ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সম্রাটের একরাতের ইনকাম কত জানেন?


গো নিউজ২৪ | নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৯, ০৩:২৩ পিএম আপডেট: সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৯, ০৩:২৫ পিএম
সম্রাটের একরাতের ইনকাম কত জানেন?

ঢাকার অন্তত ১৩টি ক্লাবে ক্যাসিনো, জুয়ার আসর ও অশ্লীলতার নিয়ন্ত্রক ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট এবং সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক তদন্ত প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

ওই তদন্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাবে অভিযান চালায় র‍্যাব। আটক করা হয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া এবং কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি ও কৃষক লীগ নেতা শফিকুল আলম ফিরোজকে। 

সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সূত্র জানায়, রাজধানীর ক্যাসিনো সাম্রাজ্যের বড় একটি অংশই মূলত চলে দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাটের ছত্রচ্ছায়ায়। বর্তমানে তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছেন। যেকোনো সময় তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে।

এদিকে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ক্যাসিনোভিত্তিক সম্রাটের প্রতি রাতের আয় সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া গেছে। দেখা গেছে, রাজধানীর ১৩টি ক্লাব থেকে প্রতিদিন অন্তত ৪৯ লাখ টাকা চাঁদা নিতেন সম্রাট।

ভিক্টোরিয়া ক্লাব:

ঐতিহ্যবাহী ভিক্টোরিয়া ক্লাবে ২০১৫ সালে ক্যাসিনো খেলার মাধ্যমে বাংলাদেশে অবৈধ এ ব্যবসা শুরু করেন নেপালের ক্যাসিনো ব্যবসায়ী দীনেশ ও রাজকুমার। তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন বিনোদ মানালী। ভিক্টোরিয়ায় ক্যাসিনো চালুর কয়েক মাসের মধ্যেই বাবা নামের এক নেপালি নাগরিকের কাছে ক্যাসিনোটি বিক্রি করে দেন তারা। তখন থেকে বাবা ও তার ম্যানেজার হেমন্ত মিলে ক্যাসিনোটি চালাতে থাকেন।

ভিক্টোরিয়া ক্লাবের সভাপতি কাজল ও সাধারণ সম্পাদক তুহিন। প্রতিদিন এক লাখ ৫০ হাজার টাকা ভাড়া নেন তারা। আর সম্রাটের চাঁদা দিনে চার লাখ টাকা। তার সহযোগী যুবলীগ নেতা আরমান ও খোরশেদ প্রতিদিন গিয়ে চাঁদার টাকা নিয়ে আসতেন। ক্লাবের সিসি টিভি ক্যামেরা পরীক্ষা করলেই এর সত্যতা পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

কলাবাগান ক্লাব:

ঢাকার নামকরা জুয়ারি সেন্টু ২০১৬ সালে কলাবাগান ক্লাবে ক্যাসিনো খোলেন নেপালি নাগরিক দীনেশ, রাজকুমার ও অজয় পাকরালের সঙ্গে অংশীদারিত্বে। এখান থেকে প্রতিদিন দুই লাখ টাকা করে চাঁদা নিতেন সম্রাট। এখান থেকেও চাঁদা তুলতেন আরমান। অভিযোগ আছে, চাঁদার অঙ্কে বনিবনা না হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে ওই ক্লাব বন্ধ করে দেন সম্রাট। অনেক দেনদরবার করেও আর ক্যাসিনোটি চালু করতে পারেননি সেন্টু।

সৈনিক ক্লাব:

মালিবাগ-মৌচাক প্রধান সড়কের পাশের একটি ভবনে অবস্থান সৈনিক ক্লাবের। অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকদের নামে এ ক্লাব চলে। এটি নির্ধারিত টাকায় ভাড়া নিয়ে ক্যাসিনো খোলেন যুবলীগ নেতা জসিম উদ্দিন ও এ টি এম গোলাম কিবরিয়া। তাদের অংশীদার নেপালি নাগরিক প্রদীপ। এ ক্লাব থেকে প্রতিদিন চার লাখ টাকা চাঁদা পান সম্রাট।

