ঢাকা বুধবার, ০১ মে, ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই


গো নিউজ২৪ | নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০১৮, ১০:৪৮ পিএম
যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই

ঢাকা : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জীবন ও রাজনীতি, বাঙালির ঐতিহাসিক বিবর্তন ধারায়, একটি ভৌগোলিক সীমারেখায় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাঙালির হাজার বছরের আশা-আকাঙ্ক্ষা, বেদনা-বিক্ষোভ ও আবহমান বাংলার ঐতিহ্যকে তিনি নিজের চেতনায় আত্মস্থ করেছেন। তার কণ্ঠে বাঙালি জাতির সার্বিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষা প্রতিধ্বনিত হয়েছে। 

বঙ্গবন্ধু সাম্রাজ্যবাদবিরোধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মূর্ত প্রতীক। জাতির মুক্তি সংগ্রামের নিবেদিতপ্রাণ উৎসর্গীকৃত সন্তানদের একজন। তিনি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির প্রতিষ্ঠাতা। তিনি আমাদের বিস্মৃত জাতিসত্তাকে জাগ্রত করে দিয়েছেন। যুগ যুগ ধরে পরিচালিত মুক্তি-সংগ্রাম, রাজনৈতিক কর্মকান্ড ও বিভিন্ন নেতার দর্শন শেখ মুজিবুরের রাজনৈতিক জীবন ও চিন্তাভাবনাকে প্রভাবিত করেছে। একজন মানুষ হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানের মহত্ত্ব এখানে যে, বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য তিনি লড়াই করেছেন।

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ এই বাঙালির ৪৩তম শাহাদাত বার্ষিকী বুধবার (১৫ আগস্ট)। দিনটি জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালিত হবে।

১৫ আগস্টের এই দিনটিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে মাত্র এক ঘণ্টার অপারেশনে নৃশংসভাবে হত্যা করে ঘাতকরা। সেই অল্প সময়েই খুন করে ১৮ জনকে। সেই বর্বরোচিত হত্যাকান্ডে পাষন্ড ঘাতকদের হাত থেকে রেহাই পায়নি শিশু রাসেল, শিশু বাবু, এমনকি অস্তঃসত্ত্বা বধূও।

১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট সন্ধ্যা থেকে ১৫ আগস্ট ভোর ৬টা পর্যন্ত কীভাবে সেই হত্যাযজ্ঞ ঘটে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় দেওয়া বিভিন্নজনের সাক্ষ্য ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) আবদুল হামিদের বই ‘তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা’র আলোকে প্রতিবেদনটি তৈরি।

১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট। দিনটি খুব ভালো ছিল না। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ছিল খামাখাই উত্তেজনা। পরদিন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যাবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে। নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা সতর্ক তা নিয়েই। কিন্তু কে জানত সে সময়ই উত্তরপাড়ায় চলছে বঙ্গবন্ধু হত্যার মহড়া। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই সক্রিয় হয়ে উঠল সেনাবাহিনীর টু-ফিল্ড রেজিমেন্টের কামানবাহী শকট যানগুলো। রাত ১০টায় বেঙ্গল ল্যান্সারের টি-৫৪ ট্যাংকগুলো রাজকীয় ভঙ্গিতে এসে জড়ো হলো বিমানবন্দরের বিস্তীর্ণ বিরান মাঠে। জড়ো হলো ১৮টি কামান ও ২৮টি ট্যাংক। রাত সাড়ে ১১টায় জড়ো হলো মেজর ডালিম, মেজর নূর, মেজর হুদা, মেজর শাহরিয়ার, মেজর পাশা, মেজর রাশেদসহ ঘাতকরা। ১৫ আগস্টের প্রথম প্রহর রাত সাড়ে ১২টায় পরিকল্পনা ব্রিফিং করে মেজর ফারুক। এই প্রথম সবাই জানতে পারল সে রাতেই হত্যা করা হবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।

