ব প্রতিবেদন: প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২০, ০৪:১৩ পিএম আপডেট: জুন ২৮, ২০২০, ১০:১৩ এএম
করোনার থাবায় তছনছ চট্টগ্রামের ক্যাফে জামান পরিবার

মাত্র ৬ মাসের ব্যবধানে চলে গেলেন সহোদর তিন ভাই- এর মধ্যে দুই ভাই মাত্র একদিনের ব্যবধানে। এমন ট্রাজিক মুহূর্ত অপেক্ষা করছিল যাদের জন্য, সেই তিনজনের হাতেই তিল তিল শ্রমে গড়ে উঠেছিল চট্টগ্রামের নামি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্যাফে জামান বা হোটেল জামান। 

গত ২ জানুয়ারি প্রথমে মারা যান মেজ ভাই মোহাম্মদ জামান। ক্যান্সারে এই ভাইটি মারা যাওয়ার পর জামান পরিবারে এলো করোনার থাবা। করোনার কাছে হেরে মাত্র একদিনের ব্যবধানে মারা গেলেন বাকি দুই ভাই- ২১ জুন প্রথমে ছোট ভাই নুরুজ্জামান এবং ২৩ জুন বড় ভাই মালেকুজ্জামান। জামান পরিবারে ৮৫ বছরের একটি অধ্যায় এভাবেই শেষ হয়ে গেল।

ছোট ভাই নুরুজ্জামানের মৃত্যুর একদিন পর বড় ভাই মালেকুজ্জামানেরও মৃত্যু হয় করোনায়। কিন্তু তাদের একে অপরের বাসার দূরত্ব অনেক। ছোট ভাই নুরুজ্জামান লালখানবাজার বাঘঘোনার জামান ভবনের বাসিন্দা। অন্যদিকে বড় ভাই মালেকুজ্জামানের বাসা দক্ষিণ খুলশী মুরগির ফার্ম এলাকায় জামান ভবনে। ঘটনাক্রমে দুই ভাইকে একই দিন নিয়ে যাওয়া হয়েছিল চট্টগ্রাম নগরীর একটি হাসপাতালে। তখন তাদের মুখে ছিল অক্সিজেন লাগানো। দুই ভাই একে অপরকে দেখেছেন। কিন্তু কথা বলতে পারেননি। কারণ তখন দুজনেই ছিলেন করোনা আক্রান্ত।

এর আগে গত ২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগরীর আল ফালাহ গলির নিজ বাসভবনে মারা যান মেজ ভাই মোহাম্মদ জামান। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী হোটেল জামান অ্যান্ড বিরানী হাউসের প্রতিষ্ঠাতা ও স্বত্ত্বাধিকারী ছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। দুই ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে গেছেন তিনি।

জামান পরিবারে এরপর এলো করোনার থাবা। টানা ১৭ দিন করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়ে গত ২১ জুন ঢাকা আজগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ক্যাফে জামানের মালিক নুরুজ্জামান (৬৫)। তিনি ছিলেন ভাইদের মধ্যে সবার ছোট।

অন্যদিকে এর মাত্র মাত্র একদিন পর ২৩ জুন চট্টগ্রামের সার্জিস্কোপ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮৫ বছর বয়সে মারা যান হোটেল জামানের আরেক মালিক মালেকুজ্জামান। পরিবারে তিনি ছিলেন সবার বড়।

এমন একটি পরিবারে কীভাবে ঢুকলো করোনার বিষ, যার কবলে পড়ে পরিবারের সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ দুজন সদস্য মাত্র একদিনের ব্যবধানে পৃথিবী ছেড়ে যেতে হল- এ প্রশ্ন বাইরে যেমন, পরিবারের ভেতরেও সবাইকে ভাবাচ্ছে।

জামান পরিবারে বিভিন্নজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকার পরও বড় ভাই মালেকুজ্জামান নিয়মিত বাজারে যেতেন। বাজার থেকেই করোনার সংক্রমণ হয়েছে বলে ধারণা করছেন তার মেজ ছেলে সেলিম জামান। তিনি বলেন, বাবা নিয়মিত বাজার করতে যেতেন। মসজিদেও যাওয়া-আসা ছিল তার। এই দুই জায়গা থেকে আমাদের ঘরে করোনা ঢুকে থাকতে পারে।

বাবার পর সেলিম জামানের বড় ভাই সেকান্দর জামান ও তার মেয়ে এবং ছোট ভাই মামুন জামানও করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। আক্ষেপ করে তিনি বললেন, এই ভাইরাস আমাদের জীবনকে ধ্বংস করে দিয়েছে।

