দীর্ঘ ৩৫টি বছর ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্থ স্ত্রীকে পরম যত্নে আগলে রেখেছেন আব্দুল রশীদ বাবলু। সাংসারিক নানান অভাব অনটনের মধ্যেও স্ত্রী ডাঃ রায়হানা বেগমের হাতটি ছেড়ে দেননি নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরের এই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক।
স্বামীর এই ভালোবাসায় সন্তুষ্ট স্ত্রীও। বললেন, বাবলুর মত স্বামী পাওয়া প্রতিটি নারীরই ভাগ্যের ব্যাপার।
স্ত্রী ডাঃ রায়হানা বলেন, তাদের সংসারে দুঃখ কষ্ট পিছু ছাড়ছে না। অর্থের অভাবে বিয়ের উপযোগী মেয়েকে বিয়ে দিতে পারছেন না। অনেক সময় দু’বেলা খাবারও জোটেনা তাদের ভাগ্যে। দুঃখের কথা বলার বা শোনার কেউই নেই তাদের। তবুও স্বামীর ভালোবাসায় শত অভাব অনটনের মাঝেও তিনি সুখেই আছেন।
তার মতে, দেশের প্রতিটি নারীর স্বামী যদি ডাক্তার বাবলুর মত হতো তাহলে এই সমাজে নারী নির্যাতন থাকতো না। বিরল ভালোবাসার দেশ হিসাবে পরিচিতি পেতো বাংলাদেশ।
দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছর আগে সন্তান প্রসবের পর থেকে ডাক্তার রায়হানা বেগম পক্ষাঘাতগ্রস্থ রোগে আক্রান্ত হয়ে চলাফেলা করতে পারছেন না। সেই থেকে স্বামীই তার একমাত্র ভরসা। অসুস্থ স্ত্রী যাতে নিজেকে অবহেলিত মনে না করেন সেজন্য দীর্ঘ এই সময়ে প্রায় প্রতিদিনই হুইল চেয়ারে করে প্রতিবেশির বাড়ীতে নিয়ে যেতেন বাবলু। এমনকি হুইল চেয়ারে করে সামাজিক প্রত্যেকটি অনুষ্ঠানেও স্ত্রীকে নিয়ে যেতেন তিনি।
তবে হুইল চেয়ারটি ভেঙ্গে যাওয়ায় এখন আর তেমন করে স্ত্রীকে নিয়ে চলতে পারেন না বাবলু। এজন্য সমাজের বিত্তবানদের কাছে একটু সহযোগীতা চেয়েছেন তিনি। বলেন, স্ত্রী তার প্রতি যথেষ্ট সন্তুষ্ট। স্ত্রীকে যে হুইল চেয়ারে করে ঘুরে বেড়াতেন সেটিও ভেঙ্গে গেছে। অর্থের অভাবে একটি হুইল চেয়ার কিনতে পারছেন না।
গ্রাম্য এই চিকিৎসক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রচেষ্টায় আজ মধ্যম আয়ের দেশ বাংলাদেশ। কিন্তু এদেশে কোনও দয়াবান বিত্তশালী নেই যে তাকে একটি রিমোর্ট কন্ট্রোল হুইল চেয়ার কিনে দিতে পারেন। আসন্ন ঈদুল আযহায় অনেকেই লাখ লাখ টাকার গরু কুরবানি দিবেন। কিন্তু ওই সব বিত্তশালীদের পক্ষে সামান্য ৩০/৩৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি রিমোর্ট কন্ট্রোল হুইল চেয়ার প্রদান করার মতো কুরবানি কি কেউ করবেন?
ডাক্তার আব্দুল রশীদ বাবলু এবং ডাক্তার রায়হানা বেগম দুজনই সৈয়দপুর থেকে ডিপ্লোমা ইন হোমিও মেডিকেল সার্জারী (ডিএইচএমএস) ডিগ্রী অর্জন করেন। তাদের দুই সন্তানের মধ্যে বড় সন্তান রশিদা রায়হানা অনুরুপ ডিগ্রী অর্জন করেছেন। ছোট মেয়ে সৈয়দা রাবেয়া রায়হানা হিসাব বিজ্ঞানে মাটার্স পাস করে বাড়িতে অবস্থান করছেন। এখনও তার চাকরি হয়নি।
এই দম্পতি সম্পর্কে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) সৈয়দপুর শাখার সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম জানান, সন্তান প্রসবের পর প্যারাপ্রজিয়া রোগে আক্রান্ত মায়েরা এ পরিস্থিতির শিকার হন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত ডাক্তার বাবলু তার স্ত্রীকে সেবা দিয়ে আসছেন। তাদের এই ভালোবাসা বর্তমান যুগে এক অনন্য নজির হয়ে থাকবে।
গো নিউজ২৪/আই