তখন মণি পত্রিকা পড়ছিলেন

তখন ভোর সোয়া ৫টা। আক্রান্ত হয়েছে ধানমন্ডি। চারদিকে ছুটছে বুলেট। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে রিসালদার মোসলেম উদ্দিন দুই ট্রাক সৈন্য নিয়ে উপস্থিত হয় ধানমন্ডির শেখ মণির বাসার গেটে। প্রতিদিনকার অভ্যাসমতো তখন ঘুম থেকে জেগে উঠেছেন শেখ ফজলুল হক মণি। ড্রয়িং রুমে বসে পড়ছিলেন পত্রিকা। খোলা দরজা দিয়ে সটান ঢুকে পড়ে মোসলেম। কিছু বলতে চাইছিলেন শেখ মণি। কিন্তু সে সুযোগ না দিয়ে গর্জে উঠল মোসলেমের হাতের স্টেনগান। লুটিয়ে পড়লেন শেখ মণি। চিৎকার শুনে এগিয়ে এলেন অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী। ব্রাশফায়ারে প্রাণ হারালেন তিনিও। কেবল প্রাণে বেঁচে যান শেখ মণির ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ ও শেখ ফজলে নূর তাপস।

রক্ষা পায়নি চার বছরের বাবুও

ভোর ৫টা ১৫ মিনিট। ধানমন্ডির আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসা আক্রমণ করে এক প্লাটুন সৈন্য। পাহারারত পুলিশকে নিরস্ত্র করতে ছোড়া হয় গুলি। গুলির শব্দে জেগে ওঠেন সেরনিয়াবাত। ব্যস্ত হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ফোন করতে। সে সময় দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে ঘাতকরা। ড্রয়িং রুমে জড়ো করা হয় সবাইকে। তারপর নির্দয়ভাবে ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয় আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ১৪ বছর বয়সী মেয়ে বেবী, ১২ বছরের ছেলে আরিফ, চার বছরের নাতি বাবু (আবুল হাসনাত আবদুল্লার ছেলে), ভাতিজা শহীদ সেরনিয়াবাত, ভাগনে আবদুল নইম খান রিন্টু (আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমুর খালাতো ভাই), তিন অতিথি এবং চার কাজের লোককে। কেবল আশ্চর্যজনকভাবে বেঁচে যান সেরনিয়াবাতের বড় ছেলে হাসনাত।

শেষ লক্ষ্য সেই ৬৭৭ নম্বর বাড়িটি

তখন ভোর সাড়ে ৫টা। পুরো অপারেশন শেষ করে ঘাতকদের ভিড় ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধুর সেই ৬৭৭ নম্বর বাড়ির গেটে। ততক্ষণে আবদুর রব সেরনিয়াবাতকে হত্যার খবর জেনে গেছেন বঙ্গবন্ধু। প্রধান গেটেও চলছে হট্টগোল। বঙ্গবন্ধুর ঘরের বাইরের বারান্দায় ঘুমিয়ে ছিলেন দুই গৃহকর্মী মোহাম্মদ সেলিম (আবদুল) ও আবদুর রহমান শেখ (রমা)। নিচতলায় ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী এ এফ এম মহিতুল ইসলাম। মহিতুলকে টেলিফোনে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘সেরনিয়াবাতের বাসায় দুষ্কৃতকারীরা আক্রমণ করেছে। জলদি পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ফোন লাগা...।’ কিন্তু পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ফোন করে কোনো সাড়াশব্দ পেলেন না মহিতুল। চেষ্টা করতে থাকেন গণভবন (তৎকালীন রাষ্ট্রপতির কার্যালয়) এক্সচেঞ্জে।

‘আমি প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিব...’

