ঢাকা শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বিকাশ-জোসেফের পর মুক্তির অপেক্ষায় সুইডেন আসলাম!


গো নিউজ২৪ | নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রকাশিত: জুন ১, ২০১৮, ০১:১৬ পিএম আপডেট: জুন ১, ২০১৮, ০৭:১৭ এএম
বিকাশ-জোসেফের পর মুক্তির অপেক্ষায় সুইডেন আসলাম!

ঢাকা : শীর্ষসন্ত্রাসী বিকাশ কুমার বিশ্বাস ও তোফায়েল আহমেদ জোসেফের পর এবার ঢাকার আরেক শীর্ষসন্ত্রাসী সুইডেন আসলামের কারামুক্তির কথা শোনা যাচ্ছে। ২০১৩ সালের শেষ দিকেই সব মামলায় জামিন পান ঢাকার এক সময়ের বহুল আলোচিত এ সন্ত্রাসী। তার পরও সবুজ সঙ্কেত না পাওয়ায় কারাগার থেকে বের হননি। এখন কারাগারে থেকেই বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ শুরু করেছেন। বর্তমানে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট বা হাজতি পরোয়ানা বলে একটি আইনি সুযোগ কাজে লাগিয়ে কারাগারে অন্তরীণ। এখন সেই হাজতি পরোয়ানা প্রত্যাহার করে কারামুক্তির চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

২০১২ সালে তৎকালীন এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর ছত্রছায়ায় গোপনে শীর্ষসন্ত্রাসী বিকাশ কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে দেশ ছাড়েন। এখন তিনি বিদেশে বসেই হোয়াটসআপ, ভাইবার, মেসেঞ্জারে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করছেন। বিকাশের মতো সুইডেন আসলামেরও রাজনৈতিক আনুকূল্যে ২০১৩ সালেই মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব কিছু ব্যাটে-বলে করতে না পেরে কারামুক্তি মেলেনি।

২০১৫ সালে ঢাকার এই শীর্ষসন্ত্রাসী আবার গোপনে কারাগার থেকে বের হওয়ার পরিকল্পনা করেন। এ বিষয়টি জানার পর ২০১৫ সালের ৬ অক্টোবর ঢাকা মহানগর পুলিশ থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে একটি চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠির একটি অনুলিপি দেওয়া হয় আইজি প্রিজন্সকে। ওই চিঠিতে সুইডেন আসলাম কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার আগাম তথ্য পুলিশকে জানাতে আইজি প্রিজন্সকে অনুরোধ জানানো হয়।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, অন্য কিছু চাঞ্চল্যকর মামলার আসামির মতো জামিনে মুক্ত না হয়ে সুইডেন আসলাম পরিকল্পিতভাবে অন্য মামলার আসামি হয়ে ঢাকার বাইরের যে কোনো কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করতে পারে। তার মুক্তি জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। ওই চিঠির বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর সুইডেন আসলাম শেষ পর্যন্ত কারাগার থেকে আর বের হননি। গত রোববার (২৭ মে) জোসেফ কারাগার থেকে বের হওয়ার পর সুইডেন আসলামের কারামুক্তির বিষয়টি আবার সামনে চলে এসেছে। আলোচনা হচ্ছে বিভিন্ন মহলে।

কারা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, সুইডেন আসলাম বর্তমানে গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি জেলে বন্দি। তাকে কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে।জানা গেছে, ২০১৫ সালের মার্চ মাসে কারা অধিদপ্তরের একটি টিম অভিযান চালিয়ে সুইডেন আসলামের কাছ থেকে ২টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে। তার পরও কর্তৃপক্ষ এই সন্ত্রাসীর হাত থেকে মোবাইল ফোন নামাতে পারেনি। এখনো কারাগার থেকে মোবাইল ফোনে আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন সুইডেন আসলাম।

এদিকে তেজগাঁওয়ের যুবলীগ নেতা মাহমুদুল হক খান গালিব হত্যা মামলার প্রধান আসামি হলো শীর্ষসন্ত্রাসী শেখ মো. আসলাম ওরফে সুইডেন আসলাম। এই মামলায় আরেক শীর্ষসন্ত্রাসী আরমানসহ ১৯ জন আসামি। প্রায় এক যুগ ধরে তেজগাঁও থানার ওই মামলার কেস ডকেট (সিডি) গায়েব। ওই কারণে গত ১২ বছরে মামলাটির বিচার থমকে আছে। ওই সময়ের মধ্যে আদালত একজন সাক্ষীর সাক্ষ্যও গ্রহণ করতে পারেননি। তাই গত ২১ বছর আগের এই হত্যার বিচার মুখ থুবড়ে পড়ে আছে।মামলাটি বর্তমানে ঢাকার ২ নম্বর বিশেষ জজ কেএসএম শাহ ইমরানের আদালতে বিচারাধীন।

