ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

থাই গুহা থেকে যেভাবে উদ্ধার করা হলো ক্ষুদে ফুটবলারদের


গো নিউজ২৪ | নিউজ ডেস্ক: প্রকাশিত: জুলাই ১০, ২০১৮, ০৮:৪৪ পিএম
থাই গুহা থেকে যেভাবে উদ্ধার করা হলো ক্ষুদে ফুটবলারদের

থাইল্যান্ডের গুহায় আটকাপড়া ১২ কিশোর ফুটবলার ও এক কোচকে বের করে আনা হযেছে। দুই সপ্তাহের অধিক সময় ধরে চলে রুদ্ধশ্বাস এই উদ্ধার অভিযান। চরম ঝুঁকিপূর্ণ এবং অত্যন্ত জটিল তিনদিনব্যাপি চূড়ান্ত উদ্ধার অভিযানে অসাধারণ দক্ষতা দেখিয়ে কিশোরদের উদ্ধার করেন বিভিন্ন দেশের ৯০ ডুবরি। ডুবরিদের মধ্যে থাইল্যান্ডের ছিলেন ৪০ জন। বাকিরা বিভিন্ন দেশ থেকে সেচ্ছায় উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন।

থাম লুয়াং নামে গুহাটির ভিতরে এই অভিযান বিশ্বব্যাপী সবার মনোযোগ কেড়েছে।

রোববার রাত থেকে প্রবল বৃষ্টি শুরু হওয়ায় গুহার ভেতর পানির উচ্চতা বেড়ে গেলে উদ্ধারকাজ আরো কঠিন হবে এমন আশংকায় রোববারই এই উদ্ধার অভিযান শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এটি ছিল একটি আন্তর্জাতিক অভিযান - যাতে ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়া সহ অনেকগুলো দেশের উদ্ধারকারী ও বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।

গুহার ভেতরে অন্ধকার, সংকীর্ণ এবং জায়গায় জায়গায় পানিতে ডোবা পথ দিয়ে কিশোরদের হাঁটিয়ে বা ডুব-সাঁতার দিইয়ে প্রবেশমুখে নিয়ে আসেন ডুবরিরা।

এই কিশোরদের গুহার ভেতরে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। যেটা কিনা অভিজ্ঞ ডুবুরিদের জন্যও ভীষণ কষ্টকর ছিল। এই অভিযান প্রক্রিয়া জুড়ে ছিল হাঁটা, পানির ভেতর দিয়ে চলা, বেয়ে ওঠা, এবং পানিতে ডুবসাঁতার দিয়ে দড়ি ধরে এগিয়ে যাওয়ার মতো ঝুঁকিপূর্ণ সব কাজ।

সব ডুবুরি বাড়তি সতর্কতার জন্য মুখোশ ব্যবহার করেন। প্রতিটি কিশোরকে দুইজন করে ডুবুরি সাহায্য করেছে। তারা ওই কিশোরের অক্সিজেন সরবরাহের ট্যাঙ্কও বহন করে।

তবে গুহার সবচেয়ে জটিল অংশটি হল অর্ধেক পথের "টি-জংশন"। যেটা এতোটাই সংকীর্ণ যে তার ভেতর দিয়ে যাওয়ার জন্য ডুবুরিদের অক্সিজেন ট্যাঙ্কটি খুলে ফেলতে হয়।

গত ২৩ জুন এই দলটি গুহার ভেতর বেড়াতে গিয়ে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে আটকা পড়ে যায়। পরে গত সপ্তাহে তাদের সন্ধান পায় ডুবুরিরা।

ওই সুড়ঙ্গে রয়েছে আরেকটি স্থান যার নাম দেয়া হয়েছে চেম্বার থ্রি। যেটা ডুবুরিদের জন্য ফরোয়ার্ড বেইজে পরিণত হয়।

সেখানে কিশোররা বাকি পথ পাড়ির দেয়ার আগে কিছু সময় জিরিয়ে নিতে পারে। পরে তারা পায়ে হেঁটে সহজেই প্রবেশমুখে পৌঁছে যায়। সেখান থেকে তাদের চিয়াং রাইয়ের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়া এক প্রাক্তন থাই নৌবাহিনীর ডুবুরির মৃত্যুর ঘটনার মধ্যে দিয়ে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে এই যাত্রা কতোটা বিপজ্জনক ছিল। সামান গুনান নামে ওই ব্যক্তি শুক্রবার গুহার মধ্যে দিয়ে কিশোরদের অক্সিজেন ট্যাঙ্ক দিয়ে ফিরছিলেন। এ সময় পানির ভেতরেই অক্সিজেন ফুরিয়ে গেলে শ্বাসরোধ হয়ে মারা যান তিনি।