গোলাগুলির শব্দ শুনে বারান্দায় এসে দাঁড়ান বঙ্গবন্ধু। ঘুম থেকে জেগে উঠেছেন গৃহকর্মী আবদুল আর রমা। বেগম মুজিবের কথায় রমা নিচে নেমে এসে দেখেন, সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য গুলি করতে করতে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দিকে এগোচ্ছে। ভীতসন্ত্রস্ত রমা বাড়ির ভেতরে এসে দেখেন, লুঙ্গি আর গেঞ্জি পরা বঙ্গবন্ধু নিচতলায় নামছেন। রমা দোতলায় উঠে গেলেন। দেখলেন, আতঙ্কিত অবস্থায় ছোটাছুটি করছেন বেগম মুজিব। রমা এবার চলে যান তিনতলায়। ঘুম থেকে ডেকে তোলেন বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামাল ও তার স্ত্রী সুলতানা কামালকে। ঘটনা শুনে শার্ট-প্যান্ট পরে নিচতলায় নামেন শেখ কামাল। পিছু পিছু সুলতানা কামাল আসেন দোতলা পর্যন্ত। তিনতলা থেকে আবার দোতলায় নেমে আসেন রমা। ঘুম থেকে ডেকে তোলেন শেখ জামাল ও তার স্ত্রীকেও। জামা-কাপড় পরে শেখ জামাল তার স্ত্রীকে নিয়ে দোতলায় বেগম মুজিবের কক্ষে যান। বাইরে তখন গোলাগুলি। নিচতলার অভ্যর্থনা কক্ষে বঙ্গবন্ধু। তার সামনেই বিভিন্ন জায়গায় ফোন করতে থাকেন মহিতুল। পুলিশ কন্ট্রোল রুম ও গণভবন এক্সচেঞ্জে চেষ্টার একপর্যায়ে মহিতুলের কাছ থেকে রিসিভার টেনে নিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিব...।’ ব্যস, এ পর্যন্তই। কথা শেষ হলো না তার। জানালার কাচ ভেঙে একঝাঁক গুলি এসে লাগে অফিসের দেয়ালে। এক টুকরো কাচে ডান হাতের কনুই জখম হয় মহিতুলের। টেবিলের পাশে শুয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু। কাছে টেনে শুইয়ে দেন মহিতুলকেও। এর মধ্যেই আবদুলকে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর কাছে তার পাঞ্জাবি ও চশমা পাঠিয়ে দেন বেগম মুজিব। কিছুক্ষণ পর গুলির শব্দ থামলে উঠে দাঁড়ান বঙ্গবন্ধু। পাঞ্জাবি ও চশমা পরেন। অভ্যর্থনা কক্ষ থেকে বের হয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ান। পাহারায় থাকা সেনা ও পুলিশ সদস্যদের বলেন, ‘এত গুলি হচ্ছে, তোমরা কী করছ?’ এ কথা বলেই উপরে চলে যান বঙ্গবন্ধু।

হ্যান্ডসআপ!

বঙ্গবন্ধু উপরে উঠতে না উঠতেই নিচে নামেন শেখ কামাল। বারান্দায় দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আর্মি আর পুলিশ ভাইরা, আপনারা আমার সঙ্গে আসেন।’ শেখ কামালের পেছনে গিয়ে দাঁড়ান মহিতুল ইসলাম ও পুলিশের ডিভিশনাল সুপারিনটেনডেন্ট (ডিএসপি) নূরুল ইসলাম খান। ঠিক তখনই সৈন্যদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ঢোকে মেজর নূর, মেজর মুহিউদ্দিন (ল্যান্সার) এবং ক্যাপ্টেন বজলুল হুদা। গেটের ভেতর ঢুকেই তারা ‘হ্যান্ডসআপ’ বলে চিৎকার করতে থাকে। মহিতুল ইসলামকে টেনে ঘরের ভেতর নিয়ে যান নূরুল ইসলাম খান। বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা শেখ কামালের পায়ে গুলি করে বজলুল হুদা। লাফ দিয়ে ঘরের মধ্যে গিয়ে পড়েন শেখ কামাল। মহিতুলকে বলতে থাকেন, ‘আমি শেখ মুজিবের ছেলে শেখ কামাল। আপনি ওদেরকে বলেন।’ মহিতুল ঘাতকদের বলেন, ‘উনি শেখ মুজিবের ছেলে শেখ কামাল।’ আর তখনই বজলুল হুদার হাতের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ঝাঁজরা করে দেয় শেখ কামালের দেহ। প্রাণ হারান তিনি। একটা গুলি এসে লাগে মহিতুলের হাঁটুতে, আরেকটা নূরুল ইসলামের পায়ে।

ক্যান ইউ গেট আউট?

নিচতলার বারান্দা তখন রক্তে ভাসছে। বন্ধ ঘরের ভেতর ফোনে ব্যস্ত বঙ্গবন্ধু। ফোনে তার সামরিক সচিব কর্নেল জামিলউদ্দিনকে বলেন, ‘জামিল, তুমি তাড়াতাড়ি আসো। আর্মির লোকেরা আমার বাসা অ্যাটাক করেছে। সফিউল্লাহকে ফোর্স পাঠাতে বলো।’ তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল সফিউল্লাহকে নিজেও ফোন করেন বঙ্গবন্ধু। তাকে বলেন, ‘সফিউল্লাহ, তোমার ফোর্স আমার বাড়ি অ্যাটাক করেছে। কামালকে (শেখ কামাল) বোধহয় মেরে ফেলেছে। তুমি জলদি ফোর্স পাঠাও।’ ফোনের ওপাশ থেকে সফিউল্লাহ বলেন, ‘আই অ্যাম ডুয়িং সামথিং, ক্যান ইউ গেট আউট?’

