ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রেলের এক টয়লেট মেরামতের ব্যয় ৭৩ লাখ


গো নিউজ২৪ | নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রকাশিত: জানুয়ারি ২১, ২০২০, ০৭:১৬ পিএম
রেলের এক টয়লেট মেরামতের ব্যয় ৭৩ লাখ

পশ্চিমাঞ্চল রেলের বিভিন্ন স্টেশন পরিষ্কার করতেই ৯৫ লাখ টাকার ভিম পাউডার লেগেছে। এছাড়া ছোট্ট একটি টয়লেট মেরামতে খরচ হয়েছে ২৮ লাখ টাকা। আরেকটি টয়লেট সংস্কারসহ বারান্দার টিন বদলে খরচ হয়েছে ৭৩ লাখ টাকা।

রেলের এমন শত শত কাজ টেন্ডার ছাড়াই ক্ষমতাসীন দলের তৃতীয় শ্রেণির ঠিকাদারদের দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো নিয়মই মানা হয়নি। ২০১৭ ও ২০১৮ সালে এসব দুর্নীতির নথিপত্র ফাঁস হওয়ায় পশ্চিম রেলের বর্তমান কর্মকর্তাদের মাঝে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। দুর্নীতির এ সিরিজ প্যাকেজের মোটমূল্য ৭০০ কোটি টাকা বলে জানা গেছে।

পশ্চিম রেলের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. রমজান আলী ও তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন কর্মকর্তার সিন্ডিকেট দুর্নীতির এ মহাযজ্ঞের নেতৃত্বে ছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অবিশ্বাস্য মনে হলেও বাস্তবে একটা ছোট অফিসের কয়েকটা টয়লেট মেরামতে একজন ঠিকাদারকে পরিশোধ করা হয়েছে প্রায় ২৮ লাখ টাকা। বারান্দার টিন বদল আর অফিসের টয়লেট মেরামতে আরেকজন ঠিকাদারকে দেয়া হয়েছে ৭৩ লাখ টাকার বিল।

নথিপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পশ্চিম রেলের এমন দুই থেকে আড়াই শতাধিক গায়েবি খাতে ৭০০ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে।

বিভিন্ন স্টেশন রং করা, লাইন সংস্কার, রেলসেতু রং করা, টয়লেট মেরামত, ছাউনি-প্ল্যাটফর্মের টিন বদল, স্টেশন প্রাঙ্গণ সংস্কার, ওভারব্রিজ সংস্কার, মাটি ভরাট, জেটি সংস্কার, হাঁটাপথ সংস্কার, দরজা মেরামত, শীত আর গরমের পোশাক কেনা, স্যানিটারি উপকরণ ও ভিম পাউডার কেনা, বন্যার সময় ইট-খোলা কেনা, সেতু মেরামত, বাউন্ডারি ওয়াল মেরামতের মতো ছোট ছোট কাজগুলোতে বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে।

রাজশাহীতে পশ্চিমাঞ্চল রেল ভবনে এসএসএই দফতরের বারান্দার টিন পরিবর্তন ও একটি টয়লেট সংস্কারে ৭২ লাখ ৩১ হাজার ৫০২ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, রাজশাহীতে রেলের এ দফতরটি একটি ছোট্ট টিনশেড অফিস।

২০১৭ সালের ৭ জুলাই এ কাজটির কার্যাদেশ দেয়া হয় মোমিন ট্রেডার্স নামের একটি তৃতীয় শ্রেণির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। বিধিবদ্ধ দরপত্র আহ্বান ছাড়াই লোকাল টেন্ডার মেথড (এলটিএম) বা স্থানীয় টেন্ডার পদ্ধতিতে কোনো প্রতিযোগিতা ছাড়াই মোমিন ট্রেডার্স কাজটি পায়। কাজ সম্পাদন দেখিয়ে ওই বছরের ১ অক্টোবর ঠিকাদারকে পুরো বিল পরিশোধ করা হয়।

নথিপত্র বিশ্লেষণ করে আরও দেখা যায়, পশ্চিম রেলের প্রধান টেলিযোগাযোগ ও সংকেত বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীর দফতরের টয়লেট মেরামতে ব্যয় দেখানো হয়েছে ২৮ লাখ টাকা। এ কাজটি করেছে তৃতীয় শ্রেণির ঠিকাদার তোফা কন্সট্রাকশন।

রাজশাহীতে রেল অফিসার্স মেসের একটি কক্ষের (ইসি-৪) মেরামত ও মেসের ভেতরের হাঁটাপথ সংস্কারে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৮৯ লাখ ৪৮ হাজার ৭৮০ টাকা। সরকার অ্যান্ড ব্রাদার্স কাজটি করে।

