ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর সহপাঠী ইয়াকুব আলীর শেষ ইচ্ছা


গো নিউজ২৪ | নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০১৯, ০৪:৪০ পিএম আপডেট: জুন ১৭, ২০১৯, ০৪:৪১ পিএম
বঙ্গবন্ধুর সহপাঠী ইয়াকুব আলীর শেষ ইচ্ছা

৯৬ বছর বয়সের ইয়াকুব আলী খাঁন। ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহপাঠী। কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে লেখাপড়া করেছেন। শেষ বয়সে এসে নিজের শেষ ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন তিনি। বলেন, বাঁচবো আর ক’দিন। একে একে সব বন্ধুরাই চলে গেছে না ফেরার দেশে। যেকোনো মুহূর্তেই আমারও ডাক পড়তে পারে। ডাক পড়লেই চলে যাবো। মৃত্যুর আগে বন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার সাথে একবার দেখা করতে চাই। এটাই আমার জীবনের শেষ ইচ্ছে। জানি না এ ইচ্ছে পূরণ হবে কী-না। তবে, তার (শেখ হাসিনা) কাছে আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই।

একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে নিজের শেষ ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন তিনি।

ইয়াকুব আলী খাঁন কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে পড়ালেখা করেছেন। থেকেছেন বেকার হোস্টেলেও। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তার সম্পর্ক ছিলো খুবই আন্তরিক ও গভীর বন্ধুত্বের। একে অপরের সঙ্গে ‘তুই-তোকারি’ সম্পর্কও ছিল। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সঙ্গে সেইসব স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে আছেন বঙ্গবন্ধুর সহপাঠী ইয়াকুব আলী খাঁন। 

রাজধানীর মিরপুর-১০’র ৬ নম্বর সেকশনের ডি ব্লকের ২০ নম্বর রোডের ১৯ নম্বর বাসায় মেঝো ছেলের সংসারে নিরবে-নিভৃতে কাটছে তার জীবনের শেষবেলা। ইয়াকুব আলী খাঁনের ৮ সন্তান। ৫ মেয়ে, ৩ ছেলে। 

১৯২৫ সালের ১ মার্চ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার মীর বাজার এলাকায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পারিবারে জন্মগ্রহণ করেন ইয়াকুব আলী খাঁন।  ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছেন পাঁচলা আজিম ইনস্টিটিউট থেকে। ইন্টারমিডিয়েট ও গ্র্যাজুয়েশন করেছেন কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে। ১৯৪৪ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন ইয়াকুব আলী খাঁন। তার বাবা মরহুম ইয়াছিন আলী খান, মাতা-নবহার বিবি। তিনি তার পিতা-মাতার একমাত্র সন্তান।
 
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কাটানো সময়ের স্মৃতিচারণ করে ইয়াকুব আলী খাঁন বলেন, ইসলামিয়া কলেজেই বঙ্গবন্ধুর সাথে আমার প্রথম দেখা ও পরিচয় হয়। একসঙ্গে পড়াশোনা করেছি আমরা। আমাদের ক্লাসে ৭০ থেকে ৮০ জন সহপাঠী ছিলেন। তখন আমরা বঙ্গবন্ধুকে শেখ মুজিবর ভাই, মুজিবর ভাই, বলে ডাকতাম। উনার আমার সাবজেক্ট একই ছিল। আবার ইতিহাসে একই গ্রুপে ছিলাম আমরা ২০ জন। সেখানে বঙ্গবন্ধুও আমাদের সাথে ছিলেন।

হাওড়া থেকে প্রতিদিন কলেজে আসতে আমার কষ্ট হতো। তখন হিস্ট্রির প্রফেসর জহিরুল ইসলাম আমাকে বেকার হোস্টেলে থাকার জন্য ব্যবস্থা করে দেন। তখন হোস্টেল সুপারিন্ডেন্ট ছিলেন প্রফেসর সাইদুর রহমান (সাংবাদিক শফিক রেহমানের বাবা)। এক বছর বেকার হোস্টেলেও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলাম। বঙ্গবন্ধু বাড়ি থেকে ভালো খাবার নিয়ে আসলে, আমার সঙ্গে ভাগ করে খেতেন। আমাদের সহপাঠীদের কেউ জীবিত আছে কিনা আমি জানিনা। 

তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে ইসলামিয়া কলেজে পড়তেন ফরিদপুরের শামসুদ্দিন মোল্লা। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু বাকশাল গঠন করার পরে শামসুদ্দিন মোল্লাকে ফরিদপুরের গভর্নর নির্বাচিত করেন। শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেন (দৈনিক ইত্তেফাকের বার্তা সম্পাদক ছিলেন) এদের সাথে নিয়মিত ঢাকায় দেখা হতো।  ইত্তেফাকের প্রেসে নিয়মিত সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেনের সঙ্গে দেখা হতো। তার কাছ থেকে বঙ্গবন্ধুর খোঁজ-খবর নিতাম। আমাদের সাথে আরও পড়তেন পাবনার খন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস, যিনি ‘ভাসানী যখন ইউরোপে’ বই লিখে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন।  মহিউদ্দিন আহমেদ, ১৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি বাকশাল চেয়ারম্যান হন। ঢাকায় ছিলেন সালাউদ্দিন আহমেদ। এদের সবার সঙ্গে আমার ‘তুই-তোকারি’ সম্পর্ক ছিল।

