ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় তৃতীয় হওয়া এক কাঠুরিয়ার ছেলের গল্প


গো নিউজ২৪ | নিউজ ডেস্ক: প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০১৮, ১০:০৩ পিএম আপডেট: অক্টোবর ১১, ২০১৮, ১০:১০ পিএম
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় তৃতীয় হওয়া এক কাঠুরিয়ার ছেলের গল্প

সজিব চন্দ্র রায়। মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় অর্জন করেছে তৃতীয় স্থান। তার এই অর্জন তাক লাগিয়েছে সবার মনে। দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার ১১ নম্বর মরিচা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম কাঠগড় রাজাপুকুরের ছেলে সজিব। বাবা পেশায় কাঠুরিয়া বাবা এবং মা দিনমজুর।

কাঠগড় রাজাপুকুরে গ্রামে একটি অস্বচ্ছল পরিবারে ২০০০ খ্রিস্টাব্দের ৫ ফেব্রুয়ারি জন্ম সজিব চন্দ্র রায়ের। চরম আর্থিক অস্বচ্ছলতা কোনোভাবেই থামাতে পারেনি তার অদম্য ইচ্ছা ও মেধাশক্তিকে।

বাবা কাঠুরিয়া। গাছ কেটে সংসার চালান তিনি। একসময় তিনি রিকশা ভ্যান চালাতেন। ছেলের পড়াশোনার খরচ চালাতে গিয়ে সেটিও বিক্রি করে দিতে হয়েছে তাকে। মা দিনমজুরির কাজ করেন। এমন অভাবের সংসারে থেকেই আলোর ঝলকানি দিয়েছেন সজিব চন্দ্র রায়। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় সারা দেশের মধ্যে তৃতীয় হয়েছেন তিনি। তবে এমন ফলেও তার মুখের হাসি মলিন হয়ে গেছে। মেডিকেলে পড়াশোনা কিভাবে চালাবেন এনিয়ে সংশয়ে রয়েছেন তিনি।

সজিবের সফলতার গল্পটা একটু অন্যরকম। তিনি ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন ছোটবেলাতেই। সজিব চন্দ্র রায় চতুর্থ শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে একবার চরম অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন তারা বাবা-মা। অর্থাভাবে ঠিকমত চিকিৎসাও হয়নি তার। সজিব তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন বড় হয়ে তিনি চিকিৎসক হবেন। মানুষের সেবার পাশাপাশি পরিবারকে দারিদ্রতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করবেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে চিকিৎসক হওয়ার অদম্য ইচ্ছাশক্তি নিয়েই লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করেন তিনি।

২০১০ সালে কাঠগড় আদিবাসী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির পাবলিক পরীক্ষায় গোটা বীরগঞ্জ উপজেলার মধ্যে প্রথম হয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দেন সজিব। গোলাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৩ সালে জেএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ সহ ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি এবং একই বিদ্যালয় থেকে ২০১৬ সালে এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে কৃতিত্ব অর্জন করে। এরপর ২০১৮ সালে সৈয়দপুর সরকারি টেকনিক্যাল কলেজ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাশ করেন তিনি। এবারের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় এমসিকিউকে ১০০ নম্বরের মধ্যে ৮৫.৭৫ এবং সার্টিফিকেটে ২০০ নম্বরের মধ্যে ২০০ নম্বর পেয়ে সারাদেশের মেধাতালিকায় তৃতীয় স্থান অধিকার করে আলোড়ন সৃষ্টি করেন সজিব চন্দ্র রায়।

সজিবের বাবা মনোধর চন্দ্র রায় বলেন, ছেলের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ও ইচ্ছা মাঝে মাঝে তাকে বিমর্ষ করে। দারিদ্র-পীড়িত এই সংসারে কি-করে এটা সম্ভব? এরপর ছেলের অদম্য ইচ্ছায় আর লেখাপড়ায় কঠোর মনোনিবেশ করায় প্রাণশক্তি জোগায় সে। ছেলে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় সারাদেশের মধ্যে তৃতীয় স্থান অধিকার করলেও পড়াশোনার খরচ কিভাবে চলবে এনিয় সংশয়ে রয়েছেন তিনি।

সজিবের শিক্ষকরা জানান, এরকম মেধাবী শিক্ষার্থী সমাজে খুবই বিরল। তবে ছোটবেলা থেকেই তার যে প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও মেধা, তাতে তারা মনে করেছিলেন, বাবা-মায়ের দারিদ্রতা তার এই ইচ্ছা শক্তিকে কখনই থামাতে পারবে না। আজ তা সত্যিতে রূপান্তরিত হয়েছে। সজিব একজন ভালো চিকিৎসক হয়ে উচ্চ শিখরে আরোহণ করবে বলে এই দুজন শিক্ষকের বিশ্বাস। এ জন্য তাকে উৎসাহ যোগানো এই দুজন শিক্ষকও দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন।

গো নিউজ২৪/জাবু

এক্সক্লুসিভ বিভাগের আরো খবর
যারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিয়ে করতে চান, তাদের যে বিষয়গুলো জেনে রাখা দরকার

যারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিয়ে করতে চান, তাদের যে বিষয়গুলো জেনে রাখা দরকার

নিরাপদ বিনিয়োগের অপর নাম সঞ্চয়পত্র, কোনটি কিনতে কী কাগজপত্র লাগে

নিরাপদ বিনিয়োগের অপর নাম সঞ্চয়পত্র, কোনটি কিনতে কী কাগজপত্র লাগে

ঢাকা শহরে সব কাজই করেন মেয়র, এমপির কাজটা কী

ঢাকা শহরে সব কাজই করেন মেয়র, এমপির কাজটা কী

নতুন আয়কর আইনে একগুচ্ছ পরিবর্তন

নতুন আয়কর আইনে একগুচ্ছ পরিবর্তন

দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে আর ভোগান্তি থাকবে না

দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে আর ভোগান্তি থাকবে না

ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানতকারীদের আয়কর রিটার্ন নিয়ে যা জানা জরুরী

ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানতকারীদের আয়কর রিটার্ন নিয়ে যা জানা জরুরী