সেলিম জামান বলেন, বাবার একটু জ্বর হয়েছিল রমজানের শেষের দিকে। একসময় জ্বর কমেও যায়। কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ হচ্ছিলেন না তিনি। ঈদের পর করোনা পরীক্ষা করিয়ে দেখি পজিটিভ এসেছে। তখন নগরীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সেখান থেকে একটু সুস্থ হওয়ার পর তাকে বাসায় নিয়ে আসি। কিছুদিন পর হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তার। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে তাকে আবার হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে প্রায় এক সপ্তাহ থাকার পর অবস্থা যখন আরও খারাপ হতে থাকে, তখন আইসিইউ সাপোর্ট নিয়ে বাবাকে সার্জিস্কোপে ভর্তি করাই। ওখানে ৬ দিন থাকার পর আবার বাসায় নিয়ে আসি।

তিনি বলেন, সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল। বাবাকে সুস্থ মনে করে আমরাও বাসায় আনতে দ্বিধা করিনি। কিন্তু ২৩ জুন আবার শ্বাসকষ্ট শুরু হয় বাবার। তখন তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু তখন আর আমরা আইসিইউ পেলাম না। ফলে বাবাকে আর রাখতে পারলাম না। সেদিনই মারা গেলেন তিনি।

চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ খুলশী মুরগির ফার্ম এলাকায় জামান ভবনে বসবাস করে পরিবারের বড় সন্তান মালেকুজ্জামানের পরিবার। মালেকুজ্জামানের পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ে। এরা হলেন সেকান্দর জামান, সেলিম জামান, আলমগীর জামান, খোকন জামান, মামুন জামান এবং মেয়ে বেবী জামান।

মেজ ভাই মোহাম্মদ জামানের পরিবারের বসবাস নগরীর আল ফালাহ গলির জামান ভবনে। তার দুই ছেলে ও তিন মেয়ে। এরা হলেন কায়সার জামান, ছোটন জামান, মেয়ে রোখসানা পারভীন, সাবিনা ইয়াসমিন ও রেহেনা পারভীন মুন্নি।

অন্যদিকে ছোট ভাই নুরুজ্জামান লালখানবাজার বাঘঘোনার জামান ভবনের বাসিন্দা। তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। তারা হচ্ছেন সাকিলা জামান রুবী, সালমা জামান রুণী, সাহেদ জামান ও সাজিদ জামান। 

লালখানবাজার বাঘঘোনার বাসিন্দা নুরুজ্জামানের ছেলে সাহেদ জামান বলেন, ‘ঈদের দিন বাসার পাশে একজন করোনা রোগী মারা যান। তার জানাজায় গিয়েছিলেন বাবা। আমাদের ধারণা, সেখান থেকেই আমাদের বাসায় হানা দিয়েছে করোনা। এখন আমার ছোট ভাই সাজিদ জামান ছাড়া আমরা সব ভাইবোন করোনা পজিটিভ।’

তিনি বলেন, ‘বাবা যদি ওই করোনা রোগীর জানাজায় না যেতেন তাহলে হয়তো আমরা বেঁচে যেতাম। বাবাও জানতেন না ওই লোক করোনা আক্রান্ত ছিলেন। জানাজা শেষে দাফনের পর জানতে পারেন ওই লোক করোনা পজিটিভ ছিলেন। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ হয়ে গেছে। বাবার পরপর আমরাও করোনায় আক্রান্ত হই। এখন ঘরেই আমাদের চিকিৎসা চলছে।’

মৃত্যুর পর দুই ভাইকে গ্রামের বাড়ি রাউজানের কোতোয়ালী ঘোনার কাসেম ফকির বাড়ির একই কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে জানুয়ারিতে মৃত্যুবরণ করা মেজ ভাইকে দাফন করা হয়েছিল চট্টগ্রাম নগরীর চশমা হিল কবরস্থানে।

সূত্র: চট্টগ্রাম প্রতিদিন

গো নিউজ২৪/আই

এক্সক্লুসিভ বিভাগের আরো খবর
যারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিয়ে করতে চান, তাদের যে বিষয়গুলো জেনে রাখা দরকার

যারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিয়ে করতে চান, তাদের যে বিষয়গুলো জেনে রাখা দরকার

নিরাপদ বিনিয়োগের অপর নাম সঞ্চয়পত্র, কোনটি কিনতে কী কাগজপত্র লাগে

নিরাপদ বিনিয়োগের অপর নাম সঞ্চয়পত্র, কোনটি কিনতে কী কাগজপত্র লাগে

ঢাকা শহরে সব কাজই করেন মেয়র, এমপির কাজটা কী

ঢাকা শহরে সব কাজই করেন মেয়র, এমপির কাজটা কী

নতুন আয়কর আইনে একগুচ্ছ পরিবর্তন

নতুন আয়কর আইনে একগুচ্ছ পরিবর্তন

দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে আর ভোগান্তি থাকবে না

দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে আর ভোগান্তি থাকবে না

ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানতকারীদের আয়কর রিটার্ন নিয়ে যা জানা জরুরী

ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানতকারীদের আয়কর রিটার্ন নিয়ে যা জানা জরুরী