ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘ক্রাইম পেট্রল’-এর গল্পকেও হার মানাবে ‘এমপি লিটন হত্যা’


গো নিউজ২৪ | নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০১৯, ০৬:১৮ পিএম আপডেট: নভেম্বর ২৮, ২০১৯, ০৬:২০ পিএম
‘ক্রাইম পেট্রল’-এর গল্পকেও হার মানাবে ‘এমপি লিটন হত্যা’

গাইবান্ধার আলোচিত ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যা মামলায় প্রধান আসামি আব্দুল কাদের খানসহ ৭ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার গাইবান্ধা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক দিলীপ কুমার ভৌমিক আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গার মাস্টারপাড়ার নিজ বাড়িতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। এ ঘটনায় অজ্ঞাত ৫-৬ জনকে আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা করে লিটনের বড় বোন ফাহমিদা কাকুলী বুলবুল। 

এই হত্যার নেপথ্য কাহিনী ভারতের টিভি শো ‘ক্রাইম পেট্রল’-এর গল্পকেও হার মানিয়ে দেবে।

হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রায় আড়াই মাস ধোঁয়াশায় ছিল পুলিশ। পরে একে একে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। জানা যায়, ঠাণ্ডা মাথায় ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে লিটনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তারই এলাকার জাপা দলীয় সাবেক এমপি কর্নেল (অব.) ডা. আবদুল কাদের খান। এ লক্ষ্যে কাদের তার সুন্দরগঞ্জের ছাপরহাটি ইউনিয়নের খানপাড়া গ্রামে নিজ বাসায় তিনজনকে অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণও দেন।

তবে শেষ পর্যন্ত তারা কাদেরের কথা অমান্য করে হত্যা মিশনে অংশ নেয়নি। প্রথমবারের পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ার পর ২০১৬ সালের শুরুতে আবারও নতুন ছক কষেন কাদের। এরপর তিনি স্থানীয় জাপা নেতা সোহেল রানা, শাহীন মিয়া ও মেহেদীকে মোটা অঙ্কের টাকার প্রস্তাব দিয়ে লিটনকে হত্যা করতে রাজি করান। তাদেরও বাসায় নিয়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেন কাদের।

ঘটনার দিন ‘গুরু’ কাদেরের কাছ থেকে ‘দোয়া’ নিয়ে তারই কিনে দেয়া রানার ব্র্যান্ডের একটি মোটরসাইকেলে লিটনের বাসায় গিয়ে ‘মিশন’ সফল করে তিন খুনি। এরপর তারা আবারও ফিরে যায় কাদেরের বাসায়। সেখানে খুনিদের মিষ্টিমুখ করান কাদের, দেন নগদ ১৫ হাজার টাকা।

আবার খুনিদের নিয়ে কাদের তার গাড়িতেই গাইবান্ধা থেকে বগুড়া ফিরে যান। এমপি লিটন হত্যায় জড়িত সন্দেহে শাহীন ও মেহেদীকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য।

এমপি লিটনের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে থাকা আওয়ামী লীগ সমর্থিত নেতাকর্মীদের প্রলোভন ও উসকানি দিয়ে তার বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা ছড়ানোর চেষ্টা করেন ডা. আবদুল কাদের খান। 

২০১৫ সালের ২ অক্টোবর ভোরে এমপি লিটন মাতাল অবস্থায় গাড়ি নিয়ে সুন্দরগঞ্জ থেকে উপজেলার বামনডাঙ্গায় নিজের বাড়িতে ফেরার পথে ৯ বছরের শিশু সৌরভকে গুলি করেন। পরে সৌরভকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স রংপুর মেডিকেল যাওয়ার পথে লিটন ও তার লোকজন আটকে রাখেন বলেও অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে শুরু হয় আন্দোলন। এমপি লিটনের লাইসেন্স করা অস্ত্র জব্দ ও ফেরত না দেয়ার নেপথ্যেও ভূমিকা রাখেন কাদের।

জানা যায়, শুধু এমপি লিটন নন, কাদের গাইবান্ধায় ছয়জনকে হত্যার জন্য নামের তালিকা করেন। এমপি লিটন ছিলেন তার এক নম্বর টার্গেট। দুই নম্বর ছিলেন স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতা ব্যারিস্টার শামীম পাটোয়ারী। টার্গেট লিস্টের বাকি চারজনও স্থানীয় জাপা নেতা। ‘সিরিয়াল’ এই কিলিং মিশন সফল করতে একটি আলাদা মোবাইল ফোন সেট ও সিম নম্বর নেন কাদের। ওই নম্বর থেকে তিনি ভাড়াটে খুনিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন।

এমপি লিটনের ব্যাপারে তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে কাদের বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও স্থানীয় সাংবাদিক চন্দন কুমার সরকারকে ভাড়া করেন। হত্যার আগে এমপি লিটনের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে কাদেরকে অবগত করেন চন্দন।

