ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নওয়াজে নজর তারেকের, সাজাচ্ছেন পরিকল্পনা!


গো নিউজ২৪ | ইমতিয়াজ আমিন, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর: প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০১৮, ০৭:৪২ পিএম আপডেট: জুলাই ১৬, ২০১৮, ১২:৫৫ পিএম
নওয়াজে নজর তারেকের, সাজাচ্ছেন পরিকল্পনা!

ঢাকা : দুর্নীতির দায়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড মাথায় নিয়ে দেশে ফিরে সেচ্ছায় গ্রেফতার হয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। নওয়াজের সঙ্গে তার মেয়ে মরিয়ম নওয়াজও রয়েছেন, যিনি ৭ বছরের দণ্ড মাথায় নিয়ে বাবার সঙ্গে জেলে গেছেন।

আগামী ২৫ জুলাই দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন। আর নির্বাচনের আগে দুর্নীতির দায়ে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী এবং তার মেয়ের গ্রেফতার হওয়াটা মোটেই সাধারণ কোনো বিষয় নয়। জাতীয় নির্বাচনে এর বড় একটা প্রভাব পড়তে যাচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নিজে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলেও নির্বাচনের একেবারে আগ মুহুর্তে নিজ দলের কর্মীদের সাহস যোগাতেই দেশে ফিরে গ্রেফতার হয়েছেন নওয়াজ। এছাড়া তার এই গ্রেফতার সাধারণ মানুষের মনে বিশাল সহানুভূতির সৃষ্টি করবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। সেটাই তার দল পাকিস্তান মুসলিম লীগকে (পিএমএল-এন) ক্ষমতার পথে অনেকদুর এগিয়ে রাখবে।

পাকিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট অনেকটা মিলে যাওয়ার সম্ভাবনাও দেখছেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক। 

কেউ কেউ মনে করছেন নওয়াজ শরিফের মতোই নির্বাচনের ঠিক আগ মুহুর্তে দেশে ফিরতে পারেন দুর্নীতির দায়ে ১৭ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান। এমন গুঞ্জন শুরু হয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। বিএনপির অভ্যন্তর থেকেও নির্বাচনের আগে তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টি একেবারে উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে না।

তবে অনেক রাজনীতি বিশ্লেষক অবশ্য বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার আগ পর্যন্ত তারেকের দেশে ফেরার বিষয়টিকে উড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের মতে, তারেক রহমান বিএনপির ভরসাস্থল। এই মুহুর্তে দেশে ফিরলে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পরতে পারে। এমনকি জীবন সংশয়েরও আশঙ্কা রয়েছে খোদ বিএনপির একাংশে।

এদিকে আওয়ামী লীগও বিষয়টি নিয়ে একেবারে যে ভাবেনি তা কিন্তু নয়। নির্বাচনের আগে তারেক রহমানের দেশে ফেরার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না আওয়ামী লীগও।

নওয়াজ শরিফের বিষয়টি নিঃসন্দেহে তারেক রহমানকে নিয়ে শেখ হাসিনাকে আরও বেশি চিন্তিত করে তুলেছে।

তবে হ্যা, আওয়ামী লীগ অনেক আগ থেকেই তারেককে ঠেকানোর পথ তৈরি করে রেখেছে। ‘তারেক রহমান বাংলাদেশের পাসপোর্ট সারেন্ডার করেছেন এবং তিনি আর বাংলাদেশের নাগরিক নন’ সম্প্রতি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের এমন বক্তব্যকে নির্বাচনের আগে তারেক ঠেকানোর কৌশল বলে মনে করছেন বিএনপি ঘেষা রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। 

তাদের মতে, ক্ষমতায় যেতে হলে নির্বাচনের আগে তারেককে দেশে ফেরানো পরিকল্পনা বিএনপির ভাবনায় যেমন রয়েছে তেমনি আওয়ামী লীগের ভাবনায়ও রয়েছে। তবে বিএনপির নজর এখন পাকিস্তানের নির্বাচনে। নওয়াজের দেশে ফেরা ইতিবাচক হলে তারেক রহমানকে ফেরানোর পরিকল্পনা আরও মজবুত হবে।

