ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ হাসিনাকে হালকা নাশতা করাতে হবে : ফোনে বলে অভি


গো নিউজ২৪ | নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৮, ০৪:০৩ পিএম আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৮, ১০:০৩ এএম
শেখ হাসিনাকে হালকা নাশতা করাতে হবে : ফোনে বলে অভি

ঢাকা : ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট ঢাকায় আওয়ামী লীগের এক জনসভায় স্বরণকালের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা হয়। যে হামলায় ২৪ জন নিহত হন এবং তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সহ প্রায় ৩০০ লোক আহত হন। এই হামলায় নিহতদের মধ্যে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নারী নেত্রী আইভী রহমান অন্যতম, যিনি বাংলাদেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী।

২০০৪ সালের সারাদেশে জঙ্গিদের বোমা হামলা এবং গোপালগঞ্জে পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে ২১ আগষ্ট বিকেলে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশের প্রধান অতিথি শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানস্থলে বিকেল পাঁচটায় পৌঁছালে, একটি ট্রাকের ওপর তৈরি মঞ্চে তিনি কুড়ি মিনিটের বক্তৃতা শেষে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করার ঘোষণা দেন। 

বঙ্গবন্ধু কন্যা মঞ্চ থেকে নিচে নেমে আসতে থাকেন। ঠিক এমন সময় শুরু হয় মঞ্চ লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলা। মাত্র দেড় মিনিটের মধ্যে বিস্ফোরিত হয় ১১টি শক্তিশালী গ্রেনেড। এতে ঘটনাস্থলেই ১২ জন এবং পরে হাসপাতালে আরো ১২ জন নিহত হন।

এ ঘটনায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান, চারদলীয় জোট সরকারের সাবেক উপমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম পিন্টু, হরকাতুল জিহাদ প্রধান মুফতি হান্নান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ৫২জনকে আসামি করে মামলা হয়।

আওয়ামী লীগের সে সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী-হুজির জঙ্গিরা। মুফতি হান্নানের নির্দেশনায় ওই আক্রমণে সরাসরি অংশ নেয় প্রশিক্ষিত ১২ জঙ্গি। 

নারকীয় ওই হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তত্কালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু। পিন্টুর ভাই হুজি নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন এই আক্রমণের জন্য আর্জেস গ্রেনেড সরবরাহ করেছেন বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। 

ভয়াল ২১ আগস্ট

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সিআইডি সূত্রগুলো জানায়, মুফতি আবদুল হান্নানসহ গ্রেফতার হওয়া তার ভাই ও হুজি নেতা মফিজুর রহমান ওরফে অভি, আবুল কালাম আজাদ বুলবুল (ঝিনাইদহ), শরিফ শহিদুল ইসলাম ওরফে বিপুল (সিলেট), মাওলানা আবু সাইদ ওরফে ডা. আবু জাফর (গফরগাঁও), জাহাঙ্গীর আলম (কুষ্টিয়া), হোসাইন আহমেদ ওরফে তামীম (ঝিনাইদহ), আরিফ হাসান ওরফে সুমন (ঢাকা), রফিকুল ইসলাম গাজী ওরফে সবুজকে (মাগুরা) জিজ্ঞাসাবাদ, আদালতে দেওয়া তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও অন্যান্য তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে সিআইডি নিশ্চিত হয়েছে, শেখ হাসিনাসহ শীর্ষস্থানীয় নেতাদের হত্যা করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করাই ছিল ওই আক্রমণের মূল লক্ষ্য। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর এটা ছিল আওয়ামী লীগের ওপর সবচেয়ে পরিকল্পিত ও বড় আঘাত। 

২০০৫ সালের ১ অক্টোবর মুফতি হান্নানকে ঢাকার বাড্ডা থেকে গ্রেফতার করা হয়। যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ সেলসহ মামলার তদন্তকারীদের কাছে তিনি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা ও তা কারা কীভাবে কার্যকর করেছে, তার বিবরণ দেন। 

