ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আলোর দিশারী সেই তাপস না ফেরার দেশে


গো নিউজ২৪ | গোনিউজ ডেস্ক: প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৯, ১০:২২ এএম আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৯, ১০:২৪ এএম
আলোর দিশারী সেই তাপস না ফেরার দেশে

সোনার তরী কবিতাটি নিশ্চয় অনেকেই পড়েছেন। যে কবিতায় কবি ফুটিয়ে তুলেছেন বাস্তবতার মর্মব্যাথী। যে নৌকায় সোনার ফসলের স্থান হয়, কিন্তু কৃষকের ঠাই মেলেনি। ঠিক তেমনই যুগে যুগে অসংখ্য গুণী মানুষ ছিলেন যারা কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে গেছেন। তাদের সৃষ্টিকর্ম রয়ে গেছে কিন্তু কালের গর্ভে তাদের স্থান হয়নি।

ঠিক তেমনই একজন মানুষ সূর্য দাস তপন (৪০)। হাজারো শিশুর জীবনকে নীরবে আলোকিত করে যাওয়া এই গুণী মানুষটি হারিয়ে গেলেন কালের গর্ভে। অর্থাৎ না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন তিনি। সোমরাত রাত সাড়ে ১১টার দিকে মৌলভীবাজার শহরের লাইফ লাইন কার্ডিয়াক হাসপাতালে তিনি মারা যান। তপনের ভাগ্নে শান্ত দাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার জন্য কাজ করে গেছেন তপন।

জানা যায়, তপন এক সময় কবিতা লিখতেন। ছিলেন প্রকৃতিপ্রেমী। সেই টানেই অবসরে জেলার বিভিন্ন চা-বাগানে সবুজের টানে ছুটে যেতেন। তাতেই নজরে আসে শিক্ষা ও সুবিধাবঞ্চিত চা বাগানের লক্ষাধিক শিশুর প্রতি। বেকার তপনের মনে দাগ কাটে শিশুদের নিশ্চিত অন্ধকার ভবিষ্যৎ। তখনই মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন এই শিশুদের জন্য কিছু করবেন।

সময় তখন ২০০১ সাল। সদ্য বাবা হারিয়েছেন তপন। সংসারের গুরুদায়িত্ব তার কাঁধে। পৈতৃক ফটো স্টুডিওর দায়িত্ব বুঝে নিয়ে হয়ে যান ফটোগ্রাফার। বাবার রেখে যাওয়া ক্যামেরাই হয়ে ওঠে তার জীবন চলার সম্বল। নিজের সঞ্চয় কিছু নেই জেনেও সংসারের নিত্যদিনের খরচ থেকে টাকা বাঁচিয়ে ‘আদর্শলিপি’ কেনেন। সেই বই প্রতি শুক্রবার স্টুডিও বন্ধ রেখে চা বাগানের শিশুদের হাতে তুলে দিতেন সূর্য দাস তপন।

পরে ভাবলেন শিশুদের জন্য একটু রঙিন চকচকে বই দরকার কারণ রঙিন বই শিশুরা অনেক পছন্দ করে। কয়েক মাস পর নিজেই ‘বর্ণকুড়ি’ নাম দিয়ে রঙিন ‘আদর্শলিপি’ ছাপাতে শুরু করলেন ঢাকা থেকে। প্রতিটি বইয়ের খরচ পড়তো প্রায় ১৮ টাকা। সেই ২০০১ সাল থেকে ‘বর্ণকুড়ি’ বিতরণ করছেন মৌলভীবাজার জেলার দেওছড়া, মিরতিঙ্গা, ফুলছড়া, ভাড়াউড়া, মাইজদিহি, প্রেমনগর, গিয়াসনগর, ভুরভুরিয়ার ৮ চা-বাগানে।

এছাড়া রাস্তাঘাট, বস্তি যেখানেই সুবিধাবঞ্চিত শিশু দেখেছেন তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন ‘বর্ণকুড়ি’। হাওড় অঞ্চলেও বিতরণ করেছেন অনেক বই। এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার ‘বর্ণকুড়ি’ বই শিশুর হাতে পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। শুধু নিজ জেলায় নয় যেখানেই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের দেখেন সেখানেই বই বিলি করেছেন। তপন এই কাজে সরকার বা বিত্তশালী কাউকেই পাশে পাননি। নিজে কারো কাছে সাহায্য চাননি তবে তার দুজন বন্ধু ছিল যারা মাঝে মাঝে শিক্ষা উপকরণ দিয়ে সাহায্য করতেন।

চা বাগানগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে শিশু ও তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে প্রচুর সাড়া পেয়েছিলেন তপন। কিন্তু নিয়মিত গিয়ে পাঠদান করতে যে যাতায়াত খরচ আসত তা দিয়ে কুলিয়ে ওঠতে না পেরে দুটি ছাড়া বাকিগুলো বন্ধ করে দিয়েছিলেন। সর্বশেষ মাইজদিহি চা বাগান ও প্রেমনগর চা বাগানে দুটি পাঠাশালার কার্যক্রম চলছিল। যার ভবিষ্যৎ তপনের মৃত্যুতে অনিশ্চিত হয়ে পড়লো।

গোনিউজ২৪/এআরএম

এক্সক্লুসিভ বিভাগের আরো খবর
যারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিয়ে করতে চান, তাদের যে বিষয়গুলো জেনে রাখা দরকার

যারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিয়ে করতে চান, তাদের যে বিষয়গুলো জেনে রাখা দরকার

নিরাপদ বিনিয়োগের অপর নাম সঞ্চয়পত্র, কোনটি কিনতে কী কাগজপত্র লাগে

নিরাপদ বিনিয়োগের অপর নাম সঞ্চয়পত্র, কোনটি কিনতে কী কাগজপত্র লাগে

ঢাকা শহরে সব কাজই করেন মেয়র, এমপির কাজটা কী

ঢাকা শহরে সব কাজই করেন মেয়র, এমপির কাজটা কী

নতুন আয়কর আইনে একগুচ্ছ পরিবর্তন

নতুন আয়কর আইনে একগুচ্ছ পরিবর্তন

দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে আর ভোগান্তি থাকবে না

দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে আর ভোগান্তি থাকবে না

ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানতকারীদের আয়কর রিটার্ন নিয়ে যা জানা জরুরী

ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানতকারীদের আয়কর রিটার্ন নিয়ে যা জানা জরুরী