ঢাকা গোল্ডেন ক্লাব:

বনানী আহমেদ টাওয়ারের ২২ তলায় ঢাকা গোল্ডেন ক্লাব চালু করেন চাঁদপুরের ব্যবসায়ী আওয়াল পাটোয়ারী ও আবুল কাশেম। ক্লাবটি চালুর কিছুদিনের মধ্যেই কৌশলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর বাড়ে সম্রাটের মাসোহারা অঙ্ক। আর তোলাবাজ আরমান জোর করে ক্লাবটির মালিকানায় ঢুকে যান। নেপালি নাগরিক অজয় পাকরালের তত্ত্বাবধানে চলত ক্যাসিনোটি। এখান থেকেও সম্রাটের জন্য প্রতিদিন ৪ লাখ টাকা চাঁদা তুলতেন আরমান।

ওয়ান্ডারার্স ক্লাব:

এ ক্লাবে ক্যাসিনো খোলেন নেপালি নাগরিক হিলমি। তার অংশীদার মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মোবাশ্বের। সম্রাটের সরাসরি তত্ত্বাবধানে চলে এই ক্যাসিনোটি। এখান থেকে প্রতিদিন সম্রাটের চাঁদা ৫ লাখ টাকা। আরমান, খোরশেদ ও জাকির এই ক্যাসিনো থেকে চাঁদার টাকা নিয়ে যান।

দিলকুশা ক্লাব:

এ ক্লাবের মালিক নেপালি নাগরিক দীনেশ, রাজকুমার ও ছোট রাজকুমার। ভারতীয় আরও দু’জন অংশীদার থাকলেও তাদের নাম জানা যায়নি। এই ক্যাসিনো থেকে সম্রাটের প্রতিদিনের চাঁদা ৪ লাখ টাকা। এর বাইরে আরমানের নিজের চাঁদা ১ লাখ। জানা গেছে, ক্লাবটি চালু করতে সম্রাটকে অগ্রিম দিতে হয় ৪০ লাখ টাকা। আর আরমান অগ্রিম নেন ১০ লাখ। আরমানের ছোট ভাই ইয়ংমেনস ক্লাবে অভিযানের সময় ধরা পড়লে তাকে ১ বছরের সাজা দেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

আরামবাগ ক্লাব:

এক সময়ের ফুটপাত হকার, বর্তমানে মতিঝিল থানা যুবলীগ নেতা জামালের মালিকানায় ক্যাসিনো খেলা হয় আরামবাগ ক্লাবে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ তার অলিখিত অংশীদার। আছে নেপালি অংশীদারও। এই ক্যাসিনো থেকে প্রতিদিন সম্রাটের চাঁদা তিন লাখ টাকা। ক্যাসিনোটির খরচের খাতা দেখলেই এই চাঁদার পরিমাণ নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ফুয়াং ক্লাব:

তেজগাঁও লিংক রোডের ফুওয়াং ক্লাবে একসময় মদ বিক্রির পাশাপাশি নিয়মিত বসত ডিজে গানের আসর। আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্লাব মালিক নূরুল ইসলামের সঙ্গে তেজগাঁও জোনের এক পুলিশ কর্মকর্তার ‘ঝামেলা’র কারণে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় ডিজে আয়োজন। এরপর ওই কর্মকর্তার সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে ক্লাবের দোতলার হল রুমে বসানো হয় ক্যাসিনো। ক্লাবটির একক মালিক নূরুল ইসলাম পুরস্কার ঘোষিত এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর আত্মীয় হওয়ায় এই ক্লাবে সম্রাটের চাঁদার পরিমাণ কম, দিনে ২ লাখ টাকা।

মোহামেডান ক্লাব:

বনানীর ঢাকা গোল্ডেন ক্লাবের মালিক ব্যবসায়ী আবুল কাশেম ও মতিঝিলের স্থানীয় যুবলীগ লীগ নেতা ইমরানের মালিকানায় মোহামেডান ক্লাবে চলছিল ক্যাসিনো। এর নেপালি অংশীদার কৃষ্ণা। রাজধানীর সবচেয়ে অত্যাধুনিক ক্যাসিনোটিতে এরই মধ্যে অভিযান চালানো হয়েছে। এখান থেকে প্রতিদিন আরমানের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করতেন সম্রাট।

মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব:

সম্রাটের চাচা হিসেবে পরিচিত পুরনো ঢাকার ব্যবসায়ী আলী হোসেন এই ক্লাবে ক্যাসিনো চালু করেন। দীনেশ ও রাজকুমার তার ব্যবসায়িক অংশীদার। আলী হোসেনের নামে ক্যাসিনোটি চললেও এর মূল মালিক সম্রাট নিজেই, যদিও কাগজে-কলমে তার নাম নেই বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। তারপরও তার চাঁদার টাকা আলাদা। প্রতিদিন চাঁদার পরিমাণ ৫ লাখ টাকা।

ইয়ংমেনস ক্লাব:

চারদিকে জুয়ার টাকা উড়তে দেখে লোভে পড়েন যুবলীগের আরেক নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। স্থানীয় সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেননকে চেয়ারম্যান করে প্রতিষ্ঠা করেন ইয়ংমেনস ক্লাব। ফুটবল, ক্রিকেটের উন্নয়নের কথা বলে ক্লাবটি প্রতিষ্ঠার পর অত্যাধুনিক সরঞ্জাম এনে নিজেই চালু করেন ক্যাসিনো। কমলাপুর আইসিডির কিছু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে চীন থেকে আমদানি করা অত্যাধুনিক সরঞ্জাম এসে বসান তার ক্যাসিনোতে। এখান থেকেও দিনে ৪ লাখ টাকা চাঁদা নিতেন সম্রাট।

এজাক্স ক্লাব:

এলিফেন্ট রোডের এজাক্স ক্লাব চালু হয় যুবলীগ নেতা আরমান, তছলিম ও খোরশেদের তত্ত্বাবধানে। নেপালি নাগরিক ছোট রাজকুমারকে দিয়ে ক্যাসিনোটি চালু করেন তারা। এই ক্যাসিনো থেকে প্রতিদিন সম্রাটের চাঁদা ৩ লাখ টাকা।

উত্তরার ক্যাসিনো:

দীনেশ ও রাজকুমারের অংশীদারিত্বে উত্তরায় এপিবিএন অফিসের উল্টো পাশে একটি ভবন ভাড়া করে চালু করা হয় একটি ক্যাসিনো। তাদের পার্টনার হন তছলিম নামের এক স্থানীয় যুবলীগ নেতা। এরপর ওই এলাকায় সম্রাটের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় যুবলীগ নেতাদের মাধ্যমে আরও কয়েকটি ক্যাসিনো গড়ে তোলা হয়। প্রতিটি ক্যাসিনোতে সম্রাটের চাঁদা দিনে ২ থেকে ৪ লাখ টাকা।

গো নিউজ২৪/আই

এক্সক্লুসিভ বিভাগের আরো খবর
যারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিয়ে করতে চান, তাদের যে বিষয়গুলো জেনে রাখা দরকার

যারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিয়ে করতে চান, তাদের যে বিষয়গুলো জেনে রাখা দরকার

নিরাপদ বিনিয়োগের অপর নাম সঞ্চয়পত্র, কোনটি কিনতে কী কাগজপত্র লাগে

নিরাপদ বিনিয়োগের অপর নাম সঞ্চয়পত্র, কোনটি কিনতে কী কাগজপত্র লাগে

ঢাকা শহরে সব কাজই করেন মেয়র, এমপির কাজটা কী

ঢাকা শহরে সব কাজই করেন মেয়র, এমপির কাজটা কী

নতুন আয়কর আইনে একগুচ্ছ পরিবর্তন

নতুন আয়কর আইনে একগুচ্ছ পরিবর্তন

দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে আর ভোগান্তি থাকবে না

দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে আর ভোগান্তি থাকবে না

ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানতকারীদের আয়কর রিটার্ন নিয়ে যা জানা জরুরী

ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানতকারীদের আয়কর রিটার্ন নিয়ে যা জানা জরুরী