পরিকল্পনা ও হামলা হয় যেভাবে: 
মুফতি হান্নানসহ জঙ্গিদের দেওয়া তথ্য ও গোয়েন্দা সূত্রমতে, ২০০০ সালে হুজির মজলিশে শুরার সভায় শেখ হাসিনাকে হত্যার সিদ্ধান্ত হয়। জিজ্ঞাসাবাদে মুফতি হান্নান জানান, সেই ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালের ১৯ আগস্ট সন্ধ্যার দিকে রাজধানীর বাড্ডায় একটি বাসায় সংগঠনের সদস্য আহসান উল্লাহ কাজল (যশোর), আবু জান্দাল, ফরিদপুরের মুরসালিন ও মুত্তাকিন, খুলনার মাওলানা লিটনসহ তিনি বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে হামলার বিষয় আলোচনা হয়। বৈঠক থেকে মুফতি হান্নান টেলিফোনে ফরিদপুরের কামাল উদ্দিন শাকের, আবদুর রহমান (বরিশাল), যশোরের মাওলানা মনিরুল ইসলাম মদিনা, মাওলানা রুস্তম আহমেদ ও মুফতি আরিফ বিল্লাহকে (ঝিনাইদহ) বিষয়টি জানান এবং তাদের ঢাকায় আসতে বলেন। অবশ্য তারা ঢাকায় আসেননি। মাওলানা আবু সাইদ (ওরফে ডা. জাফর) সন্ধ্যার পরে এসে ওই বৈঠকে যোগ দেন। পরিকল্পনার কথা শুনে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের হামলার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোক দরকার, কিন্তু এ মুহূর্তে আমার কাছে লোক নেই। কাজল জানান, ‘লোক পাওয়া যাবে। এ জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আনস সাহেব ও খেলাফত মজলিসের সাংসদ মুফতি শহিদুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলব। পরে কাজল টেলিফোনে আনসের সঙ্গে কথা বলেন এবং এই কাজে (হামলা) তার সহযোগিতা চান। আনস সাহেব তাকে তার মোহাম্মদপুরের বাসায় যেতে বলেন। পরদিন কাজল ওই বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন এবং একই দিন মুফতি শহিদুলের সঙ্গেও দেখা করেন। 

হামলা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে পরদিন ২০ আগস্ট সকালে একই বাসায় মুফতি হান্নান, আবু সাইদ, লিটন, কাজল ও আবু বকর (যশোর) আবার বৈঠকে বসেন। কারা কারা হামলায় অংশ নেবে, সেখানে তার তালিকা তৈরি করা হয়। বৈঠকে হামলার জন্য অস্ত্র ও টাকা-পয়সার ব্যবস্থা আছে কি না জানতে চাইলে কাজল জানান, গ্রেনেড আছে। টাকার ব্যবস্থাও হবে। 

আদালতে মুফতি হান্নান বলেছেন, এর আগে ওই দিনই তিনি তখনকার উপমন্ত্রী পিন্টুর ধানমন্ডির বাসায় বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজি ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা আবু তাহেরও উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে মাওলানা তাজউদ্দিন আক্রমণের জন্য তার কাছে গ্রেনেড হস্তান্তর করেন এবং পিন্টু ২০ হাজার টাকা দেন মুফতি আহসান উল্লাহ কাজলের হাতে। 

হামলার আগের দিন ২০ আগস্ট কাজল ও আবু জান্দাল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে গিয়ে এলাকা পর্যবেক্ষণ (রেকি) করে আসেন। ২১ আগস্ট সকালে একই বাসায় উল্লিখিত সবাই এবং হামলায় অংশ নেওয়ার জন্য নির্বাচিতরা একত্র হন। সিদ্ধান্ত হয়, মোট ১২ জন হামলায় অংশ নেবে। এতে কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন কাজল ও আবু জান্দাল। এরপর বাড্ডার ওই বাসায় তারা সবাই একসঙ্গে জোহরের নামাজ পড়ে দুপুরের খাবার খান। সেখানে তারা সর্বশেষ বৈঠক করেন। মাওলানা সাইদ জিহাদ বিষয়ক বয়ান করেন। তারপর মুফতি হান্নান হামলার জন্য নির্বাচিত ১২ জনের হাতে ১৫টি গ্রেনেড তুলে দেন। 