এর আগে এ মামলা ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন ছিল। ওই আদালতে থাকাবস্থায় সর্বশেষ ২০০৬ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর চুন্নু মিয়া নামে একজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। এর পর মামলাটির সিডি গায়েব হওয়ায় আর কোনো সাক্ষ্য হয়নি। মামলাটিতে ওই সময়ের মধ্যে চার্জশিটের ২৪ সাক্ষীর মধ্যে ১০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়।

সিডি গায়েব সম্পর্কে ঢাকার ২ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০১১ সালে মামলার নথি দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে আদালতে পাঠানো হয়। কিন্তু সঙ্গে সিডি পাঠানো হয়নি। অনেক বার সিডির জন্য পিপি অফিসে লিখিত আবেদন দিয়েছি। কিন্তু এখনো সিডির কোনো ট্রেস পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, সিডি ছাড়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা সম্ভব নয়। আবার তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন ডিবি ইন্সপেক্টর এসএ নেওয়াজীকেও এখন ট্রেস করা যাচ্ছে না।

১৯৯৭ সালের ২৭ মার্চ তেজগাঁও থানাধীন তেজকুনিপাড়ায় গালিবকে তার বাসার সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যা করা হয়। মামলাটিতে স্বীকারোক্তি প্রদানকারী আসামি শাহীনের জবানবন্দি অনুযায়ী সুইডেন আসলামের নির্দেশে ও উপস্থিতিতে আসামি দেলু ও মাসুদ গালিবকে গুলি করে। ওই ঘটনায় নিহতের স্ত্রী শাহেদা নাসরিন শম্পা তেজগাঁও থানায় ঘটনার দিনই একটি মামলা করেন।

১৯৯৯ সালের ৮ এপ্রিল ডিবির ইন্সপেক্টর এস এ নেওয়াজী আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলামসহ ১৯ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। মামলাটিতে নিহতের স্ত্রী শাহেদা নাসরিন ২০০৩ সালের ১৫ অক্টোবর আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার মাধ্যমে সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রম শুরু হয়। 

মামলাটিতে ডিবির তৎকালীন ইন্সপেক্টর এস এ নেওয়াজী, পরিদর্শক মতিউর রহমান, তৎকালীন সহকারী কমিশনার রফিকুল ইসলাম (বর্তমানে ডিআইজি) ও তেজগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক শাহ আলমসহ ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ এখনো বাকি আছে।

আসামিদের মধ্যে কারাগারে আছেন সুইডেন আসলাম, শাহীন, আজিজুর রহমান লিটন ওরফে কুত্তাচোরা লিটন ও আরমান। জামিনে আছেন নবী সোলায়মান, বাদশা, মানিক, রুবেল, আনোয়ার ও সাইফুল। অপর আসামিরা পলাতক। মামলায় ওয়াদুদ মাস্টার নামে এক আসামি মারা গেছেন।

শীর্ষসন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম ১৯৯৭ সালের ২৬ মে গ্রেফতার হন। এর পর থেকেই তিনি কারাগারে। গালিব হত্যা মামলার পিসিপিআর অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে রাজধানীর তেজগাঁও, ক্যান্টনমেন্ট, মিরপুর, ধানম-ি থানার ১৫টি হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। মামলাগুলোর মধ্যে ৩টি অস্ত্র মামলায় ১৭ বছর করে ও একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। অপর মামলাগুলোয় তিনি খালাস পেয়েছেন। 

 

গো নিউজ২৪/আই

এক্সক্লুসিভ বিভাগের আরো খবর
যারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিয়ে করতে চান, তাদের যে বিষয়গুলো জেনে রাখা দরকার

যারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিয়ে করতে চান, তাদের যে বিষয়গুলো জেনে রাখা দরকার

নিরাপদ বিনিয়োগের অপর নাম সঞ্চয়পত্র, কোনটি কিনতে কী কাগজপত্র লাগে

নিরাপদ বিনিয়োগের অপর নাম সঞ্চয়পত্র, কোনটি কিনতে কী কাগজপত্র লাগে

ঢাকা শহরে সব কাজই করেন মেয়র, এমপির কাজটা কী

ঢাকা শহরে সব কাজই করেন মেয়র, এমপির কাজটা কী

নতুন আয়কর আইনে একগুচ্ছ পরিবর্তন

নতুন আয়কর আইনে একগুচ্ছ পরিবর্তন

দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে আর ভোগান্তি থাকবে না

দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে আর ভোগান্তি থাকবে না

ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানতকারীদের আয়কর রিটার্ন নিয়ে যা জানা জরুরী

ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানতকারীদের আয়কর রিটার্ন নিয়ে যা জানা জরুরী