উদ্ধার অভিযানের প্রধান বলেন, অভিযানের দ্বিতীয় দিনটি প্রথম দিনের তুলনায় আরো মসৃণভাবে পরিচালিত হয়েছে। প্রতিবার ডুবুরিদের দুঘণ্টারও কম সময় লেগেছে।

উদ্ধারকারীরা গুহায় ঢোকার আগে বিশাল পাম্পিং মেশিন দিয়ে গুহার ভেতরের পানির স্তর নীচে নামিয়ে আনা হয়। যা পুরো যাত্রাকে আরো সহজ করে তোলে।

থাই নৌবাহিনীর এক সদস্য তার ফেসবুকে জানান, "পুরো কাজ চলছে ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে। অ্যাম্বুলেন্সগুলো যখন গুহার প্রবেশদ্বার থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছিল। তখন গাড়ির হেডলাইটের ঝলকানিতে দেখতে পেলাম আরেকটি ছেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এভাবে প্রত্যেকের মধ্যে আশা জেগেছে।

এই ঝুঁকিপূর্ণ অভিযানটি খুবই সূক্ষ্মতা ও সাবধানতার সঙ্গে পরিচালনা করা হয়েছে। কিন্তু এই উদ্ধার পরিকল্পনার বাস্তবায়ন একদিকে যেমন ছিল সাহসী, বিপজ্জনক তেমনি ভীষণ জটিল। তবে সব সংকটের মধ্যেও প্রতিটি পর্যায়ে সাফল্য এসেছে।

এই মানসিক স্বস্তি ধীরে ধীরে সবাইকে দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে থাকা উদ্বেগ আর দুশ্চিন্তা থেকে পরিত্রাণ দিয়েছে।

প্রথম ও দ্বিতীয় দিনের অভিযানের মাঝখানে অন্তত ১০ ঘন্টা বিরতি নেয়া হয়। কেউই তাড়াহুড়া করতে চাননি।

চারদিক থেকে ডুবুরি দলের নিষ্ঠা দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার প্রশংসা আসছে।

এক সপ্তাহ আগে এক ব্রিটিশ উদ্ধারকারী ডুবুরি গুহার প্রবেশমুখ থেকে চার কিলোমিটার ভেতরে ওই স্থানটিতে দলটির সন্ধান পায়।

১১ থেকে ১৬ বছর বয়সী ওই কিশোররা স্থানীয় ফুটবল দল ওয়াইল্ড বোরসের সদস্য বলে জানা গেছে।

দলটি তাদের কোচের সঙ্গে ভ্রমণে বের হতে গিয়ে এই গুহায় প্রবেশ করে এবং ভেতরে আটকা পড়ে।

নিখোঁজের নয় দিন পর তাদেরকে গুহার গভীর অন্ধকারে পাওয়া যায়।

 

গো নিউজ২৪/আই

এক্সক্লুসিভ বিভাগের আরো খবর
যারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিয়ে করতে চান, তাদের যে বিষয়গুলো জেনে রাখা দরকার

যারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিয়ে করতে চান, তাদের যে বিষয়গুলো জেনে রাখা দরকার

নিরাপদ বিনিয়োগের অপর নাম সঞ্চয়পত্র, কোনটি কিনতে কী কাগজপত্র লাগে

নিরাপদ বিনিয়োগের অপর নাম সঞ্চয়পত্র, কোনটি কিনতে কী কাগজপত্র লাগে

ঢাকা শহরে সব কাজই করেন মেয়র, এমপির কাজটা কী

ঢাকা শহরে সব কাজই করেন মেয়র, এমপির কাজটা কী

নতুন আয়কর আইনে একগুচ্ছ পরিবর্তন

নতুন আয়কর আইনে একগুচ্ছ পরিবর্তন

দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে আর ভোগান্তি থাকবে না

দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে আর ভোগান্তি থাকবে না

ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানতকারীদের আয়কর রিটার্ন নিয়ে যা জানা জরুরী

ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানতকারীদের আয়কর রিটার্ন নিয়ে যা জানা জরুরী