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আসরের নামাজের সময়ে সবাই যার যার মতো গিয়ে গোলাপ শাহ মাজারের কাছে মসজিদে মিলিত হয়। সেখান থেকে তারা সমাবেশে মঞ্চ হিসেবে ব্যবহৃত ট্রাকটির চারপাশে অবস্থান নেয়। শেখ হাসিনার বক্তব্য শেষ হওয়ার পর পর আবু জান্দাল প্রথম গ্রেনেড ছুড়ে মারেন। তারপর অন্যরা একে একে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে যার যার মতো এলাকা ছেড়ে চলে যায়। 

এই মামলায় পরে আরও সাত জঙ্গি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক যে জবানবন্দি দিয়েছে, তাতেও হামলা সম্পর্কে এ রকম তথ্য-বক্তব্য উঠে আসে। 

মূল আসামিরা

এ ছাড়া সিলেটে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর গ্রেনেড হামলা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি শরিফ শহিদুল ইসলাম ওরফে বিপুলও গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসংক্রান্ত কিছু তথ্য দেন। বিপুলের ভাষ্যমতে, তিনি ২০০৪ সালের ১৯ আগস্ট ঢাকায় মুফতি হান্নানের বাড্ডার বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে তখন হান্নানের ভাই মফিজুর রহমান ওরফে অভি এবং রফিক নামের একজন ছিলেন। তারা ২১ আগস্টের হামলার বিষয়ে পরিকল্পনা করেন। মাগরিবের নামাজের পর ঘণ্টা দেড়েক আলোচনা হয়। এরপর রাতের ট্রেনেই বিপুল সিলেটে চলে আসেন। পরদিন ২০ আগস্ট সকালে অভি ফোনে বিপুলকে বলেন, শেখ হাসিনাকে হালকা নাশতা করাতে হবে। হামলার ঘটনার কয়েক দিন পর বিপুল ঢাকায় এলে অভি তার কাছে হামলার কথা স্বীকার করেন। 

উল্লেখ্য, আগামী ১০ অক্টোবর এ মামলার রায়ের দিন ধার্য করা হয়েছে।

মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৫২ জন। এর মধ্যে ৩ জন আসামির অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাদেরকে মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এখন ৪৯ আসামির মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানসহ ১৮ জন পলাতক রয়েছেন।  জামিনে রয়েছেন ৮জন এবং বিএনপি নেতা সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ জন কারাগারে রয়েছেন।


গো নিউজ২৪/আই

এক্সক্লুসিভ বিভাগের আরো খবর
যারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিয়ে করতে চান, তাদের যে বিষয়গুলো জেনে রাখা দরকার

যারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিয়ে করতে চান, তাদের যে বিষয়গুলো জেনে রাখা দরকার

নিরাপদ বিনিয়োগের অপর নাম সঞ্চয়পত্র, কোনটি কিনতে কী কাগজপত্র লাগে

নিরাপদ বিনিয়োগের অপর নাম সঞ্চয়পত্র, কোনটি কিনতে কী কাগজপত্র লাগে

ঢাকা শহরে সব কাজই করেন মেয়র, এমপির কাজটা কী

ঢাকা শহরে সব কাজই করেন মেয়র, এমপির কাজটা কী

নতুন আয়কর আইনে একগুচ্ছ পরিবর্তন

নতুন আয়কর আইনে একগুচ্ছ পরিবর্তন

দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে আর ভোগান্তি থাকবে না

দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে আর ভোগান্তি থাকবে না

ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানতকারীদের আয়কর রিটার্ন নিয়ে যা জানা জরুরী

ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানতকারীদের আয়কর রিটার্ন নিয়ে যা জানা জরুরী