ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতের বৈধ নাগরিক হওয়ার চেয়ে বাংলাদেশে ‘উইপোকা’ হওয়া বেশি আকর্ষণীয়


গো নিউজ২৪ | নিউজ ডেস্ক: প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২০, ০৪:১৪ পিএম
ভারতের বৈধ নাগরিক হওয়ার চেয়ে বাংলাদেশে ‘উইপোকা’ হওয়া বেশি আকর্ষণীয়

সম্প্রতি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুত। অনেকের মতে বিষয়টি শুধুই মুখের বুলি, তবে বাস্তবতা বলছে সত্যিই এই প্রবৃদ্ধি অর্জন ও উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে এরইমধ্যে বিশ্বের অনেক দেশের কাছে রোল মডেল হয়ে উঠেছে লাল-সবুজের দেশটি। এমনকি প্রতিবেশী ভারতের চেয়েও অনেক ক্ষেত্রেই এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। তারপরও সম্প্রতি ভারতীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী দাবি করেছেন, নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি দেয়া হলে বাংলাদেশের অর্ধেক মানুষ ভারতে চলে যাবে।

এমন মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন ভারতের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, টিভি উপস্থাপক ও লেখক করণ থাপর। এ বিষয়ে শনিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসে প্রকাশিত তার লেখাটি তুলে ধরা হলো-

‘সত্যি বলতে আমি দোষ দেই হেনরি কিসিঞ্জারকে। ১৯৭০-এর দশকে তিনি বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুঁড়ি’ বলেছিলেন। ওই সময় (বাংলাদেশ) সেটা ছিল, এতে কোনও সন্দেহ নেই। টেলিভিশনে একের পর এক বন্যার ছবি এ চরিত্রায়নেরই নিশ্চয়তা দেয়। সুতরাং ওই বর্ণনা থাকছেই।

আজ বাংলাদেশ অন্যরকম এক দেশ। বিশ্ব তাদের মতামত ধীরে বদলাতে পারে- যদিও আমি তা নিশ্চিত নই- কিন্তু ভারতে আমাদের ৭০-এর দশকে আটকে রাখার কোনও অধিকার নেই। তবুও, আমাদের জুনিয়র স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গত সপ্তাহেই এটা প্রকাশ করেছেন।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিষান রেড্ডি বলেছেন, ‘ভারত নাগরিকত্বের প্রস্তাব দিলে বাংলাদেশের অর্ধেক খালি হয়ে যাবে। নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি দিলে অর্ধেক বাংলাদেশি ভারতে চলে আসবে।’ এছাড়া তিনি ছিলেন অত্যন্ত কূটনীতিবিরোধী ও আক্রমণাত্মক। রেড্ডি এটাও প্রকাশ করেছেন যে, তিনি বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে জানেন না। সবচেয়ে বাজে বিষয় হচ্ছে তিনি জানেন না যে, ভারতের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রেই ভালো করছে; অন্তত জীবনযাত্রার মানের দিক থেকে তো বটেই।

প্রথমত, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি যে হারে হচ্ছে, আমরা ভারতে তা নিয়ে শুধু হিংসাই করতে পারি। আর এটুকু আশা করতে পারি যে, আগামী দুই-তিন বছর পর হয়তো সেটা অর্জন করতে পারবো। (প্রবৃদ্ধিতে) আমরা যেখানে পাঁচ শতাংশের নিচে নেমে গেছি, বাংলাদেশ সেখানে আট শতাংশের দৌড়ে আছে।

দ্বিতীয়ত, নির্মলা সীতারমণ (ভারতীয় অর্থমন্ত্রী) ১৫ শতাংশ করপোরেট ট্যাক্সের প্রস্তাব দিয়ে চীন থেকে বের হওয়া বিনিয়োগ আকর্ষণে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছেন। কিন্তু প্রকৃপক্ষে বাংলাদেশ হচ্ছে সেই দুটি দেশের একটি, যেখানে বিনিয়োগগুলো আসলেই যাচ্ছে।

ফলস্বরূপ, লন্ডন-নিউইয়র্কের রাস্তাগুলো এখন বাংলাদেশের তৈরি পোশাকে ভরে আছে। কিন্তু সেখানে লুধিয়ানা-তিরপুরে তৈরি পোশাক খুবই কম। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে ২০১৯ আর্থিক বছরে বাংলাদেশের পণ্য রফতানি ডাবল ডিজিটে বৃদ্ধি পেয়েছে, সেখানে ভারতেরটা দ্রুত কমছে।

যাই হোক, অর্থনৈতিক কার্যক্রম হচ্ছে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বর্ধমান পার্থক্যের মাত্র একটা অংশ। অন্যটির গল্প আরও বড়। বলতে গেলে, বাংলাদেশের জীবনযাত্রা ভারতের চেয়ে অনেক বেশি আকর্ষণীয় দেখা যায়।