পৌঁছা হলো না জামিলের

বঙ্গবন্ধুর কথা শোনার পর ব্যক্তিগত লালরঙের গাড়িটি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাসার উদ্দেশে রওনা দেন কর্নেল জামিল। সঙ্গে ছিলেন নিজের গাড়িচালক আয়েন উদ্দিন মোল্লা। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে পৌঁছা হলো না তার। পথেই সোবহানবাগ মসজিদের কাছে তাঁকে গুলি করে হত্যা করে ঘাতকরা। পালিয়ে বেঁচে যান আয়েন উদ্দিন। তখন বঙ্গবন্ধুর বাড়ির গেটের সামনে লম্বালম্বি লাইনে দাঁড়ানো মহিতুল, নূরুল ইসলাম, আবদুল মতিন ও পুলিশের বিশেষ শাখার সদস্যসহ কয়েকজন। ঘাতকদের একজন পুলিশের বিশেষ শাখার সদস্যকে গুলি করে। তারপর গুলি করতে করতে চলে যায় ওপরে। সেখানে শেখ জামালের ঘরের বাথরুমে আশ্রয় নেওয়া আবদুলকে গুলি করে। হাতে ও পেটে গুলিবিদ্ধ আবদুল সিঁড়ির পাশে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে থাকেন।

তোদের এত সাহস!

ভোর প্রায় ৫টা ৫০ মিনিট। বঙ্গবন্ধুর ঘরে তিনিসহ বেগম মুজিব, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল। বন্ধ দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ঘাতকরা। ততক্ষণে গোলাগুলি থেমে গেছে। দরজা খুলে বারান্দায় বেরিয়ে আসতেই বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে ফেলে ঘাতকরা। নামিয়ে আনতে থাকে নিচে। সিঁড়ির মুখে মেজর হুদাকে দেখে বঙ্গবন্ধু চিৎকার করে ওঠেন, ‘তোরা কী চাস? তোরা কি আমাকে মারতে চাস?’ মেজর হুদা বলে, ‘আমি আপনাকে নিয়ে যেতে এসেছি?’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘তুই আমাকে মারতে চাস? কামাল কোথায়? তোরা কামালকে কী করেছিস?’ উত্তরে হুদা বলে, ‘স্যার, কামাল তার জায়গায়ই আছে। আর আপনি তুই তুই করে বলবেন না। আপনি বন্দি। চলুন।’ এবার গর্জে উঠলেন বঙ্গবন্ধুÑ ‘কী, তোদের এত সাহস! পাকিস্তান আর্মিরা আমাকে মারতে পারেনি। আমি বাঙালি জাতিকে ভালোবাসি। বাঙালি আমাকে ভালোবাসে। কেউ আমাকে মারতে পারে না।’

সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামে রক্তের স্রোত

সিঁড়ির মাঝামাঝি এসে দাঁড়াতেই সিঁড়ির নিচে অবস্থান নেয় বজলুল হুদা ও মেজর নূর। নূর কিছু একটা বললে সরে দাঁড়ায় মহিউদ্দিন। সঙ্গে সঙ্গে গর্জে ওঠে হুদা ও নূরের হাতের স্টেনগান। আঠারটি গুলি ঝাঁজরা করে বঙ্গবন্ধুর বুক ও পেট। বিশালদেহী মানুষটি ধপাস করে পড়ে যান সিঁড়ির ওপর। বঙ্গবন্ধু তখন মৃত। তার বুকের রক্তে ভেসে যায় সিঁড়ি। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে থাকে সেই রক্তের স্রোত।

