মাদকবিরোধী অভিযানের সময় তথাকথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর একরামুল হকের ঐ রাতের ঘটনার সময়কার একটি অডিও রেকর্ড প্রকাশ করেছে ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার।
একরামের সঙ্গে তার স্ত্রী ও মেয়েদের চারবার ফোনে কথা হয়। শেষবার কথা হয়নি, তবে অপর প্রান্তে গুলির শব্দ শুনতে পেয়ে চিৎকার করে উঠেন একরামের স্ত্রী।
ফোনকলের চারটি ক্লিপ একত্রিত করেছে ডেইলি স্টার। প্রথম কলে একরামুল তার মেয়েকে জানান, মেজরের কাছে গিয়েছিলেন, এখন ইউএনও অফিসে যাচ্ছেন।
দ্বিতীয়বার মেয়ে কল দিয়ে বাবার অবস্থান জানতে চায়। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে একরামুল জানান, ইউএনও অফিসে যাচ্ছেন। কতক্ষণ লাগবে জানতে চাইলে মেয়েকে তিনি বলেন, বেশিক্ষণ লাগবে না। আমি চলে আসব ইনশাল্লাহ।
তৃতীয়বার কল দিয়ে মেয়ে অবস্থান জানতে চাইলে একরাম বলেন, জরুরি কাজে হ্নীলা যাচ্ছি। কেন হ্নীলা যাচ্ছেন জানতে চাইলে আবারও বলেন জরুরি কাজে। কথা বলার সময় একরামের কণ্ঠ কান্নাজড়িত ছিল, বুঝতে পারে মেয়ে। ওই সময় মেয়ে তাকে প্রশ্ন করে, আব্বু তুমি কাঁদছ কেন? এরপরই লাইনটা কেটে যায়।
চতুর্থবার কল দেন একরামের স্ত্রী। ফোন রিসিভ হলেও অপর প্রান্ত থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। এ সময় কয়েকবার ‘হ্যালো হ্যালো’ বলার পর একরামের স্ত্রী বলেন, ‘আমি কমিশনারের সাথে কথা বলতে চাচ্ছি। হ্যালো, ফোন রিসিভ করছে কে? আমি উনার মিসেস বলছি...। কিন্তু অপর প্রান্ত থেকে কোনো সাড়া নেই। এ সময় হালকা স্বরে কিছু কথা বলতে শোনা যায়। বন্দুকের ট্রিগার টানার শব্দ শোনা যায়। তারপরই পরপর দুবার গুলির শব্দ।
গুলির পর এই প্রান্তে একরামুল হকের স্ত্রীর চিৎকার করে বলেন, আমার জামাই কিচ্ছু করে নাই। অপর প্রান্তে বাঁশির শব্দ ও অশ্লীল গালিগালাজ করতে শোনা যায়। একপর্যায়ে বাঁশির শব্দ বাড়তে থাকে এবং হইচই ও ‘ধর ধর’ শব্দও শোনা যায়।
১৪ মিনিট ২২ সেকেন্ডের ওই অডিও রেকর্ডে অপর প্রান্তের অনুচ্চ কথোপকথন হালকা হালকা শোনা যায়। কী করতে হবে, কীভাবে কী করতে হবে বলতে শোনা যায়। গুলির খোসা, গুলি, বন্দুক, পিস্তল কীভাবে রাখতে হবে, কোথায় রাখতে হবে, স্পষ্ট না হলেও অনুচ্চ স্বরে শোনা যায়।
এ দিকে বন্দুকযুদ্ধে নিহত পৌর কাউন্সিলর একরামুল হকের পরিবারের দেওয়া অডিও টেপটি খতিয়ে দেখছে র্যাব সদর দফতর। র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান শুক্রবার একথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যে অডিও রেকর্ডের কথা বলা হচ্ছে আমরা তা আমলে নিয়ে খতিয়ে দেখছি।
গত ২৬ মে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে একরাম নিহত হন। এরপর র্যাব দাবি করে একরাম মাদক ব্যবসায়ী। তবে বৃহস্পতিবার টেকনাফে এক সংবাদ সম্মেলনে নিহত পৌর কাউন্সিলরের স্ত্রী আয়েশা বেগম অভিযোগ করেন, বন্দুকযুদ্ধের নামে অন্যায়ভাবে তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি আমার স্বামীর হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার স্বামী হত্যার বিচার দাবি করছি। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই দাবি জানান।
এসময় তিনি সাংবাদিকদের একটি অডিও রেকর্ড দিয়ে বলেন, এটি ২৬ মে রাতে একরামুল নিহত হওয়ার সময়ের।
অডিওটি শুনুন
গো নিউজ২৪/এমআর