বিষয়গুলোর দিকে লক্ষ্য করুন। বাংলাদেশে পুরুষ ও নারীর প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল হচ্ছে ৭১ ও ৭৪। ভারতে এর অবস্থা ৬৭ ও ৭০। এই চিত্র বিশ্লেষণ করলে পার্থক্যটি আরও মারাত্মক হয়ে ওঠে।

প্রথমে শিশুদের কথা। ভারতে প্রতি ১০ হাজার জন্মের মধ্যে নবজাতকের মৃত্যুর হার ২২ দশমিক ৭৩; এটি বাংলাদেশে ১৭ দশমিক ১২। বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুর হার ২৫ দশমিক ১৪-এর তুলনায় ভারতে ২৯ দশমিক ৯৪। আমাদের পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুহার ৩৮ দশমিক ৬৯; তাদের ৩০ দশমিক ১৬।

এবার নারীরা। বাংলাদেশে ১৫ বছরের বেশি বয়সের ৭১ শতাংশ নারী শিক্ষিত, ভারতে তা ৬৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। বাংলাদেশে নারী শ্রমিকের হার ৩০ শতাংশ এবং দিন দিন তা আরও বাড়ছে; আর আমাদের ২৩ শতাংশ, যা গত এক দশকে আট শতাংশ কমে গেছে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন যখন বলেন, ‘কিছু ভারতীয় নাগরিক অর্থনৈতিক কারণে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।’ তিনি সম্ভবত ঠিক। মানুষ জীবনে উন্নতির জন্যই অভিবাসিত হয়, আর বাংলাদেশের জীবনযাত্রা নিশ্চিতভাবে আরও ভালো বলেই মনে হয়

সবশেষে, ছেলে-মেয়েদের হাইস্কুলে ভর্তির অনুপাত, যা থেকে ভবিষ্যৎ উন্নয়নের ধারণা পাওয়া যায়। এটি ভারতে শূন্য দশমিক ৯৪, আর বাংলাদেশে ১ দশমিক ১৪। সীমান্তের ওপারের জিনিস শুধু ভালোই নয়, তারা আরও ভালো হতে যাচ্ছে। সেখানে আমরা পিছিয়ে পড়ছি।

সুতরাং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন যখন বলেন, ‘কিছু ভারতীয় নাগরিক অর্থনৈতিক কারণে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।’ তিনি সম্ভবত ঠিক। মানুষ জীবনে উন্নতির জন্যই অভিবাসিত হয়, আর বাংলাদেশের জীবনযাত্রা নিশ্চিতভাবে আরও ভালো বলেই মনে হয়।

যদি ভারতীয় মুসলমান হিসেবে গণপিটুনির ঝুঁকিতে থাকেন, কারণ আপনি মাংসের ব্যবসা করেন; প্রেম-জিহাদে অভিযুক্ত, কারণ কোনও হিন্দুর প্রেমে পড়েছেন; অথবা আপনার নাগরিকত্ব হারানোর ভয় আছে- সেক্ষেত্রে সহজেই এই অঞ্চলে পাড়ি দিয়ে অন্য পাশে যেতে প্রলুব্ধ হতে পারেন।

এই মুহূর্তে বিপরীত দিকে যাওয়ার জন্য হয়তো খুব বেশি আগ্রহী নেই। আমি যে পরিসংখ্যানগুলো উদ্ধৃতি দিয়েছি সে অনুসারে, ভারতের বৈধ নাগরিক হওয়ার চেয়ে বাংলাদেশে ‘উইপোকা’ হওয়াই বেশি আকর্ষণীয়।

করণ থাপর: ডেভিলস অ্যাডভোকেট: দ্য আনটোল্ড স্টোরি

গো নিউজ২৪/আই

এক্সক্লুসিভ বিভাগের আরো খবর
যারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিয়ে করতে চান, তাদের যে বিষয়গুলো জেনে রাখা দরকার

যারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিয়ে করতে চান, তাদের যে বিষয়গুলো জেনে রাখা দরকার

নিরাপদ বিনিয়োগের অপর নাম সঞ্চয়পত্র, কোনটি কিনতে কী কাগজপত্র লাগে

নিরাপদ বিনিয়োগের অপর নাম সঞ্চয়পত্র, কোনটি কিনতে কী কাগজপত্র লাগে

ঢাকা শহরে সব কাজই করেন মেয়র, এমপির কাজটা কী

ঢাকা শহরে সব কাজই করেন মেয়র, এমপির কাজটা কী

নতুন আয়কর আইনে একগুচ্ছ পরিবর্তন

নতুন আয়কর আইনে একগুচ্ছ পরিবর্তন

দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে আর ভোগান্তি থাকবে না

দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে আর ভোগান্তি থাকবে না

ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানতকারীদের আয়কর রিটার্ন নিয়ে যা জানা জরুরী

ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানতকারীদের আয়কর রিটার্ন নিয়ে যা জানা জরুরী