রাজনীতির পথ মসৃণ করতেই এমপি লিটনসহ ছয়জনকে হত্যার ছক কষেছিলেন কাদের। ২০০৮ সালে মহাজোট থেকে নির্বাচন করে এমপি হয়েছিলেন কাদের খান। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হন লিটন। পরবর্তী নির্বাচনে তিনি যেন এমপি হতে পারেন এজন্যই লিটনসহ ছয়জনকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন কাদের।

কাদের খানের ভাড়াটে প্রশিক্ষিত খুনিরা একাধিক দফায় এমপি লিটনকে হত্যা করার পরিকল্পনা করলেও ব্যর্থ হয়েছিল। ২০১৬ সালের ৩০ ডিসেম্বরও তিন ভাড়াটে খুনি শাহীন, মেহেদী ও রানা মোটরসাইকেলে লিটনের সর্বানন্দ ইউনিয়নের উত্তর শাহবাজ গ্রামে যায়। তবে ওই দিন চন্দন ফোনে কাদেরকে জানান, ‘ওই পরিস্থিতিতে অপারেশন চালানো ঠিক হবে না। লিটনের বাসায় পুলিশ রয়েছে।’

এরপর কাদের তিন খুনিকে ফেরত আসতে নির্দেশ দেন। পরদিন ৩১ ডিসেম্বর চন্দন আবার ফোনে কাদেরকে জানান, ‘হামলা করার জন্য ওই দিন উপযুক্ত সময়।’

এমন গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে আগে থেকে কেনা মোটরসাইকেল নিয়ে তিন খুনি শাহবাজ গ্রামে যায়। গাইবান্ধায় খানপাড়ার কাদেরের বাসা থেকে বের হওয়ার আগে মোটরসাইকেলটির ‘ব্র্যান্ড পরিচিতি’ লাল স্কচটেপ দিয়ে মুড়িয়ে দেয়া হয়। যাওয়ার আগে কাদের তিন ভাড়াটে খুনিকে বলেন, ‘এবার যেন মিশন সম্পন্ন করে বাসায় ঠিকভাবে ফেরা হয়।’

লিটনকে খুন করতে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেলটি চালাচ্ছিল মেহেদী, মাঝে ছিল রানা ও পেছনে বসা ছিল শাহীন। যুবলীগ কর্মী পরিচয়ে এমপি লিটনের বাসায় ঢোকার পর তারা একটি ক্লাব তৈরি করতে এমপির সাহায্য চায়। এমন কথোপকথনের মধ্যেই লিটনকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে শাহীন ও মেহেদী। পরে গুলি চালায় রানাও। লিটন হাত দিয়ে গুলি ঠেকানোর চেষ্টা করেন। হত্যা মিশনে তিনটি অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। একটি কাদেরের লাইসেন্স করা অস্ত্র; অন্য দুটি পুরনো অস্ত্র। হত্যা মিশন সম্পন্ন করে মোটরসাইকেলে গাইবান্ধায় কাদের খানের বাসায় ফিরে যায় তিন খুনি। বাসায় যাওয়ার পরপরই তারা মিশন সফল হওয়ার খবর দেয়। তিনটি অস্ত্র কাদের খানের কাছে ফেরত দেয় তারা। সেখান থেকে বগুড়া হয়ে আগমনী পরিবহনের একটি বাসে ঢাকায় আসে এবং পরে কাদেরের নির্দেশে তিন খুনি নারায়ণগঞ্জে চলে যায়।

গো নিউজ২৪/আই

এক্সক্লুসিভ বিভাগের আরো খবর
যারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিয়ে করতে চান, তাদের যে বিষয়গুলো জেনে রাখা দরকার

যারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিয়ে করতে চান, তাদের যে বিষয়গুলো জেনে রাখা দরকার

নিরাপদ বিনিয়োগের অপর নাম সঞ্চয়পত্র, কোনটি কিনতে কী কাগজপত্র লাগে

নিরাপদ বিনিয়োগের অপর নাম সঞ্চয়পত্র, কোনটি কিনতে কী কাগজপত্র লাগে

ঢাকা শহরে সব কাজই করেন মেয়র, এমপির কাজটা কী

ঢাকা শহরে সব কাজই করেন মেয়র, এমপির কাজটা কী

নতুন আয়কর আইনে একগুচ্ছ পরিবর্তন

নতুন আয়কর আইনে একগুচ্ছ পরিবর্তন

দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে আর ভোগান্তি থাকবে না

দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে আর ভোগান্তি থাকবে না

ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানতকারীদের আয়কর রিটার্ন নিয়ে যা জানা জরুরী

ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানতকারীদের আয়কর রিটার্ন নিয়ে যা জানা জরুরী