কেননা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলেও বিএনপি ক্ষমতায় যেতে পারবে এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। বরং আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে গেলে সেটা ভোটের আগেই বিএনপির হার বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে আওয়ামীলীগও যে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনঃস্থাপনের দাবি মেনে নেবে এমন সম্ভাবনা নেই। বিয়টি নিয়ে সরকার কোনো আলোচনার গুরুত্বও দেখছে না। আর রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমেও সরকারকে বাধ্য করা যাবে না। কেননা খালেদা জিয়া কারাগারে যাবার পর রাজপথে বিএনপির অবস্থান সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেয়েছে সরকার। বিএনপি যতোই বলুক যে তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালাচ্ছে তবে এটা যে বিএনপির অক্ষমতা তা বুঝতে বাকি নেই কারোই। তাছাড়া বিগত দিনেও বিএনপির জ্বালাও পোড়াও আন্দোলন মানুষ ভালোভাবে নেই নি। সেই পথে আবারো হাটতে গেলে তা হবে বিএনপির জন্য আত্মঘাতী।

বিএনপি হয়তো ভেবেছিলো খালেদা কারাগারে গেলে দেশের মানুষ ফুঁসে উঠবে এবং সেই সুযোগে নির্বাচন নিয়ে তাদের দাবিগুলো মেনে নিতে বাধ্য হবে সরকার। কিন্তু না বরং সরকার এক্ষেত্রে আরো কঠোর হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টই বলেছেন, সংবিধানে যে ভাবে বলা আছে সেভাবেই নির্বাচন হবে অর্থাৎ নির্বাচন কালীন সরকারের অধিনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এ অবস্থায় বিএনপিকে ক্ষমতায় যেতে হলে নির্বাচনে যেতে হবে আর নির্বাচনে যেতে হলে এমন কোনো পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে সাপও মরে, লাঠিও না ভাঙ্গে অর্থাৎ এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে গিয়েই ক্ষমতায় যাওয়ার পথ তৈরি করতে হবে দলটিকে। এজন্য খালেদা জিয়ার কারাবাস এবং তারেক রহমানকে কিভাবে ব্যবহার করা যায় অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে সেটা ভাবতে হবে বিএনপিকেই।  

স্বভাবগতভাবে মানুষ সবচেয়ে শক্তিশালীকে পছন্দ করে এবং শক্তিশালী গোষ্ঠির পেছনে অবস্থান নেয়। বর্তমানে সেই শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনা। কিন্তু বিএনপির মধ্যেও রয়েছে সে শক্তির অবস্থান। দলটির নেতাকর্মীরা মনে করেন তাদের সেই শক্তির ধারক হচ্ছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান। কেননা তারুণ্যের রাজনীতিতে তারেক রহমানের সমকক্ষ রাজনীতিবিদ বাংলাদেশে দ্বিতীয়টি নেই। তার এই শক্তিকে কাজে লাগানো ছাড়া বিএনপির অন্য কোনো পথ খোলা নেই। নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে যদি তারেক রহমানকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো যায় তবে বিএনপি এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে গিয়েও ক্ষমতায় যেতে পারে।

সাধারণ চোখে বিএনপি যদি শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয় তবে সেটা আত্মঘাতী হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। কেননা হাসিনার অধীনে নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার সাথে সাথে খালেদা জিয়া শেখ হাসিনার কাছে হেরে গেছেন এই রব উঠে যবে। যার রেশ স্পষ্ট হবে ভোটগ্রহণে। সেইসাথে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপির বিগত দিনের আন্দোলনে দেশের সম্পদ ও জানমালের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার দ্বায়ও নিতে হবে বেগম খালেদা জিয়াকে।

তবে হ্যা, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার পর সে আলোচনাকে যদি অন্যকোনো ইস্যু দিয়ে একবারে ঢেকে দেয়া যায় তবে চিত্রপট অন্যরকম হতে পারে। এক্ষেত্রে সেই ইস্যুটা হতে পারেন তারেক রহমান।

বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার পর তারেক রহমানকে দেশে আনার ঘোষণা দিলে মানুষের আলোচনার ইস্যু পরিবর্তন হয়ে যাবে এবং সেটা বিএনপির পক্ষেই যাবে।

