বলিউড সুপারস্টার সালমান খান জীবনে নানান চরিত্রে অভিনয় করে বাজিমাত করেছেন। তার গোয়েন্দা চরিত্র টাইগার সিরিজের ছবিগুলো সব হিট। সম্প্রতি সালমানের মুক্তি পেয়েছে শিশুকাল থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত এক ব্যক্তির জার্নির কাহিনি নিয়ে ভারত ছবি। সালমান এখন চান পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম অপরাজিত জেনারেল চেঙ্গিস খানের চরিত্রে অভিনয় করতে। কলকাতার দৈনিক আজকাল পত্রিকার সঙ্কর্ষণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন ইচ্ছার কথা জানান সাল্লু ভাই।
জেনে রাখা ভালো চেঙ্গিস খান এককভাবে জয় করেছিলেন পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি অঞ্চল এবং যিনি একই সাথে ৪ কোটি নিরাপরাধ মানুষের মৃত্যুর দায়ী। ধ্বংস, হত্যা, চাতুর্য, ক্ষমতা, লিপ্সা এবং রণকুশলতার এক অভূতপূর্ব মিশেলে গড়া চেঙ্গিস খানের জীবন কাহিনী যেন একটি জীবন্ত সিনেমার মত। তার জীবন রোমাঞ্চকর উত্থান পতন এবং অচিন্তনীয় ধ্বংসলীলায় পূর্ণ।
নিচে সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো-
সঙ্কর্ষণ বন্দ্যোপাধ্যায়: ‘এক থা টাইগার’-এর অবিনাশ সিং রাঠোর বা ‘বজরঙ্গী ভাইজান’-এর পবনকুমার চতুর্বেদীর থেকে ‘ভারত’-এর ভারত কতটা আলাদা?
অনেকটাই আলাদা। শুধু চরিত্র কেন, ভারত ছবির কনসেপ্টটাই পুরো আলাদা। আপনি যে ছবি গুলোর কথা বললেন তার সঙ্গে ‘ভারত’-এর একটাই মিল যে তিনটি ছবিতেই আমিই হিরোর ভূমিকায়। এই ছবিটা আসলে একটা জার্নির ছবি। এত দীর্ঘ জার্নি হিন্দি ছবিতে এর আগে দেখা যায়নি। এখানে নায়কের ৯ বছর বয়স থেকে ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত পুরো জার্নিটাই আছে। বাবার ফিরে আসার অপেক্ষায় নায়কের দীর্ঘ ৭০ বছরের প্রতীক্ষা।
কোরিয়ান ছবি ‘ওড টু মাই ফাদার’-এর রিমেক ‘ভারত’। এই চরিত্রে আপনার ভক্তরা আপনাকে নতুন কীভাবে পাবে?
এই ছবিতে আমাকে অনেকগুলো লুকে দর্শক পাবেন। আমার প্রথম দিককার ছবি ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’ বা ‘বাপি’তে আমার যে লুক ছিল সেই লুকটাকে আবার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। এখন আমি যেমন দেখতে সেই লুকটাতো আছেই। আবার আগামী দিনে আমার বয়স বাড়লে আমাকে কীরকম দেখতে হতে পারে, সেই লুকটাও আছে। এই ছবিতে আমার অল্প বয়সের লুকে অভিনয় করাটাই সবচেয়ে ‘টাফ’ ছিল।
‘ভারত’ বাবা ও ছেলের সম্পর্কের গল্প। আপনার সঙ্গে আপনার বাবার সম্পর্ক কেমন?
যখন ছোট ছিলাম তখন বাবার সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে পারিনি। সেই সময় ইন্ডাস্ট্রির ব্যস্ততম লেখকদের একজন ছিলেন আমার বাবা। একটা সময়ে বাবার হাতে কোনও কাজ ছিল না। একদিনের জন্যেও বাবা সেই কথা আমাদের বুঝতে দেননি। আমার বাবা সেই ছোট থেকে সবসময় আমার বন্ধু। বলা যায় সবচেয়ে বড় বন্ধু।
‘ভারত’ ছবির পরিচালক আলি আব্বাস জাফরের সঙ্গে তো এটা আপনার দ্বিতীয় ছবি। কেমন অভিজ্ঞতা?