রক্তক্ষরণে বিবর্ণ সুলতানা কামালের মুখ

কিছুক্ষণ পরই দোতলায় উঠে আসে মেজর আজিজ পাশা ও রিসালদার মোসলেউদ্দিন। সঙ্গে সৈন্যরা। গুলি আর ধাক্কায় একসময় দরজা খুলে সামনে দাঁড়ান বেগম মুজিব। সবাইকে নিচে নেমে আসার নির্দেশ দেয় ঘাতকরা। নিচে নামতে থাকেন বেগম মুজিব, শেখ রাসেল, শেখ নাসের ও রমা। সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুর লাশ দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়েন বেগম মুজিব। চিৎকার দিয়ে বলেন, ‘আমি যাব না, আমাকে এখানেই মেরে ফেল।’ শেখ রাসেল, শেখ নাসের ও রমাকে নিচে নিয়ে যাওয়া হয়। আর ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বেগম মুজিবকে। তারপর সেই ঘরে আজিজ পাশা ও রিসালদার মোসলেউদ্দিন একে একে গুলি করে হত্যা করে বেগম মুজিবসহ শেখ জামাল, সুলতানা কামাল ও রোজী জামালকে। বেগম মুজিবের নিথর দেহটি ঘরের দরজায় পড়ে থাকে। বাঁ-দিকে পড়ে থাকে শেখ জামালের মৃতদেহ। রোজী জামালের মুখে গুলি লাগে। আর রক্তক্ষরণে বিবর্ণ হয়ে আসে সুলতানা কামালের মুখ।

‘পানি... পানি...’

নিচে দাঁড় করানো হলো শেখ নাসের, শেখ রাসেল আর রমাকে। শেখ নাসের ঘাতকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি তো রাজনীতি করি না। কোনো রকম ব্যবসা-বাণিজ্য করে খাই। আমাকে কেন মারবে?’ অফিস সংলগ্ন বাথরুমে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। গুলি করা হয় সেখানে। অসহায় নাসেরের গুলিবিদ্ধ দেহ গড়াতে থাকে মেঝেতে। এ সময় ‘পানি... পানি...’ বলে গোঙাতে থাকেন তিনি। পানি নয়, ঘাতকরা আরেকবার গুলিবর্ষণ করে তার ওপর।

‘ভাইয়া, আমাকে মারবে না তো?’

রমাদের সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল ছোট্ট শিশু শেখ রাসেলও। অসহায় শিশুটি প্রথমে রমাকে ও পরে মহিতুল ইসলামকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘ভাইয়া, আমাকে মারবে না তো?’ কোনো জবাব নেই রমার মুখে। মহিতুল বলেন, ‘না ভাইয়া, তোমাকে মারবে না।’ একথা শুনে শিশুটি তার মায়ের কাছে যেতে চায়। দোতলায় নিয়েও যাওয়া হয় তাকে। কিন্তু মা নয়, পাঠানো হয় মৃত্যুর কোলে। গুলি করে হত্যা করা হয় শিশুটিকে। কোটর থেকে চোখ বেরিয়ে আসে। থেঁতলে যায় মাথার পেছনের অংশ। নিথর রক্তমাথা একরত্তি দেহটি পড়ে থাকে সুলতানা কামালের পাশে।

বেঁচে যান দুই মেয়ে

বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে সেদিন তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছিলেন না। বড় মেয়ে শেখ হাসিনা স্বামীর সঙ্গে ছিলেন জার্মানিতে। তাদের সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানাও। তাই বেঁচে যান তারা।

গো নিউজ২৪/আই

এক্সক্লুসিভ বিভাগের আরো খবর
যারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিয়ে করতে চান, তাদের যে বিষয়গুলো জেনে রাখা দরকার

যারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিয়ে করতে চান, তাদের যে বিষয়গুলো জেনে রাখা দরকার

নিরাপদ বিনিয়োগের অপর নাম সঞ্চয়পত্র, কোনটি কিনতে কী কাগজপত্র লাগে

নিরাপদ বিনিয়োগের অপর নাম সঞ্চয়পত্র, কোনটি কিনতে কী কাগজপত্র লাগে

ঢাকা শহরে সব কাজই করেন মেয়র, এমপির কাজটা কী

ঢাকা শহরে সব কাজই করেন মেয়র, এমপির কাজটা কী

নতুন আয়কর আইনে একগুচ্ছ পরিবর্তন

নতুন আয়কর আইনে একগুচ্ছ পরিবর্তন

দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে আর ভোগান্তি থাকবে না

দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে আর ভোগান্তি থাকবে না

ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানতকারীদের আয়কর রিটার্ন নিয়ে যা জানা জরুরী

ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানতকারীদের আয়কর রিটার্ন নিয়ে যা জানা জরুরী