ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রিন্স মুসার বাজিমাত!


গো নিউজ২৪ | ইমতিয়াজ আমিন প্রকাশিত: মার্চ ১১, ২০১৮, ০৭:১০ পিএম
প্রিন্স মুসার বাজিমাত!

ঢাকা : গাও-গ্রামে একটা কথা আছে...‘ধন নাই বন্দুক কাঁধে, চাল নাই সাত সের রাধে। কথাটার মর্মার্থ হয়তো সকলেই জানেন। এক কথায় সমাজের এ ধরণের কিছু মানুষ রয়েছে যাদের দৃশ্যমান কোনো সম্পদ না থাকলেও ফুটানিতে বরাবর।

বাংলাদেশে এরকমই একজন ব্যক্তি রয়েছেন, যার অবস্থা উপরে উল্লেখিত লাইনটির মতোই। কিন্তু তার পরেও তিনি দেশের বেশিরভাগ সাধারণ মানুষের নজরে দেশের এক নম্বর ধনী ব্যক্তি।

আমি যার কথা বলছিলাম তার নাম প্রিন্স মুসা। আমার সামনেই অনেকে তাকে ‘ফটকা মুসা’ নামে ডেকেছে বহুবার। তাদের যুক্তি, কেবল নিজেকে আলোচনায় রাখতেই মুসা দুদকে মনগড়া হিসেব দিয়েছে। মুসা নিজেও জানে একবার কোনোভাবে আলোচনায় উঠে আসতে পারলে ফায়দা লোটা সহজ হবে। ফায়দা লুটতে না পারলেও দেশের অলিখিত একনম্বর ধনীর খেতাবটাই বা কম কিসে।

দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দেওয়া হিসাব অনুযায়ী মুসা বিন শমসেরের সম্পদের পরিমাণ প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। 

মুসার জমা দেওয়া হিসাব অনুযায়ী সুইস ব্যাংকে তার ১২ বিলিয়ন ডলার জমা রয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ৯৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। সম্পদ বিবরণীতে তিনি জানিয়েছেন, সুইস ব্যাংকে তার এ পরিমাণ অর্থ ‘ফ্রিজ’ (সাময়িক জব্দ) অবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়াও সুইস ব্যাংকের ভল্টে ৯০ মিলিয়ন ডলার দামের (বাংলাদেশি প্রায় সাতশ কোটি টাকা) অলংকার জমা আছে। দেশে তার সম্পদের মধ্যে গুলশান ও বনানীতে দুটো বাড়ি, সাভার ও গাজিপুরে ১২০০ বিঘা জমির কথাও বিবরণীতে তুলে ধরেছেন।

তবে সুইস ব্যাংকে জমা অর্থের বিষয়ে এখনো কিছুই জানতে পারেনি দুদক। দুদক জানায়, দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে সুইস ব্যাংকের অর্থসহ যেসব সম্পদের হিসাব দিয়েছেন সেগুলোর বিষয়ে কোনো তথ্য গোপন বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকলে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) ধারায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ ধারার অপরাধ প্রমাণিত হলে তিন বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

তবে এই আইনি প্রক্রিয়া যে বহুদুরের পথ সে বিষয়ে বেশ ভালো করেই অবগত আছেন মুসা। ততদিন দেশের শীর্ষ ধনীর তকমাটা গায়ে লাগিয়ে বেশ আহ্লাদেই কেটে যাচ্ছে দিন।

দুদকের সূত্রগুলো জানিয়েছে, সুইস ব্যাংকের লকারে মুসার ৯০ মিলিয়ন ডলার দামের যে অলংকারের কথা বলেছেন সেগুলো বিভিন্ন সময় কেনা হয়েছে এবং উপহার হিসেবে পাওয়া বলে উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি নিজের পরিবারের সদস্যদের কাছে থাকা অলংকারের তথ্যও তুলে ধরেছেন। তবে সেগুলোর দামের বিষয়টি সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়নি।

সম্পদ বিবরণীতে গাজীপুর ও সাভারে তাঁর নামে প্রায় ১২শ বিঘা সম্পত্তি রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন মুসা বিন শমসের। তাঁর দাবি, স্বাধীনতাত্তোরকালে ওইসব সম্পত্তি ক্রয় করেছেন। এসব সম্পত্তির বর্তমান বাজার মূল্য (এক বিঘা এক কোটি টাকা হিসেবে) প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকারও বেশি। কিন্তু তার একশতাংশ জমিও তার দখলে নেই বলে জানিয়েছেন এবং সম্পত্তির খাজনা পরিশোধ করে নামজারিরও কোনো কাগজ দেখাতে পারেন নি।

এর মানে কী দাড়ায়? কেউ একজন এসে বলে দিলো দেশের সব সম্পত্তির মালিক আমি কিন্তু আমার দখলে কিছুই নেই, এমন কি কোনো কাগজও নেই। এটা পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কী হতে পারে? তবে না, প্রিন্ম মুসা কিন্তু পাগল নন। তিনি জেনে বুঝেই এরকম একটি তথ্য দুদকে দিয়েছেন বলে অনেকে মনে করছেন।

এদিকে এ সব সম্পদের বাইরে ফরিদপুরে মুসার পৈত্রিক বাড়ি রয়েছে। এছাড়া গুলশানে ‘দ্য প্যালেস’ নামে প্রাসাদতুল্য বাড়িটি তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা চৌধুরীর নামে। সেটাও তার নিজের নয়।

এছাড়া মুসা জানিয়েছেন, বনানীতে মেসার্স ড্যাটকো লিমিটেড নামে একটি জনশক্তি রপ্তানি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান তিনি। এর আরও কয়েকজন অংশীদার রয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির নামে ঢাকায় দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তবে তার নিজ নামে দেশে কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। 

সম্প্রতি প্রিন্স মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা একটি রেঞ্জ রোভার গাড়ি ভোলা বিআরটিএ-এর কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজসে ভুয়া কাগজ দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বেনামে অবৈধ আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দারা। মুসার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ১৭ লাখ টাকা শুল্ক পরিশোধ দেখিয়ে ভুয়া বিল অব অ্যান্ট্রি প্রদর্শন করে গাড়িটি বেনামে রেজিস্ট্রেশন করেন প্রিন্স মুসা।

এসব কিছুর পরে কী বলা যেতে পারে? প্রিন্স মুসার বাজিমাত! না ফুটানি?

 

গো নিউজ২৪/আই

এক্সক্লুসিভ বিভাগের আরো খবর
যারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিয়ে করতে চান, তাদের যে বিষয়গুলো জেনে রাখা দরকার

যারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিয়ে করতে চান, তাদের যে বিষয়গুলো জেনে রাখা দরকার

নিরাপদ বিনিয়োগের অপর নাম সঞ্চয়পত্র, কোনটি কিনতে কী কাগজপত্র লাগে

নিরাপদ বিনিয়োগের অপর নাম সঞ্চয়পত্র, কোনটি কিনতে কী কাগজপত্র লাগে

ঢাকা শহরে সব কাজই করেন মেয়র, এমপির কাজটা কী

ঢাকা শহরে সব কাজই করেন মেয়র, এমপির কাজটা কী

নতুন আয়কর আইনে একগুচ্ছ পরিবর্তন

নতুন আয়কর আইনে একগুচ্ছ পরিবর্তন

দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে আর ভোগান্তি থাকবে না

দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে আর ভোগান্তি থাকবে না

ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানতকারীদের আয়কর রিটার্ন নিয়ে যা জানা জরুরী

ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানতকারীদের আয়কর রিটার্ন নিয়ে যা জানা জরুরী