ইয়াকুব আলী খাঁন বলেন, বেকার হোস্টেল ছাড়ার পর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দুই বার দেখা হয়। তখন তিনি সেগুনবাগিচার খাল পেরিয়ে একতলা একটি বাড়িতে থাকতেন।  যাকে ইস্পাহানির বাড়ি বলা হতো। আমার অফিসে মাদারীপুরের এক ভদ্রলোক চাকরি করতো, আমার সেকশনে। তার নাম আব্দুল মান্নান শিকদার। আমাদের অফিসে ফনী মজুমদারসহ আওয়ামী লীগের অনেক নেতারা আসতো। আমি অফিসে প্রায়ই বলতাম বঙ্গবন্ধু আমার ক্লাসমেট। মান্নান সিকদার একদিন আমাকে বলল খান সাহেব একটা কাজ করেন। আজ সন্ধ্যায় আমাদের লোকাল ইস্যু নিয়ে বঙ্গবন্ধুর কাছে যাবো। আপনি আমাদের সাথে যাবেন। আমি মহা চিন্তায় পয়ে গেলাম, যদি চিনতে না পারে, বেইজ্জতি হবো।  জোরাজুরি করে আমাকে সেখানে নিয়ে গেলেন। সেখানে অনেকগুলো বেঞ্চ ছিল, মাঝখানে ৩০-৪০ জন লোক বসা ছিল। আমি পেছনে বসলাম। শেখ সাহেব প্রবেশ করেই বললেন ‘এই ইয়াকুব, তুই এখানে বসে কি করিস? আমি অবাক হয়ে গেলাম। ৮-১০ বছর পর দেখা।  আমি বললাম, ‘ভাই আমার কোনও কাজ নেই। তোর দেশের লোকেরা আসছে, ওদের কি কাজ আছে। আমি আসছি তোকে দেখতে। আমার কোনও কাজ নেই ভাই।’ তখন আমার শরীর দিয়ে ঘাম ছুটছে, যদি না চিনতে পারতো।

আরেকবার তিন নেতার মাজারে দেখা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কবরে শ্রদ্ধা জানতে গিয়েছিলেন। আমরা রেলিং এর বাহিরে, ফুটপাতে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে শ্রদ্ধা জানাচ্ছিলাম। ৩০-৪০ হাত দূর থেকে দেখে বঙ্গবন্ধু ডাক দিলেন ‘ঐ ইয়াকুব এখানে কেন?  ভিতরে আয়।’

তিনি আরো বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কখনো বঙ্গবন্ধু কাছে যাইনি, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশে অনেক সমস্যা। আমি গিয়ে আমার ব্যক্তিগত সমস্যার কথা বলে কি তার সমস্যার বাড়িয়ে দেব। এই চিন্তা করেই কখনো আমি তার কাছে ব্যক্তিগত কোন বিষয় দাবি করিনি।  ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার খবর রেডিওতে শুনেছি।  শোনার পর প্রচুর কান্না করেছি। তার মনটা অনেক বড় ছিল। তিনি সকলকে ক্ষমা করে দিতেন।

গো নিউজ২৪/আই

এক্সক্লুসিভ বিভাগের আরো খবর
যারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিয়ে করতে চান, তাদের যে বিষয়গুলো জেনে রাখা দরকার

যারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিয়ে করতে চান, তাদের যে বিষয়গুলো জেনে রাখা দরকার

নিরাপদ বিনিয়োগের অপর নাম সঞ্চয়পত্র, কোনটি কিনতে কী কাগজপত্র লাগে

নিরাপদ বিনিয়োগের অপর নাম সঞ্চয়পত্র, কোনটি কিনতে কী কাগজপত্র লাগে

ঢাকা শহরে সব কাজই করেন মেয়র, এমপির কাজটা কী

ঢাকা শহরে সব কাজই করেন মেয়র, এমপির কাজটা কী

নতুন আয়কর আইনে একগুচ্ছ পরিবর্তন

নতুন আয়কর আইনে একগুচ্ছ পরিবর্তন

দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে আর ভোগান্তি থাকবে না

দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে আর ভোগান্তি থাকবে না

ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানতকারীদের আয়কর রিটার্ন নিয়ে যা জানা জরুরী

ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানতকারীদের আয়কর রিটার্ন নিয়ে যা জানা জরুরী