প্রশ্ন হতে পারে, তারেক রহমান দেশে আসলেই কী বিএনপি ক্ষমতায় যাবে। না, বিএনপি ক্ষমতায় তখনই যেতে পারবে যখন তারা মানুষের আবেগে এবং আলোচনায় ঠাই করে নিবেন। কেননা শক্তির দিক দিয়ে আওয়ামীলীগ এগিয়ে কিন্তু মানুষের আবেগের দিকটায় বিএনপিকে এগিয়ে থাকতে হবে। আর মানুষের মনে বিএনপির প্রতি আবেগের জায়গাটা আওয়ামী লীগই তৈরী করে দেবে।

নির্বাচনের পূর্ব মূহুর্তে তারেক রহমান দেশে ফেরার ঘোষণা দিলে স্বাভাবিকভাবেই তাকে বাধা দিবে আওয়ামীলীগ। এক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু ভুলে গিয়ে মানুষের মনে স্থান করে নেবে তারেক ইস্যু। অন্যদিকে বিএনপির তরুন প্রজন্ম ধারুনভাবে উজ্জিবীত হবে তারেক রহমানকে ঘিরে। এতে করে তারুন্যের শক্তির প্রকাশ ঘটবে, বিএনপিতে যেটার বড়ই অভাব।

তারেক রহমান দেশে আসার ঘোষণা দিলে আওয়ামী লীগ হয়তো তাকে আইনগতভাবে মোকাবেলার চেষ্টা করবে। এজন্য তার বিরুদ্ধে দণ্ডাদেশ গুলোকে কাজে লাগাবে। কিন্তু তার পরেও নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে তারেক রহমানকে গ্রেফতারের সাহস হয়তো আওয়ামী লীগ দেখাবে না। আর যদি গ্রেফতার করেই ফেলে তবে বিএনপিকে ক্ষমতার পথে আরো একধাপ এগিয়ে দেবে খোদ আওয়ামী লীগই।

আমরা হয়তো ভাবছি, আওয়ামী লীগ তো চাচ্ছে তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে। বিগত দিনে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে তেমনই মনে হচ্ছে। কিন্তু বক্তব্যে চাওয়া আর পরিকল্পনায় চাওয়া এক নয়। আওয়ামী লীগ কখনোই চাইবে না নির্বাচন পূর্ব সময়ে বিএনপি কেন্দ্রিক কোনো আলোচনা মানুষের মনে স্থান করে নিক। এজন্য আওয়ামী লীগ চাইবে অত্যন্ত নীরবে তারেক রহমানের দেশে ফেরা ঠেকাতে। কিন্তু বিএনপিকে সেই নিরবতা ভাঙ্গতে হবে। তারেক রহমানকে দেশের মাটিতে আনতে হবে। বাকি দায়িত্ব পালন করবে দলের সাধারণ কর্মীরা এবং জনগণ।

মোট কথা সাধারণ মানুষের যান মালের ক্ষতি না করে বৈধপন্থায় বিএনপিকে তারেক ইস্যু নিয়ে নির্বাচন পূর্ববর্তী মাঠ গরম করে রাখতে হবে। কেননা শেষ মুহুর্তে যারা মানুষের মনে পজিটিভলি স্থান করে নিতে পারবেন তারাই চূড়ান্ত লক্ষে পৌঁছবেন।

 

গো নিউজ২৪/আই

এক্সক্লুসিভ বিভাগের আরো খবর
যারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিয়ে করতে চান, তাদের যে বিষয়গুলো জেনে রাখা দরকার

যারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিয়ে করতে চান, তাদের যে বিষয়গুলো জেনে রাখা দরকার

নিরাপদ বিনিয়োগের অপর নাম সঞ্চয়পত্র, কোনটি কিনতে কী কাগজপত্র লাগে

নিরাপদ বিনিয়োগের অপর নাম সঞ্চয়পত্র, কোনটি কিনতে কী কাগজপত্র লাগে

ঢাকা শহরে সব কাজই করেন মেয়র, এমপির কাজটা কী

ঢাকা শহরে সব কাজই করেন মেয়র, এমপির কাজটা কী

নতুন আয়কর আইনে একগুচ্ছ পরিবর্তন

নতুন আয়কর আইনে একগুচ্ছ পরিবর্তন

দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে আর ভোগান্তি থাকবে না

দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে আর ভোগান্তি থাকবে না

ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানতকারীদের আয়কর রিটার্ন নিয়ে যা জানা জরুরী

ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানতকারীদের আয়কর রিটার্ন নিয়ে যা জানা জরুরী