রাজশাহীতে ভদ্রা ব্যারাকের পুকুরপাড় উন্নয়ন ও ওয়াশপিট (ট্রেন ধোয়া-মোছার শেড) সম্প্রসারণে ব্যয় দেখানো হয়েছে ২ কোটি ৪ লাখ ৯ হাজার টাকা। আশরাফুল কবির নামের একজন ঠিকাদার কাজ করেছেন বলে নথিতে উল্লেখ রয়েছে। তবে সরেজমিনে পুকুরপাড় উন্নয়নের কোনো চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এদিকে উল্লাপাড়া স্টেশনের ইয়ার্ডে বালু ভরাট দেখিয়ে মোল্লাহ কন্সট্রাকশনকে ৭৩ লাখ ৪৮ হাজার ৯৩৯ টাকা বিল পরিশোধ করা হয়েছে। রাজশাহী রেল স্টেশনটি কয়েক বছর আগে রি-মডেলিংয়ের মাধ্যমে নতুন করে নির্মাণ করা হলেও জরুরি কাজ উল্লেখ করে এই স্টেশনের বুকিং কাউন্টার, প্রতীক্ষালয় ও কার পার্কিং এরিয়া মেরামত দেখিয়ে আনোয়ারুল ইসলাম বাবু নামের একজন ঠিকাদারকে ৫৭ লাখ ৭৪ হাজার ৪৬৪ টাকা বিল দেয়া হয়েছে।

সিরাজগঞ্জের রায়পুর নামক স্টেশনে মালামাল ওঠা-নামার সুবিধা সম্প্রসারণের নামে ঠিকাদার আরটিসিকে ৯৭ লাখ ১৮ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করা হয়েছে। তবে নথিপত্রে ওই কাজের ধরন উল্লেখ নেই।

রেলের সাবেক ডিজি আমজাদ হোসেনের শ্যালক পরিচয়দানকারী বদরুল আলমকে নাটোর, মাধনগর, আত্রাই ও সান্তাহার স্টেশনে রেললাইনের প্লাস্টিকের ওয়াসার সরবরাহে মোট ৯ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার টাকার ৫টি প্যাকেজের কাজ একসঙ্গে দেয়া হয় কোনো টেন্ডার ছাড়াই।

বদরুল গত আড়াই বছরে এভাবে বিনা টেন্ডারে প্রায় ১০০ কোটি টাকার কাজ করেছেন বলে রেল সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে। দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকে বদরুল আত্মগোপনে রয়েছেন।

কাজগুলো শুরুর আগেই বদরুলকে সমস্ত বিল পরিশোধ করা হয় নিয়ম ভেঙে। যদিও রেলের সাবেক ডিজি আমজাদ হোসেন বলেছেন, বদরুল তার শ্যালক নয়; এলাকায় বাড়ি। তার প্রভাব খাটিয়ে কাজ নেয়ার অভিযোগ ঠিক নয়।

একই সময়ে কোনো টেন্ডার ছাড়াই ঢাকার আরটিসি নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন রেললাইন সংস্কারের নামে মোট ১৯টি কাজ দেয়া হয়। এসব কাজের জন্য তাকে প্রায় ২৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে। কোথায় কীভাবে কাজগুলো হয়েছে, বিল-ভাউচারে তার কোনো বিবরণ নেই।

২০১৮ সালের ১৮ মার্চ ঝিনাইদহের মোবারকগঞ্জ রেলস্টেশন প্ল্যাটফর্মের ২০০ ফিট সিআই সিট পরিবর্তনসহ আনুষঙ্গিক কাজের জন্য ৩৮ লাখ ৩৬ হাজার ৫০০ টাকার বিল পরিশোধ করা হয়। ফরমাল টেন্ডার ছাড়াই উল্লাপাড়া স্টেশনের ৩০০ ফিট সিআই সিট পরিবর্তনের জন্য ৪৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে।

সূত্র-পিপিবিডি

গো নিউজ২৪/আই

এক্সক্লুসিভ বিভাগের আরো খবর
যারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিয়ে করতে চান, তাদের যে বিষয়গুলো জেনে রাখা দরকার

যারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিয়ে করতে চান, তাদের যে বিষয়গুলো জেনে রাখা দরকার

নিরাপদ বিনিয়োগের অপর নাম সঞ্চয়পত্র, কোনটি কিনতে কী কাগজপত্র লাগে

নিরাপদ বিনিয়োগের অপর নাম সঞ্চয়পত্র, কোনটি কিনতে কী কাগজপত্র লাগে

ঢাকা শহরে সব কাজই করেন মেয়র, এমপির কাজটা কী

ঢাকা শহরে সব কাজই করেন মেয়র, এমপির কাজটা কী

নতুন আয়কর আইনে একগুচ্ছ পরিবর্তন

নতুন আয়কর আইনে একগুচ্ছ পরিবর্তন

দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে আর ভোগান্তি থাকবে না

দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে আর ভোগান্তি থাকবে না

ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানতকারীদের আয়কর রিটার্ন নিয়ে যা জানা জরুরী

ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানতকারীদের আয়কর রিটার্ন নিয়ে যা জানা জরুরী