আমাদের সম্পর্কটা বড় ভাই আর ছোট ভাইয়ের। আমাদের মিলমিশটা এতটাই সুন্দর যে ও কী চায় আমি সেটা বুঝতে পারি। আবার আমার চাহিদা কী, সেটাও ও চট করে ধরে ফেলতে পারি।
এই ছবির নায়িকা ক্যাটরিনা কাইফ। ওর অভিনীত চরিত্রটা কীরকম?
আমার মনে হয় এটা ওর জীবনের সেরা কাজ হতে চলেছে। এই চরিত্রটার জন্যে ক্যাটরিনা অসাধারণ পরিশ্রম করেছে। ক্যাটরিনাও এই ছবিতে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন লুকে এসেছে। আমার মনে হয় এই ছবির জন্য কয়াটরিনার পুরস্কার পাওয়া উচিত।
ক্যাটরিনার সঙ্গে আপনি অনেক ছবিতে অভিনয় করেছেন। অনেক বক্স অফিস সফল ছবি আছে আপনাদের ঝুলিতে। ক্যাটরিনা কি আপনার জন্যে ‘লাকি’?
সত্যিই যদি তাই হত তাহলে ২০০৮-এ ‘যুবরাজ’ ছবিটাও বক্স অফিসে সফল হত। আমার মনে হয়, ক্যাটরিনা নয়, ছবি সফল হওয়ার জন্যে আমিই ‘লাকি’ (হাসতে হাসতে)।
এত বছর ধরে তারকা ইমেজ ধরে রাখার রহস্যটা কি?
আমার কাজ মানুষের মনোরঞ্জন করা। মানুষকে খুশি করা। আমি সেটাই সবসময়ে ভেবে এসেছি। আলাদা করে জনপ্রিয়তা কতটা কীভাবে বাড়ে সে কথা কখনোই ভাবিনি। আমি ভাগ্যবান, কাজের প্রতি নিষ্ঠা আমাকে জনপ্রিয় করেছে। আসলে এর মধ্যে কোনও রহস্য নেই।
আপনার বেশিরভাগ কাজ আপনার বন্ধু বা আত্মীয়দের সঙ্গে। এর কোনও আলাদা কারণ আছে?
কেন? আপনি কি চান আমি শত্রুদের সঙ্গে কাজ করি (হাসতে হাসতে)? আসলে ঠিক উল্টোটা। আমার কোনও শত্রু নেই। আমার কাছে কোনও ভাল স্ক্রিপ্ট এলে আমি সঙ্গে সঙ্গে সেটা নিয়ে নিই। বন্ধুদের কাছ থেকে ভাল স্ক্রিপ্ট পেয়ে গেলে আমি কেন অন্যদের কাছে যাবো? একজন চিত্রনাট্যকারের ছেলে হওয়ার সুবাদে আমার কাছে সবচেয়ে বড় হল চিত্রনাট্য। চিত্রনাট্যই তো আসল হিরো।
আপনি কি আপনার ছবির সমালোচনা দেখেন?
আমি কোনওদিনই সেভাবে আমার ছবির সমালোচনার ওপর জোর দিই না। আমার কাছে দর্শকের মতামতটাই একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ।
‘ভারত’-এ পাশাপাশি আছে দেশভক্তির গল্প। আপনার কাছে দেশভক্তির অর্থ কী?
দেশভক্তি তো একটা সহজাত ব্যাপার। আমার কাছে দেশভক্তির অর্থ হল নিজের কাজটা সততার সঙ্গে, নিষ্ঠার সঙ্গে করে যাওয়া।
আপনার আগামী ছবির নায়িকা তো আলিয়া ভাট। এই প্রথম ওঁর সঙ্গে কাজ।
আমার মনে হয় এই মূহূর্তের বলিউডের অন্যতম সেরা নায়িকা আলিয়া ভাট। স্বতঃস্ফুর্ত ও ন্যাচারাল অভিনেত্রী। তার সঙ্গে অবশ্য এটাও বলা উচিত, খুবই ভাল মেয়ে।
কোন চরিত্রে অভিনয় করতে ইচ্ছা করে?
কোনো দিন যদি সুযোগ পাই তবে চেঙ্গিস খানের চরিত্রে অভিনয় করতে চাই।
হয়ত আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই সালমানকে চেঙ্গিস খানের চরিত্রে দেখতে পাবেন ভক্তরা।
গো নিউজ২৪/জাবু